Hemendra Mohan Bose | ব্রিটিশ আমলে একাধিক কৃতী দ্বারা 'সুগন্ধি' ইতিহাস লিখে গিযেছেন এই বাঙালি উদ্যোগপতি-হেমেন্দ্রমোহন বসু!জানুন তাঁর কর্মকৃতিত্ব!
অস্টিন গাড়ি, রবীন্দ্রনাথ, রোভার সাইকেল, সুগন্ধি কেশতেল, লালচাঁদ বড়াল, মন ভরানো পানমশলা, বঙ্গভঙ্গ, সাহিত্য পুরস্কার-এতকিছুর সঙ্গে যুক্ত বিংশ শতাব্দীর বাঙালি উদ্যোগপতি হেমেন্দ্রমোহন বসু।
অনেকেই বলে থাকেন বাঙালির দ্বারা নাকি ব্যবসা হয় না। তবে ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে যখন ব্যবসা সম্পর্কে কারুরই সেরকম জ্ঞান ছিলনা, ইংরেজদের শাসনে জর্জরিত ভারত, তখন একটি নয় একাধিক ব্যবসার সূচনা করে সাফল্যের সিংহাসনে বসেছিলেন এই বাঙালি। অস্টিন গাড়ি, রবীন্দ্রনাথ, রোভার সাইকেল, সুগন্ধি কেশতেল, লালচাঁদ বড়াল, মন ভরানো পানমশলা, বঙ্গভঙ্গ, সাহিত্য পুরস্কার-এতকিছুর সঙ্গে কোনও ব্যক্তির যোগ রয়েছে শুনলে অবাক লাগা স্বাভাবিক। তবে এরকম অবাক করাই ছিলেন হেমেন্দ্রমোহন বসু (Hemendra Mohan Bose)। কার্যত ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় শিল্পোদ্যোগকে কোণঠাসা করেছিলেন ইনি।
'শৌখিন ,মানুষদের শৌখিন রুচি'....হেমেন্দ্রমোহন বসু শৌখিন রুচিবোধকেই কাজে লাগিয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ব্যবসায় বাঙালিভাগ্যের চাকা। হেমেন্দ্রমোহন বসু বা ‘এইচ বোস’ পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ছিলই, পাশাপাশি তাঁর বাপ-কাকারা ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বপ্রতিষ্ঠিত। ময়মনসিংহ জেলার জয়সিদ্ধি গ্রামে পদ্মলোচন বসুর তিন ছেলে হরমোহন, আনন্দমোহন এবং মোহিনীমোহন। আনন্দমোহন ছিলেন ভারতের প্রথম র্যাঙ্গলার, সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বিদেশের ডিগ্রিধারী মোহিনীমোহন ভারতের প্রথম হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। হরমোহন আবার দুই ভাইয়ের চেয়ে কম যান না। যিনি উকিল না হয়ে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সরকারি আদালতের মুন্সেফ হওয়াকেই। তাঁরই চার ছেলে— হেমেন্দ্রমোহন, যতীন্দ্রমোহন, সুরেন্দ্রমোহন, সত্যেন্দ্রমোহন। ফলে এ রকম পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা হেমেন্দ্রমোহনের রুচিবোধ স্বাভাবিকভাবেই বাকি পাঁচজনের থেকে আলাদা হবেই।
হেমেন্দ্রমোহন বসু ও ব্যবসা :
হেমেন্দ্রমোহন (Hemendra Mohan Bose) জন্মগ্রহণ করেন ইংরেজি ১৮৬৪ সালে ময়মনসিংহে (বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত)। