Electoral Bonds | ১,৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনে ১নম্বরে লটারি ব্যবসায়ী! বন্ড কেনার নিরিখে প্রথম ৩০টি সংস্থার ১৪টিতেই তল্লাশি চালিয়েছে CBI, ED!
লোকসভা ২০২৪ নির্বাচনের আগেই নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করলো নির্বাচন কমিশন। সেই তথ্য অনুযায়ী, ১,৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনে শীর্ষে মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। ১২ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকার ইলেকটোরাল বন্ডের অর্ধেকাংশেই গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে।
লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ এর তারিখ (lok sabha election 2024 date) ঘোষণা করার আগেই জন সমক্ষে এসেছে নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bonds) সংক্রান্ত তথ্য। সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশ পেয়ে এই বন্ড সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচনী কমিশনকে দেয় এসবিআই (SBI)। এরপর সেই তথ্য প্ৰকাশ করে ইলেকশান কমিশন। বন্ডের ক্রেতা এবং প্রাপক দলের লম্বা তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১২ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকার ইলেকটোরাল বন্ডের অর্ধেকাংশেই গিয়েছে গেরুয়া শিবির অর্থাৎ বিজেপির কাছে। এই মোট অর্থের এক তৃতীয়াংশে ভাঙানো হয়েছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়। এছাড়া ক্রেতাদের মধ্যে অর্থাৎ বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। তারা কিনেছে মোট ১,৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড। দেখে নেওয়া যাক লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024) নির্বাচনের আগে পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ড কে বেশি কিনলো।
নির্বাচনী বন্ড ক্রেতার তালিকা | List of Electoral Bond Buyers :
কত তারিখে কোন সংস্থা কোন দল কত টাকার বন্ড কিনেছিল, তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে নির্বাচনী কমিশন। যাতে দেখা যাচ্ছে নাম রয়েছে দেশের অগ্রগণ্য বহু শিল্পগোষ্ঠীর। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (SBI) তথ্য অনুযায়ী ২২ হাজার ২১৭টি বন্ড কেনা হয়েছিল। তার মধ্যে সব দল মিলিয়ে বন্ড ভাঙিয়েছে ২২ হাজার ৩০টি। কমিশন যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দাতা সংস্থার তালিকা ৩৩৭ পাতার। আর প্রাপক দলগুলির নামের তথ্য ৪২৬ পাতার। কমিশনের নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প (electoral bonds scheme) সংক্রান্ত প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে ‘ফিউচার গেমিং এবং হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’ (Future Gaming and Hotel Services Private Limited) নামের একটি সংস্থা। মোট ১,৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে সংস্থাটি। এটি লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা বলে জানা গেছে। মূলত দক্ষিণ ভারতে লটারি ব্যবসা শুরু করলেও এই মুহূর্তে উত্তর-পুর্ব ভারত এমনকি নেপাল ও ভুটানেও তাঁর লটারি ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’ (Megha Engineering and Infrastructure Limited)। তারা ৯৬৬ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। ৪১০ কোটি টাকার বন্ড কিনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্রের ‘কুইক সাপ্লাই চেন প্রাইভেট লিমিটেড’ (Quick Supply Chain Pvt Ltd)।
এক নজরে শীর্ষ ১০ নির্বাচনী বন্ড ক্রেতা –
১) ফিউচার গেমিং এবং হোটেল সার্ভিসেস – ১,৩৬৮ কোটি টাকা
২) মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড - ৯৬৬ কোটি টাকা
৩) কুইক সাপ্লাই চেন প্রাইভেট লিমিটেড - ৪১০ কোটি টাকা
৪) বেদান্ত লিমিটেড – ৪০০ কোটি টাকা
৫) হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড – ৩৭৭ কোটি টাকা
৬) ভারতী গ্রুপ – ২৪৭ কোটি টাকা
৭) এসেল মাইনিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড – ২২৪ কোটি টাকা
৮) ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড – ২২০ কোটি টাকা
৯) কেভেন্টার ফুডপার্ক ইনফ্রা লিমিটেড – ১৯৫ কোটি টাকা
১০) মদনলাল লিমিটেড - 185 কোটি টাকা
নির্বাচনী বন্ডের ক্রেতাদের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন - https://rb.gy/dc6dx3
প্রসঙ্গত, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bonds) ক্রেতা তালিকার শীর্ষে থাকা প্রথম দুটি সংস্থাতেই তল্লাশি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। ২০১৯ সালে ‘ফিউচার গেমিং এবং হোটেল সার্ভিসেস’-এর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। ওই বছরের জুলাই মাসে কোম্পানির ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি অ্যাটাচ করেছিল ইডি। জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের ২রা এপ্রিল আরও ৪১০ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি অ্যাটাচ করে ইডি। এর ৫ দিন পর ৭ই এপ্রিল ১০০ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কেনে ফিউচার গেমিং এবং হোটেল সার্ভিসেস। এরপর তদন্ত আচমকা থামিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সংস্থাটি।অন্যদিকে,নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প (electoral bonds scheme) সংক্রান্ত প্রকাশিত তথ্যে বন্ড ক্রেতা তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সংস্থার একাধিক অফিসেও ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে হানা দেয় আয়কর দফতর। পঞ্চম স্থানে থাকা হলদিয়া এনার্জিতে ২০২০ সালের মার্চ মাসে হানা দেয় সিবিআই। ২০২২ সালের অগস্ট মাসে বেদান্ত লিমিটেডে তল্লাশি চালায় ইডি। আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তালিকা থেকে। তা হল, কেবল সান্তিয়াগোর সংস্থাই নয়, বন্ড কেনার নিরিখে প্রথম ৩০টি সংস্থার ১৪টিতেই গত কয়েক বছরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে সিবিআই, ইডি কিংবা আয়কর দফতর (আইটি)-এর আধিকারিকেরা।
নির্বাচনী বন্ড কী? । What is Electoral Bond ?
নির্বাচনের আগে আর্থিক অনুদান দেওয়ার একটি পদ্ধতি হল নির্বাচনী বন্ড বা ইলেক্টোরাল বন্ড। এই নিয়ম চালুর জন্য ২০১৭ সালে একাধিক সংশোধন করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে তা চালু হয়। নির্বাচনী বন্ড বা ইলেক্টোরাল বন্ডের নিয়ম অনুয়ায়ী, কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনও রাজনৈতিক দলকে আর্থিক অনুদান দিতে চাইলে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড কিনে পছন্দের রাজনৈতিক দলকে দিতে পারেন। অর্থাৎ পরিচয় এবং অর্থের অঙ্ক গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনী বন্ডে। সেই ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। কথা ছিল, কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থের অঙ্কের বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দেবেন। অনুদানপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলগুলি ১৫ দিনের মধ্যে এসবিআই-এর শাখার গিয়ে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নগদ করতে পারে।
তবে লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024) নির্বাচনের আগে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘ক্ষতিকারক’ আখ্যা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দেয় অবিলম্বে নির্বাচনী বন্ড বিক্রি বন্ধ করার জন্য। পাশাপাশি, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কতগুলি নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে, কোন কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ড থেকে টাকা পেয়েছে সেই সংক্রান্ত সব তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই মতো ১৩ইমার্চ, নির্বাচনী বন্ডের তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দেয় রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কটি। এবার সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনলো নির্বাচন কমিশন। আর সেই তথ্য থেকেই জানা গিয়েছে, বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’ এবং নির্বাচনী অনুদান প্রাপকদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিজেপি। ৬,০৬০ কোটি টাকা রাজনৈতিক অনুদান হিসাবে পেয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলটি।