PCOS | প্রতি ৫ জন মহিলার মধ্যে ৩ জন মহিলাই ভোগেন PCOS-এ! কী কী উপসর্গ দেখলে হবেন সতর্ক? জানুন এর প্রতিকার সম্পর্কেও!

Monday, February 19 2024, 12:23 pm
highlightKey Highlights

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস বিরল কোনো রোগ নয়। বর্তমানে এই সমস্যায় আক্রান্ত অসংখ্য যুবতী-মহিলা। তবে এই সমস্যার প্রতিকার না করলে হতে পারে ভয়াবহ পরিণতি।


মহিলাদের একটি বড় সমস্যা হল, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)।  বর্তমানে এই সমস্যায় আক্রান্ত অসংখ্য যুবতী-মহিলা। তবে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস বিরল কোনো রোগ নয়। প্রতি ৫ জন মহিলার মধ্যে ৩ জন মহিলা এখন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে ভুগে থাকেন। সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ঋতুস্রাবের স্বাভাবিক সময়। তবে পিসিওএসে আক্রান্ত হলে দুই মাস বা তিন মাস পর পর ঋতুস্রাব হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ নারীই ওবিস। অর্থাৎ তাঁদের ওজন ও বিএমআই (BMI) স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। বিএমআই ২৫ থেকে ৩০ হলে ওভারওয়েট এবং ৩০–এর বেশি হলে ওবিস (obese) বলা হয়। চিকিৎসকদের একাংশ মনে করেন এই রোগের পিছনে লাইফস্টাইল ও দূষণ দায়ী। অনেকের ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণেও পিসিওএস-এর সমস্যা দেখা দেয়। দেখে নিন পিসিওএস রোগ কী? পিসিওএস কেন হয়? পিসিওএস প্রতিকার কী? পিসিওএস ও পিসিওডি এর পার্থক্য (Difference between PCOS and PCOD) কী এবং ৭ দিনের পিসিওএস ডায়েট প্ল্যান (7 Day PCOS Diet Plan) সম্পর্কে।

প্রতি ৫ জন মহিলার মধ্যে ৩ জন মহিলা এখন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে ভুগে থাকেন
প্রতি ৫ জন মহিলার মধ্যে ৩ জন মহিলা এখন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে ভুগে থাকেন

স্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের গণ্ডগোলের কারণেও মহিলাদের দেহে বাসা বাঁধে পিসিওএস (PCOS)। এন্ডোক্রিন সিস্টেমের ভারসাম্যহীনতার কারণে মূলত এই রোগ দেখা দেয়। পিসিওএস-এর সমস্যা হলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে থাকে। এর জেরে ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে পিসিওএস গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনিয়মিত ঋতুস্রাব ছাড়াও পিসিওএস থাকলে ওজন বাড়তে থাকে। পাশাপাশি মুখে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে লোমের আধিক্য বাড়তে থাকে। এমনকী মুখে ও পিঠে ব্রণ হতে থাকে। তার সঙ্গে চুল পড়া বাড়ে এবং চুল পাতলা হয়ে যায়।

পিসিওএস কী কারণে হয়? । What Causes PCOS?

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস একটি অ্যান্ডোক্রিন সিস্টেম ডিসঅর্ডার। এই অবস্থায় ওভারিতে প্রচুর অ্যান্ডোজেন তৈরি হয়, যা ডিম্বাণু তৈরি ও নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে। মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ায় ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। আর একাধিক সিস্টকে একসঙ্গে বলা হয় পলিসিসিস্ট। এই সিস্টগুলো যখন ওভারির অরগ্যানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সাধারণত জিন ও পরিবেশগত কারণে এটি বেশি হয়ে থাকে।

পিসিওএস হলে মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ায় ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়
পিসিওএস হলে মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ায় ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়

পিসিওএস ও পিসিওডি এর পার্থক্য । Difference between PCOS and PCOD :

পিসিওএস ও পিসিওডি এই দুই শারীরিক সমস্যাকে অনেক সময়ে অন্যেকে এক করে ফেলেন। তবে পিসিওডি বনাম পিসিওএস (PCOD vs PCOS) পার্থক্য রয়েছে একাধিক। দেখে নেওয়া যাক পিসিওডি বনাম পিসিওএস (PCOD vs PCOS) পার্থক্য কী কী-

পিসিওডি (PCOD) থাকলে ডিম্বাশয় অপরিণত ডিম্বাণু নির্গত করে, অচিরেই যা সিস্টে পরিণত হয়। এর ফলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ওজন বৃদ্ধি,চুল উঠে যাওয়া, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। পিসিওডি থাকলে ডিম্বাশয় আকারে অনেকটা বেড়ে যায় এবং তা থেকে বেশিমাত্রায় পুরুষ হরমোন নিঃসরণ ঘটতে থাকে। অন্যদিকে, এন্ডোক্রিন সিস্টেমের গোলমালে মূলত পিসিওএস হয়ে থাকে। এই অসুখের কারণে শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য ঘটে। ফলে ডিম্বস্ফোটন অনিয়মিত হয়ে যায় এবং ডিম্বাশয়ে অনেক সিস্ট তৈরি হয়। চিকিৎসকদের মতে, পিসিওডি সেই অর্থে কোনও রোগ নয়। ঠিক মতো খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার মাধ্যমেই পিসিওডি সারানো সম্ভব। পাশাপাশি, পিসিওডি থাকলে গর্ভধারণ ওসন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে তেমন কোনও সমস্যা হয় না। অন্যদিকে, পিসিওএস তুলনায় অনেক বেশি জটিল রোগ। পিসিওএস যেহেতু এক ধরনের বিপাকীয় অসুখ, তাই এটা সারাতে চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন। এছাড়াও পিসিওএস থাকলে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় গর্ভপাতের আশঙ্কাও থাকে। কারণ পিসিওএস ডিম্বস্ফোটনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।

পিসিওডি সেই অর্থে কোনও রোগ নয় তবে পিসিওএস তুলনায় অনেক বেশি জটিল রোগ
পিসিওডি সেই অর্থে কোনও রোগ নয় তবে পিসিওএস তুলনায় অনেক বেশি জটিল রোগ

পিসিওএসের উপসর্গ । Symptoms of PCOS :

পিসিওএস হলে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। এই উপসর্গগুলি দ্বারা পিসিওএস হয়েছে কি না তার প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেলেও, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিসিওএস হয়েছে কি না তা নিশ্চিত জানতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সেই মতো পরীক্ষা করতে হবে। প্রাথমিকভাবে এই শারীরিক সমস্যার উপসর্গগুলি হলো -

  • মেন্সট্রুয়াল সাইকেল বা ঋতুস্রাব হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • পিসিওএসে আক্রান্ত অনেকেরই পরপর ও একাধিকবার ঋতুস্রাব অনিয়মিতভাবে হয়। আবার যখন হয় তখন তা অতিরিক্ত পরিমাণে হয়।
  • ঋতুস্রাব বছরে দুই-তিনবার বা তার চেয়ে কমও হতে পারে।
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম গ্লুকোজ অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ওজন বেড়ে স্থূলতা দেখা দিতে পারে।
  • ঘাড়, গলা, কুঁচকি ও শরীরের বিভিন্ন অংশ অতিরিক্ত কালো হয়ে যেতে পারে।
  •  মুখ, পিঠ, বুকসহ শরীরে হঠাৎ প্রচুর ব্রণ দেখা দিতে পারে।
  • দেহে অবাঞ্ছিত লোম বেড়ে যেতে পারে।
  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে।
  • মাথার কিছু অংশের চুল অতিরিক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে বা চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে।
অনিয়মিত ঋতুস্রাব, চুল পড়া, ওজন বৃদ্ধির মতো একাধিক উপসর্গ দেখা যায় পিসিওএস হলে
অনিয়মিত ঋতুস্রাব, চুল পড়া, ওজন বৃদ্ধির মতো একাধিক উপসর্গ দেখা যায় পিসিওএস হলে

