শ্রী নরেন্দ্র মোদী - স্বাধীন ভারতের বলিষ্ঠ কান্ডারি | Biography of Narendra Modi, 15th Prime Minister of India

Friday, April 26 2024, 11:46 am
highlightKey Highlights

এই রাজনীতিবিদ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে বহুমতের দ্বারা জয়লাভ লাভ করেন এবং ২৬শে মে ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।


ভূমিকা | Introduction to Narendra Modi

বর্তমান ভারতের ১৪ তম প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। জীবনের আদ্যভাগে জনসাধারণের মধ্যে তাঁকে  ঘিরে ছিল তুমুল অবিশ্বাস , ছিল দাঙ্গার কলঙ্ক আর ঘৃণা। জীবনের এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি তিন দশকের মধ্যে সর্বাধিক  জনসমর্থন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভারতের ইতিহাসে এক নজির সৃষ্টি করে গেছেন ।   উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ,ভারতীয় জনতা পার্টির বলিষ্ঠ এই নেতা গুজরাটের চতুর্দশ মুখ্যমন্ত্রী  হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন ২০০১ সাল থেকে যাঁর গতিশীল নেতৃত্বে গুজরাট ভারতের অন্যতম  সমৃদ্ধশালী  অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে ৷  নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং  বহুমতের দ্বারা জয়লাভ লাভ করেন।  অবশেষে  ২৬শে মে , ২০১৪ সালে  এই বিশিষ্ট নেতা  ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এক বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ নরেন্দ্র মোদির  কৌশলী প্রচার তাঁকে দিয়েছে উন্নয়নের অগ্রদূতের ভাবমূর্তি এবং বিপুল পরিমাণে  জনসমর্থন৷

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন | Birth & early life of Narendra Modi

Trending Updates

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর ,বম্বে প্রেসিডেন্সিতে( যা বর্তমানে গুজরাট রাজ্যের অন্তর্গত মহেসানা জেলার বড়নগর নামক স্থানে ঘাঞ্চী তেলী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত) এক নিম্নবর্গের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী।  পিতা দামোদারদাস মূলচাঁদ মোদী এবং মাতা হীরাবেন মোদী র ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান  হলেন নরেন্দ্র মোদী । কৈশরে তিনি বাবাকে সাহায্য করতেন বড়নগর রেলস্টেশনের রেল ক্যান্টিনে চা বিক্রি করে এবং বাস স্ট্যান্ডের কাছে ভাইয়ের সাথে ও  চা বিক্রি করে থাকতেন।  পরবর্তীকালে তিনি কাজ করেছেন গুজরাট রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির ক্যান্টিনবয় হিসাবে৷ নরেন্দ্র মোদির  পুরো পরিবার অতি কষ্টে  একটি ছোট ৪০ ফুট X ১২ ফুট মাপের একতলা বাড়িতে বসবাস করতেন। বাল্যকাল থেকেই  স্বামী বিবেকানন্দের জীবনাদর্শ  মোদিকে  বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত করে। শিশু বয়সে তাঁর চিন্তা-ভাবনা এবং স্বপ্ন ছিল তাঁর বয়সী অন্যান্যদের তুলনায় অনেকটাই স্বতন্ত্র ।

বাল্য বয়সেই তাঁর মনে সমাজে পরিবর্তন আনার এক অদম্য  স্পৃহা  অনুভব করতেন। একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে মাত্র আট বছর বয়স থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন৷ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আর.এস.এস.)  হল ভারতের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে কর্মরত সমাজ-সংস্কৃতিমূলক এক সংগঠন। সেই সময়কালে নরেন্দ্র মোদি তাঁর রাজনৈতিক গুরু লক্ষ্মণরাও ইনামদার নামক এক সাংগঠনিক কর্মীর সংস্পর্শে আসেন যিনি  তাঁকে সঙ্ঘের বালস্বয়ংসেবক হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সেই বাল্যজীবন থেকেই তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে । পরবর্তীকালে  তিনি জন সংঘের নেতা বসন্ত গজেন্দ্রগড়কর ও নথালাল জঘদার সান্নিধ্যে   আসার সুযোগ পান।সতেরো বছর বয়সে নরেন্দ্র মোদি তাঁর গৃহ ত্যাগ করেছিলেন এবং পরবর্তী দুই বছর সারা দেশ ভ্রমণ করে করেন।২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ প্রাপ্ত  কিশোর মাকওয়ানা রচিত," কমন ম্যান নরেন্দ্র মোদী" গ্রন্থ থেকে অবগত হওয়া যায় সে  সতেরো বছর বয়সে ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর  রাজকোট শহরে স্থিত রামকৃষ্ণ মিশন ও পরবর্তীকালে বেলুড় মঠ যাত্রা করেন।এ ছাড়া   তিনি আলমোড়া শহরে স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে ও যোগদান করেন। দুই বছর পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন ও আমেদাবাদ শহরে নিজের কাকার চায়ের দোকানে কাজে যোগ দেন।

