ISRO Chandrayaan 3 | ইতিহাস গড়বেই চন্দ্রযান-৩! চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স!
সন্ধ্যা ৬ টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস গড়তে চলেছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩। সাফল্য কামনায় গোটা দেশ। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই বলে আশ্বাস দিলেন ইসরো বিজ্ঞানী।
এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। কয়েকঘন্টা বাদেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে চলেছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩ (ISRO Chandrayaan 3)। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ অর্থাৎ ২৩সে অগাস্ট ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সন্ধ্যে ৬টা ৪মিনিটে চাঁদের মাটি ছোঁবে চন্দ্রযান-৩। গোটা ভারত (India) তথা বিশ্বর নজর সেদিকেই।
ইসরো চন্দ্রযান-৩ সম্পর্কে আরও পড়ুন : ইতিহাস তৈরী করতে চলেছে চন্দ্রযান-৩! কোথায় দেখবেন লাইভ টেলিকাস্ট?
ইসরোর চন্দ্রজাভিযান সাফল্যের কামনা করে মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন শুভাকাঙ্খীরা। দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa) থেকে ভার্চুয়ালি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)। চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের জন্য কামনা করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রথম সারির ব্যক্তিরা, সাধারণ মানুষ সকলেই। উল্লেখ্য, এর আগে চন্দ্রযান-৩ এর যাত্রা শুরু হওয়ার আগে ইসরোর বিজ্ঞানীরা পুজো দিয়েছিলেন তিরুপতি মন্দিরে (Tirupati Temple)। এবার অবতরণের দিন পুজো করা হলো দক্ষিণভারতের রামেশ্বর মন্দিরে (Rameshwar Temple)। রামেশ্বরম অগ্নি তীর্থে আয়োজন হয় বিশেষ যজ্ঞের। মঙ্গলবারই বিশেষ পুজো আয়োজন করা হয় শিবক্ষেত্র বারাণসীতে (Sevakshetra Varanasi)। এছাড়ও উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর মন্দিরে (Mahakaleshwar Temple) বিশের ভস্মারতি অনুষ্ঠিত হয়। শ্রী গণেশ মন্দির বিশেষ পুজো দিয়েছেন এনসিপি কর্মী-সমর্থকরা। চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করতে ছতরপুরের বাগেশ্বর ধামে সমবেত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক ভক্ত।
সম্প্রতি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল রাশিয়ার লুনা ২৫ (Russia's Luna 25)। এর আগে ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ (Chandrayaan-2) এরও যাত্রা সম্পূর্ণ হয়নি। ব্যর্থতার সম্মুখীন হয় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization)। তবে অবতরণ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছে ইসরো। ইসরোয় কর্মরত এক তরুণ বাঙালি বিজ্ঞানী এই সম্পর্কে বলেন, আগেরবারের অর্থাৎ চন্দ্রযান-২ এর ভুলত্রুটিগুলো সব রেকর্ডে ধরা পড়েছিল। সেগুলি মাথায় রেখেই এবারের অভিযান ডিজাইন করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই অভিযান সাত সিগমা পর্যন্ত অ্যানালিসিস করে করা হয়েছে। সাধারণত তিন সিগমা বা পাঁচ সিগমা পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে কোনও অভিযান হয়। অর্থাৎ কোনও অভিযান কত রকমভাবে ব্যর্থ হতে পারে, তা আগে থেকেই ক্যালকুলেশন করে দেখা হয়। তারপর সেই ভুলগুলি ঠিক করে নেওয়া হয়। আগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাত সিগমায় ডিজাইন করা চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশি।
ইসরো চন্দ্রযান-৩ সম্পর্কে আরও পড়ুন : চাঁদের মাটিতে ছিটকে পড়লো 'খরগোশ' লুনা ২৫! অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে চন্দ্রযান-৩!
