West Bengal GI Tags | জিআই তকমা পেলো কালোনুনিয়া চাল থেকে সুন্দরবনের মধু-সহ বাংলার ৫টি সম্পদ! রাজ্যের জিআই ট্যাগের তালিকায় আর কোন কোন সম্পদ রয়েছে?

Thursday, January 4 2024, 10:17 am
highlightKey Highlights

সুন্দরবনের মধু পেলো জিআই স্বত্ব বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস। সেই সঙ্গে বাংলার আরও চারটি সম্পদকে দেওয়া হয়েছে জিআই স্বত্ব। বঙ্গের জিআই ট্যাগের তালিকায় আর কোন কোন সম্পদ রয়েছে দেখুন।


পশ্চিমবঙ্গের সাফল্যের মুকুটে জুড়লো পালক। পুণের সংস্থাকে হারিয়ে সুন্দরবনের মধু-র জিআই স্বত্ব (GI) বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস (Geographical Indications) পেল বাংলা। সেই সঙ্গে বাংলার আরও চারটি সম্পদকে দেওয়া হয়েছে জিআই স্বত্ব। এই তালিকায় রয়েছে গরদ, কড়িয়াল, টাঙ্গাইল শাড়ি ও উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির সুগন্ধি কালোনুনিয়া চাল। কেন্দ্র সরকারের জিআই পোর্টালের স্টেটাসে বুধবার থেকেই রেজিস্টার্ড দেখা যাচ্ছে। ফলে শংসাপত্র পেতে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। 

জিআই তকমা পেলো কালোনুনিয়া চাল থেকে সুন্দরবনের মধু-সহ বাংলার ৫টি সম্পদ
জিআই তকমা পেলো কালোনুনিয়া চাল থেকে সুন্দরবনের মধু-সহ বাংলার ৫টি সম্পদ

জিআই ট্যাগের পূর্ণ অর্থ (GI tag full form) হলো  জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস। ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই ট্যাগের পূর্ণ অর্থ (GI tag full form) জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস ট্যাগ  হলো এমন একটি চিহ্ন যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক অবস্থান থেকে উদ্ভূত বা  তৈরি হওয়া পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এই পণ্যগুলির উৎসের কারণে বিশেষ গুণা বা খ্যাতি রয়েছে। পণ্য উভয় প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট হতে পারে। জিআই ট্যাগ একটি নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য সার্টিফিকেশন প্রদানের একটি পদ্ধতি যা কোন ঐতিহ্যগত পদ্ধতি অনুসরণ করে উত্পাদিত হয়েছে বা যার বিশেষ গুণাবলী রয়েছে এবং ভৌগলিক উত্সের স্থানের কারণে একটি স্বতন্ত্র খ্যাতি অর্জন করেছে। ভারতে মোট জিআই ট্যাগ (Total gi tag in india) এর সংখ্যা ৪০০ এরও বেশি।  ভারতে জিআই ট্যাগ জাতীয় পানীয়, হস্তশিল্প, কৃষি পণ্য, শিল্প পণ্য ইত্যাদির মতো বিভিন্ন পণ্যগুলিকে দেওয়া হয়। যেমন ভারতে প্রথম জিআই ট্যাগ (First GI tag in India) পায় দার্জিলিংয়ের চা।

পশ্চিমবঙ্গের জিআই ট্যাগ :

ভারতে মোট জিআই ট্যাগ (Total gi tag in india) এর মধ্যে প্রায় ২২টি জিআই ট্যাগ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের। এবার এই জিআই ট্যাগের তালিকা (GI tag list) তে যোগ হলো বাংলার আরও পাঁচটি সম্পদ। এই ঘটনাকে সাফল্য হিসাবেই দেখছে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ। বিশেষ করে সুন্দরবনের মধু (Sundarban Honey)-র জিআই স্বত্ব-র জন্য যেভাবে পুণের একটি সংস্থা আবেদন করে ওই প্রাকৃতিক মধুর একচেটিয়া ব্যবসা করতে চেয়েছিল। সেই জায়গায় বাংলা ওই তকমা অর্জন করায় বনদপ্তরের আওতাধীন পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম এই সাফল্যকে রীতিমতো গর্ব হিসাবে দেখছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের তত্ত্বাবধানেই সুন্দরবনের মউলিরা ওই মধু সংগ্রহ করেন। ওই নিগম তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বাজারে এনেছে দীর্ঘকাল আগে। যা ‘মৌবন’ নামে পরিচিত।

ওই মধু এখন বন উন্নয়ন নিগমের বিভিন্ন কটেজ ও তাদের বিভাগীয় অফিসের পাশাপাশি আলিপুর, গড়চুমুক, পুরুলিয়া (Puruliya) এর সুরুলিয়া মিনি জু, শহর পুরুলিয়ার সুভাষ উদ্যান, সজনেখালির মহিলা স্বনির্ভর দলের বিপণি-সহ রাজ্য জুড়ে প্রায় ৫০টি জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর ৩১ সে আগস্ট-ই ভারত সরকারের জিআই জার্নালে সুন্দরবনের মধু প্রকাশিত হয়। ২০২১ সালের ১২ই জুলাই সুন্দরবনের মধু-র জিআই স্বত্ব-র জন্য আবেদন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের কাছে আবেদন করার পরেই ওই বিভাগ কেন্দ্রের জিআই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায়। যদিও পুণের ওই সংস্থা ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আবেদন করে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে একাধিক জিআই ট্যাগ পাওয়া সম্পদ রয়েছে। এই তালিকায় কোন কোন বিশেষ কয়েকটি জিআই ট্যাগ প্রাপ্ত সম্পদ রয়েছে দেখে নিন একনজরে।

  ভারতে মোট জিআই ট্যাগ এর মধ্যে প্রায় ২২টি জিআই ট্যাগ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের  
  ভারতে মোট জিআই ট্যাগ এর মধ্যে প্রায় ২২টি জিআই ট্যাগ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের  

বর্ধমানের মিহিদানা ও সিতাভোগ :

 আমাদের রাজ্য থেকে যেকয়েকটি মিষ্টান্ন জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেসন (GI) ট্যাগ পেয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বর্ধমান মিহিদানা এবং সীতাভোগ। এ দুটি মিষ্টান্নের জন্য বর্ধমান শহর রাজ্য তথা গোটা ভারতে পরিচিত। বর্ধমানের মহারাজ মেহতাব চাঁদ বাহাদুরের রষকে পরিবেশনের জন্য এই দুই মিষ্টান্ন তৈরি করছিলেন বর্ধমান শহরের এক ময়রা ক্ষেত্রনাথ নাগ। লর্ড কার্জন যখন ১৯০৪ সালে এই বর্ধমান শহরে এসেছিলেন তখন তাকেও এই দুটি মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হয়েছিলো।  ২০১৭ সালে এ দুটি মিষ্টান্ন জিআই  ট্যাগ পেয়েছে।

শান্তিপুরি তাঁত :

 কলকাতা শহর থেকে প্রায় ১০০ কি.মি উত্তরে নদীয়া জেলার একটি শহর এই শান্তিপুর। বৈষ্ণব সংস্কৃতির কেন্দ্র এই শান্তিপুর ও আসে পাশের অঞ্চলে বহু প্রাচীনকাল থেকেই বহু তাঁতকল ছিলো যা থেকেই জন্ম নেয় জগৎ বিখ্যাত শান্তিপুরি তাঁত। তারপর স্বাধীনতার সময়ে দেশভাগের ফলে বহু গুণী তাঁতশিল্পী এসে এখানে বসবাস শুরু করে ফলে এই তাঁতের কাপড়ের গুণগত মান আরো বৃদ্ধি পায়। পশ্চিমবঙ্গের জিআই ট্যাগ প্রাপ্ত সম্পদের মধ্যে এটিও অন্যতম।

