দাঁত ও মাড়ির সমস্যা দূর করার উপায়, How to prevent teeth and gum problem in Bengali
দাঁতে ক্যাভিটি, ক্ষয়, মাড়ির সমস্যা আজকাল নতুন কিছু নয়। মাড়ি এবং দাঁতের সমস্যা সমাধান করতে ডাক্তারি পরামর্শ নেয় সকলে। কিন্তু, তাতে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। দীর্ঘস্থায়ী দাঁতের রোগ মানব দেহের অন্য অঙ্গেরও ক্ষতি করে।
যেসব কারণে দাঁতের ক্ষয়রোগ হয়ে থাকে, Causes of tooth decay
সাধারণত দাঁতের ক্ষয়রোগ নির্ভর করে মুখের ভিতরে জন্ম নেওয়া ব্যাকটেরিয়ার উপর। অপরিচ্ছন্নতার জন্য আমাদের মুখের ভেতরে ওরাল যে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় সেগুলোও দাঁতের ক্ষয়রোগের জন্য দায়ী।
Also read :
আমাদের প্রত্যেকের দাঁতে তিনটি স্তর রয়েছে। সেগুলো হলো এনামেল, ডেন্টিন ও নার্ভ সাপ্লাই বা প্যালফ। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি ল্যাকটিক অ্যাসিডের জন্য দাঁতের প্রথম দুই স্তর, যথা এনামেল আর ডেন্টিন যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই একে বলা হয় দাঁতের ক্ষয়রোগ। এছাড়াও অনেকের দাঁতে অনেক সময় কালো দাগের ঘন প্রলেপ দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত কোনো খাবার খাওয়ার পরে আঠালো খাদ্যগুলো আমাদের দাঁতে আটকে থাকে। এর ফলে দাঁতের সেসব অংশে ক্যারিওজেনিক ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় ।
এর থেকেই দাঁতে ক্যারিজ হয়। আমাদের দাঁতের এনামেলের এই ক্যারিজ থেকেই দাঁতের সমস্যা ধীরে ধীরে গুরুতর হয়ে ওঠে।
এনামেল ক্ষয়প্রাপ্ত তা কিভাবে বুঝবেন !
এনামেল ক্ষয়প্রাপ্ত হলে প্রথমে ডেন্টিন উন্মুত্ত হয়, তখন কোনও গরম বা ঠান্ডা খাবার খেলে দাঁত ঝিনঝিন করবে। দাঁতের এমন অবস্থাতেই বোঝা যায় যে দাঁতে ক্যারিজ বা গর্ত আছে। ক্ষয়রোগ বেশি বেড়ে গেলে দাঁতে ব্যথা হয় এবং কালো স্পট দেখা দেবে।
দাঁত ও মাড়ির কি কি সমস্যা সৃষ্টি হয়, Tooth and gum related problems
মাড়ির রোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে, কিন্তু মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি দুর্বল হয়ে যাওয়া এর সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
● আপনার দাঁত সঠিক পদ্ধতিতে নিয়মিত ব্রাশ না করলে দাঁতে প্লাক তৈরি হতে পারে।
● আমাদের মুখের লালার সাথে ব্যাকটেরিয়া মিশে গিয়ে একটি স্টিকি ফিল্ম তৈরি করে যা প্লাক নামে পরিচিত, এটি দাঁতের ক্ষয়ের এক অন্যতম কারণ।
Also read:
● সময়ের সাথে সাথে, প্লাকে থাকা এসিড আপনার দাঁতের পৃষ্ঠ ভেঙে ফেলতে শুরু করে এবং দাঁতের ক্ষয় ঘটায়।
● প্লাকের অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াও আপনার মাড়িতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে সেগুলো ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়।
দাঁতের মাড়ি দূরে সরে যাওয়ার কারণ, Causes of receding gums
অনেক সময় আমাদের দাঁত থেকে মাড়ি আলগা হয়ে যেতে দেখা যায়। যার কারণে কিছু খাবার সময় বা ব্রাশ করতে গিয়ে রক্ত বের হয়, কখনও কখনও ব্যাথাও ভোগ করতে হয়।
● দাঁত থেকে মাড়ি দূর হওয়ার বিশেষ একটি কারণ হল পেরিওডন্টাল ডিজিজ অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যা আমাদের মাড়ির টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
● সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ না করা এবং ফ্লস ব্যবহার না করায় দাঁতে প্লাক জমা হয়ে যাওয়া, যা দীর্ঘদিন ধরে জমতে জমতে পাথর সৃষ্টি করে। এই কারণেও দাঁতের মাড়ি দূরে সরে যেতে পারে।
