লাইফস্টাইল

Lactose Intolerance | দুধ খাওয়ার পরেই সদ্যজাতর পেট খারাপ, বমি? হতে পারে 'ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্স'!

Lactose Intolerance | দুধ খাওয়ার পরেই সদ্যজাতর পেট খারাপ, বমি? হতে পারে 'ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্স'!
Key Highlights

শিশুদের 'ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্সে'র সমস্যা হয়েছে কি না তা বুঝতে খেয়াল রাখতে হবে লক্ষণ। এই শারীরিক সমস্যা হলে মাথায় রাখতে হবে বেশ কিছু বিষয়ও।

চিকিৎসক থেকে শুরু করে শিশু বিশেষজ্ঞ সকলেই বলেন, দুধ হলো সবথেকে উপকারী, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার। ফলে জন্মের পর থেকে দুধই হয়ে ওঠে শিশুদের মূল খাবার। তবে অনেকক্ষেত্রে দুধের জন্য হতে পারে শারীরিক সমস্যা। কারণ সব বাচ্চা দুধ সহ্য করতে পারে না। দুধ বা দুধ দিয়ে তৈরী কোনও খাবার শরীরে গেলেই পেট খারাপ থেকে শুরু করে বমির মতো নানা অসুবিধা হতে পারে। এই শারীরিক সমস্যাকে বলা হয় 'ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্স' (Lactose Intolerance)।

দুধ হজম বা সহ্য না করতে পারার এই শারীরিক অক্ষমতা বা 'ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্স' জন্মের পর থেকেই হতে পারে। তবে সদ্যজাত শিশুর ক্ষেত্রে বোঝা মুশকিল হয়ে ওঠে যে শিশুর 'ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্সে'র সমস্যা রয়েছে কি না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দুধ খাওয়ানোর পর পেট খারাপ, বমি, জ্বর, ত্বকের ইনফেকশনের মতো নানান সমস্যা হচ্ছে শিশুর। তবে সেটি সাধারণ বলে এড়িয়ে যান অনেক মা-বাবাই। কিন্তু এই লক্ষণগুলিই বলে দেয় যে শিশুর দুধ সহ্য হয়না।

ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্স কী ? । What is Lactose Intolerance ?

 'ল্যাকটোজ' (Lactose) যা প্রধান চিনি যা গরুর দুধ এবং সাধারণ দুগ্ধজাত দ্রব্যে থাকে। শরীরের  এনজাইম (Enzyme) ল্যাকটেজ (Lactase) সাহায্য করে ল্যাকটোজ হজমে। তবে বিশেষ শারীরিক অক্ষমতার কারণে শরীর হজমের জন্য পর্যাপ্ত ল্যাকটেজ তৈরি করে না। যার ফলে ল্যাকটোজও হজম হয়না। এই সমস্যাকেই ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা বা ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্স বলে। এই সমস্যা অনেক সময়ই বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়। কারণ ছোটবেলায় অনেক সময় শরীর ল্যাকটেজ তৈরী করতে পারে না। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময়ই ল্যাকটেজের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্সের সমস্যা দূর হয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু দুধ শিশুর প্রধান পুষ্টি, তাই ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হওয়ার কারণে সমস্যা হতে পারে। শিশু যদি ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হয়ে থাকে থাকলে অপাচ্য ল্যাকটোজ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (Gastrointestinal) সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন আপনার শিশুর ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্সের সমস্যা আছে কি না । How Do You Know If Your Child Has Lactose Intolerance : 

ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টার মেডিক্যাল সেন্টারের (University of Rochester Medical Center) মতে, শিশু ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে আক্রান্ত হলে দুধ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে নানান রকমের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এই শারীরিক সমস্যার লক্ষণগুলি খুব সাধারণ মনে হলেও তা কিন্তু নয়। ফলে দেখে নিন কী কী লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার শিশু ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স কি না।

১. পেট খারাপ । Stomach Problem : 

শিশু যদি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে আক্রান্ত হয় তাহলে দুধ খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তার পেট খারাপ হবে। এক্ষেত্রে শিশু পাতলা বা জলযুক্ত মল ত্যাগ করবে। এরকম সমস্যা দেখা দিলে প্রথমে দুধ এবং দুধ দিয়ে তৈরী খাবার শিশুকে খাওয়ানো বন্ধ করুন।

২. ডায়রিয়া । Diarrhoea : 

শরীর যখন পর্যাপ্ত ল্যাকটেজ তৈরি করে না, তখন ল্যাকটোজ অপাচ্য থেকে যায় এবং অন্ত্রে জমা হতে শুরু করে। এর ফলে ডায়রিয়া হতে পারে। যদি দেখেন শিশুকে দুধ খাওয়ার পর ডায়রিয়া হয় এবং তার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গও থাকে। তাহলে বুঝে যাবেন আপনার সন্তান ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু।

৩. বমি । Vomiting : 