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী হেমেন্দ্রমোহন বিএ পাশ করার পর নিকটাত্মীয় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর উৎসাহে ভর্তি হন মেডিক্যাল কলেজে। বলা বাহুল্য এই কলেজে পড়তে পড়তেই এমন ঘটনা ঘটলো যা কেবল তারই নয়, বদলে দিলো গোটা বাঙালির ভাগ্য। সে সময় জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক। হেমেন্দ্রমোহন সেই কলেজের ল্যাবরেটরিতে আসেন বোটানির কিছু গবেষণা করতে। অসাবধানে কোনও রাসায়নিক দ্রব্য হেমেন্দ্রমোহনের চোখে পড়ে যায় তারপর চোখে ক্ষত পেয়ে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস বাঁধা থাকে ব্যান্ডেজ। বলা হয়, প্রায় অন্ধ হতে হতে বেঁচে ফিরছিলেন তিনি। তবে দৃষ্টি হারান না। কিন্তু সেখানেই তাঁর ডাক্তারি পড়ার ইতি হয়। যেহেতু গতানুগতিক জীবনের প্রতি হেমেন্দ্রমোহনের আগ্রহ ছিল না তাই হেমেন্দ্রমোহনের মন যায় ব্যবসার দিকে। তাঁর রক্তে ব্যবসা থাকার কারণেই হয়তো মনও সে পথেই হাঁটে।
কেশে মাখো কুন্তলীন, রূমালেতে দেলখোশ; পানে খাও তাম্বুলীন ধন্য হোক এইচ বোস
ছড়া মনে হলেও এটি কিন্তু আসলে বিজ্ঞাপন। তাও আবার কেশ তেল,সুগন্ধী এবং পানমশলা নামক তিন তিনটে দ্রব্যের। আর এই তিন দ্রব্যের প্রতিষ্ঠাতাই হলেন হেমেন্দ্রমোহন বসু। প্রায় ১২৫ বছর আগে তৎকালীন বাংলা সংবাদপত্র ও বিভিন্ন সাময়িকীতে ছেয়ে গিয়েছিলো এই বিজ্ঞাপন। কেবল সংবাদমাধ্যমেই নয় ব্রিটিশ শাসিত ভারতেও দাপিয়ে রাজ করে হেমেন্দ্রমোহনের ব্যবসা।
'কেশে মাখো কুন্তলীন'...
হেমেন্দ্রমোহন কুন্তলীন কেশতেলের কারখানা খোলেন ১৮৮০ সালে। কারখানা ভালই চলছিল, কিন্তু তাঁর মাথায় এল এক অভিনব বিজ্ঞাপন প্রচারের। ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি একজন সাহিত্যপ্রেমীও ছিলেন। ফলে তিনি ১৮৯৬ সালে ‘কুন্তলীন পুরস্কার’ নাম দিয়ে শুরু করলেন বাংলার প্রথম সাহিত্য পুরস্কার। কয়েকটি পুরস্কৃত গল্প নিয়ে একটি পুস্তক প্রকাশ করতে লাগলেন এবং লেখককে নগদ টাকা বা প্রসাধনসামগ্রী উপহার দিতে থাকলেন। এই গল্পগুলি ছিল ফরমায়েসি রচনা। এই কুন্তলীন নামটার হাত ধরেই জুড়ে গেল ছাপাখানা ও সাহিত্য পুরস্কারের গল্পও। ঠিকানা ৬২, বৌবাজার স্ট্রিট, বাড়িতে বিশাল ছাপাখানা খুললেন হেমেন্দ্রমোহন। এই প্রেসের রোটারি মেশিনে তিনিই ভারতবর্ষে প্রথম মনোটাইপ ও লাইনোটাইপ প্রথা প্রবর্তনের উদ্যোগ করেন। ছাপার কাজ বৌবাজার স্ট্রিটের বাড়িতে হলেও ব্লক তৈরি হত উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ইউ রায় অ্যান্ড সন্স থেকে। বিজ্ঞাপন ছিল ‘গল্পের সৌন্দর্য কিছুমাত্র নষ্ট না করিয়া কৌশলে কুন্তলীন এবং দেলখোশের উল্লেখ করতে হবে’। এরকমই এক উদাহরণ হলো-১৩০৭ বাংলা, ১৯০০ ইংরেজি সালে একটি গল্পের অংশ- ‘স্নান করিয়া একটু সুস্থ হইয়া খাইতে যাইবো, এমন সময় বোধ হইলো যেন একদিক হইতে মধুর গন্ধ আসিতেছে, কিছু দূর অগ্রসর হইয়াই বুঝিলাম যে তাহা সুবিখ্যাত এসেন্স দেলখোশের গন্ধ, কতকগুলি কাচা কাপড়ের একখানি হইতে আসিতেছিলো”। এই কুন্তলীন পুরস্কার পুস্তিকার জন্য রবীন্দ্রনাথ ‘কর্মফল’ গল্পটি লিখে সাম্মানিক পেয়েছিলেন ৩০০ টাকা। কুন্তলীন পুরস্কারের জন্য ১০০ টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রথম স্থানাধিকারী পেতেন ১০০ টাকা। এ ভাবে ২৫, ২০, ১৫, ১০ এবং পঞ্চম থেকে দশম স্থানাধিকারীকে ৫ টাকা দেওয়া হত।
ঠিক মতো বিজ্ঞাপন দিয়ে, প্রচার করে ব্যবসা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন হেমেন্দ্রমোহন বসু। তৈরি করেছিলেন নিজস্ব খাঁটি বাঙালি ব্র্যান্ড। সুবাসিত, পদ্মগন্ধ, গোলাপ, যুঁই, চন্দন, বোকে, ভায়োলেট কুন্তলীন— এই সাত রকমের চুলের তেল ছাড়াও নানা সুগন্ধি পাওয়া যেত। আতরিন, ল্যাভেন্ডার ওয়াটার, মৃগনাভি ল্যাভেন্ডার, অ-ডি-কোলন, রোজ ও সুপিরিয়র পমেটমস, মিল্ক অফ রোজ, টয়লেট পাউডার, রোজ কার্বলিক টুথ পাউডার আরও কত কী! তখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে হেমেন্দ্রমোহনের কল্পনা এবং তা বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা দেখে রীতিমতো অবাক হতে হয়। এই আসবাবের দামও ছিল সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। এক বোতল বড় ভায়োলেট কুন্তলীনের সবচেয়ে বেশি দাম পড়ত মেরেকেটে তিন টাকা! দাঁতের মাজন মিলত তিন আনায়।
‘রূমালেতে দেলখোশ’...
১৮৮১ সালের কুন্তলীন তেলের পরেই দেলখোস সুগন্ধি এল বাজারে। তার সুঘ্রাণ এত দূর ছ়ড়িয়ে পড়ল যে, হেমেন্দ্রমোহনের বৌবাজার স্ট্রিটের বাড়ির নামই হয়ে গিয়েছিল দেলখোস হাউস। স্যর প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ইন্ডিয়া কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্যার কে জি গুপ্ত, নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, লালা লাজপত রায়, মতিলাল নেহরুর মতো প্রখ্যাত ব্যক্তি ছাড়াও হেমেন্দ্রমোহনের 'দেলখোসে'র গুণমুগ্ধ ছিলেন আরও অসংখ্য। সুবাসিত, পদ্মগন্ধ, গোলাপ, যুঁই, চন্দন, বোকে, ভায়োলেট কুন্তলীন— এই সাত রকমের চুলের তেল ছাড়াও নানা সুগন্ধি পাওয়া যেত। আতরিন, ল্যাভেন্ডার ওয়াটার, মৃগনাভি ল্যাভেন্ডার, অ-ডি-কোলন, রোজ ও সুপিরিয়র পমেটমস, মিল্ক অফ রোজ, টয়লেট পাউডার, রোজ কার্বলিক টুথ পাউডার... তখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে হেমেন্দ্রমোহনের কল্পনা এবং তা বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা দেখে রীতিমতো অবাক হতে হয়। আর দাম? এক বোতল বড় ভায়োলেট কুন্তলীনের সবচেয়ে বেশি দাম পড়ত মেরেকেটে তিন টাকা! দাঁতের মাজন মিলত তিন আনায়। এগুলোর পাশাপাশি ছিল পানে খাবার তাম্বুলীন, ক্যাস্টর অয়েল— ক্যাস্টারীন, অপরাজিতা সেন্ট, স্পেশাল এসেন্স, কোকোলীন সাবান, সিরাপ, গোলাপ দন্তমঞ্জন, ফ্লোরিডা। হেমেন্দ্রমোহন দেখেছিলেন এদেশে প্রসাধন দ্রব্যের একটি চাহিদা আছে, বিশেষ করে সুগন্ধী কেশতেলের, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তাঁর স্বদেশপ্রীত। তিনি অনুভব করেছিলেন বিদেশাগত প্রসাধনী সামগ্রীর মধ্যে শুধু সুগন্ধীই থাকে না, তার সঙ্গে থাকে পরাধীনতার অপমানের জ্বালা। সে জন্যই নিজে সুগন্ধির ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
‘পানে খাও তাম্বুলীন’...