শিক্ষাজীবন | Education life of Narendra Modi

নরেন্দ্র মোদি গুজরাট শহরে একজন সাধারণ মানের ছাত্র হিসেবে তাঁর  বিদ্যালয়ের পড়াশোনা সমাপ্ত করেন। বিদ্যালয়ের অন্যতম এক শিক্ষক মোদিকে একজন সাধারণ মাপের ছাত্র যার মধ্যে অসাধারণ বিতর্কের প্রতিভা বিদ্যমান আছে বলে বর্ণনা করেছিলেন। জানা গেছে যে  নতুন নতুন বই পড়ার আগ্রহ  ছিল তাঁর। মোদির  স্কুলের বন্ধুরা জানায় যে কিভাবে মোদীজি স্থানীয় গ্রন্থাগারে ঘন্টার পর ঘন্টা উদাহরণ  করতেন।  তিনি সাঁতারে ও পারদর্শী ছিলেন।তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ও ওগুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেছিলেন।

বৈবাহিক জীবন | Narendra Modi’s married life

ঘাঞ্চী সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী নরেন্দ্র  মোদীর অভিভাবকেরা  কৈশোর অবস্থায় তাঁর  বিবাহ স্থির করেন।  মাত্র ১৭ বছর বয়সেই যশোদাবেন চিমনলাল নামের এক বালিকার সঙ্গে বিয়ে হয় মোদীর৷ নরেন্দ্র মোদি  জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, সেই সংসার ছিল মাত্র তিন বছরের, তাঁদের মধ্যে  শারীরিক সম্পর্কও  ছিল না বলে জানা যায়৷তাঁদের দাম্পত্য জীবনকালে তাঁরা  খুব অল্প পরিসর উভয়ে   একসঙ্গে জীবন অতিবাহিত করেন। পরবর্তীকালে মোদী পরিব্রাজকের জীবন অনুসরণ করেন এবং উভয়ে  বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন । তবে তাঁদের বিবাহের পরিণাম  বিচ্ছেদে রূপান্তরিত হয়নি। ২০১৪ সালের  ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তিনি তাঁর স্ত্রী   যশোদাবেনকে নিজের আইনতঃ বৈধ পত্নী রূপে জনসমক্ষে স্বীকার করে নেন।

প্রাথমিক রাজনৈতিক জীবন | Early political life of Narendra Modi

১৯৭১ এর বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধের অবসান ঘটলে  মোদী আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে যোগ দেন। নাগপুর শহরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর  তিনি   রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ।উগ্র সাম্প্রদায়িক কার্যাবলীর  কারণে এই সংগঠনটিকে এ পর্যন্ত তিন দফা নিষিদ্ধ  করা হয়েছে৷ ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৫ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে। বিরোধীদের ধরপাকড় করা শুরু হলে এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে আত্মগোপন করেন মোদী৷  গ্রেপ্তারী এড়ানোর জন্য কখনো তিনি কখনো শিখ, কখনো বা  বয়স্ক ব্যক্তির ছদ্মবেশ ধারণ করেন গোপনে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে  বিক্ষোভ সমাবেশ সংগঠিত করে থাকতেন। জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে যে জরুরীকালীন অবস্থার আন্দোলনে সংঘটিত হয়েছিল সেখানে তিনি  সামিল হন।  তিনি গুজরাট লোকসংঘর্ষ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে  নির্বাচিত হন এবং বিভিন্ন আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছিলেন।১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন আর এস এস এর তত্ত্বাবধানে ।বিজেপিতে যোগদান করার পর  নরেন্দ্র মোদি   ১৯৯১ সালে মুরলী মনোহর যোশীর কন্যাকুমারী-শ্রীনগর একতা যাত্রা সংগঠিত করে রাজ্য শাখায়  এক উল্লেখযোগ্য সংগঠক হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিস্থাপিত করেছিলেন।দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জেরে ধীরে ধীরে বিজেপিতে নিজের অবস্থান পোক্ত করেন মোদি। পরবর্তীকালে  ১৯৯০ সালে তিনি আদভানির নেতৃত্বে সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রায় বড় ভূমিকায় ছিলেন।