পিসিওএসের প্রতিকার । Remedy for PCOS :

 সমস্যা হল, পিসিওএস কোনও দিন সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয় না। তবে, এর উপসর্গগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত পিসিওএসের জন্য যোগব্যায়াম (Yoga for PCOS), স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া করলেই পিসিওএস-এর উপসর্গগুলো মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে করা যাবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা পেলভিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং হরমোন সংক্রান্ত রক্ত ​​পরীক্ষার সাহায্যে মহিলাদের পিসিওএস নির্ণয় করেন। এই পরীক্ষা সাধারণত করা হয় যখন মহিলার মাসিক হয়। এটি তাদের বেসলাইন হরমোন এবং তাদের জরায়ুর আকার নির্ধারণ করতে সাহায্য করে এবং বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক ওভারিয়ান ড্রিলিং করা হয় অনেকসময়। একবার পিসিওএস ধরা পড়লে, বিশেষজ্ঞরা সাধারণত জীবনধারা পরিবর্তন, যেমন- ওজন হ্রাস, জীবনধারায় লাগাম টানা ও শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৭ দিনের পিসিওএস ডায়েট প্ল্যান । 7 Day PCOS Diet Plan :

পিসিওএস হলে একটি নির্দিষ্ট পিসিওএস  ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। পিসিওএস এর জন্য একটি ডায়েটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ক্যালোরি গ্রহণ। পিসিওএস ডায়েট প্ল্যান স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠনে সহায়তা করে। এই ডায়েটে রাখতে পারেন সালমন মাছ, মটরশুটি, এবং চিংড়ি, বাদামী চাল, কুইনো, মসুর ডাল, সাদা আলু, মটর, ওটস, মসুর ডাল এবং মটরশুটি, আভাকাডো, চিয়া, বাদাম, জলপাই তেল, আখরোট, সূর্যমুখী, কাজু,বিট, বেরি যেমন স্ট্রবেরি বা রাস্পবেরি, টমেটো, আপেল, অ্যাসপারাগাস এবং ব্রোকলি, আস্ত শস্য চাল বা শুকনো ফল, দারুচিনি, হলুদ, রসুন, আদা, জাফরান, জিরা, লবঙ্গ এবংগোল মরিচ, কেল, পালংশাক, বাঁধাকপি, লেটুস এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি, দুগ্ধজাত দ্রব্য, ফল, সবজি, শস্য, চর্বি এবং বাদাম।

 অন্যদিকে, পিসিওএস হলে এমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত যা লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এখেত্রে ডায়েট থেকে বাদ দেবেন, ভুট্টা, মিষ্টি আলু এবং স্কোয়াশ, ফলের রস এবং টিনজাত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার, বার্গার, ফ্রাই, কেক, আইসক্রিম এবং কুকির মতো খাবার। তবে ডায়েট প্ল্যানে কোনো পরিবর্তন করার আগে পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ নেবেন অবশ্যই।

পিসিওএস হলে একটি নির্দিষ্ট পিসিওএস  ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। 
পিসিওএস হলে একটি নির্দিষ্ট পিসিওএস ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, পিসিওএস কোনও রোগ নয়, বরং একটি ডিসঅর্ডার। নিয়মিত চিকিৎসা না করালে বা স্বাস্থ্যের খেয়াল না রাখলে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এই সমস্যায় ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ওজন বেড়ে যাওয়া ও হিরসুটিজমের মতো সমস্যা দেখা দেয়। একটু বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে, প্রজননে সমস্যা, গর্ভপাত, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে। সাধারণত কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর রাখলেই এই ডিসঅর্ডার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যেমন- প্রতিদিন চটজলদি ও মশলাদার খাবার খাওয়া, ধূম ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা, সঠিক খাদ্যাভাস, পরিশ্রুত কার্ব ও বেশি মিষ্টি খাবারও এড়িয়ে চলা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত পিসিওএসের জন্য যোগব্যায়াম (Yoga for PCOS) করলেই পিসিওএস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File