রায়গঞ্জের মোহিনীগঞ্জের তুলাইপাঞ্জি চাল :

 বাঙালিকে সবসময় ভেতো বাঙালি বলা হয়,এই ভেতো বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় চালও পেয়েছে জিআই ট্যাগ। রাজ্য থেকে যেদুটো সুগন্ধি চাল জিআই ট্যাগ পেয়েছে তার মধ্যে একটি হলো এই তুলাইপাঞ্জি চাল। এই তুলাইপাঞ্জি চালের চালের সুখ্যাতি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে শুরু করে অলিম্পিকের মত বড় আসরেও এই চাল পৌঁছে গেছে। এই ধানের ওপরে সাদা সাদা সুঙ থাকে দূর থেকে দেখতে তুলোর মত লাগে যা থেকেই নাম হয়েছে তুলাইপাঞ্জি এছাড়াও আরো অনেক এরকম কথা প্রচলিত আছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন করার পর ২০১৮ সালে এই চালকে জিআই ট্যাগের তকমা দেওয়া হয়েছে। এই চালের চাষ প্রধানত হয় রায়গঞ্জ ব্লকের রুনিয়া, হালালপুর জাউনিয়া, ভাটগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায়, এখন বর্তমানে অনেক জায়গাতেই চাষ হচ্ছে।

কলকাতার রসগোল্লা :

পশ্চিমবঙ্গের জিআই ট্যাগের তালিকা (GI tag list) এর মধ্যে অবশ্যই রয়েছে কলকাতার রসগোল্লা। বাঙালিকে গোটা বিশ্ব তথা ভারতবাসি যদি কয়েকটি কারণে চিনে থাকে তার মধ্যে একটি এই রসগোল্লা। বাঙালি চির কালই মিষ্টি তৈরিতে এবং খেতে ওস্তাদ। সেইজন্য পশ্চিমবঙ্গের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এরকমই প্রচুর দোকান। সেরকমই এক ময়রার দোকান থেকে উদ্ভব হয়েছিল বাংলার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন রসগোল্লা। যার উৎপত্তি ও তৈরির ইতিহাস নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই ট্যাগ কমিটি থেকে পশ্চিমবঙ্গের দাবি গুলো মেনে ২০১৭ সালের ১৪ই নভেম্বরে কলকাতার রসগোল্লাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 ২০১৭ সালের ১৪ই নভেম্বরে কলকাতার রসগোল্লা পেয়েছে জিআই ট্যাগ
 ২০১৭ সালের ১৪ই নভেম্বরে কলকাতার রসগোল্লা পেয়েছে জিআই ট্যাগ

 নকসীকাঁথা :

 নকসীকাঁথা হলো সুতোর সাহায্যে বিভিন্ন কাপড়ের ওপরে বিভিন্ন ডিজাইনের এমব্রয়ডারি কাজ। এটি বাংলার একদম নিজস্ব হাতের কাজ, যার কাজ খুবই সুক্ষ্য ও নিপুণ। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বাংলাদেশ এবং আসামের কিছু অঞ্চলে এই কাজ হয়ে থাকে। নকসী কথাটি এসেছে বাংলা শব্দ নকসা থেকে, কোনো কাপড় বা শাড়ির ওপরে বিভিন্ন রঙ বেরঙের সুতো দিয়ে বিভিন্ন কারুকাজ ফুটিয়ে তোলা হয়। 

বালুচুরী শাড়ি :

