Unemployment in India | ভারতের বেকার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বেশি যুবক! এদিকে এশিয়ার ‘বিলিয়নিয়ারদের রাজধানী’র স্থানে মুম্বই! ভারতে কি কায়েম করবে ‘ধনিকতন্ত্র’?
সম্প্রতি শতকোটিপতিদের সংখ্যার নিরিখে বেজিংকে হারিয়ে এশিয়ার মধ্যে এক নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে দেশের বাণিজ্যনগরী মুম্বই। তবে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ভারতে বেকারত্ব নিয়ে একটি যৌথ রিপোর্ট পেশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে দেশের বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত যুবকদের অনুপাত ক্রমশ বাড়ছে।
একদিকে সরকার বলছে এগিয়ে চলেছে দেশের অর্থনীতি,অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ স্বচ্ছল ভারত। কমছে বেকারত্বের হার। এদিকে সম্প্রতি শতকোটিপতিদের সংখ্যার নিরিখে বেজিংকে হারিয়ে এশিয়ার মধ্যে এক নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে দেশের বাণিজ্যনগরী মুম্বই। তবে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ভারতে বেকারত্ব (Unemployment in India) নিয়ে একটি যৌথ রিপোর্ট পেশ করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে দেশের বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত যুবকদের অনুপাত ক্রমশ বাড়ছে। অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনের আগে খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর স্বামী অর্থনীতিবিদ পরাকলা প্রভাকর (Parakala Prabhakar) বলছেন, শুধু ভারতের নয়, সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্নীতি নির্বাচনী বন্ড (electoral bonds)! এই অবস্থায় দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং বেকারত্বের তথ্য নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিভ্রান্ত আম জনতা।
দেশের অধিকাংশ বেকারই যুব!
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ভারতের বেকার সমস্যা নিয়ে একটি যৌথ রিপোর্ট পেশ করেছে। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দেশের বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত যুবকদের অনুপাত ক্রমশ বাড়ছে। এই শতাব্দীর শুরুতে ভারতে বেকারত্বের হার (unemployment rate in india) এর মধ্যে শিক্ষিত যুবসমাজের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫.৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশের বেকারদের মধ্যে ৭৬.৭ শতাংশ শিক্ষিত যুবক এবং ৬২.২ শতাংশ শিক্ষিত যুবতী। শুধু তাই নয়, সার্বিকভাবে দেশে বেকারদের মধ্যে যুবসমাজের হারটাই বেশি। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের বেকারদের মধ্যে যুব সম্প্রদায়ের অনুপাত বেড়ে হয়েছে ৮৩ শতাংশ! অর্থাৎ দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ বেকার।
ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (IIHD) সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রকাশিত ‘দ্য ইন্ডিয়ান এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট ২০২৪’ শীর্ষক এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে দশম শ্রেণি বা তার বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে এমন কমবয়সী ভারতে বেকারত্বের হার (unemployment rate in india) মোট বেকারের ৬৫.৭ শতাংশ ছিল। ২০২০ সালে যা মোট বেকার সংখ্যার ৩৫.২ শতাংশ ছিল। উল্লেখ্য, আইএলও এবং আইআইএইচডি তাদের যৌথ রিপোর্টে জানানো হয়েছে, স্নাতক স্তরের শিক্ষা অর্জন করেও চাকরি পাননি এমন যুবকের সংখ্যা সব থেকে বেশি। মহিলা স্নাতকরা এর ফলে সব থেকে বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। ২০২২ সালে নিয়োগ, শিক্ষা বা কোনও ধরনের প্রশিক্ষণে যোগ দেননি এমন মহিলার সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ ছিল।পুরুষদের মধ্যে ৯.৮ শতাংশ যেখানে এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল না, সেখানে মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৪৮.৪ শতাংশ। কমবয়সী পুরুষদের তুলনায় কমবয়সী মহিলাদের মধ্যে নিয়োগ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার সংখ্যা অনেক কম ছিল। ২০-২৪ বছর এবং ২৫-২৯ বছর বয়সের কমবয়সী পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি দেখা গিয়েছে। তুলনায় ১৫-১৯ বছর বয়সের পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে কম দেখা গিয়েছে বেকারত্বের হার। নিজস্ব ব্যবসা বা কাজ এবং অনিয়মিত কাজ এখনও দেশের যুব সমাজের একটা বড় অংশের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে। ২০০০-২০২২ সালের মধ্যে এ ধরনের কাজের প্রবণতা সব থেকে বেশি দেখা গিয়েছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
এদিকে লোকসভা নির্বাচনের মুখে মোদি সরকারকে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে ফেলে কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণের মন্তব্য,বেকারত্বের মতো সমস্যার সমাধান সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তবে ওই ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (IIHD) সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রকাশিত ‘দ্য ইন্ডিয়ান এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট ২০২৪’ শীর্ষক এ আশার কথাও শোনানো হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশে বেকারত্ব নিম্নমুখী ছিল। তবে কোভিডের পর আবার সেটা বাড়ছে।
'নির্বাচনী বন্ডের দুর্নীতি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্নীতি'!
