Kartik Puja | কার্তিক মাসের শেষ দিনে পূজিত হন 'চিরকুমার' কার্তিক! জানেন কেন নব দম্পতির বাড়িতে ফেলা হয় কার্তিক?

Thursday, December 21 2023, 2:33 pm
highlightKey Highlights

১৭ই নভেম্বর কার্তিক পূজা ২০২৩। জানুন কীভাবে জন্ম হলো কার্তিক ঠাকুরের। কেনই বা নব দম্পতির বাড়িতে ফেলা হয় কার্তিক।


দুর্গাপুজো, দীপাবলি, ভাইফোঁটার পর এবার কার্তিক পুজোয় মেতে বাংলা ও বাঙালি। প্রত্যেক বছর কার্তিক মাসের শেষ দিনে অর্থাৎ কার্তিক সংক্রান্তির দিনে ধুমধাম করে পালন করা হয় কার্তিক পূজা (Kartik Puja)। দেব সেনাপতি, যুদ্ধের দেবতা, মহাদেব ও দেবী পার্বতীর সন্তান হলেন ভগবান কার্তিক ঠাকুর (Kartik Thakur)। এই দেবতার পুজো প্রাচীন ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পুজো। তবে এই পুজো নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে এক মজার রীতি। সদ্য বিয়ে করার পরেই সেই দম্পতির বাড়িতে পরিবার পরিজন বা বন্ধুরা কার্তিক ঠাকুর (Kartik Thakur) এর মূর্তি ফেলেন। তবে কেন প্রচলিত এই রীতি? কার্তিক পূজা ২০২৩ (Kartik Puja 2023) পড়েছেই বা কবে?

কার্তিক পূজা ২০২৩ কবে?

Trending Updates

কার্তিক পূজা ২০২৩ (Kartik Puja 2023) পড়েছে ৩০ কার্ত্তিক, ১৭ই নভেম্বর , শুক্রবার। ১৭ই নভেম্বর রাত প্রায় ১টা ১৯ মিনিটে সূর্য রাশি পরিবর্তন করে তুলা থেকে বৃশ্চিক রাশিতে গমন করবে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা ও গুপ্তপ্রেশ পঞ্জিকা অনুসারে – বাংলার  ৩০ কার্ত্তিক, শুক্রবার; ইংরেজির ১৭ই নভেম্বর, শুক্রবার; শুক্ল পক্ষ চতুর্থী তিথিতে শ্রী শ্রী কার্ত্তিক পূজা। শ্রী শ্রী মিত্র (ইতু) পূজারম্ভ, মাস ব্যাপী আকাশ দ্বীপ প্রদান সমাপ্ত।

কার্তিক পূর্ণিমা পূজার বিধি (Kartik Purnima Puja Vidhi) অনুযায়ী, দেবী দুর্গা এবং দেবাদিদেব মহাদেবের পুত্র দেব সেনাপতি কার্তিক। দেব সেনাপতি কার্তিক পৌরাণিক দেবতা। শাস্ত্র মতে বিশ্বাস করা হয়, দেব সেনাপতি কার্তিকের আরাধনায় পুত্র সন্তান লাভ হয়। এছাড়াও কার্তিকের আরাধনা করলে সাংসারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুফলও পাওয়া যায়। ভক্তি ও নিষ্ঠা মেনে কার্তিক পুজো করলে আয় এবং উন্নতি লাভ হয়। কার্তিকের সঙ্গে বীরত্বের সম্পর্ক থাকার কারণে দেব সেনাপতির আরাধনায় যশ, বল লাভ হয় বলেও বিশ্বাস করা হয়। দেব সেনাপতি কার্তিকের উপাসনায় মঙ্গল গ্রহের শুভ ফল প্রাপ্ত হয়।  

