শীতকালে আমরা অনেকেই আমলকী খেতে বেশ পছন্দ করি, এই আমলকীর মধ্যেই রয়েছে কিছু বিস্ময়কর গুণাগুণ

Friday, January 7 2022, 5:33 am
highlightKey Highlights

আমাদের দেহের জন্য সবচাইতে উপকারি ভেষজের মধ্যে একটি হল আমলকী। আপনি প্রতিদিনই আমলকী খেতে পারেন কারণ এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বরং নিয়মিত এটি খেলে পাবেন দারুণ সব উপকার।


বর্তমানে মানুষের শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বেশি ঘাটতি থাকে। ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভালো এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। তাই প্রতিদিন এক গাদা ভিটামিন ট্যাবলেট না খেয়ে খান একটি করে আমলকী। এক্ষেত্রে আমলকির গুণাগুণ খুব বেশি।

সর্ব রোগহরণকারী ভেষজ উপাদান হিসাবে গণ্য আমলকী

আমলকীর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা প্রায় সব রোগ দূরে রাখতে সহায়তা করে। ইদানীং "সুপার ফুড" বলে একটা কথা বেশ প্রচলিত। যে ফলে গুণাগুৈর মান সাধারণ ফলের তুলনায় অনেক বেশি, সেসব ফলেরই এমন তকমা মেলে। আর গুণাগুণের কথা বিবেচনা করলে আমলকীকে সুপার ফুডের চেয়েও এগিয়ে রাখা যায়।

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আমলকী
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আমলকী

আসুন জেনে নেওয়া যাক নিয়মিত আমলকী খেলে কি কি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন :

চুলের যত্নে:

আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। বাজারে চলতি বহু নামিদামী কোম্পানির তেল এবং শ্যাম্পুতে আমলকী দেখা যায়। আমলকী যে কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এছাড়াও খুসকির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।

চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমলকী প্রয়োজনীয় একটি উপাদান
চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমলকী প্রয়োজনীয় একটি উপাদান
যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে:

আমলকীতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বুড়িয়ে যাওয়া ও সেল ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

বয়সের ছাপ দূর করে
বয়সের ছাপ দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি:

আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এ ছাড়াও পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে আমলকী ভীষণ সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে আমলকী
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে আমলকী
ফ্যাট ঝরান এক নিমিষে:

শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে আমলকির জুড়ি মেলা ভার। আমলকীর রস কিংবা প্রতিদিন একটি করে গোটা আমলকী খেলে আপনার শরীরের অপ্রয়োজনীয় চর্বি দূর হবে। 

শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট থেকে মুক্তি
শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট থেকে মুক্তি
ত্বকের উজ্জলতায়:

প্রতিদিন সকালে আমলকীর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, তাতে আপনার ত্বকের সমস্ত কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি 
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি 
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে:

আমলকী আপনার শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে এবং পেশি মজবুত করে।

কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে:

আমলকীর রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আমলকী চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

আমলকী দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
আমলকী দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

আমলকী খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং মানসিক চাপ ও কম হবে। কফ, বমি ভাব, অনিদ্রা, এবং ব্যথা-বেদনা কমাতে আমলকী অনেক উপকার করে। ব্রঙ্কাইটিস ও এ্যাজমার রোগীদের জন্য আমলকির জুস উপকারী।

আমলকী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আমলকী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে:

ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে এবং কোলেস্টেরল লেভেল কম রাখাতে আমলকী যথেষ্ট সাহায্য করে।

আমলকী ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর
আমলকী ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর
অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে:

এক গ্লাস দুধ বা জলের সঙ্গে আমলকি গুঁড়া ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারলে আপনার অ্যাসিডিটির সমস্যা কমবে।

অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে
অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে

আমলকী নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা করে দেখা গেছে যে, এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিস রোগে আমলকির রস কিছুটা কার্যকারী। এছাড়াও কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও আমলকীর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রমাণিত হয়েছে যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা ধরণের সমস্যা অনায়াসে কাটিয়ে তুলতে পারে এই আমলকী। ভারতবর্ষে বিশেষ করে মধ্য পূর্ব এলাকা গুলিতে এবং দক্ষিণ এশিয়াতে আমলকীর ভরপুর চাষ করা হয়। তাই প্রত্যেক দিন নিজের ডায়েটে একটা করে আমলকী রাখুন। নিজে সুস্থ থাকুন এবং অন্যকে সুস্থ থাকার পরামর্শ দিন ।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

আমলকী খাওয়ার সঠিক নিয়ম কী যাতে উপকারিতা মিলবে?

কাঁচা আমলকী ছোট ছোট টুকরো করে অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। আমলকী মিশ্রিত পানি সকালে খালি পেটে পান করুন। পরে আমলকীর টুকরোগুলোও খেয়ে ফেলুন। এতে উপকারিতা বৃদ্ধি পায়

আমলকী খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি?

প্রতি দিন সকালে খালি পেটে ১-২টি আমলকি খাওয়া যায়। এতে সব চেয়ে বেশি উপকার হয়।

আমলকীতে কি কি উপাদান আছে?

প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে আছে জলীয় অংশ- ৯১.৪ মোট খনিজ- ০.৭ আশ- ৩.৪ খাদ্যশক্তি- ১৯ আমিষ- ০.৯ চর্বি- ০.১ শর্করা- ৩.৫ ক্যালসিয়াম- ৩৪মি, লৌহ- ১.২, ভিটামিন বি-১- ০.০২,ভিটামিন- ০.০৮মি, ভিটামিন সি- ৪৬৩

আমলকীর বৈজ্ঞানিক নাম কী?

আমলকীর বৈজ্ঞানিক নাম: Phyllanthus emblica

আমলকী কোথায় পাওয়া যায়?

ভারত, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও চীনে আমলকীর বিস্তৃতি রয়েছে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File