১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির  গুজরাট শাখার কার্যনির্বাহী সম্পাদকের পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন  এবং এই পদে থাকাকালীন তাঁর অসামান্য ভূমিকার জন্য ১৯৯৫ সালে অনুষ্ঠিত গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে  তাঁর জয়লাভ সুনিশ্চিত হয়  । এক ই সালের নভেম্বর মাসে  নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় সম্পদক হিসেবে নির্বাচিত হন ও হরিয়াণা ও হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে পার্টির সাংগঠনিক কাজকর্মের দায়িত্ব সামলান।১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে লোকসভা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন  যার ফলস্বরূপ তিনি শঙ্করসিনহা বাগেলা পার্টি থেকে বেরিয়ে যান।১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় জনতা পার্টির কার্যনির্বাহী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং সেই বছরই অনুষ্ঠিত  গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের  তিনি কেশুভাই পটেলের সমর্থকদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেন। এর ফলে পার্টির অন্তর্বর্তী   বিচ্ছিন্নতাবাদী বিরোধিতা থেমে যায় এবং   ভারতীয় জনতা পার্টি উক্ত নির্বাচনে জয়লাভ করে। 

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে মোদি | Narendra Modi as the Chief Minister of Gujarat

২০০১ খ্রিষ্টাব্দে কেশুভাই পটেলের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়লে  ২০০১ সালের ৭ ই অক্টোবর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আবির্ভূত হন নরেন্দ্র মোদী৷ এরপর আরো তিন দফা তিনি মুখ্যমন্ত্রীর  পদে বিজয়ী হয়েছেন ও গুজরাটকে পরিণত করেছেন উন্নয়নের মডেলে৷। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরকারীকরণ ও বিশ্বায়নবিরোধী নীতির বিরোধিতা করে  বেসরকারীকরণের নীতি গ্রহণ করেন। নরেন্দ্র মোদি সর্বমোট চার দফায় মুখ্যমন্ত্রিত্বের ভার বহন করেছিলেন। 

  • প্রথম মেয়াদ (২০০১-২০০২)
  • দ্বিতীয় মেয়াদ (২০০২-২০০৭)
  • তৃতীয় মেয়াদ (২০০৭-২০১২)
  • চতুর্থ মেয়াদ (২০১২–২০১৪)

বিভিন্ন দফায় মুখ্যমন্ত্রী পদে মোদি | Narendra Modi has been the Chief Minister at various stages

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০২-এ নরেন্দ্র মোদি রাজকোট দ্বিতীয় আসনে উপনির্বাচনে মোদি  জয়ী হন। তিনি আইএনসি-র আশ্বিন মেহতাকে পরাজিত করেছিলেন এবং এটিই ছিল তাঁর প্রথম এবং খুব স্বল্প মেয়াদী মুখ্যমন্ত্রিত্ব পদ ।তিনি মণিনগর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং আইএনসির ওজা ইয়াতিনভাই নরেন্দ্রকুমারকে পরাস্ত   করে বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন এবং দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল ছিলেন। তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের তৃতীয় মেয়াদ ছিল ২৩ ডিসেম্বর, ২০০০থেকে ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ অবধি। সেবার ও তিনি মানিনগর থেকে জয়ী হয়েছিলেন এবং আইএনসির দীনশা প্যাটেলকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি পুনরায়   মানিনগর থেকে নির্বাচিত হয়ে ভট্ট শ্বেতা সঞ্জীবকে পরাজিত করেন ও  মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন যা এটি তার চতুর্থ মেয়াদ হলেও পরে তিনি ২০১৪ সালে  সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।