বলা যেতে পারে চন্দ্রযান-২ এর যাত্রার ব্যর্থতার ক্ষত মিটাতে এখন একমাত্র সমম্বল চন্দ্রযান-৩। ২০১৯ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর নীরবতা গ্রাস করেছিল বেঙ্গালুরুতে ইসরোর টেলিমেট্রি ট্র্যাকিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের মিশন কন্ট্রোল রুমে (ISRO's Telemetry Tracking and Control Center in Bangalore)। চন্দ্রযান-২-এর ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার বিক্রম (Lander Vikram) আছড়ে পরে চাঁদের মাটিতে। বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি বিক্রমের সঙ্গে। তবে এবারের চন্দ্রাভিযান নিয়ে অনেক বেশি সতর্ক ইসরো। নয়া প্রযুক্তি সঙ্গে অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণে অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য সাহায্য নেওয়া হবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Inteligence)। ইসরো সূত্রে খবর, ল্যান্ডিং প্রক্রিয়ায় যদি কোনও প্রকার গোলমাল তৈরি হয় তবে ইসরোর বিজ্ঞানীরা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাবেন না। কারণ এবার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর (AI) দ্বারা। অবতরণের ১৫ মিনিট আগে থেকে সব ক্ষমতা চলে যাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কাছে। অবতরণের সময় ১৫ মিনিট কম্পিউটার লজিক দ্বারা স্বয়ংসক্রিয় ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে প্রক্রিয়াটি। ইতিমধ্যেই ল্যান্ডারের কম্পিউটার, নির্দেশিকা এবং নিয়ন্ত্রণ নেভিগেশন সিস্টেমগুলিতে বিষয়টি লোড করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরো চন্দ্রযান-৩ সম্পর্কে আরও পড়ুন : 'অসম্পূর্ণ', তবে বিফলে নয়! চন্দ্রযান-৩কে চাঁদে অবতরণে সাহায্য করছে চন্দ্রযান ২!
সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে অবতরণের জন্য এদিন সন্ধ্যা ৫টা ৪৭ মিনিট থেকেই শুরু হয়ে যাবে অবতরণের প্রক্রিয়া। এই সময়কালে মিশন নিয়ন্ত্রক ল্যান্ডারের কাছে কমান্ড পাঠাতে পারবে না। চন্দ্রযান -৩-এর ল্যান্ডারকে সফ্ট ল্যান্ডিং করতে প্রোগ্রাম করা এআই কাজ করবে। চন্দ্রযান-৩ মূল অংশ হল এটির সেন্সর। যখন দূরবর্তী কোনও যানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয় তখন এই সেন্সরগুলির সাহায্য নেওয়া হয়। মহাকাশযানটি কোথায় রয়েছে, এর গতি কত, কী অবস্থায় রয়েছে তা জানতেই ব্যবহার করা হয় এই সেন্সরগুলি। ভেলোসিমিটার (Velocimeter) এবং অল্টিমিটার (Altimeter) ল্যান্ডারের গতি এবং উচ্চতার জানান দেয়।
ইসরো চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, অন্য আর একটি মূল এআই হল ল্যান্ডারের বোর্ডে নেভিগেশন, গাইডেন্স এবং কন্ট্রোল সিস্টেম। এটি চন্দ্রযান-৩-এ থাকা কম্পিউটার লজিক ছাড়া আর কিছুই নয়। অবতরণের জন্য সঠিক অবস্থানে নিয়ে যাবে এই এআই। ল্যান্ডারটিকে কোন দিকে নিয়ে যেতে হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ল্যান্ডারটিকে অবতরণের পথে নিয়ে যাবে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সব সেন্সর ব্যর্থ হলেও, দু'টি ইঞ্জিন কাজ না করলেও চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে চন্দ্রযান-৩।
চন্দ্রযান-৩ এর ১৫ মিনিটের অবতরণ প্রক্রিয়ায় ১০ মিনিটের মাথায় ল্যান্ডারটি চাঁদের পৃষ্ঠের ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে ৭.৪২ কিলোমিটার উচ্চতায় নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে অনবোর্ড সেন্সরগুলি কাজ করা শুরু করে দেবে। চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ৮০০ থেকে ১৩০০ মিটার দূরত্বে থাকাকালীন সেন্সরগুলি ১৫০ মিটার উপরে থাকাকালীন কোথায় অবতরণ করবে সেই বিষয়টি ঠিক করে নেবে। এর জন্য চন্দ্রযান-৩ সাহায্য নেবে ল্যান্ডারের ক্যামেরাগুলির। যে জায়গাটি তুলনামূলক কম পাথুরে, গর্তবিহীন ও মসৃণ সেই জায়গাটিতেই সফ্ট ল্যান্ড করবে চন্দ্রযান-৩।