কার্তিক কোথাও 'সুব্রহ্মণ্যম' কোথাও 'মুরুগান'। তবে কার্তিক বৈদিক দেবতা নন, তিনি পৌরাণিক দেবতা। কার্তিকের জন্ম নিয়ে নানা কাহিনি আছে। একটি কাহিনিতে শোনা যায়, একদা শিব ও পার্বতীর মিলনে এক জ্যোতিঃপিণ্ড তৈরি হল। রতির অভিশাপের জেরে গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারেননি পার্বতী। এদিকে অগ্নিদেব সেই তেজোময় জ্যোতিঃপিণ্ডটি নিয়ে পালিয়ে যান। ব্যাপারটি পরে জানতে পেরে পার্বতী ভয়ানক রেগে গেলেন। যদিও ওটা চুরি করে নিয়ে গিয়ে স্বয়ং অগ্নিদেবই সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন। ওই অগ্নিপিণ্ডটির তাপ তিনি সহ্য করতে পারলেন না। এরপর সেটি গঙ্গায় নিক্ষেপ করলেন। সেই তেজোরাশি তখন গঙ্গা দ্বারা বাহিত হয়ে অপূর্ব রূপবান এক শিশুর জন্ম দিল। জন্মের পর অপূর্ব ওই কুমারকে ছয় কৃত্তিকা স্তন্যপান করান। তাই এই কুমার 'কার্তিক' নামে অভিহিত হন কার্তিক। পরে পার্বতী এই শিশুকে কৈলাসে নিয়ে আসেন।

পুরাণে কথিত আছে কার্তিক ছিলেন মহাপরাক্রমশালী যোদ্ধা। যখন তারকাসুরকে বধ করা দেবতাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পরে তখন সেই সময় দৈববলে প্রাপ্ত অজেয় শক্তির অধিকারী কার্তিক তারকাসুরকে নিধন করেছিলেন। সেই থেকেই তিনি দেব সেনাপতি হিসেবেই পূজিত হয়। স্কন্ধ পুরাণে কার্তিক ঠাকুর সম্পর্কে সবিস্তার উল্লেখ রয়েছে। দেব সেনাপতি কার্তিকের অনেক নাম আছে, যথা- অম্বিকেয়, কৃত্তিকাসুত, কুমার, দেব সেনাপতি, গৌরী সুত, শক্তিপানী ইত্যাদি। পুরান অনুসারে কার্তিক হলুদ বর্ণা। বাংলায় চিরকুমার দেবতা হিসেবে পরিচিত কার্তিকের বাহুন ময়ূর। কার্তিকের নাকি ছয় মাথা তাই তাঁকে আবার ষড়াননও বলা হয়। কার্তিকের হাতে থাকে ধনুক তীর বর্ষা।

কার্তিক পূজা (Kartik Puja) নিয়ে গ্রাম বাংলার একটি বিশেষ রীতি প্রচলিত রয়েছে। নববিবাহিত বা যাদের সন্তান নেই তাঁদের বাড়িতে যদি কার্তিক পুজো করা হয় তাহলে নাকি কোল আলো করে আসে ফুটফুটে সন্তান। তবে কার্তিককে চিরকুমার বলা হলেও কোথাও কোথাও কিন্তু কার্তিকের বিয়ের কথা উল্লেখিত আছে পুরানে। বহু জায়গায় উল্লেখ করা রয়েছে, চেহারায় অত্যন্ত সুন্দর বলিষ্ঠ কার্তিক ব্রহ্মা এবং সাবিত্রির মেয়ে দেবী ষষ্ঠীকে বিয়ে করেন। যার ফলে কার্তিক পূর্ণিমা পূজা বিধি (Kartik Purnima Puja Vidhi) মেনে করলে সন্তান লাভের সঙ্গে আরও বহু দিকে আশীর্বাদ পাওয়া যায়।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় কার্তিক পুজো অতি মহাসমারোহে উদযাপিত করা হয়। ঐতিহ্যবাহী কার্তিক পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত কাটোয়া। এ বছর দেব সেনাপতির আরাধনায় নজর কাড়তে কোথাও গড়া হয়েছে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের আদলে মণ্ডপ, আবার কোথাও লালকেল্লা। কেরলের মন্দিরও তুলে আনা হয়েছে মণ্ডপে। কোনও পুজো মণ্ডপের থিম সাজানো হয়েছে আন্দামানের মানুষের জীবনযাত্রা দিয়ে। সব মিলিয়ে, জমজমাট কার্তিক পুজোর বার্তা দিচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তবে বাংলা বাদে ভারতের দক্ষিণেও কার্তিক পূজার প্রচলন আছে। তামিলরা কার্তিক পূজা করেন তবে সেখানে তার নাম স্কন্ধ বা মুরুগান। তাই জন্য বিদেশে যেখানে তামিলরা আছে যেমন শ্রীলংকা মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর সেখানে স্কন্ধ বা মূরুগান অর্থাৎ কার্তিকেরই পুজো করা হয় কিন্তু ভিন্ন নামে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File