Kargil Vijay Diwas | কার্গিল বিজয় দিবস ২০২৫: বীর শহিদদের স্মরণে গর্বের দিন! এক নজরে ইতিহাস-ভারতীয় সেনার ত্যাগ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য!

১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই ভারতীয় সেনার ঐতিহাসিক কার্গিল বিজয় দিবস (kargil vijay diwas)। এদিন পাক সেনাকে চূর্ণ করে কার্গিলে ইতিহাস তৈরি করেছিল ভারতীয় সেনা। কার্গিল যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া ভারতীয় সৈনিকদের অপরিসীম সাহস ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতি বছর ২৬ জুলাই কার্গিল বিজয় দিবস (26 july kargil vijay diwas) পালন করা হয়। এই দিনটি দেশপ্রেম, গর্ব এবং কৃতজ্ঞতার বোধ জাগিয়ে তোলে। জেনে নিন কার্গিল বিজয় দিবসের ইতিহাস (kargil vijay diwas history) এবং কার্গিল সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য -
১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই ভারতীয় সেনার ঐতিহাসিক কার্গিল বিজয় দিবস (kargil vijay diwas)। এদিন পাক সেনাকে চূর্ণ করে কার্গিলে ইতিহাস তৈরি করেছিল ভারতীয় সেনা। কার্গিল যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া ভারতীয় সৈনিকদের অপরিসীম সাহস ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতি বছর ২৬ জুলাই কার্গিল বিজয় দিবস (26 july kargil vijay diwas) পালন করা হয়ে থাকে দেশে। এই দিনটি দেশপ্রেম, গর্ব এবং কৃতজ্ঞতার বোধ জাগিয়ে তোলে। বিশেষ করে আজকের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও ত্যাগের চেতনাকে আরও শক্তিশালী করে। জেনে নিন কার্গিল বিজয় দিবসের ইতিহাস (kargil vijay diwas history) এবং কার্গিল সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য -
কার্গিল বিজয় দিবসের ইতিহাস । Kargil Vijay Diwas History :
সালে প্রায় দুমাস ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলেছিল কার্গিল বিজয় (kargil vijay) এর যুদ্ধ। তবে ঘটনার সূত্রপাত হয় এক মেষপালক থেকে। মে মাসের পুরু বরফের আস্তরণে ঢাকা কার্গিলের পাহাড়ি অঞ্চলে কনকনে ঠান্ডায় কাজে বেরিয়েছিলেন এক মেষপালক৷ কিন্তু হঠাৎই তাঁর নজরে আসে পাক সেনার সন্দেহভাজন গতিবিধি। এরপর তিনি সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন ভারতীয় সেনাকে (Indian Army)। ১৯৯৯ সালের ৫ই মে সেনার একটি দলকে পাহাড়ে পাঠানো সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন ভারত সরকার। কিন্তু ভারত-পাক সীমান্তে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাদের। এরপরে সরব হয় নর্থ ব্লক। শুরু হয় ভারত-পাকের মধ্যে কার্গিল যুদ্ধ!
জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল দ্রাস সেক্টরের শুরু হয় কার্গিল যুদ্ধ। পাকিস্তান সেনার উদ্দেশ্য ছিল লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC) দখল করে কাশ্মীরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। কিন্তু ভারতীয় সেনারা সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে শত্রুদের পরাজিত করে। সেই সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee) প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক স্থাপন করা প্রস্তাব দিলেও বারংবার আক্রমণ করে গিয়েছে ইসলামাবাদ। এমনকি কোনও আলোচনা না করে ১৯৯৯ সালে পায়ে হেঁটে নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করে কার্গিলে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানের এক সশস্ত্র বাহিনী। পাকিস্তানের এই সশস্ত্র বাহিনী 'অপারেশন বদ্রি '(Operation Badri) এর কার্গিলে প্রবেশের পরেই বাড়তে থাকে চাপানউতোর। শুরু হয় ভারত-পাক সংঘর্ষ। পরে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হলে কার্গিল সীমান্তে পৌঁছয় ২ লক্ষ ভারতীয় সেনা। ভারতের পক্ষ থেকে এই মিশনের নাম দেওয়া হয় 'অপারেশন বিজয় ' (Operation Vijay)।
কার্গিল যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান ভারত ও পাক, দুই পক্ষেরই বহু সেনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও পিছু হটতে নারাজ ছিল পাকিস্তান। এদিকে ভারতের সেনাও আরও শক্তি বাড়িয়ে লড়ে চলে বীরের মতো। অবশেষে ১৯৯৯ সালে ২৬ শে জুলাই ভারতের সেনার কাছে মাথানত করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। তারপর থেকেই ২৬ শে জুলাই ঘোষিত হয় কার্গিল বিজয় দিবস (kargil vijay diwas) হিসেবে। বলা বাহুল্য, প্রায় দুমাস ধরে চলা এই যুদ্ধে শহীদ হন ভারতের ৫২৭ জন বীর সেনা জওয়ান। তাদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর ২৬ জুলাই কার্গিল বিজয় দিবস (26 july kargil vijay diwas) হিসেবে দেশে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ভারতীয় সেনার ত্যাগ ও সম্মান । Sacrifice and Honor of the Indian Army :