মুখ্যমন্ত্রিত্বের কালে কিছু বিশেষ ঘটনা:

গুজরাটের দাঙ্গা, হিন্দুত্ববাদ | Riots in Gujarat, Hinduism

২০০২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গোধরা স্টেশনে কিছু হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে আগুন  দেয়া হলে ৫৯ জনের মৃত্যু ঘটে আর এই ব্যাপক হামলার  জন্য মুসলমানদের দায়ী করে গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা চালায় হিন্দুত্ববাদীরা। টানা কয়েক দিনের নৃশংস এই  দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এবং  সব অভিযোগ করা হয় নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে যে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও  দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছেন।অবশ্য  তিনি নিজে কোন অভিযোগ স্বীকার করেননি এবং আদালতও তাঁকে সব অভিযোগ থেকে রেহাই দেয়৷ তবে পরবর্তী সময়ে রাজ্যসভা নির্বাচনে তিনি কার্যকরীভাবে  এই দাঙ্গার পক্ষে সাফাই দিয়েছিলেন এবং হিন্দুত্ববাদের সপক্ষে বক্তব্য রেখে ছিনিয়ে নিয়েছেন জয়৷ এই দাঙ্গার পরবর্তীকালে  স্বদেশ এবং স্বদেশের বাইরে ও মোদীর ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ভিসা প্রদান করতে অস্বীকার করে এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও তিক্ততা তৈরি হয়৷ এই কঠিন  পরিস্থিতিতে  একজন  উন্নয়নের কাণ্ডারি হয়ে শ্রী নরেন্দ্র মোদী  নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন ও প্রচারকার্যে যোগ দেন।

মোদীর দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীত্বের কালে তিনি হিন্দুত্ববাদ থেকে বেরিয়ে এসে গুজরাটের উন্নয়নের দিকে নজর দেন। তিনি গুজরাটের রাজধানী, গান্ধীনগরে দুশোটি বেআইনি মন্দির নির্মাণকে ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি গুজরাটকে শিল্প বিনিয়োগকারী একটি আকর্ষণীয় স্থানে রূপান্তরিত  করেন। ২০০৭ সালে ভাইব্র্যান্ট গুজরাট সমাবেশে নির্মাণ কার্যে ₹৬.৬ ট্রিলিয়ন বিনিয়োগের চুক্তি  করা হয়ে থাকে।এর পর থেকে তিনি নিজেকে একজন সর্বভারতীয় নেতা হিসাবে লোকসমক্ষে তুলে ধরেন  ও প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্র্যান্ড মোদী'৷তাঁর  এই প্রচেষ্টায় তিনি যে পুরোপুরি সফলতা লাভ করেছিলেন তার প্রমাণ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন৷

তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসীন হলে নরেন্দ্র মোদি ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণের ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করেন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ১১৩,৭৩৮টি ছোট বাঁধ নির্মিত হয় এবং  ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ৬০টি তহসিলে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ ব্যাপক পরিমাণে  বৃদ্ধি পায়।ফলস্বরূপ গুজরাটে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বিটি তুলার চাষ শুরু হয়।গুজরাটের বার্ষিক  কৃষির বৃদ্ধির হার ২০০৭ সালের মধ্যে ৯.৬%এবং ২০১০ সালের মধ্যে বৃদ্ধির হার দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০.৯৭% হয়ে যায়।তৃতীয় দফার মন্ত্রিত্বে মোদী সরকার গুজরাটের সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে সক্ষম হন।

চতুর্থ মেয়াদের নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি ১৮২টি আসনের মধ্যে ১১৫টি দখল করে ও নরেন্দ্র  মোদী চতুর্থ বার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয় ভারতের লোকসভা নির্বাচন যেখানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর ভারতীয় জনতা পার্টির পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ২১শে মে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রি পদ থেকে ইস্তফা দেন। পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আনন্দীবেন পটেলকে মনোনীত করা হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে নরেন্দ্র মোদিকে  বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয় ও নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে ২৬শে মে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেন ।

