Israel Iran War | ভয়াবহ সংঘর্ষে ইরান-ইজরায়েল! পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হলে মূল্যবৃদ্ধি থেকে জ্বালানি-সহ আর কী কী সংকট দেখা যাবে ভারতে?
রবিবার ভোর হতে না হতেই ইজরায়েলে হামলা চালায় ইরান। ইজরায়েলে একাধিক মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। ইজরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভোররাত থেকেই তাদের দেশে শতাধিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে ইরান। এক্ষেত্রে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে একাধিক সংকট দেখা যাবে ভারতে।
মধ্য প্রাচ্যে রাতারাতি যুদ্ধ পরিস্থিতি! ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে ইরান-ইজরায়েল। শয়ে শয়ে মিসাইল, ড্রোন নিয়ে ইহুদি দেশটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান। সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই প্রতিহত করেছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। ইসরায়েল ইরানের খবর (israel iran news) অনুযায়ী, ইরান শনিবার ইজরায়েলে কয়েক ডজন ড্রোন নিয়ে হামলা শুরু করেছে। ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, এই আক্রমণ আঞ্চলিক শত্রুদের মধ্যে একটি সমস্যা বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষ পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে নয়াদিল্লি। রবিবার অফিসিয়াল বিবৃতি দিয়ে তেমনটা জানিয়ে দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। তবে ইরান এবং ইজরায়েলের মাঝে অশান্তিতে যুদ্ধ বাঁধলে পরিণতি হতে পারে মারাত্মক। যার প্রভাব পড়বে ভারতবর্ষেও। ভারতে মুদ্রাস্ফীতি (Inflation in India) ছাড়াও আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
ইজরায়েলে হামলা ইরানের!
আশঙ্কা আগেই ছিলই। তবে সেই আশঙ্কা সত্যি করেই রবিবার, ১৪ই এপ্রিল ভোর হতে না হতেই ইজরায়েলে হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েল ইরানের খবর (israel iran news) অনুযায়ী, ইজরায়েলে একাধিক মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। ইজরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভোররাত থেকেই তাদের দেশে শতাধিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে ইরান। এই আবহে জর্ডান, ব্রিটিশ এবং মার্কিন বাহিনী সাহায্য করছে ইজরায়েলকে। এই তিন দেশের বাহিনী নাকি ইরানের একাধিক ড্রোনকে গুলি করে নামিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১লা এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে হামলা চালানো হয়। এতে ইরান প্রশাসনের দুই পদস্থ আধিকারিক-সহ মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়। কেউ এই বিমান হামলার দায় স্বীকার না করলেও মনে করা হয় যে, এর নেপথ্যে ছিল ইজ়রায়েল। তার পরেই গত বৃহস্পতিবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলি হোসেইনি খোমেইনি বলেছিলেন, ইজ়রায়েলকে অবশ্যই কৃতকর্মের শাস্তি পেতে হবে। তার পরেই শনিবার মধ্যরাতে প্রায় ২০০টি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ইরান। যদিও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার সাহায্য ‘৯৯ শতাংশ’ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করে ইজ়রায়েল। ফলে বিশেষ ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি সে দেশ থেকে।
ইজ়রায়েলের উপর হামলার ব্যাখ্যা দিল ইরান!
রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজ়রায়েলের উপর ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণ ব্যাখ্যা করল ইজ়রায়েল। তেহরানের বক্তব্য, ‘আত্মরক্ষা’র জন্যই তাদের এই অভিযান। এ ক্ষেত্রে তাদের হাতে অন্য কোনও উপায় ছিল না বলেও দাবি করেছে পশ্চিম এশিয়ার শিয়াপ্রধান এই দেশটি। রবিবার রাষ্ট্রপুঞ্জে ইরানের দূত আমির সইদ ইরাভানি বলেন, “আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।” তার পরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ইরান জানিয়েছে, তারা যুদ্ধের পরিধি কিংবা তীব্রতা বাড়ুক, এমনটা চায় না। তবে যে কোনও আগ্রাসন কিংবা হুঁশিয়ারির জবাব দিতে চায়। যদিও অন্য দিকে, ইরানের তরফে দাবি করা হয়েছে, আমেরিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার ‘বন্ধু’ দেশগুলিকে জানিয়েই তারা ইজ়রায়েলে হামলা চালায়। যদিও ইরানের এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে আমেরিকা। তাদের বক্তব্য, এই বিষয়ে কোনও কথাই হয়নি ইরানের সঙ্গে।
ইরান বনাম ইসরায়েল: সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?