 ভারতে তাঁতের শাড়ির যদি নাম নেওয়া যায় সেই লিস্টে একদম প্রথমের দিকে থাকবে এই বালুচুরী শাড়ি।  এই শাড়ির উৎপত্তি মুর্শিদাবাদে নবাবী আমলে হলেও এর বর্তমানে কেন্দ্র বীরভূমের বিষ্ণুপুর শহর। প্রায় ৩৫০ বছর পূর্বে মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ তার রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করলে তিনি পূর্ব বঙ্গের ঢাকা থেকে কয়েকজন গুণী তাঁত শিল্পীকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসেন। তাঁত শিল্পকে উন্নত আর দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই মুর্শিদাবাদের ভাগীরথীর তীরে বালুচর নামক গ্রামে তাদের বসবাস স্থাপন করেন, সেই থেকেই এই শাড়ির নাম এসে বালুচুরী। পরবর্তীতে ভাগীরথীর বন্যাতে এই গ্রাম নদীর গর্ভে তলিয়ে গেলে তখন এই শিল্পীরা মুর্শিদাবাদ থেকে বীরভূমের বিষ্ণুপুর চলে আসেন, তখন বিষ্ণুপুর ছিল মল্ল রাজাদের রাজধানী। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই তাঁত শিল্পী আরো সমৃদ্ধি লাভ করে। ২০১১ ভারত সরকার এই বালুচুরী শাড়িকে জিআই ট্যাগ ও দিয়েছে। 

বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা :

 বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর বাংলার শিল্প, সংস্কৃতি হেরিটেজের প্রধান কেন্দ্র এবং প্রাচীন শহর। মল্লভূম রাজাদের রাজধানী ছিল বাঁকুড়া জেলার এই শহর। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গোটা বিষ্ণুপুর জুড়ে গড়ে প্রচুর টেরাকোটার মন্দির । ধীরে ধীরে এই বিষ্ণুপুর শহর টেরাকোটার প্রধান হাবে পরিণত হয়। এই নামে জিআই ট্যাগ ও পেয়েছে ২০১৮ সালে। 

ধনিয়াখালি বা ধনেখালি শাড়ি :

বাংলার যে তিনটে শাড়ি জিআই ট্যাগ পেয়েছে তার মধ্যে তৃতীয় শাড়িটি ধনিয়াখালি বা ধনেখালি শাড়ি নামে পরিচিত। ধনেখালি হুগলির জেলার চুঁচুড়া মহকুমার অন্তর্গত। শাড়ির জগতে সোনালী শস্য হিসেবে পরিচিত এই শাড়ি ২০১১ সালে জিআই ট্যাগ পেয়েছে।

মালদার আম :

 মালদা আমের জন্য গোটা পৃথিবীতে বিখ্যাত। মালদা জেলা জুড়ে প্রতিটি কোনায় এই আমের চাষ হয়ে, থাকে। গোটা মালদা জেলা জুড়েই বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন নামের আম উৎপাদন হলেও এই জেলার প্রধান তিনটে আম জিআই ট্যাগ পেয়েছে। এগুলো হলো - ফজলী, হিমসাগর, লক্ষন ভোগ এই তিন প্রজাতির আম ২০০৮ সালে সরকারি ভাবে জিআই ট্যাগ পেয়েছে। এই তিনটে আম ছাড়াও ল্যাংড়া, গোপাল ভোগ, বোম্বাই কালাপাহাড়ের মত প্রচুর আম চাষ হচ্ছে। 

 মালদার তিন প্রজাতির আম ২০০৮ সালে সরকারি ভাবে জিআই ট্যাগ পেয়েছে
 মালদার তিন প্রজাতির আম ২০০৮ সালে সরকারি ভাবে জিআই ট্যাগ পেয়েছে

জয়নগরের মোয়া :

 দেশ বা বিদেশের যে কোনও প্রান্তের বাঙালি, এক নামেই সে চিনে নিতে পারে এই সুস্বাদু মিষ্টি কে। জয়নগরের মোয়ার সঙ্গে জয়নগর নামটি যুক্ত থাকলেও আসলে এই মোয়ার উৎপত্তি কিন্তু বহড়ু গ্রামেই। বহড়ু গ্রামেরই যামিনি বুড়োর হাত ধরে প্রথম তৈরি হয় এই মোয়া। তিনি একদিন তার নিজের জমির কনকচূড় ধানের খই এর সাথে নলেন গুড় মিশিয়ে এক মণ্ড বানিয়ে পাড়ার এক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেন যার স্বাদ সকলের খুবই পছন্দ হয় আর এইভাবেই যামিনি বুড়োর হাত দিয়ে প্রথমবারের জন্য জন্ম নেয় জয়নগরের মোয়া বহড়ুতে। পরবর্তীতে জয়নগর নামটি যুক্ত হয়ে যায় কারণ জয়নগর ছিলো সবচেয়ে বড় শহর এবং বাণিজ্য এবং বিক্রয়কেন্দ্র। ২০১৫ তে এই মোয়া জিআই ট্যাগ ও পেয়েছে।

