Dhanteras 2024 । এ বছর ধনতেরাসে পড়েছে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ! কী কী কিনলে ভাগ্য ফিরবে আপনারও?
'ধনতেরাস' মূলত অবাঙালিদের উৎসব। তবে এখন বাঙালিরাও ধনতেরাস পালন করেন জাঁকজমকভাবে। দেবী লক্ষ্মী এবং কুবেরের আশীর্বাদ পাওয়ার আশায় এদিন সোনা রুপো কেনেন ভক্তেরা।২৯ অক্টোবর, মঙ্গলবার সকাল ১০.৩১ মিনিটে এই পুণ্য তিথি শুরু হচ্ছে, শেষ হচ্ছে ৩০শে অক্টোবর ১.১৫ মিনিটে। এবছর ধনতেরাসে তৈরি হচ্ছে 'ত্রিপুষ্কর যোগ', শাস্ত্রমতে এই যোগে যে কোনো কাজে তিন গুণ বেশি ফল পাওয়া যায়। এই শুভ যোগ থাকছে ধনতেরাসের দিন সকাল ৬.৩১ মিনিট থেকে শুরু করে রাত ১০.৩১ মিনিট পর্যন্ত ।
'ধন' কথার অর্থ হল 'ধনসম্পত্তি'। আর 'তেরাস' বলতে বোঝায় 'ত্রয়োদশী' অর্থাৎ তেরোতম দিনকে। অর্থাৎ, 'ধনতেরাস' কথার অর্থ হলো, কৃষ্ণপক্ষের তেরো নম্বর দিন, যেদিনটিতে ধনসম্পদ ক্রয় করতে হয় । প্রতিবছর কার্তিক মাসে, দীপাবলির ঠিক আগে এই দিনটি পালন করা হয়।
ধনতেরাসের ইতিহাস :
হিন্দু পুরাণমতে, এই দিনে দেবতা ও অসুরদের সমুদ্র মন্থনের সময় জল থেকে উঠে এসেছিলেন ধন্বন্তরী। ভারতীয় শাস্ত্রে ধন্বন্তরী ‘আয়ুর্বেদের দেবতা’ হিসেবে পূজিত হন। কথিত আছে, জল থেকে উঠে আসার সময় তাঁর একহাতে ছিল অমৃত ভরা কলসি ও অন্য হাতে ছিল আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বই। তাই এই দিনটিকে ‘ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী’ও বলা হয়। ২০১৬ সালে আয়ুষ মন্ত্রক এই দিনটিকে 'জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস' হিসাবে ঘোষণা করে।
আবার অনেকের মতে, প্রাচীন রাজা হিমুর ছেলের ওপর অভিশাপ ছিল যে বিয়ের ৪ দিনের মধ্যেই সাপের কামড়ে তাঁর মৃত্যু হবে। বিয়ের দিনই এ কথা জানতে পারেন যুবরাজের স্ত্রী। ফলে স্বামীকে বাঁচাতে সে রাত্রে যুবরাজকে ঘুমোতে দেননি তিনি। নিজের যাবতীয় গয়না ঘরের দরজায় জড়ো করে রেখে দিয়েছিলেন রাজকন্যা। সারারাত প্রদীপও জ্বালিয়ে রেখেছিলেন দুয়ারে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে যমরাজ এসে পৌঁছলে, দরজায় রাখা সোনা রুপোর ওপর প্রদীপের আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যায় তাঁর। তবু, সব বাঁধা পেরিয়ে যুবরাজের ঘরে পৌছন যমরাজ। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখেন, সোনার পালঙ্কের ওপর বসে যুবরাজকে গল্প শোনাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী। যমরাজও সেই সোনার স্তুপের ওপর বসে গল্প শুনতে লাগলেন, এভাবেই রাত কেটে সকাল হয়। ফলে, যুবরাজকে আর যমালয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না যমরাজ। তাঁকে খালি হাতেই ফিরতে হলো। সেই থেকেই ত্রয়োদশীর এই পুণ্য দিনে ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয়। ভারতের নানা প্রান্তে সিদ্ধিদাতা গণেশেরও পুজো করা হয় এদিন।
ধনতেরাস ২০২৪ :
এবছর ২৯ অক্টোবর, মঙ্গলবার ধনতেরাস উৎসব উদযাপন হবে৷ এদিন সকাল ১০.৩১ মিনিটে এই তিথি শুরু হচ্ছে, শেষ হচ্ছে ৩০শে অক্টোবর ১.১৫ মিনিটে। এ বছর ধনতেরাসে তৈরি হচ্ছে 'ত্রিপুষ্কর যোগ', শাস্ত্রমতে এই যোগে যে কাজ করা হয় তার চেয়ে তিন গুণ বেশি ফল পাওয়া যায়। এই শুভ যোগ থাকছে ধনতেরাসের দিন, ২৯ অক্টোবর সকাল ৬.৩১ মিনিট থেকে শুরু করে রাত ১০.৩১ মিনিট পর্যন্ত।
কী কী কিনবেন?