কার্গিল যুদ্ধে ৫২৭ জন ভারতীয় সৈনিক শহীদ হন। এই যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য ভারত সরকার ৪টি পরম বীর চক্র, ৯টি মহাবীর চক্র, ৫৫টি বীর চক্র, ১টি সর্বোত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, ৬টি উত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, ৮টি যুদ্ধ সেবা মেডেল, ৮৩টি সেনা মেডেল এবং ২৪টি বায়ু সেনা মেডেল প্রদান করে। যার মধ্যে পরম বীর চক্র সম্মান পান ক্যাপ্টেন মনোজ কুমার পাণ্ডে (মরণোত্তর, ১১ গোর্খা রাইফেলস), গ্রেনেডিয়ার যোগেন্দ্র সিং যাদব (১৮ গ্রেনেডিয়ার্স), ক্যাপ্টেন বিক্রম বাটরা (মরণোত্তর, ১৩ জেকে রাইফেলস) এবং রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমার (১৩ জেকে রাইফেলস)। মহাবীর চক্র সম্মান পান ক্যাপ্টেন অনুজ নায়ার (মরণোত্তর, ১৭ জাট), মেজর রাজেশ অধিকারী (মরণোত্তর, ১৮ গ্রেনেডিয়ার্স), মেজর বিবেক গুপ্ত (মরণোত্তর, ২ রাজপুতানা রাইফেলস) এবং লেফটেন্যান্ট ক্লিফোর্ড নংরুম (মরণোত্তর, ১২ জেকে এলআই)।
কার্গিল সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য । Some important information about Kargil :
- কার্গিল যুদ্ধ বিশ্বের সবথেকে উঁচু স্থানে হওয়া যুদ্ধগুলির মধ্যে অন্যতম।
- কার্গিল বিজয় (kargil vijay) এর জন্য ‘অপারেশন বিজয়’-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রায় দু’লক্ষ ভারতীয় সেনাকে। কার্গিলে মোতায়েন ছিলেন প্রায় ৩০,০০০ ভারতীয় জওয়ান। এই লড়াইয়ে ভারতের অন্তত ৫২৭ জন জওয়ান শহিদ হন। আহত হন প্রায় ১ হাজার ৩৬৩ জন জওয়ান।
আরও পড়ুন : 'অপারেশন সিঁদুর'-এর 'মুখ' কর্নেল সোফিয়া কুরেশি-উইং কমান্ডার ভূমিকা সিংকে চেনেন? জানুন পরিচয়!
- কার্গিল যুদ্ধের সময় খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল ভারতীয় এয়ার ফোর্সের (Indian Air Force) 'সফেদ সাগর' অপারেশন। সেই সময় প্রথমবার কার্গিল যুদ্ধের জন্য ৩২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছিল ভারত। এতটা উচ্চতায় যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা মোটেই সহজ কাজ নয়। এমনকি এতটাই প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে প্রশিক্ষিত পাইলটেরও বিমানের ভেতর দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে ভারতের বীর সেনারা এই অপারেশনের সাফল্য লাভ করেন।
- তৎকালীন সময় ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর ছিল। এমনকি সূত্রের খবর, কার্গিল যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ে ভারতের বিরুদ্ধে পারমানবিক শক্তি প্রয়োগের পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তান। সেক্ষেত্রে পরামর্শ দেন তৎকালীন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফ।
- কার্গিল যুদ্ধে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার বন্দুকের গুলি ও রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) পর এটি প্রথম এমন লড়াই ছিল যেখানে একটি দেশ নিজের শত্রু দেশের উদ্দেশ্যে এত গোলাগুলির ব্যবহার করেছিল।
- শোনা যায়, ১৯৯৮ সাল থেকেই নাকি কার্গিলে অনুপ্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিল পাক সেনা। প্রায় ৫০০০ জওয়ানকে কার্গিলে প্রবেশের জন্য পাঠিয়েছিলেন মুশারফ।
- কার্গিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ১৯৯৯ সালের ২৮ মার্চ তৎকালীন পাক সেনা প্রধান পারভেজ মুশারফ নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। আর ভারতে নাকি এক রাত কাটিয়েও গিয়েছিলেন।
- ভারত-পাকের কার্গিল যুদ্ধ শেষে ইসলামাবাদ দাবি করে, ওই যুদ্ধে সে দেশের ৩৫৭ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় সেনার তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, কার্গিল যুদ্ধে প্রতিবেশী 'শত্রু' দেশের তিন হাজারেরও বেশি সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন। যাঁদের বেশিরভাগই পাকিস্তানের প্যারা মিলিটারি ফোর্সের জওয়ান ছিলেন। পরে এক পাক সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছিল যে, তৎকালীন সময়ের পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ (Nawaz Sharif) নাকি কার্গিল যুদ্ধের ব্যর্থতা স্বীকার করে এই যুদ্ধে ৩ হাজার পাকিস্তানি সৈনিকের মৃত্যুর খবরের সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
কার্গিল যুদ্ধ জয়ের কাহিনী আজও স্মরণ করলে কাটা দিয়ে ওঠে গায়ে। ভারতের বীর জওয়ানদের সম্মানের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক বছর ২৬ শে জুলাই ইন্ডিয়া গেটের (India Gate) সামনে 'অমর জওয়ান জ্যোতি'তে (Amar Jawan Jyoti) কার্গিল যুদ্ধের সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। কেবল নেতা-মন্ত্রীরাই নন, গোটা ভারত জুড়ে পালন করা হয় কার্গিল বিজয় দিবস (kargil vijay diwas)। কার্গিল বিজয় দিবস (kargil vijay day) দিবস শুধুমাত্র এক উদযাপনের দিন নয়, বরং এটি ভারতীয়দের গর্বের মুহূর্ত। ওই যুদ্ধ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দেশের নিরাপত্তার জন্য সেনারা কী পরিমাণ আত্মত্যাগ করেন। কার্গিল যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর অটল সংকল্পের চিরন্তন স্মারক। জয় হিন্দ!