যদি আপনার শিশু সবসময় অসুস্থ বোধ করে, বমি বমি ভাব এবং প্রচুর বমি করে, বিশেষ করে দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পরে। তাহলে শিশু ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হতে পারে। তবে এটি অন্যান্য কারণেও হতে পারে। ফলে খেয়াল রাখতে হবে দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ার পরেই এই সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে কি না।

৪. গ্যাস । Gas : 

 শিশুর পেট শক্ত বা গ্যাস হওয়াও ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার একটি লক্ষণ হতে পারে। তবে এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য শিশুর পেট আলতো করে চাপার চেষ্টা করুন, যদি এর কারণে শিশু চিৎকার করে,তাহলে পেট ফুলে যাওয়ার কারণে এই সমস্যা হতে পারে। যদি দেখেন এই সমস্যা দুধ খাওয়ার পরে বেশি হচ্ছে তাহলে আপনার শিশু ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্সের সমস্যায় ভুগতে পারে।

এছাড়াও আপনার শিশু যদি ঘন ঘন কান্নাকাটি করে বিশেষ করে দুধ খাওয়ার পর, তাহলে বেশি দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

শিশু ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্স হলে কী করবেন ?  । What To Do If The Child is Lactose Intolerance?

অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্সের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সদ্যোজাত শিশুর পেট খারাপ, বমির মতো শারীরিক সমস্যা প্রায়শই দেখা যায়। আবার শিশু ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা হলেও এই একই লক্ষণ দেখা যায়। ফলে যারা সদ্য মা হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে বোঝা মুশকিল হয়ে যায় যে তার শিশু ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্ট (Lactose Intolerant) কি না। তবে যদি দেখেন দুধ খাওয়ার পরই এই সমস্যাগুলি বেশি হচ্ছে তাহলে সব থেকে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেবেন না। তবে আপনার শিশু যদি ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্সে আক্রান্ত হয় আর তাহলে কী কী করবেন দেখে নিন এক নজরে।

পরীক্ষা করান । Test : 

অনেক সময় শিশুর সামান্য ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকতে পারে। অর্থাৎ তার শরীরে অল্প পরিমাণে ল্যাকটেজ থাকতে পারে। ফলে দুধ খাওয়ার পর যদি শিশুর শরীরে সামান্য সমস্যা দেখা দেয় তাহলে, দুই সপ্তাহের জন্য শিশুর খাদ্য থেকে সমস্ত দুধের দ্রব্য সরিয়ে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন শারীরিক সমস্যার লক্ষণগুলি কমেছে কি না। পর্যায়ক্রমে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুধের দ্রব্য পুনরায় চালু করুন এবং লক্ষণগুলি ফিরে আসে কিনা সেক্ষেত্রেও নজর রাখুন।

ল্যাকটোজ এড়িয়ে চলুন । Avoid Lactose : 

শিশুর জন্য সম্পূরক বা অন্য কোন খাবার কেনার সময়, এতে কী রয়েছে তা খতিয়ে দেখুন। এই সব খাবারে যদি দুগ্ধজাতীয় বা ল্যাকটোজ থাকে তাহলে তা এড়িয়ে চলাই ভালো। কেবল খাবারের ক্ষেত্রেই নয় ওষুধেও ল্যাকটোজ থাকতে পারে। ফলে কোনও খাবার বা ওষুধ কেনার সময় এর গায়ে লাগানো লেবেল ভালো ভাবে পড়ুন। যদি খাদ্য লেবেলে নিম্নলিখিত শব্দগুলির মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে পণ্যটিতে ল্যাকটোজ রয়েছে।

  •  দুধ (Milk)
  • ল্যাকটোজ (Lactose)
  •  দই (Yogurt)
  •  দুধের উপজাত (Milk By-Products)
  •  শুকনো দুধের কঠিন পদার্থ (Dry Milk Solids)
  •  ননফ্যাট শুকনো দুধের গুঁড়া (Nonfat Dry Milk Powder)

আপনার শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করুন | Make Sure Your Baby is Getting Enough Nutrition : 

শিশুদের জন্য সব থেকে পুষ্টিকর খাবার হলো দুধ। তবে যদি শিশুর ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্সের সমস্যা থাকে তাহলে এই পুষ্টিকর খাবার চলে যাবে বাদের তালিকায়। ফলে খেয়াল রাখতে হবে দুধ ছাড়া আপনার শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি পৌঁছাচ্ছে কি না। পুষ্টির পরিমাণ পরিপূর্ণ না হলে শিশুর নানা রকমের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হবে।

উল্লেখ্য, ল্যাকটোজ ইন্টোলারেন্স ছাড়াও অনেক সময় শিশুর দুধে অ্যালার্জি (Milk Allergy) থাকতে পারে। যার ফলে শিশু হয়তো দুধ খেতে পারবে না কিন্তু দুগ্ধজাতীয় খাবার খেতে পারবে। ফলে শিশুর আসলে কোন শারীরিক সমস্যা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।