Kali Puja 2023 | মন্দিরের চাতালে বসে মায়ের গান গাইতেন অ্যান্টনি! জানুন ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির ইতিহাস!

Thursday, November 9 2023, 3:17 pm
highlightKey Highlights

বছরের অন্যান্য সময়ের মতো কালীপুজো ২০২৩ এর জন্য প্রস্তুতি ফিরিঙ্গি কালীবাড়িতে। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির জন্যই নাকি অন্য কোনো কারণে ফিরিঙ্গি নাম এই কালীবাড়ির?


আর কটা দিন, তার পরেই এই শহর তথা এই গোটা দেশ মেতে উঠবে শক্তির আরাধনায়। ইতিমধ্যেই গোটা কলকাতা-দেশ সেজে উঠেছে আলোতে। আগামীকাল, ১০ই নভেম্বর ধনতেরাস (Dhanteras)। তারপরের পরের দিনই কালী পূজা ২০২৩ (Kali Puja 2023)। আগামী ১২ই নভেম্বর রবিবার, অমাবস্যা তিথিতে হবে দয়াময়ী মা কালীর আরাধনা। দুর্গাপুজোর মতো কালী পুজো উদযাপন করা হয় কলকাতা তথা গোটা বঙ্গ জুড়ে। বিশেষত বারাসাতের বারোয়ারি কালী পুজোই বেশি বিখ্যাত, তবে কলকাতার কালী পূজা (Kolkata Kali Puja)ও বেশ জনপ্রিয়। বারোয়ারি পুজো তো রয়েছেই, তবে এছাড়া তিলোত্তমার বুকে এমন কিছু কালী মন্দির রয়েছে যার সঙ্গে রয়েছে রোমাঞ্চকর ও অজানা ইতিহাস। এরকম কালী মন্দিরের মধ্যে একটি হল ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি (Firingi Kalibari)।

কলকাতার বুকে বৌবাজার স্ট্রিট ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগ স্থলে, ২৪৪, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ঠিকানার এক অহিন্দু এবং ওভারতীয়র নামে গড়ে ওঠা ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি (Firingi Kalibari) দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতার অন্যতম প্রসিদ্ধ এক কালীমন্দির হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা পুজো দিতে ছুটে আসেন এই মন্দিরে। কলকাতার কালী পূজা (Kolkata Kali Puja)র সময়েও উপচে পরে এখানে ভিড়। দেবীমূর্তিটি মায়ের সিদ্ধেশ্বরী রূপের। পঞ্চমুন্ডির আসনে প্রতিষ্ঠিত মূর্তিতে নিত্যপুজো করা হয়। কথিত আছে, স্মল পক্স থেকে সেরে উঠে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীমন্ত ডোম নামে এক ভক্ত। কলকাতার বুকে গঙ্গার পাশে গভীর জঙ্গলের মধ্যে মহাশ্মশানের ধারে ছোট্ট এক চালাঘরে কালীমূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রীমন্ত। সঙ্গে শিবমন্দিরও ছিল। তবে শ্মশানে প্রতিষ্ঠা হলেও মূর্তির নাম সিদ্ধেশ্বরী। সেইসময় থেকেই মন্দিরের সঙ্গে ফিরিঙ্গি সাহেবদের নাম জড়িয়ে।

এক সময় কলকাতার বুকে কবিগানের লড়াই ছিল বিশ্বখ্যাত। অ্যান্টনি ছিলেন এই লড়াইয়ে শ্রেষ্ঠ কবিয়াল। বলা হয়, তাকে কবিগানের হারানো ছিল অসম্ভব। কবিয়াল অ্যান্টনির পুরো নাম হ্যান্সমান অ্যান্টনি। এই পর্তুগাল কবিয়াল ছিলেন  মা কালী ভক্ত। বলা হয় উনিশ শতকে অ্যান্টনি এই কালীমন্দিরে আসতেন পুজো দিতে। মন্দিরের চাতালে বসে একমনে গাইতেন মা কালীর গান। তার থেকেই এই মন্দিরের নাম ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি। কথিত আছে, মাতৃভক্ত পর্তুজিগ সাহেব অ্যান্টনিকে একবার নাকি স্বপ্নও দিয়েছিলেন মা কালী। সেই আদেশেই মন্দির সংস্কারে হাত দেন খোদ অ্যান্টনি। বর্তমানে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির আধুনিক রুপ নাকি কবিয়াল অ্যান্টনির দেওয়া। অ্যান্টনি তার এই আরাধ্যা দেবীকে শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানি নামে পুজো করতেন। 