দক্ষ প্রশাসক | Efficient administrator

ভারতীয় জনতা পার্টির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তি থেকে দেশের অন্যতম দক্ষ প্রশাসক এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতী লাভের যাত্রাপথ মোদির কাছে খুব একটা মসৃণ ছিল না।তাঁর এই সংগ্রামী উত্থানের  মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রতিকূলতায় মোড়া এক বিশাল কাহিনি। তাঁর চারিত্রিক সহজাত দৃঢ়তা এবং নেতৃত্ব প্রদানের অসাধারণ ক্ষমতা তাঁকে  এই জায়গায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।  প্রশাসনিক জীবনের প্রথমদিন থেকেই তিনি কাজের মধ্য দিয়েই প্রশাসনের রীতিনীতির বিষয়ে শিক্ষা নিয়েছেন। প্রশাসক হিসাবে কাজের মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনেই নরেন্দ্র মোদী দেখিয়েছেন কিভাবে বাঁধা গতের বাইরে গিয়ে ও স্থিতিশীলতার পরিবর্তন করা যেতে পারে ।উন্নয়ন এবং সুপ্রশাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত   হিসাবে জাগ্রত গুজরাট সৃষ্টি করতে নরেন্দ্র মোদীকে অনেক প্রতিবন্ধকতার   সম্মুখীন হতে হয়েছে তবু তিনি থেমে থাকেনি এবং তাঁর  স্বপ্নকে একটি স্বার্থক রূপ প্রদান করেছিলেন।  সু প্রশাসনের স্বার্থে  ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কাজে শ্রী মোদী কখনই রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে প্রতিবন্ধক হতে দেননি। ‘ন্যূনতম সরকার এবং সর্বাধিক সরকারি পরিচালনামূলক কাজ' -এই দুই প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে নরেন্দ্র মোদি এগিয়ে গিয়েছেন তাঁর লক্ষ্য পথে  এবং তাঁর এই দর্শনের সবথেকে সুন্দর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ্য  ঐক্যবদ্ধ সুপ্রশাসনের জন্য তাঁর ‘পঞ্চ – অম্রুত’ সংগঠন ভাবনা।জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছ থেকে তিনি যেসব পুরষ্কার পেয়েছেন তার মধ্যেই তাঁর কাজের স্বীকৃতির  প্রতিফলন ঘটেছে। 

নরেন্দ্র মোদীর আমলে চালু হওয়া বিভিন্ন  স্কিম বা  পরিকল্পনা | Various schemes introduced during Narendra Modi's tenure

  • আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর জন ধন যোজনা।
  • স্যানিটেশনের সুবিধা এবং জনসাধারণের বসবাসযোগ্য এলাকা পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে  স্বেচ্ছাসেবক ভারত মিশন। 
  • মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের ব্যাংকিং পরিষেবাগুলির উদ্দেশ্যে মুদ্রা ব্যাংক যোজনা।
  • তরুণ কর্মীদের দক্ষতা প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ বিকাশ যোজনা।
  •  গ্রামীণ অবকাঠামো শক্তিশালী করার জন্যে সংসদের আদর্শ গ্রাম যোজনা। 
  • উৎপাদনের হারকে  বৃদ্ধি করার জন্য মেক ইন ইন্ডিয়া।
  • দরিদ্র জনসাধারণের কল্যাণ চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে ,"সাত গরিব কল্যাণ যোজনা '।
  • ই-বাসতা (যা  হল মূলত একটি অনলাইন লার্নিং ফোরাম)*বালিকা সন্তানের আর্থিক ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত , 'সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা'।
  • শিশুদের লেখাপড়া ও  গাণিতিক দক্ষতা বৃদ্ধির স্বার্থে  নির্মিত,"পাড়হে ভারত বাড়হে ভারত"।
  • প্রধানমন্ত্রী,' উজ্জ্বলা যোজনা' যা  বিপিএল অন্তর্ভুক্ত  পরিবারগুলিকে এলপিজি সরবরাহ করে।
  • সেচনের কার্যে দক্ষতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর 'কৃষ্ণচঞ্চল যোজনা'। 

এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি  আর যে যে নতুন স্কিম  চালু করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, 

