স্বাস্থ্য

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় জেনে নেওয়া যাক

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় জেনে নেওয়া যাক
Key Highlights

কোষ্ঠকাঠিন্য হল একটি পেটের অসুখ, যা প্রায়ই খারাপ জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হল একটি বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ভালোভাবে জীবনযাপন করাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই প্রায় নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষেরা। গর্ভবতী নারীদেরও এটা একটা সমস্যা।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পেট, কোমরে, মলদ্বারে ব্যথা শুরু হয়। এছাড়াও চাপ পড়ে কোলনে। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে কোলন ক্যানসারও হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে শীতকালে খাওয়া দাওয়া (Foods For Constipation) নিয়ে সকলকেই সচেতন থাকতে হবে। বিশেষত, যাঁরা নিয়মিত ওষুধ খান তাঁদের শীতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা একটু বেশিই হয়। শীতকালে জল প্রয়োজনের তুলনায় কম খাওয়া হয়। সেখান থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হানা দেয় শরীরে। অথচ এর হাত ধরেই কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হানা দেয় শরীরে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড বা কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি নাজেহাল করে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ব্যক্তি যদি সপ্তাহে তিনবার বা তিনবারের কম মলত্যাগ করেন, তার মানে তিনি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন। তবে সঠিক ডায়েট গ্রহণ করলে আপনি কোষ্ঠ কাঠিন্যের  মোকাবিলা করতে পারেন। 

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ | Symptoms of constipation:

  • মল ত্যাগ করতে অধিক সময় লাগা;
  • অধিক সময় ধরে মল ত্যাগ করার পরও পূর্ণতা না আসা;
  • শক্ত পায়খানা হওয়া;
  • মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব করা;
  • মলত্যাগ করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া ইত্যাদি।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ | Causes of constipation:

  • শাকসবজি, ফলমূল এবং আঁশজাতীয় খাবার কম খেলে;
  • জল কম পান করলে 
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে;
  • অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে;
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে;
  • মস্তিষ্কে টিউমার হলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে;
  • বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন, যেমনঃ ব্যথার ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ
  • কিছু কিছু ওষুধ কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দায়ী (যেমন নিয়মিত আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন, আয়রন বা ক্যালসিয়াম বড়ি)। এসব বিষয় খেয়াল করতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় | Ways to relieve constipation:

  • কফি, পিৎজা, ফাস্ট ফুড বা পাস্তার মতো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। 
  • চকলেট, ভাজাপোড়া, লাল মাংস (গরু, খাসি ইত্যাদি), চিপস, প্রচুর চিনিযুক্ত বেকারি খাদ্য যেমন কেক, পেস্ট্রি কেক এবং আয়রন ক্যাপসুল, কাঁচাকলা ইত্যাদি কম খাওয়াই ভালো।
  • প্রচুর পরিমানে সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি হল আপনার অন্ত্রের চলাচল সহজ করার সেরা উপায়। ব্রাসেলস স্প্রাউট শরীরে তরলের অভাব কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রথম কারণ। এটি দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য। এগুলো আপনার পাকস্থলীর জন্য খুবই ভালো, যাতে মলত্যাগে কোনো সমস্যা না হয়। যে ব্যক্তি শাকসবজি খান তিনি খুব দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পান।
  • মাংস: লাল মাংসে (গরু ও খাসির) চর্বি বেশি থাকে। এটা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। এই খাবার অন্ত্রে অনেকক্ষণ থাকে। মাংসের সঙ্গে পাতে যেন প্রচুর সবজি ও সালাদ থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
  • প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী। প্রোবায়োটিক হল জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া যা প্রাকৃতিকভাবে দই, কম্বুচা, কিমচি এবং টেম্পেহের মতো খাবারে পাওয়া যায়। এটি পাকস্থলীর কার্যকারিতা উন্নত করে হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়।
  • নিয়মিত ডাল খেতে হবে। ডাল অনেক ধরনের আছে। বেশিরভাগ মটরশুটি, মসুর ডাল, ছোলা এবং মটর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সহজ করে।
  • ফল খেতে হবে। কিউই, কমলা, নাশপাতি এবং আপেলের মতো ফল হজমের জন্য খুবই ভালো বলে মনে করা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন এমন যে কেউ এই ফলগুলি খেলে আরাম অনুভব করতে পারেন।
  • ​বেশি করে জল পান করুন। আপনার অন্ত্র উন্নত করার আরেকটি উপায় হল জল। স্বাস্থ্যকর পরিপাকতন্ত্রের জন্য আপনার হাইড্রেটেড থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সারাদিন প্রচুর জল পান করতে হবে। শরীরে তরলের অভাব প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রথম কারণ। তাই সারাদিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করতে হবে। এটি আপনাকে শুধু এনার্জিতেই রাখবে না, মলত্যাগও ভালো হবে।
  • ​সকালের জলখাবারে ওটমিল খান। ওটমিল এটি দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ। প্রথমে, এটি জলে সহজেই দ্রবীভূত হয় এবং একটি জেলের মতো রূপ নেয়, যেখানে অদ্রবণীয় ফাইবার খাদ্যকে নরম করতে এবং পাকস্থলী এবং অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়া সহজ করার জন্য মলের মধ্যে ভারীভাবে আবদ্ধ হয়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়মিতভাবে মেনে চলুন। এরপরেও আপনি এই সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।