সুগন্ধি, চুলের তেল ছাড়াও হেমেন্দ্রমোহনের আরেক ব্যবসা যা জিতেছিল ভারতীয়দের মন তা হলো ‘তাম্বুলীন’। সেটা হল পান সুবাসিত এবং সুস্বাদু করার সামগ্রী। শুধু তৎকালীন বাংলাতেই নয়, সেই সময় এর ভাল চাহিদা ছিল মাদ্রাজ, চিন, জাপান, বর্মা, সিয়ান, জাভা এবং আমেরিকাতেও।
‘ধন্য হোক এইচ বোস’...
শুধু সুগন্ধীর ব্যবসায় সীমাবদ্ধ থাকেননি হেমেন্দ্রমোহন বসু। ছাপাখানা, রেকর্ড ব্যবসা, সাইকেল, মোটরগাড়ি, ফটোগ্রাফি, সিনেম্যাটোগ্রাফি ইত্যাদির ব্যবসাও করেছেন। ১৯০০ সাল নাগাদ তিনি একটি টু-সিটার মোটরগাড়ি কেনেন। এরপরেই মোটর গাড়ি সম্পর্কিত ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ‘গ্রেট ইস্টার্ন মোটর কোম্পানি’ (Great Eastern Motor Company) এবং গাড়ির যন্ত্রপাতি সারানোর জন্য ‘গ্রেট ইস্টার্ন মোটর্স ওয়ার্কস’(Great Eastern Motors Works) খোলেন তিনি। ১৯০৩-এ হেমেন্দ্রমোহন তাঁর ভাই জ্যোতিন্দ্রমোহন বসুর সঙ্গে শুরু করেন সাইকেলের ব্যবসা। সেই ‘এইচ বোস অ্যান্ড কো সাইকেলস্’ (H Bose & Co Cycles) ছিল দেশের প্রথম কোনও ভারতীয় মালিকানাধীন কোম্পানি!বিক্রির পাশাপাশি দিতেন সাইকেলে চড়তে শেখার পাঠও। জগদীশচন্দ্র, প্রফুল্লচন্দ্র রায় থেকে শুরু করে নীলরতন সরকার হেমেন্দ্রমোহনের হাতে ধরে সাইকেলে চড়া শিখিয়েছিলেন। সুধীরকুমার সেন নিজের প্রথম রোভার সাইকেলটি কিনেছিলেন এই ‘এইচ বোস সাইকেল কোম্পানী’র শোরুম থেকেই। এ ছাড়াও তিনি ছিলেন ভারতে রোভার সাইকেলস্-এর পরিবেশক।
তৎকালীন সময়ে ক্যামেরায় শুধু সাদাকালো ছবির প্রচলন ছিল। হেমেন্দ্রমোহনই অটোক্রোম লুমিয়ের স্লাইড ব্যবহার করে রঙিন ছবির প্রচলন করেছিলেন। তাঁর আগ্রহ ছিল নানা ধরনের খেলায়। তিনি কলকাতায় স্পোর্টস ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি ছিলেন। ১৯০০ সাল নাগাদ হেমেন্দ্রমোহন আরও দু’টি উল্লেখযোগ্য ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এই দু’টি ব্যবসাই বাঙালির বাণিজ্যের ইতিহাসে তাঁর নাম অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। প্রথমটি প্রকাশনা ও ছাপাখানা এবং দ্বিতীয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালির রেকর্ড ব্যবসা। হেমেন্দ্রমোহন শুরু করেছিলেন কুন্তলীন প্রেস নামক এক প্রকাশনা ও ছাপাখানা। পরবর্তী কালে শুরু হয় কুন্তলীন পুরস্কার। তার ইতিহাস বাঙালির কাছে আজও স্মরণীয়। তবে