স্বাস্থ্য

গাজরের উপকারিতা ও খাদ্যগুণ, Benefits and nutritional value of carrot in Bengali

গাজরের উপকারিতা ও খাদ্যগুণ, Benefits and nutritional value of carrot in Bengali
Key Highlights

গাজর হল অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ একটি সবজি, যা বাজারে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। গাজরের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ডাউকাস ক্যারোটা।  রান্না করে না খেয়ে গাজর কাঁচা খাওয়া বেশি উপযোগী, কারণ এতে পুষ্টির অপচয় হয় না। গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের দৃষ্টিশক্তি প্রখর রাখে, চোখের স্নায়ুকে শক্তিশালী করে। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে গাজরের খুব উপকারী।

গাজরের স্বাস্থ্য উপকারিতা, Health Benefits of Carrot

Read also

গাজর মূলত একটি শীতকালীন সবজি হিসেবেই পরিচিত। তবে এখন প্রায় সারাটা বছর ধরেই এই সবজিটি পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ গাজর অনেকে কাঁচা অবস্থায় সালাদের সাথে খেতে পছন্দ করেন, আবার এটি রান্না করেও খাওয়া যায়। গাজরের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, শরীর সুস্থ সবল রাখতে হলে নিত্যদিনের ডায়েটে এই বিশেষ সবজিটি অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।

১.  চোখ স্বাস্থ্যকর রাখে

শরীরে ভিটামিন A -র ঘাটতি দেখা দিলে রাতকানা রোগ হতে পারে। গাজরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিনA থাকে, যা এই ঘাটতি কম করে উক্ত রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। এছাড়া এটি আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খুবই উপকারী।

২. হার্টকে স্বাস্থ্যকর করে

গাজর খেলে দেহে কোলেস্টেরল কমে এবং দেহে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়ে। তাই এই সবজি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। কাঁচা গাজরে পেক্টিন নামক ফাইবার থাকে যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান কমাতে সাহায্য করে।

৩. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

গাজরে ফাইটোকেমিক্যালস প্রচুর পরিমানে থাকে, যা অ্যান্টি-ক্যান্সারের উপাদান বহন করে। গাজরে ক্যারোটিনয়েডগুলি উপস্থিত থাকে বলে এটি পেট, কোলন, ফুসফুস, প্রস্টেট ও মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কম করে।

Read also :

৪.  রক্তচাপ ঠিক রাখে

প্রতিদিন গাজরের রস পান করা উচিত, কারণ এতে উপস্থিত ফাইবার, পটাশিয়াম, নাইট্রেট, ভিটামিন সি রক্ত চাপ ঠিক রাখেতে সাহায্য করে।

৫. ত্বককে সজীব রাখে

গাজর ক্যারোটিনয়েডে পরিপূর্ণ। নিয়মিত ক্যারোটিনয়েড জাতীয় উপাদান শরীরে প্রবেশ করলে ত্বক সজীব থাকে এবং বার্ধ্যকের ছাপ পড়তে বাধা পায়। এছাড়াও এতে উপস্থিত নানা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বককে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। গাজরে ভিটামিন সি উপস্থিত থাকে তাই গাজরের রস খেলে বা নিয়মিত ট্যানযুক্ত অংশে মাখলে ত্বকের ট্যান কম হয়।

৬. হাড়কে মজবুত করে

গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে উপযোগী ।

৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

সাধারণত ভিটামিন এ শরীরের সব কার্যকলাপ ঠিকভাবে পালন করতে দেয় ও নানা ইনফেকশন থেকে দূরে রাখে। এটি সম্ভব হয় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। গাজরে থাকে ভিটামিন সি যা শরীরে কোলাজেন তৈরী হওয়া বৃদ্ধি করে, এর ফলে দেহের কোনো ক্ষত তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে পারে। এছাড়া এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে।

৮. শরীরের ওজন কমাতে

একটি তাজা গাজরে ৮৮% জল ও ২৫ ক্যালোরি থাকে। তাই গাজর খেলে পেটও ভরবে আবার শরীরে ক্যালোরিও কম প্রবেশ করবে। সেইজন্যে এই সবজি শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৯. ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে

গাজর ফাইবারে ভরপুর, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা ফাইবার বেশি পরিমানে খেলে গ্লুকোজ মেটাবলিসম উন্নত হবে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা খাদ্যতালিকায় এই সবজি যোগ করতে পারেন।

১০. প্রেগন্যান্সির সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে

যদি কোনো গর্ভবতী মহিলা গাজর নিয়মিত ডায়েটে রাখেন, তবে তাদের গলা শুকনো হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দূর হবে ও শরীরে ডিহাইড্রেশন হওয়ার ভয় থাকে না।

১১. শরীরকে টক্সিন মুক্ত করে

গাজরে গ্লুটাথিওন নামক একধরণের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা লিভারের সমস্যা কমাতে ও লিভারের কার্যকলাপ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও এতে থাকে অনেক পরিমান ফ্ল্যাভোনয়েড এবং বিটা ক্যারোটিন যা লিভারের সমস্যা কমাতে পারে।

১২. চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে

গাজরে থাকে ভিটামিন A, C, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড। এজন্যই চুলের বৃদ্ধিতে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গাজর উপযোগী। 

সৌন্দর্য রক্ষায় গাজর, Carrot to protect beauty

বিভিন্ন গবেষণায় থেকে জানা গেছে যে, গাজরে ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক পদার্থ বর্তমান, এই উপাদানটি আমাদের ত্বকের কোষ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে আকর্ষণীয় করে তোলে। ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে গাজর কার্যকরী। গাজর আমাদের চুল, ত্বক এবং নখের সৌন্দর্য রক্ষা করতে সহায়তা করে। এই সবজিটি ত্বকের খসখসে ভাব, ভাঁজ পড়ে যাওয়া ও ব্রণ দূর করে। গাজরের সাথে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এতে ত্বক উজ্জ্বল হয়।

Read also :

গাজরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, Side effects of carrot

আমরা জানি, কোনো খাবারই বেশি খাওয়া উচিত নয়। বেশি পরিমানে গাজর খাওয়ার ফলে ত্বকে ক্যারোটেনমিয়া রোগ হতে পারে। এই রোগ হলে ত্বকে হলুদ ও কমলা রঙের ছাপ পড়ে যায়। তাছাড়া অনেকেরই গাজর খেলে অ্যালার্জি হয়।

আবার যাঁরা নিয়মিত কোনো না কোনো ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে গাজরের রস সেবনে সাবধানতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়, কারণ এতে তাদের যকৃতে বিষাক্ত উপাদান তৈরি হতে পারে। ওষুধ সেবনের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর গাজর খাওয়া উচিত।

উপসংহার, conclusion 

গাজরের রঙই হচ্ছে এর পুষ্টিগুণের অন্যতম একটি কারণ।  আজকাল বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনে হলুদ, লাল এবং গাঢ় কমলা রঙেরও গাজর তৈরী করছেন। গাজরে থাকা ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যার ফলে জ্বর, সর্দি ও কাশির মত সাধারণ সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। গাজরের বিভিন্ন খাদ্যগুনের কারণে শরীরের পক্ষে এই সবজি স্বাস্থ্যকর। নিজের ডায়েটে গাজর যোগ করে শরীরের যত্ন করুন ও সুস্থ থাকুন।