ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বনে জ্বর কমানোর উপায়, Home remedies to prevent fever in bengali
হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথেই ডাক্তারখানা বা ওষুধের দোকানে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। কারোও শরীরের তাপমাত্রা বেশি, কারোও শারীরিক তাপমাত্রা কম হয়ে যাওয়ার সমস্যা, এমনকি হাসপাতালগুলিতেও বেশ কিছু জ্বর, সর্দি বা কাশির সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ভিড় জমতে দেখা যায়। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে মূলতঃ ভাইরাল জ্বর হয়, যা ভাইরাস জনিত কারণেই হয়ে থাকে।
আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত, What is our normal body temperature
আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এই নির্দিষ্ট তাপমাত্রা যখন ১০০ ডিগ্রী পার হয়ে যায় তখন তাকে জ্বর বলা হয়; এমনকি ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা পার করে গেলেও সে ক্ষেত্রে খুব সতর্ক হতে হবে এবং সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কেননা
এই জ্বরের কারণ স্বাভাবিক নাও হতে পারে। তবে সামান্য জ্বর হলেই যে ডাক্তারের কাছে ছুটে যেতে হবে এমন কোনো ব্যাপার নেই, কারণ মূলতঃ ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকা জ্বর সরানোর জন্য ওষুধ না খেলেও চলে।
কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমেও ভাইরাস জনিত জ্বরকে আয়ত্তে আনা সম্ভব। কেননা এর মেয়াদ ৩-৪ দিন থাকে, এরপর এমনিতেই সেরে যায়। তবে জ্বরে যদি কেউ কাবু হয়ে পড়ে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই কোনো ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া উচিত নয়।
জ্বরের লক্ষণ, Symptoms of fever
আমাদের দেহে জ্বরের উপদ্রব হওয়ার আগে থেকেই শরীর সে ব্যাপারে জানান দিতে থাকে, যেমন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জ্বর হওয়ার আগে থেকেই খুসখুসে কাশি হয় এবং শরীরে একটা ম্যাজমেজে ভাব হতে পারে।
জেনে নিন জ্বরের লক্ষণ গুলো :
১) দৈহিক তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়।
২) শরীরে হঠাৎ কাঁপুনি লাগে এবং অনেক সময় শীত শীত ভাব অনুভূত হয়।
৩) সারা শরীরের পেশীগুলোতে ব্যথা এবং হাটু, হাত এবং কনুই এর জয়েন্টগুলিতে ব্যথা অনুভব হয়।
৪) হঠাৎ করে মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়।
Also read :
৫) হঠাৎ করে খুব গরম লাগতে পারে ফলে অত্যধিক ঘাম হতে দেখা যায়।
৬) হৃদযন্ত্রে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৭) চোখের ভেতর এবং সারা মুখ লাল হয়ে যায়।
৮) চোখে অবিরাম জ্বালা ভাব অনুভব হয় এবং জল পড়তে থাকে।
৯) শরীর খুব দুর্বল বোধ হয়।
১০) খাদ্য গ্রহণে অনীহা লক্ষ্য করা যায়।
১১) বাচ্চাদের মধ্যে একটা অস্বস্তি ভাব পরিলক্ষিত হয়।
১২) শিশুদের গলায় ব্যথা, খুসখুসে কাশি, কানের ভেতরে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা যায়।
জ্বর কমানোর উপায় হিসেবে যেসব প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে সেগুলি হল, Natural ways to combat fever
● জ্বর কমানোর নানা উপায়গুলির মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান হল তুলসী পাতা, কারণ তুলসী পাতার মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান থাকে যা ম্যালেরিয়া, সর্দি, গলা ব্যথা, জ্বর, ব্রংকাইটিসের মত বহু রোগের উপশমে সহায়তা করে থাকে।
জ্বর হলে তুলসী পাতা জলে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল একটু ঠান্ডা করে নিয়ে খেতে পারেন।তুলসির মধ্যে থাকা উপাদান গুলি শরীরের তাপমাত্রা কম করতে এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
