দেশ

Farmers Protest | ফের কৃষক আন্দোলনের ডাক ২০০র বেশি সংগঠনের! অভিযান রুখতে দুটি স্টেডিয়ামে তৈরী 'অস্থায়ী জেল'! দিল্লিতে ১ মাসের জন্য জারি ১৪৪ ধারা!

Farmers Protest | ফের কৃষক আন্দোলনের ডাক ২০০র বেশি সংগঠনের! অভিযান রুখতে দুটি স্টেডিয়ামে তৈরী 'অস্থায়ী জেল'! দিল্লিতে ১ মাসের জন্য জারি ১৪৪ ধারা!
Key Highlights

সরকারের কাছে অপূর্ণ দাবি নিয়ে ফের কৃষক আন্দোলনের ডাক ২০০র বেশি কৃষক সংগঠনের। আন্দোলন রুখতে তৈরী হরিয়ানায় দুটি স্টেডিয়ামে তৈরী 'অস্থায়ী জেল', দিল্লিতে ১ মাসের জন্য জারি ১৪৪ ধারা, বন্ধ পঞ্জাব ও হরিয়ানা সীমান্ত।

২০২০ সালে কার্যত কৃষকদের বিক্ষোভ (Farmers Protest) এ উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা ভারত। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ চলেছিল লাগাতার। প্রাণ হারান একাধিক কৃষক। তবে অবশেষে সেই আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত পিছু পা হতে হয়েছিল মোদি সরকারকে। প্রত্যাহার করা হয়  ‘বিতর্কিত’ কৃষি বিল। সেই ঘটনার কয়েক বছর পেরোতেই ফের আন্দোলনের পথে নামছেন কৃষকরা।  সরকারের কাছে অপূর্ণ দাবি নিয়ে ফের দরবার করতে চলেছে কৃষকরা। এই কারণে ১৩ই ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার দিল্লি চলো অভিযানের ডাক দিয়েছে কৃষকরা। তবে তার আগেই কৃষকদের রুখতে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নিলো হরিয়ানা সরকার। তড়িঘড়ি দু’টি বড় স্টেডিয়ামে অস্থায়ী জেল তৈরি করা হয়েছে হরিয়ানা সরকারের তরফে। অন্যদিকে, তৎপর ব্যবস্থা রাজধানী দিল্লিরও। আগামী ১ মাসের জন্য দিল্লিতে জারি করা হলো ১৪৪ ধারা (Section 144)!

কৃষকদের দিল্লি যাত্রা ও আন্দোলনের ডাক :

কৃষকদের প্রতিবাদের সর্বশেষ খবর (Latest news on farmers protest) অনুযায়ী, ১৬ই ফেব্রুয়ারি ভারত বনধের ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ও কিষাণ মজদুর মোর্চা-সহ ২৬টি কৃষক সংগঠন। এদিকে ১৩ই ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার দিল্লিতে পদযাত্রার ঘোষণা করেছেন কৃষকরা। মঙ্গলবার দিল্লি যাত্রার ডাক দিয়েছেন পঞ্জাব, হরিয়ানার হাজার হাজার কৃষক। তারা বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কর্পোরেট লুট বন্ধ করতে, কৃষিকাজ তথা ভারতকে বাঁচাতে ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত গ্রামীণ বনধের ডাক দেওয়া হচ্ছে। বিবৃতি জানানো হয়েছে, এই দিন গ্রামে বন্ধ থাকে কৃষিকাজ, MGNREGA কাজ ও গ্রামীণ কাজ। কোনও কৃষক এই দিন কৃষিকাজে যাবেন না। সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা (SKM) দ্বারা জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সবজি ও অন্যান্য ফসলের সরবরাহ ও ক্রয় স্থগিত রাখা হবে এই দিন। গ্রামের সব দোকান, শস্যের বাজার, সবজির বাজার, সরকারি-বেসরকারি অফিস, গ্রামীণ শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। হরতাল চলাকালীন শহরের দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। কৃষকদের প্রতিবাদের সর্বশেষ খবর (Latest news on farmers protest) অনুযায়ী বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, রাস্তায় এদিন সরকারি-বেসরকারি গাড়ি চলবে না। তবে ছাড় দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের জরুরি সেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স, মৃত্যু, বিয়ে, চিকিৎসার সামগ্রী পরিবহণ, সংবাদপত্র সরবরাহ, বোর্ড পরীক্ষা, বিমানবন্দরে প্রবেশের ব্যবস্থায়। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশাল চাক্কাজাম, রাস্তা রোকো ও সড়ক ধর্নায় অংশ নেবেন কৃষকরা।

কৃষকদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ :

কৃষকদের বিক্ষোভ (Farmers Protest)-আন্দোলন রুখতে সর্বোশক্তি প্রয়োগ করছে হরিয়ানা সরকার। ইতিমধ্যেই পঞ্জাব ও হরিয়ানা সীমান্ত সম্পূর্ণ সিল করে দেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। এছাড়াও হরিয়ানা সরকার দুটি বড় স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী কারাগারে রূপান্তরিত করেছে। সিরসার চৌধুরী দলবীর সিং ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং ডাবওয়ালির গুরু গোবিন্দ সিং স্টেডিয়াম অস্থায়ী জেল হিসেবে কাজ করবে বলে খবর। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে যেসব কৃষককে আটক বা গ্রেফতার করা হবে তাঁদের ঠাঁই হবে এই অস্থায়ী কারাগারে। এছাড়াও, বিক্ষোভকারীরা যাতে অন্যান্য জেলা থেকে হরিয়ানায় ঢুকতে না পারেন, সেই উদ্দেশ্যে রাজ্যের সীমানায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত ৫০ কোম্পানি পুলিশ মোতায়েন করেছে সে রাজ্যের সরকার। হরিয়ানার মনোহর লাল খট্টর সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অশান্তি এড়াতেই অম্বালা, কুরুক্ষেত্র, কইথাল, জিন্দ, হিসার, ফতেহাবাদ এবং সিরসা জেলায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মোবাইলের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। গ্রাহকেরা শুধুমাত্র ‘ভয়েস কল’ করতে পারবেন।

কৃষকদের মিছিল নিয়ে সতর্ক দিল্লিও। কৃষকদের কর্মসূচির আগে দিল্লিতে ১৪৪ ধারা (Section 144 in Delhi) জারি করা হয়েছে। যা জারি থাকবে এক মাস অর্থাৎ, ১২ মার্চ পর্যন্ত। পাশাপাশি, দিল্লির সীমান্তে জায়গায় জায়গায় কংক্রিটের দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া এবং পেরেকের পাটাতন। মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। কৃষকদের দিল্লিতে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য কেন্দ্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে বিরোধী দল এবং কৃষক সংগঠনগুলি। পাতিয়ালা থেকে আম্বালা যাওয়ার রাস্তাটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে ১৪৪ ধারা (Section 144 in Delhi জারির পাশাপাশি সোনাপিতা, ঝাজ্জার, পঞ্চকুলার পর কাইথালেও জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা (Section 144)।

 পঞ্জাব থেকে চণ্ডীগড় হয়ে কৃষরাও দিল্লি যাওয়ার জন্য পঞ্চকুলা হয়ে হরিয়ানায় প্রবেশ করতে পারেন। পুলিশ ট্রাফিক অ্যাডভাইজারিও জারি করেছে। অ্যাডভাইজারিতে জনগণকে পঞ্জাবে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে আম্বালা-চণ্ডীগড় জাতীয় সড়ক-১৫২, আম্বালা-হিসার জাতীয় সড়ক-৬৫, পানিপত-জলান্ধর জাতীয় সড়ক-৪৪ এংব আম্বালা-কালা আম্ব জাতীয় সড়ক-৩৪৪-ও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় নিত্যযাত্রীদের সমস্য়া বাড়তে পারে। সূত্রের খবর, পঞ্জাবের কৃষকরা ঘোষণা করেছেন ১০ হাজার ট্রাক্টর ট্রলিতে দিল্লি যাওয়ার জন্য হরিয়ানায় প্রবেশ করবেন তাঁরা। এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে শম্ভু বর্ডার, ডাবওয়ালি বর্ডার, খনাউরী সীমান্ত। কৃষকদের আন্দোলন রুখতে ইতিমধ্যেই সিল করে দেওয়া হয়েছে এই তিন সীমান্ত।

প্রসঙ্গত, ফসলের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) গ্যারান্টি দেওয়ার আইন, কৃষকদের জন্য পেনশন, শস্যবিমা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর বাতিলের দাবিতে ১৩ই ফেব্রুয়ারি ‘দিল্লি চলো’ ডাক দিয়েছেন পঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকেরা। জানা গিয়েছে, ২০০টির বেশি কৃষক সংগঠন আন্দোলনে শামিল হবে। উল্লেখ্য, কৃষক-কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিতীয় দফার বৈঠকটি ১২ই ফেব্রুয়ারি চণ্ডীগড়ে বিকেল ৫টায় সেক্টর ২৬ গান্ধী স্টে ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডা, পীযূষ গোয়েল এবং নিত্যানন্দ রাই। উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি কৃষক সংগঠন ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের এক দফায় বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বলেছিলেন যে তাঁরা কৃষক সংগঠনগুলির দেওয়া দাবিগুলির বিবেচনা করার আগে ১৩ ই তারিখের আগে আর একটি বৈঠক করবেন। এরপর মঙ্গলবার রাজধানীতে পদযাত্রা এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে তাদের। ফলে কৃষকদের আন্দোলনে ফের রাজধানীর রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। যার জেরে কেন্দ্রের তরফে সোমবার দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য কৃষক সংগঠনগুলিকে বৈঠকে বসার ডাক দিয়েছে।