ধনতেরাস মূলত অবাঙালিদের উৎসব। তবে এখন বাঙালিরাও ধনতেরাস পালন করেন জাঁকজমকভাবে। দেবী লক্ষ্মী এবং কুবেরের আশীর্বাদ পাওয়ার আশায় এদিন সোনা রুপো ইত্যাদি ধাতুর তৈরী জিনিস কেনেন ভক্তেরা। দেখে নিন ধনতেরাসের দিন কী কী কেনা শুভ বলে মনে করা হয় -
- সোনা রূপোর গয়না ছাড়াও এদিন কিনতে পারেন তামার পাত্র, পিতলের বাসনকোশন, নতুন ফার্নিচার।
- এদিন লক্ষ্মী গণেশের ছবিযুক্ত রুপো বা সোনার কয়েন কেনা অত্যন্ত শুভ বলে ধরা হয়।
- টেলিভিশন, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ-এর মতো ইলেক্ট্রনিক্স-এর জিনিসও কিনতে পারেন এদিন। কিনতে পারেন নতুন গাড়িও।
- এছাড়া বাজেটে না পোষালে, কিনে নিতে পারেন ঝাঁটা। মৎস্যপুরাণ অনুযায়ী, ঝাঁটাকে দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক মনে করা হয়। ধনতেরাসে ঝাঁটা কিনলে সমস্ত দুঃখ, দারিদ্র্য চিরদিনের মতো বাড়ি থেকে দূর হয়ে যায়।
- আবার পুরাণ মতে, ধন্বন্তরি সমুদ্র মন্থনের সময় পূর্ণ কলস হাতে উঠেছিলেন। তাই জল রাখার পাত্র অর্থাৎ কলসিও কিনতে পারেন এদিন।
- পকেটে টান থাকলে পড়াশোনার জিনিস যেমন পেন কিনতে পারেন।
কী কী কিনবেন না ?
পরিবারের সুখ সমৃদ্ধি বজায় রাখার সাপেক্ষেই এইদিন অনেকেই সোনা, রুপো, ঝাঁটার মতো নানান জিনিস কিনে থাকেন। তবে অনেক কিছুই কিন্তু এই দিনে বিশেষ করে কেনা একেবারেই উচিত নয়। সেগুলি না মানলে কিন্তু সংসার থেকে সুখ চলে যায় বলে বিশেষ করা হয়। দেখে নিন ধনতেরাসের দিন কী কী কেনা উচিত নয়-
- কোনওভাবেই এই দিনগুলিতে পুরোনো জিনিস কিনবেন না। মনে করা হয়, পুরোনো জিনিস কিনলে রাহুর প্রকোপে পড়তে হয়, যা দুর্ভাগ্য ডেকে আনে।
- লোহা বা লোহার তৈরি জিনিস কেনার জন্য ধনতেরস মোটেও আদর্শ দিন নয়। তার পরিবর্তে এই দিন কিছু অ্যালুমিনিয়ামের জিনিস কিনতে পারেন।
- কাচের সঙ্গে রাহুর সংযোগ রয়েছে তাই ধনতেরসে কাচ কেনা বা উপহার দেওয়া উচিত নয়।
- ধনতেরসের দিন থেকে দীপাবলি অবধি কিনবেন না কোনোধরনের নেশার বস্তু যেমন তামাক, মদ ইত্যাদিও।
ধনতেরাসের আগের দিন সারা বাড়ি খুব ভালভাবে পরিষ্কার করবেন। ধনতেরাসের দিন সারা বাড়ি, বিশেষ করে মূল প্রবেশ পথের ওপর রঙ্গোলী দেবেন। লাল রঙের রঙ্গোলী গুঁড়ো দিয়ে লক্ষ্মী দেবীর পা’ও আঁকতে পারেন। এদিন সারা বাড়িতে নতুন প্রদীপ জ্বালাতে হবে। খেয়াল রাখবেন, প্রদীপ যেন টানা দুঘণ্টা ধরে জ্বলে। এরপর ভক্তিভরে পুজো করবেন দেবী লক্ষ্মীর। তবেই দেবী অচলা থাকবেন আপনার গৃহে, দেবীর কৃপায় সুখসমৃদ্ধিতে ভরে থাকবে আপনার বাসস্থান ।
- Related topics -
- ধনতেরাস
- উৎসব ২০২৪
- পুজো ও উৎসব
- দীপাবলি ২০২৪
- দীপাবলি