নানা ব্যবসা ও উদ্যোগের মাঝে হেমেন্দ্রমোহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান সিলিন্ডার রেকর্ডের ব্যবসা। টমাস আলভা এডিসন ফোনোগ্রাফ যন্ত্রটি আবিষ্কার করার পরেই কণ্ঠস্বর বা গান ধরে রাখার প্রয়াস শুরু হয় আমেরিকা এবং ইউরোপে। নানা দেশে এ নিয়ে শুরু হয় বাণিজ্য। ১৯০০ সাল নাগাদ হেমেন্দ্রমোহন বসু একটি ‘এডিসন ফোনোগ্রাফ’ আনিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু বন্ধু এবং সে কালের বিখ্যাত কিছু শিল্পীর গান মোমের সিলিন্ডার রেকর্ডবন্দি করেছিলেন। এই 'বন্ধুদের' মধ্যে ছিলেন তাঁর মামা জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখ। ১৯০৪ সাল নাগাদ ফ্রান্সের প্যাথেফোন কোম্পানির সঙ্গে হেমেন্দ্রমোহনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ হয়। ৪১ নম্বর ধর্মতলা স্ট্রিটের, মার্বল হাউসে শুরু হয় সিলিন্ডার রেকর্ড ও ফোনোগ্রাফের ব্যবসা। সেই দোকানের নাম ছিল ‘টকিং মেশিন হল’। ১৯০৬ নাগাদ হেমেন্দ্রমোহন শুরু করেছিলেন তাঁর নিজস্ব রেকর্ডের প্রতিষ্ঠান ‘এইচ বোসেস রেকর্ড’। শেষপর্যন্ত ১৯১৩-১৪ সাল নাগাদ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে প্যাথে কোম্পানি নানা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় ভারতে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯১৬-র ২৮ সে অগস্ট হেমেন্দ্রমোহনের মৃত্যু হয়। আজ, হেমেন্দ্রমোহন নেই, কুন্তলীন বা দেলখোশও নেই। তবে রয়েছে তাঁর কর্মকৃতিত্ব। আজও বিভিন্ন পুরনো জিনিসের সংগ্রাহকদের কাছে দেখা যায় এইচ বোসের সিলিন্ডার রেকর্ড থেকে কুন্তলীনের শিশি বা বেলজিয়াম থেকে ১০০ বছর আগে ছেপে আসা ‘প্যাথে এইচ বোসেস রেকর্ড’ দুর্মূল্য কালেক্টর্স আইটেম। যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে ঘুরতে ঘুরতে টানর্টেবলের ১০০ আরপিএম স্পিডে আজও যখন বেজে ওঠে রবিঠাকুরের গাওয়া ‘বন্দেমাতরম’ তখন স্মৃতির অতল থেকে উঁকি দেয় হেমেন্দ্রমোহন বসু কৃতিত্ব। সঙ্গে যেন পুনর্জন্ম পায় একজন বাঙালি উদ্যোগপতি বা ব্যবসায়ীর ব্রিটিশ আমলে তুখড় ব্যবসার চিন্তা-ভাবনা-কর্মকান্ডের ঘটনা। ছড়িয়ে পরে দেলখোশের সুগন্ধ।
- Related topics -
- সাহিত্য
- জীবন কাহিনি
- জীবন ও জীবনী
- সফলতা
- সাফল্যের কাহিনী
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ব্যবসায়ী
- বাঙালি
- বাণিজ্য