Also read :
● তাছাড়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত উপাদানগুলির মধ্যে মধু অন্যতম। ভাইরাস জনিত জ্বর সারানোর ক্ষেত্রে মধু এবং লেবুর রসের মিশ্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, জ্বরের প্রভাব যদি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তবে সে ক্ষেত্রে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে দিনে দুবার করে খেতে পারেন।
● জ্বর উপশমে যষ্টিমধুও বেশ কার্যকরী, কারণ এটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এটি অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান সমূহে ভরপুর। এটি আমাদের শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যষ্টিমধুর মধ্যে থাকা পেপাইডাইড নামক উপাদান ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ করে শরীরে প্রোটিন তৈরির কাজে সহায়তা করে, যা সংক্রমণ থেকে শরীরকে প্রতিরক্ষা প্রদান করে। তাই জ্বর কমানোর বিভিন্ন উপাদানগুলির মধ্যে এটি অন্যতম।
● জ্বর হলে বা দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটলে কুসুম গরম জলে স্নান করুন। এতে শরীরের তাপমাত্রা কম হয়ে যাবে। তবে ভুলেও ঠান্ডা জলে স্নান করে শরীরের তাপমাত্রা কম করে দেহ শীতল করার চেষ্টা করবেন না। কারণ এতে আভ্যন্তরীণ রক্ত প্রবাহে প্রভাব পড়বে এবং ত্বক শীতল হয়ে পড়বে ফলে কাঁপুনি শুরু হতে পারে।
● জ্বর হলে স্পঞ্জ বাথও নিতে পারেন। বগল ও কুঁচকির মতো উচ্চ তাপমাত্রাযুক্ত অংশগুলিকে ঠান্ডা জলে ভেজা স্পঞ্জ বা একটি নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিতে পারেন, এতে তাপমাত্রা কমে আসবে।
● জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি স্নান করতে না চাইলে কপাল ও ঘাড়ের ওপর ঠান্ডা জলে ভেজা নরম কাপড় দিয়ে সেঁক দিলে জ্বর কমবে।
● জ্বরের তাপমাত্রা থেকে শরীরকে শীতল করার একটি বিশেষ প্রক্রিয়া হচ্ছে ঘাম নিঃসরণ। তাই রোগীর শরীর হতে ঘাম নিঃসরণকে উদ্দীপ্ত করার জন্য আদা চা পান করানো যেতে পারে। জলে আধ চা চামচ আদা কুচি করে ঢেলে দিয়ে একটু চাপাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এরপর তা ছেঁকে নিয়ে কুসুম গরম অবস্থায় পান করুন।
● জ্বর আসলে খাবারে ঝাল মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করুন। ঝাল মরিচের মধ্যে থাকা একটি প্রধান উপাদান হলো ক্যাপসাইসিন যা আমাদের শরীর থেকে ঘাম ঝরিয়ে জ্বর কমিয়ে দিতে পারে।
● জ্বর থেকে মুক্ত হওয়ার আরেকটি উপায় হচ্ছে মাস্টার্ড ফুটবাথ। চার মগ কুসুম গরম জল নিয়ে তাতে দুই চা চামচ সরিষা গুঁড়া মিশিয়ে পা দুটিকে কিছু সময় ডুবিয়ে রাখুন। এতে জ্বর কমে আসবে।
● জ্বর হলে শরীর সহজেই জল শূন্য হয়ে যেতে পারে। তাই দিনে ৮-১২ গ্লাস জল পান করতে হবে।
● জ্বর হলে কমলার রস অথবা অন্যান্য ভিটামিন C সমৃদ্ধ ফলের রস খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়, কারণ ভিটামিন C আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
উপসংহার, Conclusion
বর্তমান কালে ভাইরাস জনিত জ্বরে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই নাজেহাল হতে হচ্ছে। অধিকাংশ ভাইরাস জ্বরই পাঁচ থেকে সাত দিন পর নিজে থেকেই সেরে যায়। এরূপ মেয়াদের ক্ষেত্রে বিশেষ ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তবে উপরিউক্ত ঘরোয়া উপাদানের সাহায্যে এই জ্বরের প্রকোপ কম করা সম্ভব। এই ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে শরীরকে খুব দ্রুত সুস্থ করে তোলা যায়।
Also read:
- Related topics -
- স্বাস্থ্য
- জ্বর
- ঘরোয়া টোটকা