ইজরায়েলে হামলা করেছে ইরান। ফলে গোটা বিশ্বের নজর এখন সেদিকে। তবে অনেকেরই প্রশ্ন, ইরান বনাম ইসরায়েলের সামরিক শক্তি (Iran vs Israel military power) কার বেশি শক্তিশালী? পাওয়ার ইনডেক্সের ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরান রয়েছে ১৪তম অবস্থানে এবং এর ঠিক তিন ধাপ পেছনেই, অর্থাৎ ১৭তম অবস্থানে রয়েছে ইসরায়েল। ইরানের মোট জনসংখ্যা ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ৭৩ জন, যাদের মধ্যে ৪ কোটি ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৭১০ জন সেনা সদস্য হওয়ার উপযুক্ত। ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা ৯০ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৭ জন, যাদের মধ্যে ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ১৪২ জন সেনা সদস্য হিসেবে কাজ করার জন্য উপযুক্ত।
ইরানের সেনাবাহিনীর অ্যাক্টিভ মেম্বার রয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার। অন্যদিকে ইসরায়েলের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৭৩ হাজার। ফলে সেনাবাহিনীর সংখ্যার দিক থেকে যোজন যোজন পিছিয়ে তেল আবিব। তবে, যুদ্ধের সময় প্রয়োজনে মাঠে নামানো যাবে, এমন রিজার্ভ সেনা সংখ্যায় ইরানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইসরায়েল। ইরানের ৩ লাখ ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনার বিপরীতে ইসরায়েলের রয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার রিজার্ভ সেনা। সামরিক বাজেটের ক্ষেত্রে ইরানের চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে ইসরায়েল। দেশটির বার্ষিক মিলিটারি বাজেট ২৪.৩৪ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ইরানের সামরিক বাজেট মাত্র ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এয়ার পাওয়ারেও ইরানের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ইসরায়েল। দেশটির কাছে এয়ারক্রাফট আছে ৬০১টি। আর ইরানের কাছে রয়েছে ৫৪১টি। ইরানের ফাইটার এয়ারক্রাফট যেখানে ১৯৬টি, সেখানে ইসরায়েলের রয়েছে ২৪১টি। তবে, দুই দেশেরই সমান ১২৬টি করে হেলিকপ্টার রয়েছে। ৮. স্থলশক্তিতে অনেকটাই এগিয়ে ইরান। দেশটির হাতে ট্যাংক রয়েছে ৪ হাজার ৭১টি। অন্যদিকে ইসরায়েলের রয়েছে ২ হাজার ২০০টি। তেহরানের ৬৯ হাজার আর্মার্ড ভেহিক্যালের বিপরীতে তেল আবিবের রয়েছে ৫৬ হাজার। আর ইরানের ১ হাজার মোবাইল রকেট প্রজেক্টর থাকলেও সেখানে ইসরায়েলের রয়েছে মাত্র ৩০০টি। নৌ-শক্তিতেও এগিয়ে ইরান। তেহরানের কাছে রয়েছে ১৯ থেকে ২৪টি সাবমেরিন, বিপরীতে ইসরায়েলের রয়েছে ৫টি। ইরানের ৫টি ফ্রিগেট থাকলেও তেল আবিবের এই ধরনের কোনো নৌযান নেই। তবে, ইরানের তিনটি কভার্টের বিপরীতে ইসরায়েলের রয়েছে সাতটি। আর তেহরানের ১টি মাইন ওয়ারফেয়ার থাকলেও ইসরায়েলের কোনো মাইন ওয়ারফেয়ার নেই।
ভারতে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব!
দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষ পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে নয়াদিল্লি। রবিবার অফিসিয়াল বিবৃতি দিয়ে তেমনটা জানিয়ে দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। ইরান এবং ইজরায়েলের মাঝে অশান্তিতে যুদ্ধ বাঁধলে পরিণতি হতে পারে মারাত্মক। উদ্বেগের বিষয়, ইরান এবং ইজরায়েলের যুদ্ধ পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে এগোয়, তবে তার সরাসরি প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে। রাতারাতি বেড়ে যেতে পারে অপরিশোধিত তেলের দাম। এর ফলে ভারত ভোগান্তিক শিকার হবে।
অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি : এই মুহূর্তে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ৯০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই এই তেলের দাম ১০০ ডলার ছুঁয়ে ফেলবে বলে আন্তর্জাতিক মহলের অনুমান। অপরিশোধিত তেলের ৮০ শতাংশই ভারতে আমদানি হয়। তবে রাতারাতি তেলের দাম বাড়তে থাকলে ভারতে এই অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে হবে মোটা টাকা খসাতে হবে।
মুদ্রাস্ফীতি : ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ চললে ভারতে মুদ্রাস্ফীতি (Inflation in India) ঘটতে পারে। ভারত যা তেল আমদানি করে তার অধিকাংশই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। ফলে এই যুদ্ধের কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ভারত। আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়েও।
প্রতিরক্ষা সরবরাহ : প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল অশোক কুমার বলেছেন, ইজরায়েল এবং ইরানের যুদ্ধের ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা সরবরাহ প্রভাবিত হতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল।\
প্রসঙ্গত, ইজরায়েলের উপর ইরানের হামলার পরই এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত। এরপরই আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে তৎপর হয় নয়াদিল্লি। তড়িঘড়ি চালু করা হয় হেল্পলাইন নম্বর। এই যুদ্ধের মধ্যেই ভারতের মালবাহী জাহাজ এমএসসি অ্যারিস-এর ১৭ জন ক্রুয়ের নিরাপত্তা এবং তাড়াতাড়ি মুক্তি নিশ্চিত করতে ইরানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এস জয়শংকর। কথা বলে আশ্বাসও মিলেছে বলে দাবি তাঁর। ওই ১৭ নাবিকের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের দেখা করতে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, ওই নাবিকদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বিদেশমন্ত্রক। নিরাপদে তাঁদের পরিবারের কাছে ফেরানো হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।