  • 'প্রধানমন্ত্রীর ফ্যাসাল বিমা যোজনা' , 
  • ডিডিইউ-গ্রামীণ কৈশল্যা যোজনা; 
  • নয় মঞ্জিল যোজনা;  
  • স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া যোজনা ; 
  • প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা ; 
  • প্রধানমন্ত্রীর জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা ; 
  • সাগর মালা প্রকল্প ;
  • স্মার্ট সিটিস প্রকল্প; 
  • রুবান মিশন প্রকল্প ;
  • প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ; 
  • জান আউশিধি স্কিম ;
  • ডিজিটালভাবে সজ্জিত দেশ এবং অর্থনীতির জন্য ডিজিটাল ভারত ; 
  • অনলাইন নথি সুরক্ষার জন্য ডিজিওলকার; 
  • স্কুল নার্সারি যোজনা; 
  • স্বর্ণ নগদীকরণ প্রকল্প। 

দেশের জনগণের কল্যাণের স্বার্থে  মোদি সরকারের আমলে  নির্মিত এই যোজনা গুলির স্বার্থক রূপায়ন জনমানসে এক ইতিবাচক চেতনা উদ্বুদ্ধ করেছে।  

পুরস্কার ও সম্মাননা | Narendra Modi's awards and honors

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর অসীম কৃতিত্বের জন্য  একাধিক সম্মান ও পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে  ১)সৌদি আরবের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘সাশ অফ কিং আব্দুল্লাজিজ, ২)রাশিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান ‘দ্য অর্ডার অফ দ্য হোলি অ্যাপস্টেল অ্যান্ড্রু দ্য ফার্স্ট’ ৩) প্যালেস্তাইনের ‘গ্র্যান্ড কলার অফ দ্য স্টেট অফ প্যালেস্তাইন’ ৪) আফগানিস্তানের ‘আমির আব্দুল্লা খান’ পুরস্কার; ৫)সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর ‘জায়েদ মেডেল’; ৬)মালদ্বীপের ‘রুল অফ নিশান ইজুদ্দিন’ প্রভৃতি। ২০১৮ সালে  শান্তি ও উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী, শ্রী নরেন্দ্র মোদি   মর্যাদাপূর্ণ সিওল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

প্রশংসা ও সমালোচনা | Praise and criticism of Narendra Modi

নরেন্দ্র  মোদী  নিজেকে একজন হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবে দাবী করে থাকেন।২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার ঘটনাকে কেন্দ্র করে  নরেন্দ্র মোদি   প্রশাসন ব্যাপকভাবে সমালোচনার মধ্যে পড়ে যা স্বদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে ও তার প্রভাব বিস্তার করেছিল  । তবে সমালোচনার সাথে সাথে গুজরাটের অর্থনৈতিক উন্নতির বৃদ্ধিতে সহায়ক পরিবেশ গঠনের জন্য তাঁর আর্থিক নীতি হয়েছে বিপুলভাবে প্রশংসিত। আবার অপরদিকে তাঁর রাজ্য গুজরাটে  মানবোন্নয়নের ওপর গঠনমূলক প্রভাব বিস্তারে তাঁর প্রশাসনের অক্ষমতার জন্য তিনি  অনেক ক্ষেত্রে সমালোচনার মুখেও পড়েছেন।

উপসংহার | Conclusion

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের সর্বাধিক সফল মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রশাসকের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা সঙ্গে এনেছেন।প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁর নেতৃত্বদানের শক্তি তাঁকে করে তুলেছে অনন্য। জনসাধারণ  তাঁর  মধ্যে দেখেছেন এক প্রাণবন্ত  , স্থিরমতি এবং  এক উন্নয়নমুখী নেতাকে। বর্তমান যুগের তরুণদের অনুপ্রেরণা স্বরূপ  আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি  "মাই ভি চৌকিদার" স্লোগানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীর সমর্থন পেতে  শ্রমের মর্যাদাকে  অনেকাংশে বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা করেছেন। শতকোটি স্বদেশবাসীর  আশা-আকাঙ্খা রূপায়ণে  আলোর প্রতীক হিসেবে  তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। উন্নয়নের ওপর তাঁর জোর, প্রত্যেকটি প্রয়োজনীয়   বিষয়ের ওপর তাঁর নজরদারি ও  দরিদ্রতম মানুষদের জীবনে গুণগতমান পরিবর্তনে তাঁর মহান উদ্যোগ নরেন্দ্র মোদীকে একজন জনপ্রিয় এবং শ্রদ্ধাভাজন নেতা রূপে দেশের সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File