লাইফস্টাইল

প্রয়াত বাংলা কমিক্সের প্রবাদপ্রতিম স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ

প্রয়াত বাংলা কমিক্সের প্রবাদপ্রতিম স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ
Key Highlights

সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক জগতে পরপর নক্ষত্রপতন ~ শাঁওলী মিত্র, বিরজু মহারাজ আর সদ্য গত হলেন সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথ। শিল্পী নারায়ণ দেবনাথের(Narayan Debnath ) প্রয়াণে আজ শূন্য বাংলা কমিকসের দুনিয়া ; শোক প্রকাশ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ।

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন 'হাঁদা ভোঁদা', 'নন্টে-ফন্টে' এবং 'বাঁটুল দি গ্রেট'-এর মত বিভিন্ন কালজয়ী কমিকসের স্রষ্টা তথা "পদ্মশ্রী" জয়ী লেখক নারায়ণ দেবনাথ। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। 

গত ২৫ দিন ধরে তিনি কলকাতার এক বেসরকারি চিকিৎসালয় 'বেলভিউ হাসপাতাল'-এ ভর্তি ছিলেন । ব্লাড স্টুলের সমস্যা নিয়ে গত ২৪শে ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য শনিবার রাতে তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। এমনকি তাঁকে বাইপ্যাপও দেওয়া হয়েছিল। আজ সকাল থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বাঁটুল-স্রষ্টার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার সাহিত্য তথা গোটা শিল্পী মহল। 

তিনি চলে যাওয়ার পর, শোকপ্রকাশ করেছেন সাহিত্যিক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। 

আজ সব বাঁটুল ও নন্টে-প্রেমীদের অশৌচ।

সাহিত্যিক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

১৯২৫ সালের ২৫ শে নভেম্বর হাওড়ার শিবপুরে নারায়ণ দেবনাথ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম হেমচন্দ্র দেবনাথ। তিনি অ্যাডভেঞ্চারের বই পড়তে ভালবাসতেন। হেমেন্দ্রকুমার রায় ছিলেন তাঁর প্রিয় লেখক । তিনি পড়াশুনোর বদলে গল্পের বই পড়ার জন্য বাড়িতে বকুনিও খেতেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁকে টানত ভিসুয়াল আর্ট। সেই টান থেকে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে ফাইন আর্টস নিয়ে পড়াশোনা শুরু। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার দরুন পাঁচ বছরের কোর্স চার বছরের মাথায় ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। 

তাঁর লেখা কমিক্স "হাঁদা ভোঁদা" প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। "হাঁদা ভোঁদা" -র পর একে একে তাঁর লেখা অন্যান্য কমিক্স প্রকাশিত হতে শুরু করে। ১৯৬৫ সালে 'বাঁটুল দি গ্রেট', ১৯৬৯ সালে 'নন্টে ফন্টে', ১৯৮২ সালে 'বাহাদুর বেড়াল' ইত্যাদি। ছোট থেকে বড় সকলেই তাঁর লেখা কমিক্স পড়ে খুবই আনন্দিত হন।

তাঁর লেখা আট থেকে আশি সকলের মন জয় করে নিয়েছে। তাঁর লেখার জন্য ঝুলিতে এসেছে অসংখ্য সম্মান।  ২০০৭ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ পুরস্কার; ২০১৩ সালে 'বঙ্গ বিভূষণ' সম্মান; ২০১৩ সালে 'সাহিত্য অ্যাকাডেমি' পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। এমনকি  ২০১৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে "ডি.লিট." (D. Litt) উপাধি দেয়। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ২০২১ সালে বর্ষীয়ান কমিক শিল্পী নারায়ণ দেবনাথকে 'পদ্মশ্রী' সম্মানে ভূষিত করে ভারত সরকার। 

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার তাঁর হাতে পদ্মশ্রী পুরষ্কার তুলে দিয়েছিলেন মন্ত্রী অরূপ রায় এবং অতিরিক্ত মুখ্য সচিব বিপি গোপালিকা।

বেলভিউ হাসপাতাল সূত্রে খবর অনুযায়ী, এই কিংবদন্তি শিল্পী তথা লেখক নারায়ণ দেবনাথ আজ সকালে অর্থাৎ ১৮ই জানুয়ারি, ২০২২-এ ভারতীয় সময় অনুযায়ী সকল ১০ টা বেজে ১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বাংলার সাহিত্য তথা গোটা শিল্পী মহল তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ। 

একদিকে তাঁর সৃষ্ট বাঁটুল-নন্টে-ফন্টে-হাঁদা-ভোঁদারা আজও হাসিয়ে চলেছে বাঙালিকে, আর অন্যদিকে সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ। একটি জাতীয় টেলিভিশনের পর্দায় আজও "বাঁটুল দি গ্রেট"-কমিক্সটি অভিনয় করে দেখান হয়। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি শোকপ্রকাশ করেছেন। 

পরিবার সূত্রে খবর অনুযায়ী, শিবপুর শ্মশানে করোনা বিধি মেনে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। 

১৬ই জানুয়ারি, ২০২২, রবিবার বিকেল ৩টে ৪০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তাঁর অন্ত্যেষ্টির পর জানানো হয় মৃত্য সংবাদ। সিরিটি শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় সেদিন রাতেই। শাঁওলি মিত্র একটি ইচ্ছাপত্র তৈরি করেছিলেন। সেখানেই তিনি জানিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর খবর শেষকৃত্যের পর যেন সকলকে জানানো হয়। সেই ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর প্রিয়জনেরা।

ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্ক আর গপ্পো’-এর বঙ্গবালা চরিত্রে অভিনয় এখনও তাঁর গুণমুগ্ধদের মুখে মুখে ফেরে। ‘নাথবতী অনাথবৎ’ শাঁওলি বাংলা থিয়েটারের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। অনন্য অভিনয় তাঁকে সম্মানিত করেছিল পদ্মশ্রী (২০০৯), বঙ্গ বিভূষণ (২০১২), সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কারে (২০০৩)।

১৭ই জানুয়ারি, ২০২২, সোমবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ‘কত্থক সম্রাট’ বিরজু মহারাজ। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে গোটা বিনোদন দুনিয়া। বেশ কিছু দিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন ৮৩ বছর বয়সী এই নৃত্যশিল্পী। নিময়িত ডায়ালিসিসও চলছিল, রবিবার রাতে বাড়িতেই হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর, হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকরা। 

সৃষ্টির আকাশে আজ তাই দেখা দিয়েছে তারার অভাব । এই তিন কিংবদন্তি শিল্পীর মৃত্যুর ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা চিরকালই অপূরণীয় থেকে যাবে ।