স্বাস্থ্য

Conjunctivitis | কনজাংটিভাইটিস আক্রান্তের দিকে তাকালেই কী আপনারও হতে পারে এই রোগ? জানুন কনজাংটিভাইটিস হওয়ার কারণ, চিকিৎসা!

Conjunctivitis | কনজাংটিভাইটিস আক্রান্তের দিকে তাকালেই কী আপনারও হতে পারে এই রোগ? জানুন কনজাংটিভাইটিস হওয়ার কারণ, চিকিৎসা!
Key Highlights

বর্ষাকালে ক্রমশ বাড়ছে কনজাংটিভাইটিস আক্রান্তের সংখ্যা। কীভাবে নিজেকে সুস্থ্য রাখবেন, কেনই বা হয় এই রোগ, জানুন।

বর্ষাকাল মানেই ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি, জ্বর, ত্বকের সমস্যা। তবে এই ঋতুতে প্রায়ই দেখা যায় আরেক অসুখও, কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis)। এই রোগের অন্যতম লক্ষণ হলো চোখ লাল হয়ে যাওয়া, কক্ষ চুলকানি, ঘন ঘন চোখ থেকে জল পড়া। বর্ষাকালে ছোটদের থেকে শুরু করে বড়োদেরও এই রোগ প্রায়ই হয়ে থাকে। তবে কনজাংটিভাইটিস হলে অনেকেই খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। তবে এই রোগকে ঠিক সময়ে নিরাময় না করলে কনজাংটিভাইটিসের কারণে দৃষ্টি শক্তিতেও পড়তে পারে প্রভাব। 

কনজাংটিভাইটিস কী? । What is Conjunctivitis? 

কনজেক্টিভাইটিস, সাধারণত 'গোলাপি চোখ' (Pink Eye) নামেও পরিচিত। বাংলায় এই রোগকে চলতি ভাষায় আবার অনেকে 'চোখ ওঠা'ও বলে থাকেন। এই রোগ প্রধানত চোখের স্বচ্ছ ঝিল্লি বা কনজাংটিভার (Conjunctiva) একটি প্রদাহ বা সংক্রমণ। এই ঝিল্লিই চোখের পাতার মাধ্যমে সাদা অংশকে ঢেকে রাখে। এই কনজাংটিভায় ছোট রক্তনালিগুলো ভাইরাস (Virus) বা কোনও রাসায়নিক পদার্থের কারণে বা ধুলোবালির কারণে ফুলে যায়। এ কারণেই চোখের সাদা অংশ লাল বা গোলাপি হয়ে যায়। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই কনজাংটিভাইটিসের কারণে কর্নিয়ায় (Cornea) প্রদাহের সৃষ্টি করে, যা দৃষ্টিকে প্রভাবিত করতে পারে।

কনজাংটিভাইটিস হওয়ার কারণ । Causes of Conjunctivitis :

কনজাংটিভাইটিস নানান ঋতুতেই দেখা দিতে পারে। মূলত এটি ভাইরাল রোগ। তবে কনজাংটিভাইটিস কারণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার হয়। যেমন- অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস (Allergic Conjunctivitis) হয় কোনও নির্দিষ্ট জিনিস থেকে চোখে অ্যালার্জি সংক্রমণের ফলে। ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস (Viral Conjunctivitis) অন্য কারুর ছোঁয়া থেকে বা ভাইরাসের কারণে হয়। দেখে নিন এছাড়াও কোন কোন কারণে কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।

  • পরাগরেণু, ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়া, সুইমিং পুলের জলের ক্লোরিন ও অন্যান্য রাসায়নিক থেকে।
  • ঠান্ডা লাগা, শ্বাসকষ্ট এবং গলার সমস্যা থেকে।
  • অপরিষ্কার কনট্যাক্ট লেন্স (Contact Lenses) থেকে।
  • কনজাংটিভাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তির  হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে, তার ব্যবহার্য রুমাল, তোয়ালে, বালিশ, টিস্যু থেকে।

ঊল্লেখ্য, অনেকেরই ধারণা রয়েছে যে কনজাংটিভাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের দিকে তাকালেই সুস্থ্য ব্যক্তিরও এই রোগ হয়ে যায়। তবে এই বিষয়ে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অপথ্যালমোলজি (American Academy of Ophthalmology) জানায়, জীবাণু আলোকরশ্মির সাহায্যে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। কনজাংটিভাইটিস সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি তার চোখ স্পর্শ করার পর সেই হাত দিয়ে কোনো একটি জিনিস স্পর্শ করলে এবং পরবর্তীতে সে জিনিসটি যদি অন্য কেউ স্পর্শ করে ও নিজের চোখে হাত দেয়, তাহলে সুস্থ ব্যক্তিটিও এই রোগে আক্রান্ত হয়।

কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণ । Symptoms of Conjunctivitis :

কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হলে এক চোখ অথবা দুই চোখই লাল বা গোলাপি হয়ে যায়। এছাড়াও চোখ চুলকানি, খচখচে ভাব, ঘন ঘন চোখ থেকে জল পড়ার মতো লক্ষণও দেখা যায়। অনেক সময় এই রোগ হলে চোখ থেকে বারবার সাদা ময়লা বের হওয়া, চোখে তীব্র ব্যথা, অস্বস্তি অনুভূতিও হতে পারে।

কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসা । Treatment of Conjunctivitis : 

ভাইরাল কনজাংটিভাইটিসের নির্দিষ্ট কোনও প্রতিকার নেই। সাত থেকে দশদিন সাধারণত এই সংক্রমণ থাকে। তারপর নিজের থেকেই এই সমস্যা চলে যায়। তবে কনজাংটিভাইটিস হলে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ফলে আপনার বা আপনার পরিবারের কনজাংটিভাইটিস হলে তা দ্রুত নিরাময় করতে কী কী করবেন দেখে নিন চট জলদি।

১. চোখে হাত দেবেন না । Do Not Touch Eyes :

চোখে কোনোমতেই হাত দেওয়া যাবে না। কারণ চোখে হাত দিলে অনেক সময় হাত দ্বারা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটতে পারে। পাশাপাশি হাত সব সময় সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিস্কার রাখতে হবে। তাছাড়াও চোখ জোরে ঘষা, চুলকানোর মতো কাজ করা যাবে না।

২. চোখ সংক্রান্ত জিনিস পরিষ্কার রাখতে হবে । Things Related to Eyes Should be Kept Clean : 

চোখ থেকে ঘন ঘন জল পড়লে সেটি এবং চোখের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য আলাদা পরিষ্কার তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। এমনকি কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলেও খেয়াল রাখতে হবে সেটি পরিষ্কার আছে কিনা, লেন্সটি এক্সপায়ার করে গেছে কিনা।

৩. রোদচশমার ব্যবহার । Use of Sunglasses :

শুধুই ফ্যাশন নয় ইউভিএ (UVA) ও ইউভিবি (UVB) রশ্মি থেকে রক্ষা করতে পারে এমন রোদচশমা বা সানগ্লাস কনজাংটিভাইটিস প্রতিরোধের জন্য ভালো কার্যকর। কনজাংটিভাইটিস হলে চোখকে রোদের তাপ থেকে রক্ষা করে সানগ্লাস। এছাড়াও যারা সাঁতার কাটেন তারাও জলে নামার আগে সাঁতারের চশমা পরে নামতে পারেন। এক্ষেত্রে জলের ক্লোরিন (Chlorine) থেকে চোখ রক্ষা পাবে।

৪. জল পান । Drink Water :

কনজাংটিভাইটিস থেকে রক্ষা পেতে হলে এবং এই রোগ দ্রুত নিরাময় করতে হলে দিনে প্রায় ৭-৮ গ্লাস জল পান করতে হবে। সঙ্গে খেতে হবে তাজা ফল ও শাকসবজি যা ভিটামিন এ (Vitamin A), ভিটামিন সি (Vitamin C), ভিটামিন ই-তে (Vitamin E) সমৃদ্ধ।

৫.  স্ক্রিন টাইম কমান । Reduce Screen Time :

কনজাংটিভাইটিস হলে এবং এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে হবে। বর্তমানে প্রায় সকলেই দিনের অতিরিক্ত সময় কাটান ডিজিটাল স্ক্রিন অর্থাৎ মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে। ফলে প্রতি ঘন্টায় অন্তত ৫ থেকে ১০ মিনিটের বিরতি নেওয়া উচিত। পাশাপাশি যতটা সম্ভব স্ক্রিন টাইম (Screen Time) কমাতে হবে।

এছাড়াও কনজাংটিভাইটিস হলে কিছু ওয়ার্ম কম্প্রেস (Warm Compress) বা গরম সেঁক দলেও বেশ আরাম মেলে। তবে কনজাংটিভাইটিস হলে যদি তীব্র ব্যথা বা অসুবিধা হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।