Kitchen Utensils | স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, নন-স্টিক না মাটির পাত্র? কোন ধরণের বাসনে রান্না করা স্বাস্থ্যকর?

Monday, May 13 2024, 9:32 am
highlightKey Highlights

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি রান্না–খাওয়ার কাজে কোন বাসন ব্যবহার করছেন, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। রান্না করার সময় গরম হয়ে এই বাসনপত্রের মেটেরিয়াল খাবারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এমন কিছু ক্ষতিকারক উপাদান তৈরি করে, যা শরীরের ক্ষতি করে।


শরীর সুস্থ্য রাখতে স্বাস্থ‍্যকর খাবার খাওয়া সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে চিকিৎসকরা সকলেই টাটকা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে কেবল খাবার স্বাস্থ্যকর হলেই হবে না, স্বাস্থ্যকর হতে হবে খাবার রান্না করার বাসনপত্রও (Utensils)! সম্প্রতি ‘ন‍্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন’ (National Institute of Nutrition) বলছে, কী খাচ্ছেন তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কোন ধরনের পাত্রে রান্না করছেন। অনেকেই রান্নাঘরের বাসনপত্র (kitchen utensils) হিসেবে স্টিল, অ্যালুমিনিয়ামের বাসন ব্যবহার করে থাকেন। তবে বর্তমানে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ননস্টিকের বাহারি নানা বাসনপত্র। কিন্তু অনেকে বলেন এই ননস্টিকের পাত্রের থেকে স্টিলের বাসন (steel utensils) বেশি উপকারী। আবার অনেকের বক্তব্য অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র (aluminium utensils) বা কাঁসার পাত্র (kansa utensils) বেশি স্বাস্থ্যকর। এক এক জনের এক এক মতে অনেকেই বিভ্রান্ত। ফলে জেনে  নিন কোন ধরণের রান্নাঘরের বাসনপত্র (kitchen utensils) ব্যবহার করা বেশি স্বাস্থ্যকর।

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি  রান্না–খাওয়ার কাজে কোন বাসন ব্যবহার করছেন, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি রান্না–খাওয়ার কাজে কোন বাসন ব্যবহার করছেন, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ

স্টিলের বাসন । Steel Utensils :

Trending Updates

রান্না করা ও খাওয়ার কাজে সবচেয়ে ব্যবহৃত এই বাসন শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এগুলি অনেক বেশি টেঁকসই হয়। স্টিলের বাসনের অন্যতম এক উপাদান লোহা, যা শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। ফলে রক্তাল্পতার সমস্যা থাকলে এই বাসন ব্যবহার করলে উপকার পেতে পারেন। তবে ভাল মানের স্টিল ব্যবহার করতে হবে। এই ধরনের বাসন থেকে কোনও ক্ষতিকর ধাতু খাবারে এসে মেশে না।

অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র । Aluminum Utensils :

ঘর গেরস্থালির কাজ তথা রান্নাবান্নার জন্য অ্যালুমিনিয়ামের বাসন খুবই প্রয়োজনীয়। নিত্যদিনের রান্নার কাজে এই বাসনপত্র ছাড়া উপায় নেই। পাশাপাশি অ্যালুমিনিয়াম সুলভ এবং দামেও তুলনামূলকভাবে সস্তা। কিন্তু এই বাসনে আম্লিক এবং নোনতা রান্না করা বিপদের কারণ হতে পারে। অ্যাসিড ও নুন সমৃদ্ধ খাবার অ্যালুমিনিয়ামের সংস্পর্শে বিক্রিয়া করে বিষাক্ত খাবারের পরিণত হতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালুমিনিয়াম শরীরে প্রবেশ করলে স্নায়ুরোগ এবং হাড়ের দুর্বলতা হতে পারে। আম্লিকের পাশাপাশি ক্ষারীয় খাবারও অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়া করে খাবারের স্বাদ ও গুণ নষ্ট করতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম শরীরে প্রবেশ করলে অ্যালঝাইমার্স-সহ নানা স্নায়ুরোগের আশঙ্কা বাড়তে পারে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।  বলা বাহুল্য, অক্সিডাইজ করা থাকে বলে এতে রান্না করলে বা গরম করলে খাবার দূষিত হয় না। তবে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে গরম খাবার রাখলে বা এতে জড়িয়ে রান্না করলে সে খাবার দূষিত হতে পারে।

পেতল ও কাঁসার পাত্র । Brass and Kansa Utensils :

এককালে এই দু'টি ধরনের বাসনই বাঙালি বাড়িতে খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু ভারী হওয়ার কারণে এবং মাজার অসুবিধে বলে ধীরে-ধীরে এই ধরনের ধাতুতে তৈরি বাসনপত্র হেঁশেল থেকে বেরিয়ে এখন ঠাঁই পেয়েছে ঠাকুরঘরে! এই ধরনের বাসনপত্রে রান্না করলে খাবারের খাদ্যগুণ নাকি ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত অটুট থাকে। তবে অ্যাসিডিক প্রপার্টিজ বেশি আছে, এমন ধরনের রান্না, যেমন চাটনি-অম্বল ইত্যাদি আবার এই ধরনের বাসনে করবেন না। এজেন্সি ফর টক্সিক সাবস্ট্যান্স ও ডিজিজ রেজিস্ট্রি (ATSDR)–এর প্রায়োরিটি টক্সিন তালিকার বেশ উঁচুতেই রয়েছে তামার নাম৷ সুস্বাস্থ্যের জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স–এর ডায়াটারি রেফারেন্স ইনটেক্সের মতে পূর্ণবয়ষ্ক মানুষের দিনে ৯০০ মাইক্রোগ্রামের মতো তামা দরকার। আর তার পরিমাণ ১০,০০০ মাইক্রোগ্রাম বা ১০ মিলিগ্রামের থেকে বেড়ে না গেলে কোনও ক্ষতি নেই। কাজেই এসব পাত্রে রান্না করলে কি খেলে ভাল ছাড়া মন্দ হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই।