পিংলার পটচিত্র :

 মেদিনীপুর জেলার একমাত্র একমাত্র জিনিস যেটি জিআই ট্যাগ পেয়েছে সেটা হলো পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের পটচিত্র। এই পটচিত্র যা,২০১৮ সালে জিআই ট্যাগ পেয়েছে। এখন বর্তমান যুগে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জামা কাপড়, শাড়ি, গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রীর ওপরে এই কাজ গুলো ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাঝামাঝি এখানে সরকারি উদ্যোগে মেলার আয়োজন করা হয় যাকে পটমায়া বলে।

পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ :

 বাংলার হস্তশিল্পের আরো একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হল এই ছৌ মুখোশ তৈরি শিল্প। এই ছৌ নাচ পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া (Puruliya) জেলা, ওড়িশার ময়ুরভুঞ্জ এবং ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা এলাকায় প্রধানত দেখা যায়। এই তিন রাজ্যেই এই নৃত্য ছৌ নৃত্য নামে পরিচিত হলেও, এই তিন জায়গার ছৌ নাচের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, পার্থক্যটা প্রধানত হয় নাচের মুখোসে। পুরুলিয়ার এই ছৌ নাচের মুখোশ শিল্প ২০১৮ সালে জিআই ট্যাগ অর্জন করেছে। পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ তৈরির সবচেয়ে বড় কেন্দ্র বাঘমুন্ডি ব্লকের চড়িদা গ্রাম। এই চড়িদা গ্রামের প্রায় ৪০ টির ওপরে সূত্রধর পরিবার এই ছৌ মুখোশ তৈরি করার কাজের সাথে যুক্ত। ছৌ মুখোশ তৈরিতে প্রথমদিকে পাখির পালকের ব্যবহার করা হতো, এর ফলে এর ওজন এবং দাম অনেকটাই বেশি হয়ে যেতো, পরিবর্তীতে এর বদলে মাটি ও কাগজের ব্যাবহার শুরু হওয়ায় যথেষ্ট ভালভাবে ব্যাবহার যোগ্য এবং সহজলভ্য হয়েছে।

দার্জিলিংয়ের  চা :

ভারতে প্রথম জিআই ট্যাগ (First GI tag in India) পেয়েছে দার্জিলিংয়ের  চা। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের সর্বপ্রথম যে দ্রব্যটিকে জিআই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে সেটা হলো বিশ্ব বিখ্যাত দার্জিলিং এর চা। ২০০৪ সালে দার্জিলিং চা এই স্বীকৃতি পায়। জিওগ্রাফিকাল ইনটেকশন অব গুডস (রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ১৯৯৯) ২০০৩ সালে দার্জিলিং চা ভারতের ভারতীয় পেটেন্ট অফিসের মাধ্যমে ভারতের প্রথম পণ্য হিসাবে ২০০৪ -২০০৫ সালে জিআই ট্যাগ লাভ করে। দার্জিলিংয়ে মোট ৮৩টি চা-বাগানে ২০,০০০ হেক্টর জমিতে বছরে গড়ে ১২ মিলিয়ন (এক কোটি বিশ লক্ষ) কেজি দার্জিলিং-চা উৎপাদিত হয়।

ভারতে প্রথম জিআই ট্যাগ পেয়েছে দার্জিলিংয়ের  চা
ভারতে প্রথম জিআই ট্যাগ পেয়েছে দার্জিলিংয়ের  চা