লোকসভা নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার বেশ কয়েকদিন আগে খবরের শিরোনামে নির্বাচনী বন্ড (electoral bonds)। এবার এই বন্ড নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুললেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর স্বামী পরাকলা প্রভাকর (Parakala Prabhakar)। নির্বাচনী বন্ডের দুর্নীতিকে শুধু ভারতের নয়, সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্নীতি বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ভুগতে হবে বলেও জানান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের স্বামী। বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদের দাবি, এই নির্বাচনী বন্ড আগামী দিনে আরও বেশি করে প্রচারিত হবে। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নজিরবিহীন রায়দানের পর এসবিআই-এর তরফে সমস্ত তথ্য জানানো হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দল কার থেকে পাওয়া কত টাকার নির্বাচনী বন্ড ভাঙিয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এই বন্ডের তথ্য সামনে আসতেই বিরোধীরা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তবে এবার এই বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর স্বামী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ পরাকলা প্রভাকর।
এশিয়ার ‘শতকোটিপতিদের রাজধানী’ মুম্বই!
একদিকে যেমন ভারতের বেকারত্ব (Unemployment in India) সমস্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, সেখানে সম্প্রতি বেজিংকে হারিয়ে এশিয়ার ‘শতকোটিপতিদের রাজধানী’ হয়েছে বাণিজ্যনগরী মুম্বই। হুরুন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বৈশ্বিক ধনী তালিকা অনুসারে বর্তমানে এশিয়ার অন্য শহরের তুলনায় মুম্বইয়ে সবচেয়ে বেশি শতকোটিপতিদের বাস। অর্থাৎ, মুম্বই এখন এশিয়ার ‘শতকোটিপতিদের রাজধানী’। হুরুন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২৪ সালে বিশ্বের সব থেকে শতকোটিপতি রয়েছেন আমেরিকার নিউ ইয়র্কে। মোট ১১৯ জন শতকোটিপতি নিউ ইয়র্কে রয়েছেন। এর পরেই জায়গা করে নিয়েছে লন্ডন। সেই শহরে শতকোটিপতিদের সংখ্যা ৯৭। তালিকায় এর পরেই নাম রয়েছে মুম্বইয়ের। বিশ্বের তৃতীয় হলেও এশিয়ার মধ্যে প্রথম। সমীক্ষা অনুযায়ী, মুম্বইয়ের শতকোটিপতিদের সংখ্যা ৯২। বেজিং এর পরেই রয়েছে। ৯১ জন শতকোটিপতি রয়েছে চিনের রাজধানীতে। তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে সাংহাই।
উল্লেখ্য, এই প্রথম এশিয়ার ‘শতকোটিপতিদের রাজধানী’ হল বাণিজ্যনগরী মুম্বই।যদিও ভারতের তুলনায় চিনের শতকোটিপতিদের সংখ্যা অনেক বেশি। ভারতে শতকোটিদের সংখ্যা ২৭১। চিনে সেই সংখ্যা ৮১৪। মুম্বইয়ের সব শতকোটিপতিদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪৪৫০০০ কোটি ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, মুম্বইয়ের ধনকুবের মুকেশ অম্বানীর মতো ব্যবসায়ীদের সম্পত্তির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সব থেকে বেশি সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে রিয়েল এস্টেট সংস্থার মালিক মঙ্গল প্রভাত লোধার। এইচসিএল কর্তা শিব নাদার এবং তার পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্যারিস স্কুল অফ ইকোনমিক্স (Paris School of Economics) এর থমাস পিকেটি, হার্ভার্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাস চ্যান্সেল এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিন কুমার ভারতী মিলে 'ইনকাম অ্যান্ড ওয়েলথ ইনইকুয়ালিটি ইন ইন্ডিয়া, ২৯২২-২০২৩: দ্য রাইজ অফ দ্য বিলিয়নেয়ার রাজ' (2922-2023: The Rise of the Billionaire Raj) নামক একটি রিপোর্ট তৈরী করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, মোদি সরকারের ন’বছরে দেশে ধনী-গরিবের মধ্যে আর্থিক অসাম্য অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দেশের মোট আয়ে ধনীতম ১ শতাংশ ব্যক্তির ভাগ ২২.৬ শতাংশ আর দেশের মোট সম্পদে তাঁদের ভাগ ৪০.১ শতাংশ। শুধু তা-ই নয়, ভারতে এখন ‘আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণি’র নেতৃত্বে ‘ধনকুবেরদের রাজত্ব’ বা ‘বিলিয়নেয়ার রাজ’ চলছে বলেও রিপোর্টে দাবি করেছেন টমাস পিকেটি-সহ ওই অর্থনীতিবিদেরা। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে ভারতে ধীরে ধীরে ধনীদের শাসন বা ‘ধনিকতন্ত্র’ বা ‘প্লুটোক্রেসি’ কায়েম হতে পারে।