লোহার পাত্র । Iron Utensils :

লোহার পাত্র দেখতে খুব একটা ভালো হয় না৷ তার উপর এতে রান্না করলে খাবার অনেক সময় কালো হয়ে যায়৷ টমেটো, লেবুর রস বা ভিনিগার দিয়ে করলে তো বিশেষ করে৷ কিন্তু এ সব না ভেবে যদি লোহার কড়াই ব্যবহার করেন, কড়াই থেকে লোহা খাবারে মিশে পুষ্টি বাড়িয়ে দেবে৷ তবে হ্যাঁ, পলিসাইথিমিয়া নামে বেশি রক্ত থাকার অসুখ বা থ্যালাসেমিয়া রোগ থাকলে নিয়মিত ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে৷

 কড়াই থেকে লোহা খাবারে মিশে পুষ্টি বাড়িয়ে দেবে
 কড়াই থেকে লোহা খাবারে মিশে পুষ্টি বাড়িয়ে দেবে

রুপোর বাসন । Silver Utensils :

ছোটবেলায় বাচ্চাদের রুপোর ঝিনুকে দুধ খাওয়ানো হয়। বলা হয় এতে বাচ্চাদের শরীর-স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। রুপোর বাসনে থাকা উপাদান মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়। তাই রুপোর থালা, বাটি বা চামচ খাওয়ার জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর।

মাটির পাত্র । Clay Utensils :

আগেকার দিনে মাটির হাঁড়িতে ভাত রান্না করার চল ছিল। মাটির বাসন গরম হতে খুব সময় নেয়, তাই খাবারের মধ্যে ময়শ্চার ধরে রেখে তা খাবারের পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখবেন, মাটির বাসন কেনার সময় আনগ্লেজড বাসন কিনবেন। গ্লেজিং করার সময় যে উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা অনেকসময় স্বাস্থ্যকর হয় না। তবে সবচেয়ে প্রয়োজীয় বিষয় হল এর মাধ্যমে যে কোনও খাবার থেকে অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যায়। তার সঙ্গে মাটির মধ্যে থাকে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং সালফার। তা-ও খাবারের সঙ্গে যুক্ত হয়। তা ছাড়া, কম তেলও লাগে এই ধরনের পাত্রে রান্না করলে। অর্থাৎ, মাটির হাঁড়িতে রান্না করা খাবার খেলে কম তেল যায় শরীরে।

নন–স্টিক প্যান । Non-Stick Pan :

শৌখিন রান্নাঘরের অঙ্গ৷ কম তেলে রান্না করতে ও সহজে পরিষ্কার করতে এর জুড়ি মেলা ভার। টেফলন, সিলভারস্টোন, টেফাল, অ্যানোলন, সার্কুলন, সেফালনসহ আরও অনেকে উপাদান রয়েছে এসব বাসনপত্র (Utensils)। যা রান্নার সময়ে খাবারের সঙ্গে মিশে দূষিত করে। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে ,এসব উপাদানের সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব, পড়াশোনার দক্ষতা কমে যাওয়া ও ওজন বাড়ার একটা যোগ আছে।

কাচের বাসন । Glassware :

কাচের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তা সে আপনি যত উচ্চ তাপমাত্রাতেই এই ধরনের বাসনপত্র ব্যবহার করুন না কেন। মাইক্রোওয়েভের উপর যাঁদের জীবন অনেকটাই নির্ভরশীল, তাঁরা আপন করে নিন কাচের তৈরি নানা ধরনের বাসনপত্র। তবে এই ধরনের বাসন সরাসরি গ্যাসে বসিয়ে রান্না করতে পারবেন না, এটাই যা দুঃখের।

মেলামাইন পাত্র । Glassware Utensils :

 এতে খাবার গরম করা বা রান্না না করাই ভাল। কারণ গলে না গেলেও এ থেকে সামান্য পরিমাণে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে খাবারে মিশতে পারে। মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা ডিশ ওয়াশারের তাপেও একই ব্যাপার ঘটতে পারে, যতই তা মাইক্রোওভেন-টেকসই বলা হোক না কেন।

সিরামিক পাত্র । Ceramic Utensils :

 সিরামিক পাত্র যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়। এতে গরম খাবার যেমন খাওয়া যায়, তেমনি রান্না করলেও ক্ষতি নেই। মাইক্রোওভেন, ডিশ ওয়াশার বা ব্রয়লারের তাপেও সে ঠিকঠাক থাকে পাশাপাশি দেখতেও সুন্দর।

 সিরামিক পাত্র যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়
 সিরামিক পাত্র যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়

খাবারই শরীররে পুষ্টি জোগায়। কিন্তু সেই খাবার আপনি কোন পাত্রে রেখে খাচ্ছেন বা রান্না করছেন তা-ও আপনার শরীরে বিপুল প্রভাব ফেলে। রান্না করার সময় ও খাওয়ার সময় যে বাসন ব্যবহার করছেন, সেই বাসনের উপাদানও কিন্তু রান্নায় মিশছে। কাজেই শরীর সুস্থ রাখার জন্য বাসন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একটু সচেতন হওয়া দরকার।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File