তবে  বহু ঐতিহাসিক বলে থাকেন ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির সঙ্গে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির কোনো সম্পর্ক নেই। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির মতো এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বর্তমান মন্দিরের গায়ে বসানো এক ফলকে প্রতিষ্ঠাকাল হিসেবে ৯০৫ বঙ্গাব্দের উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তা সম্ভব নয়, তার কারণ তাহলে মন্দিরের বয়স দাঁড়ায় ৫২৫ বছর। তবে অত বছর আগে মধ্য কলকাতার এই অঞ্চলে জনবসতি ছিল না ফলে কোনও মন্দির প্রতিষ্ঠাও সম্ভব নয়। বলা হয়, এক সময়ে এই অঞ্চলে বহু ইউরেশিয়ান থাকতেন। তাঁদের কেউ কেউ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির জন্য এই মন্দিরে মানত করতে আসতেন। ফলে মনে করা হয় এই কারণেই সম্ভবত মন্দিরটি লোকমুখে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। কটনের লেখা কলকাতার ইতিহাস বইতে এই মন্দিরের কথা আলোচিত হয়েছে। তাঁর বিবরণের সূত্র ধরে বলা হয়ে থাকে, শ্রীমন্ত ডোম নামে এক তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে সে মন্দির কোনও এক বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের হাতে আসে এবং তাঁরাই সেবাইত হয়ে মন্দিরের দেখাশোনা করে চলেছেন দীর্ঘকাল ধরে।

ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। দক্ষিণমুখী কালীমন্দিরটি চাঁদনি শৈলীতে নির্মিত। মাতৃমূর্তিটি সাধারণ কালী বিগ্রহের মতোই। তবে দেবীর দক্ষিণে অষ্টধাতুর দুর্গা একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। এছাড়াও মন্দিরে মা শীতলা ও মনসা মূর্তিও দেখা যায়। বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েতরা ব্যানার্জি উপাধিকারি। ফিরিঙ্গি কালীবাড়িতে প্রতিদিন মিষ্টি ও ফল দিয়ে পুজো করা হলেও মাসে দুবার অন্নভোগ দেওয়া হয়।

মা কালীকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। কোথাও তিনি পূজিতা হন দক্ষিণা কালী রূপে, তো কোথাও আবার শশ্মান কালী রূপে। কোথাও মা কালীর গায়ের রং সাদা, তো আবার কোথাও তিনি নীলবর্ণা। মনে করা হয় সময় মেনে নিষ্ঠা ভরে পুজো করলে মা কালী আশীর্বাদ করেন। অনেকেই মনে করেন মা কালী নাকি খুব জাগ্রত। বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকা মতে, ১০ ই নভেম্বর ধনতেরাস (Dhanteras)। ২০২৩ কালী পূজার তারিখ (2023 Kali Puja Date) ১২ই নভেম্বর। অমাবস্যা তিথি শুরু হবে এদিন দুপুর ২টো বেজে ৪৪ মিনিটে। অমাবস্যা তিথি থাকছে ১৩ই নভেম্বর সোমবার ২ টো ৫৬ মিনিট পর্যন্ত। শাস্ত্র মতে এই অমাবস্যাতে নিশীথ সময়ে আরাধনা করা হয় দেবী কালিকার। এই বছর নিশীথ সময় শুরু হবে ২০২৩ কালী পূজার তারিখ (2023 Kali Puja Date) ১২ই নভেম্বর ১১টা ৩৯ মিনিট থেকে রাত ১২টা পেরিয়ে আর অল্পক্ষণ। ১২টা ৩২ মিনিট অবধি। অর্থাৎ মাত্র ৫৩ মিনিট নিশীথ সময় থাকছে এই বছর।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File