সাহিত্য

Kazi Nazrul Islam | বাঙালি কবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রসিক ছিলেন 'দুখু মিঞা'ই! জানুন কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে অজানা তথ্য!

Kazi Nazrul Islam |  বাঙালি কবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রসিক ছিলেন 'দুখু মিঞা'ই! জানুন কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে অজানা তথ্য!
Key Highlights

সাহিত্যের মতো কাজী নজরুল ইসলামের জীবনও ছিল বিচিত্র আর বহুবর্ণিল। কবির সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা খুব বেশি প্রচলিত নয়।

বাঙালির বিদ্রোহী কবি তিনি। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাঁকে “বাংলার কবি, বাঙালি কবি” বলে অভিহিত করেন ১৯২৯ সালে। তৎকালীন কলকাতার অ্যালবার্ট হল বা বর্তমানের কফি হাউসে তাঁকে জাতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)। আজ নজরুল ইসলাম (Nazrul Islam) এর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা (kazi nazrul islam kobita) দ্বারা ফুটে ওঠে বিল্পবীভাব,আধ্যাত্মিকভাব।  তিনি বহুমাত্রিক রূপে প্রকাশমান। যে কবির কাব্যে শোনা গিয়েছিল মৃত্যুঞ্জয়ী চির যৌবনের জয়ধ্বনি,শোনা গিয়েছিল অগ্নিবীণার সুর ঝংকার, যিনি ধীর স্থির অচঞ্চল বাংলা কাব্যে বয়ে এনেছিলেন দুর্বার কালবৈশাখীর ঝড় সেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। 

বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া (churulia) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। পিতা কাজী ফকির আহমদ ও মাতা জাহেদা খাতুন নজরুলের বাল্য নাম রেখেছিলেন 'দুখু মিঞা। ছোটবেলার থেকেই  চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে। তাও পাঠশালায়, হাইস্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে গেছিলেন; কখনো উদ্যম হারিয়ে যায় নি। এসময় নজরুল ইসলাম (Nazrul Islam), মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন এবং সেই মক্তবেই শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।  প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে তিনি নওশেরায় যান এবং প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে একজন সৈনিক হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, তাঁর সৈনিক জীবনের প্রায় আড়াই বছরের সময়কালে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন। রেজিমেন্টে কর্মরত অবস্থাতেই তিনি ফার্সি ভাষা শিখছিলেন। দেশী-বিদেশী নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতের চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি আর তার পাশাপাশি গদ্য-পদ্যের চর্চাও চালিয়ে গিয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম করাচি সেনানিবাসে কর্মরত অবস্থায় বহু রচনা সম্পাদন করেছিলেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ,বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা)।  তাঁর রচিত গল্পগুলির  মধ্যে অন্যতম হল, হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধি ইত্যাদি। নজরুলের সাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি এই করাচি সেনানিবাসেই। সেই সময়ে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধের অবসান ঘটলে ছাঁটাইয়ের খাতায় নাম উঠেছিল নজরুলের। মহাযুদ্ধের স্মৃতি এবং পরাধীনতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দাবাগ্নি জ্বালিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে এসেছিলেন বাংলার অখ্যাত হাবিলদার কবি। কাজী নজরুল ইসলাম চলচ্চিত্র এবং মঞ্চ জগতের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৩১ সালে 'ভক্ত ধ্রুব' ছবিতে নারদের ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং সুরারোপও করেন। 

  • সাহিত্যের মতো কাজী নজরুল ইসলামের জীবনও ছিল বিচিত্র আর বহুবর্ণিল। কবির সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা খুব বেশি প্রচলিত নয়। জেনে নেওয়া যাক কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) সম্পর্কিত এমন কয়েকটি তথ্য-
  •  নজরুল ইসলাম কোনো অনুষ্ঠানে গেলে ঝলমলে রঙিন পোশাক পরতেন। কেউ তাঁকে রঙিন পোশাক পরার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, 'রঙিন পোশাক পরি অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। 
  •  নজরুলের পাঠাভ্যাস ছিল বহুমুখী। তিনি পবিত্র কোরান, গীতা, বাইবেল, বেদ, ত্রিপিটক, মহাভারত, রামায়ণ যেমন পড়তেন, তেমন পড়তেন শেলি, কিটস, কার্ল মার্ক্স, ম্যাক্সিম গোর্কিসহ বিশ্বখ্যাত লেখকদের লেখা। 
  •  বাংলা গানে নজরুলই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সব ধরনের বিষয় নিয়ে গান লিখেছেন। তাঁর গানের সংখ্যা অনেকে চার হাজার বললেও আসলে তিনি গান লিখেছিলেন প্রায় আট হাজারের মতো, যার অধিকাংশই সংরক্ষণ করা যায়নি।
  •  বাঙালি কবিদের মধ্যে নজরুলই ছিলেন সবচেয়ে বেশি রসিক। তাঁর কথায় হাসির ঢেউ উঠত। হিরণ্ময় ভট্টাচার্য ‘রসিক নজরুল’ নামে একটি বইও লিখেছেন।
  •  কাজী নজরুল ইসলাম প্রচুর পান ও চা খেতেন। লিখতে বসার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ চা আর এক থালা পান নিয়ে বসতেন তিনি। পান শেষ করে চা, এরপর আবার চা শেষ করে পান খেতেন।
  •  নজরুল ছিলেন সত্যিকারের হস্তরেখা বিশারদ। তিনি অনেকের হাত দেখে যা বলতেন, তা-ই ঘটতে দেখা গেছে। 
  • মাঝেমধ্যে রাগান্বিত হলে নজরুল তাঁর সামনে যদি কোনো বই-খাতা পেতেন বা কাগজ পেতেন, তা ছিঁড়ে কুচি কুচি করে ফেলতেন। 

 নজরুলের জীবন কোনো নিয়মের জালে আটকা ছিলেন না। যখন যা ভালো লাগত, তিনি তা-ই করতেন। দিন নেই, রাত নেই হই হই রব তুলে উঠে পড়তেন কোনো বন্ধুর বাড়িতে। তারপর চলত অবিরাম আড্ডা আর গান। নজরুলের লেখার জন্য কোনো বিশেষ পরিবেশও লাগত না। গাছতলায় বসে যেমন তিনি লিখতে পারতেন, তেমনি ঘরোয়া বৈঠকেও তাঁর ভেতর থেকে লেখা বের হয়ে আসত। কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা (kazi nazrul islam kobita) ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে।