রানী পদ্মাবতীর জীবনের কিছু অজানা তথ্য যা আজ ও অন্ধকারের আড়ালে
চিতোরের রাণা রাওয়াল রতন সিংহের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং সিংহলের রাজা গন্ধর্বসেনের কন্যা রাণী পদ্মাবতীর জীবনের অজানা কিছু তথ্য আসুন জেনে নেওয়া যাক
রাণী পদ্মাবতীর সৌন্দর্য ও তাঁর জহর ব্রত নিয়ে বিভিন্ন লোকপ্রবাদ প্রচলিত আছে। তিনি সাক্ষাৎ সতী ছিলেন এমনটাও শোনা যায়। তবে তাঁর জীবনের আরও অনেক ঘটনা আছে যা বহু মানুষের কাছে অজানা।
রাণী পদ্মাবতীর জীবনের প্রথম অধ্যায়
সিংহলের রাজা গন্ধর্বসেন ও রানী চম্পাবতীর কন্যা রানী পদ্মাবতী। রূপে পরমা সুন্দরী, অতীব বুদ্ধিমতী, অসাধারণ সাহসী হওয়ার পাশাপাশি বিদুষী এবং মেধাবী ছিলেন রাজকন্যা। এককথায় তিনি ছিলেন সর্বগুণসম্পন্না।
যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী
রাণী পদ্মাবতী একজন অতি সুদক্ষ ও শিক্ষিত যোদ্ধাও ছিলেন। যুদ্ধ সম্পর্কিত যাবতীয় নীতি ও কৌশল এবং অস্ত্রবিদ্যায় অসাধারণ দক্ষ ছিলেন তিনি ; যদিও তাঁর এই গুণটি অনেকের কাছেই অজানা।
পদ্মাবতীর প্রিয় পোষ্য হিরামনের কীর্তি
শোনা যায়, রাজকন্যা পদ্মাবতীর একটি অত্যন্ত প্রিয় পোষা তোতাপাখি ছিল, যার নাম হিরামন। সর্বক্ষণ হিরামনের সাথে কথা বলেই দিন কাটত রাজকন্যার।
নিজকন্যার পোষা এই পাখিটি একদম পছন্দ ছিল না রাজা গন্ধর্বসেনের, তাই তিনি ওই পাখিটিকে হত্যা করতে চান। কিন্তু পাখিটি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তবে পরে এক ব্যাধের জালে ধরা পরে। এরকম কথা বলা পাখিটিকে ওই ব্যাধ বিক্রয় করে দেন রানা রতন সিংহকে। সেই পাখির মুখে রাজকন্যা পদ্মাবতীর রূপ ও গুণের প্রশংসা শুনে তিনি পদ্মাবতীকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
বিবাহ পূর্বে আয়োজিত স্বয়ংম্বর সভা
রাজকন্যা পদ্মাবতীর বিবাহের পূর্বে আয়োজন করা হয়েছিল স্বয়ম্বর সভার। তাঁর বিবাহের শর্ত ছিল, সম্মুখ সমরে তাঁকে তরবারি হাতে পরাস্ত করতে হবে। প্রচুর রাজা এই স্বয়ম্বর সভায় যোগদান করেন ও পদ্মাবতীর দ্বারা পরাজিত হন। কিন্তু চিতোরের রাণা রাওয়াল রতন সিংহ তাঁকে পরাজিত করেন এবং শর্তসাপেক্ষে তাঁর সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয় রাজকন্যা পদ্মাবতীর।
আলাউদ্দিন খিলজিকে চিতোর আক্রমণের প্ররোচনা দেয় রাঘব চেতন
রাণার রাজসভায় রাঘব চেতন নামের এক ব্রাহ্মণ ছিলেন যিনি রাণার সভায় প্রতারক হিসাবে গণ্য হয় এবং সাজাস্বরূপ তাঁকে রাজ্য হতে বিতাড়িত করা হয়। এরপর নিজের প্রতিশোধ চরিতার্থ করতে রাঘব চেতন তৎকালীন দিল্লীর মুঘল সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজির দ্বারস্থ হয়ে সেখানে রাণী পদ্মাবতীর সৌন্দর্য ও বুদ্ধিমত্তার উচ্চ প্রশংসা করে এবং সম্রাটকে চিতোর আক্রমণ করতে প্ররোচিত করে।
খিলজি চিতোর দখল করতে এসে উপলব্ধি করেন যে চিতোরের প্রতিরোধ কৌশল ও বহিরাগত আক্রমণ ঠেকানোর উপায় যথেষ্ট দৃঢ়। তখন তিনি কৌশলে রাণার সাথে বন্ধুত্ব করে রাণী পদ্মাবতীর দর্শনপ্রার্থী হন। এরপর তিনি অতিথি হিসাবে দূর্গে প্রবেশ করেন এবং সেখানে রাণীর রূপে অতিশয় মুগ্ধ হয়ে তাঁর বন্ধুত্বের প্রস্তাব নাকচ করে বিশ্বাসঘাতী হয়ে ছলে বলে রাণাকে বন্দী করে দিল্লী নিয়ে আসেন।
জানা যায় পরবর্তীতে, রাণা রতন সিংহের অনুপস্থিতিতে কুম্ভলনরের রাজপুত রাজা দেবপাল রাণী পদ্মাবতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহ করতে চান। চিতোর ফিরে রাণা রতন সিংহ এই ঘটনা জেনে দেবপালের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং একে অপরের দ্বারা আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
রাণা রতন সিংহের মৃত্যুর পরে আলাউদ্দিন খিলজি রাণী পদ্মাবতীকে পাবার আশায় চিতোর আক্রমণ করেন। রাজপুত রেওয়াজ অনুযায়ী শত্রুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বীর রাজপুত নারীগণ জহর ব্রত পালন করেন।
জহরব্রতকেই জীবনশেষের উপাখ্যান করে নেন বীরাঙ্গনা রাজপুত নারীরা
একশত রাজপুত নারী সমেত রাণী পদ্মাবতী জহরব্রত পালন করেন যেখানে বিরাট এক অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিয়ে রাণী ও তাঁর সকল রাজপুত সহচরী স্বেচ্ছায় প্রাণত্যাগ করেন।
আজও তাঁদের আত্মত্যাগ, বীরগাথা, সাহসী মনোবলের কাহিনি লোকমুখে প্রচলিত। জানা যায় এখনও নাকি চিতোর দূর্গ ও জহরকু্ন্ডের আশেপাশে রাণী পদ্মাবতীকে ঘুরতে দেখা যায়। নুপুরের শব্দ, রমণীদের আর্তনাদ ও কান্না শুনতে পাওয়া যায়।
- Related topics -
- ঐতিহাসিক
- ইতিহাস
- রানী পদ্মাবতী
- জীবন কাহিনি