উচ্চ রক্তচাপ কী ? কেন হয় ? উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কী ? Details about high blood

Saturday, August 6 2022, 3:11 pm
highlightKey Highlights

উচ্চ রক্তচাপ দেহের এমন একটি অবস্থা যেখানে আমাদের ধমনীর দেয়ালের বিরুদ্ধে রক্ত প্রবাহের শক্তি খুব বেশি থাকে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সাধারণত রক্তের চাপ ১৪০/৯০ এবং ১৮০/১২০ এর উপরে হয়ে গেলে গুরুতর বলে বিবেচিত হয়। উচ্চ রক্তচাপ হল মানব দেহের একটি জটিল শারীরিক সমস্যা যা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত যকৃত, হৃদপিণ্ড, চোখ ও কিডনির সমস্যা দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবে।


কী কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে ? Causes of high blood pressure

Read also :

Trending Updates

বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ পরিলক্ষিত হয় না, একে বলে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ। তবে দৈনন্দিন জীবনের কিছু কিছু অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপের আশংকা বাড়ায়, সেগুলি হল:

বংশানুক্রমিক সমস্যা

উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে বংশগত ধারাবাহিকতা আছে, যদি বাবা বা মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানের মধ্যও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ধূমপান করার ফলে

যারা ধূমপান করেন তাদের শরীরে তামাকের নানারকম বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ সহ ধমনি ও শিরার নানা ধরনের রোগ তথা হৃদরাগ দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে :

আমাদের খাবার তৈরীতে যে লবণ ব্যবহৃত হয় তাতে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তের জলীয় অংশ বৃদ্ধি করে দেয়। ফলে দেহে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে রক্তচাপও বেড়ে যায়।

অধিক ওজন এবং অলস জীবনযাপনের কারণে :

যথেষ্ট পরিমাণে শরীরচর্চা ও শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে অনেকেরই শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়, যার ফলে হৃদযন্ত্রকে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছু অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় এবং এর ফলস্বরূপ অধিক ওজন সম্পন্ন লোকদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হয়ে থাকে।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থাকলে :

মাংস, মাখন ও ডুবোতেলে ভাজা খাবারের মত অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ওজন বেড়ে যায় এবং শারীরিক অন্য সমস্যাও দেখা যায়। অন্যদিকে ডিমের হলুদ অংশ এবং মাংসের কলিজা, মগজ, গুর্দা এসব খেলে আমাদের রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়।  অতিরিক্ত কলেস্টেরলের ফলে রক্তনালির দেয়াল মোটা এবং শক্ত হয়ে যায়, যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অতিরিক্ত মদ পান করার ফলে:

যারা নিয়মিতভাবে অত্যধিক মাত্রায় মদপান করে থাকেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও বেশি হয়।

ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে :

বয়স বাড়ার সাথে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যেও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়।

বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হলে :

কোনো বিষয় নিয়ে ভীতি, অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা এবং মানসিক চাপের কারণবশতও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় অন্য কোনো রোগের প্রভাবেও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। যেমন : অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার, কিডনির রোগ, জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ির ব্যবহার, ব্যথানাশক কিছু কিছু ওষুধ খেলে অথবা স্টেরয়েডজাতীয় হরমোন গ্রহণ করলে ।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কম করতে কী করা উচিত , Ways to reduce the risk of high blood pressure 

আমরা আমাদের সাধারণ জীবনযাত্রার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কম করে নিতে পারি। যেমন :

অতিরিক্ত ওজন কম করতে হবে :

নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বয়স অনুপাতে সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হবে, সঠিক ওজন বজায় রাখতে সীমিত আহার গ্রহণ এবং ব্যায়াম অব্যাহত রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোও ধরনের ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক, সেটা না করাই ভালো।

read also :

খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা :

কম চর্বি এবং কম কলেস্টেরলযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন- খাসি বা গরুর মাংস, ডিম ইত্যাদি কম খেতে হবে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন সবজি গ্রহণ করা উচিত।

লবণ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ :

রান্নার সময় তরকারিতে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।

মদ্য পান ও ধূমপান বর্জন :

মদ পান করা পরিহার করতে হবে। মদ ও ধূমপান দুই থেকেই বিরত থাকা উচিত।

নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত :

সকাল ও সন্ধ্যা অল্প কিছুক্ষণ হাঁটাচলার অভ্যাস রাখা উচিত, সম্ভব হলে দৌড়তেও পারেন, তাছাড়া ঘুম থেকে উঠে হালকা ব্যায়াম করা এবং লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি কিছু শারীরিক পরিশ্রম নিত্যদিন করা উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কী খাবেন / কী খাবেন না ? Diet to control high blood pressure 

কোলেস্টেরল বৃদ্ধিকারী এবং চর্বি যুক্ত খাবার যেমন - নারিকেল, ডিমের কুসুম, মাছের ডিম, হাঁস-মুরগীর চামড়া, খাসি বা গরুর চর্বিযুক্ত মাংস, কলিজা, হাড়ের মজ্জা, ঘি, ডালডা, মাখন, মার্জারিন, গলদা চিংড়ি  এসব খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

Read also :

পরিমিত পরিমানে খাবেন যেসব খাবার

● শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি কম খেতে হবে।
● মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন ফলসমুহ, যেমন- পাকা পেঁপে, পাকা আম, পাকা কলা ইত্যাদি।
● দুধ ও দুধের তৈরী খাবার।

যেসব খাবার একেবারেই খাওয়া অনুচিত

● পাতে অতিরিক্ত লবন খাওয়া উচিত নয়, তাছাড়া নোনতা খাবার পরিহার করতে হবে।
● বিভিন্ন রকম ফাস্ট ফুড, পুডিং, কেক, আইসক্রিম ছাড়াও বোতল জাত কোমল পানীয়গুলো না খাওয়াই উত্তম। 

উপসংহার , Conclusion 

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট যে আমাদের খাদ্যাভাস এবং জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তনই উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় করার মূল চাবিকাঠি। খাবারের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করে এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বেছে নিতে হবে, তাছাড়া যতটুকু সম্ভব দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে, এতে অনেকটাই সমস্যা কম হয়ে যেতে পারে।

Our take




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File