বাঁকুড়ার ডোকরা শিল্প:

 ডোকরা শিল্প বাঁকুড়া সহ পুরো পশ্চিম বাংলার গর্ব । ডোকরার নাম শুনলেই সর্বপ্রথম ভেসে ওঠে বাঁকুড়া শহরের কাছেই অবস্থিত বিকনা গ্রাম, যেই গ্রামের খ্যাতি ডোকরা গ্রাম হিসেবে। এই গ্রামের প্রায় ১০০টি ওপরে পরিবার এই হস্তশিল্পের সাথে যুক্ত। ডোকরা শিল্প কেন্দ্র হিসেবে বাঁকুড়া জেলার বিকনা গ্রাম বিখ্যাত হলেও আরো একটি জায়গা এই কাজের জন্য সুপ্রসিদ্ধ সেটি হলো বর্ধমান জেলার গুসকরা। 

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমুন্ডীর মুখোশ শিল্প:

 দুই দিনাজপুরের কিছু অংশে প্রায় ২৫০ বছর ধরে চলে আসা গমিরা নাচের প্রচলন আছে যাকে 'মুখা নাচ বা মুখা খেল ও বলে থাকে। সেই মুখা নাচের মুখোস তৈরি এখনো বজায় রেখেছে মহীষবাথানের খুনিয়াডাঙ্গি গ্রামের প্রায় কয়েকশো লোক। যদিও এই নাচ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে তা সত্ত্বেও দুই দিনাজপুর জেলার কিছু অংশে এখনো বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে বিভিন্ন এলাকায় এই গমীরা নাচের আসর বসে। এই মুখোশ তৈরির শিল্প ২০১৮ সালে জিআই  ট্যাগ পেয়েছে। 

শান্তিনিকেতন চর্মজাত শিল্প :

 প্রায় শতবর্ষ পুরোনো শান্তিনিকেতন এই চামড়ার শিল্পকে ২০০৮ জিআই  তকমা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এই শিল্পের উন্নতির জন্য গ্রামে গঞ্জে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। লেদারের বিভিন্ন ব্যাগ, পার্স এই শিল্পের প্রধান আকর্ষন। লেদারের জিনিসের ওপরে শিল্পীদের দ্বারা বিভিন্ন ভেষজ রং এর ডিজাইন এই শিল্পকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে। 

পশ্চিম মেদিনীপুরের মাদুর শিল্প :

 পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং জুড়ে এই মাদুর শিল্পের প্রচলন আছে যা বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মানও পেয়েছে। এর প্রচলন মুর্শিদকুলি খাঁ আমল থেকে ধরা হয়, সেই সময় মাদুর ও ম্যাটের চাহিদার শিল্প আরো ফুলে ফেঁপে ওঠে। ২০১৮ তে এই শিল্প জিআই  ট্যাগ পায় ।

২০১৮ তে  পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মাদুর শিল্প জিআই  ট্যাগ পায়
২০১৮ তে  পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মাদুর শিল্প জিআই ট্যাগ পায়

প্রসঙ্গত, পূর্বের সম্পদগুলি রাজ্যের তথা বঙ্গের সভা বৃদ্ধি করেছে বহু সময় ধরে। তবে সম্প্রতি সুন্দরবনের মধু (Sundarban Honey), গরদ, কড়িয়াল, টাঙ্গাইল শাড়ি ও উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির সুগন্ধি কালোনুনিয়া চাল এই সম্পদগুলিও জিআই ট্যাগ পেয়ে রাজ্যের মুখ আরও উজ্জ্বল করলো। কেন্দ্র সরকারের জিআই পোর্টালের স্টেটাসে বুধবার থেকেই রেজিস্টার্ড দেখা যাচ্ছে। ফলে শংসাপত্র পেতে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। খুব শীঘ্রই এই মর্মে কেন্দ্রের জিআই কর্তৃপক্ষ রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগকে চিঠি দিয়ে এই সুখবর জানাবে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File