● আমরা যদি খুব বেশি জোর দিয়ে দাঁতগুলো মাজি তবে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায় ফলে মাড়ি দাঁত থেকে অপসৃত হতে শুরু করে।
● দাঁতের মাড়ি দূরে সরে যাওয়ার সমস্যাটি হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও হয়, বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়।
● যারা নিয়মিত ধূমপান করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে দাঁতে আঠালো প্লাক জমে যা মাড়ি দূরে সরে যাওয়ার সমস্যা সৃষ্টি করে।
● কোনো খাবার খাওয়ার সময় দাঁতে খুব বেশি চাপ পড়লে মাড়ি দূরে সরে যেতে পারে এবং সাধারণত যেসব ব্যক্তির বাঁকা দাঁত থাকে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি হতে পারে, যেহেতু খাবারে কামড় দেওয়ার সময় সবগুলো দাঁত একসাথে কাজ করতে পারেনা।
● অনেক ব্যক্তিরই দাঁত দিয়ে নখ কাটা অথবা কলম বা পেন্সিল কামড়ানোর বদভ্যাস থাকে। এই অভ্যাসের কারণেও দাঁত মাড়ি থেকে সরে যেতে পারে।
প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁত ও মাড়ির ব্যথা থেকে মুক্তির জরুরি টিপস, Important tips to get rid of gum and tooth pain naturally
● আধা চামচ নারকেল তেল এবং আধা চামচ লবঙ্গের গুঁড়ো নিয়ে একটি কাঁচের পাত্রে ভাল করে মিশিয়ে আঙ্গুল অথবা টুথব্রাশের সাহায্যে এই দাঁত বা মাড়ির সমস্যাযুক্ত অংশে লাগিয়ে নিন। দিনে তিন চার বার এই মিশ্রণটি দাঁত বা মাড়ির ব্যথার স্থানে লাগালে দ্রুত নিরাময় সম্ভব।
● হালকা গরম জলের সাথে অল্প পরিমাণ লবণ মিশিয়ে ঐ জল দিয়ে কুলকুচি করতে হবে। অধিক উপকারীতা পেতে প্রতিদিন সকাল ও রাতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও খাওয়ার পর মুখ ধোয়ার জন্য এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে পারেন। এই পদ্ধতি মাড়ির ফোলা তথা দাঁত ও মাড়ির সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে।
● একটি আদার টুকরোর সাথে একটু লবণ মিশিয়ে সেটা থেঁতো করে নিয়ে মাড়ির ফোলা অংশে ভালো করে লাগিয়ে ১০ থেকে ১২ মিনিট সময় রেখে দিন। তারপর জল দিয়ে মুখ কুলকুচি করে নিন। এই প্রক্রিয়া প্রতিদিন ২ – ৩ বার অনুসরণ করতে পারেন। এতে মাড়ির সংক্রমণ প্রতিহত হবে।
● হলুদ ও বেকিং সোডা একসাথে মিশিয়ে আঙ্গুল দিয়ে মাড়িতে মালিশ করুন। এরপর জল দিয়ে কুলকুচি করে নিন। এছাড়াও বেকিং সোডা সহযোগে দাঁত ব্রাশ করলে মাড়ির ফোলা কম হয়।
● অল্প গরম জলে কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে তা দিয়ে কুলকুচি করুন। আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। পাতিলেবুর রসে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল বৈশিষ্ট্য থাকায় এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর হয়।
উপসংহার, Conclusion
দাঁতের কোনও রকম সমস্যা অথবা মাড়িতে ফোলা ভাব দেখা দিলে সাধারণভাবে পরিমিত আহার গ্রহণ করাই উচিৎ, যেমন ফল এবং সবজি। তবে যদি অতিরিক্ত ব্যথা ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে খাদ্য তালিকা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আলাদা করে নিতে হবে। ব্যথা অসহ্য হলে অবশ্যই ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত। তবে হালকা ব্যথা অনুভূত হলে ঘরোয়া উপায়েই বাড়িতে উপরিউক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
Also read :
- Related topics -
- স্বাস্থ্য
- teeth and gum care
- লাইফস্টাইল