Independence Day of India | ১৯৪৭ সালে ১৫ই অগাস্ট গোটা দেশে পালন হয়নি স্বাধীনতা দিবস! বিরত ছিল ৯টি রাজ্য!

Tuesday, August 15 2023, 2:38 pm
highlightKey Highlights

১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট ভারতের সব অংশে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়নি । ৯টি রাজ্যে পালন করা হয়নি স্বাধীনতা দিবস।


 ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট স্বাধীনতার (Independence Day of India) প্রথম দিন হিসেবে পালন করেন ভারতবাসী। সেদিন গোটা দেশ মেতে ওঠে আনন্দে-খুশিতে। দেশের কোণায় কোণায় প্রতিধ্বনিত হয় আবেগপূর্ণ স্লোগান, দেশাত্মবোধক গান। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসংখ্য সংগ্রামীদের লড়াই যেন সেই দিন গোটা দেশের জন্য এনে দিয়েছিলো সীমাহীন শান্তি, নিশ্চয়তা, জয়! তবে গোটা দেশ বললে ভুল হবে। ১৯৪৭ এর ১৫ই অগাস্ট কিন্তু সম্পূর্ণ দেশে তোলা হয়নি জাতীয় পতাকা (National Flag of India)। তৎকালীন সময়ে এমন কিছু দেশের অংশ ছিল যেখানে সেদিন উদযাপন হয়নি 'স্বাধীনতা দিবস'।

কাশ্মীর । Kashmir :

১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট কাশ্মীরে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়না। কারণ তৎকালীন সময়ে কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং (Maharaja of Kashmir Hari Singh) স্থবির চুক্তির প্রস্তাব দেন। অর্থাৎ কাশ্মীরের মহারাজারা নিজেদের স্বাধীন রাখতে চেয়েছিলেন। তবে পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালেরই অক্টোবর মাসে যখন পাকিস্তানি উপজাতিরা কাশ্মীরে আক্রমণ করে তখন মহারাজা হরি সিং ভারতের কাছ থেকেই সামরিক সাহায্য চান। পাশাপাশি, কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেশের সঙ্গে একীভূত করতে সম্মত হন।

১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেশের সঙ্গে একীভূত করা হয়
১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেশের সঙ্গে একীভূত করা হয়

হাদরাবাদ । Hyderabad : 

১৯৪৭ সালে হাদরাবাদেও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হয়নি, কারণ স্বাধীনতার সময় হায়দরাবাদ পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তৎকালীন নবাব নিজাম মীর ওসমান আলীকে (Nawab Nizam Mir Osman Ali) ভারতের স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭-এর (Indian Independence Act 1947) অধীনে ভারত বা পাকিস্তান বেছে নেওয়ার জন্য ভারত সরকার একটি বিকল্প দিয়েছিল। কিন্তু সর্দার প্যাটেল (Sardar Patel) হায়দরাবাদকে হারাতে চাননি। ফলে ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে হায়দরাবাদে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রবেশ করে। শোনা যায় যে, চারদিনের টানাপোড়েনের পর হায়দরাবাদের সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং ভারতের সঙ্গে একীভূত হয়।

১৯৪৭ সালে হাদরাবাদেও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হয়নি
১৯৪৭ সালে হাদরাবাদেও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হয়নি

ভোপাল । Bhopal :

 ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট স্বাধীনতার সময় ভোপালও ভারতের সঙ্গে ছিল না। ভোপালের নবাবরা পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। ফলে ভোপালের নবাবরা ভারতের পতাকা উত্তোলন নিষিদ্ধ করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ভারত ভোপালকেও দেশের অংশ করে নেয়। ১৯৪৯ সালের ১ লা জুন এখানে প্রথমবারের জন্য ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল।

 ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট স্বাধীনতার সময় ভোপাল ভারতের সঙ্গে ছিল না
 ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট স্বাধীনতার সময় ভোপাল ভারতের সঙ্গে ছিল না

গুজরাতের জুনাগড় । Junagadh in Gujarat :

গুজরাতের জুনাগড়েও ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়নি। গুজরাতের জুনাগড় রাজ্যও পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল। যার ফলে স্বাধীনতার সময় জুনাগড় ভারতের সঙ্গে যোগ দেয়নি। জুনাগড়ের নবাব ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে যোগদানের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই বিষয়ে জানতে পেরে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল জুনাগড়ে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এরপর ভারতীয় বাহিনী জুনাগড়ে প্রবেশ করে এবং করাচিতে (Karachi) চলে যান নবাব। সেই সময়ই সেখানে গণভোট করা হয়। ভোটের ফল অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা হয় জুনাগড়কে।

গণভোটের রায়ে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা হয় জুনাগড়কে
গণভোটের রায়ে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা হয় জুনাগড়কে

ত্রিপুরা-মণিপুর । Tripura-Manipur :

মণিপুর এবং ত্রিপুরাও স্বাধীনতার সময় ভারতের অংশ না থাকায় ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট সেখানে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়নি। সেখানে রাজা বোধচন্দ্র (Bodh Chandra) ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত একীভূতকরণ পত্রে স্বাক্ষর করেন না। পরে ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, ভারত মহারাজা বোধচন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে দেশের একীভূতকরণ পত্রে স্বাক্ষর করেন। পরে ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে ত্রিপুরাও একীভূত হয় ভারতের সঙ্গে।

মণিপুর এবং ত্রিপুরাও স্বাধীনতার সময় ভারতের অংশ না থাকায় ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট সেখানে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়নি
মণিপুর এবং ত্রিপুরাও স্বাধীনতার সময় ভারতের অংশ না থাকায় ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট সেখানে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়নি

সিকিম । Sikkim :

উত্তর-পূর্বের এই বিখ্যাত রাজ্য সিকিমও স্বাধীনতার প্রথম সকালে দেশের সঙ্গে তেরঙা উত্তোলন করেনি। ১৯৬২ সালে চিনের (China) সঙ্গে যুদ্ধের পর ভারত এ ব্যাপারে জোর দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর (Indira Gandhi) সময়, ১৯৭৫ সালে, ভারতের সৈন্যরা সিকিমের রাজার প্রাসাদ ঘেরাও করে এবং গণভোটের ভিত্তিতে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় সিকিমকে।

১৯৭৫ সালে গণভোটের ভিত্তিতে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়  সিকিমকে
১৯৭৫ সালে গণভোটের ভিত্তিতে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় সিকিমকে

 এছাড়াও, ১৯৪৭ সালে ১৫ই অগাস্ট গোয়া,দমন দিউ এবং পন্ডিচেরিতেওঁ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়নি। কারণ তৎকালীন সময়ে গোয়া পর্তুগিজদের দখলে ছিল এবং দমন-দিউ তখন গোয়ার একটি অংশ ছিল। ১৯৬১ সালে, ভারত প্রথম দাদরা নগর হাভেলি (Dadra Nagar Haveli) দখল করে। পর্তুগিজরা সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করলেও, ভারতীয় সেনাবাহিনী গোয়ায় প্রবেশ করলে পর্তুগিজদের আত্মসমর্পণ করতে হয়। এইভাবে এই রাজ্য ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। পন্ডিচেরি ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। ১৯৫৪ সালে, এখানকার লোকেরা শুধুমাত্র ভারতে যোগদানের জন্য আন্দোলন করে। ১৯৬১ সালে এই রাজ্যটিও ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File