বিনোদন

Anup Ghoshal Demise | হারিয়ে গেল 'গুপী-বাঘা'র স্বর! প্রয়াত বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী অনুপ ঘোষাল!

Anup Ghoshal Demise | হারিয়ে গেল 'গুপী-বাঘা'র স্বর! প্রয়াত বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী অনুপ ঘোষাল!
Key Highlights

গুপী গাইন বাঘা বাইনের 'মোরা দুজনায় রাজার জামাই’, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’, ‘এসে হীরক দেশে’, 'তুজসে নারাজ নেহি জিন্দেগি'র মতো গান গেয়ে অমর সুর রেখে গিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। প্রয়াত সেই সংগীতশিল্পী অনুপ ঘোষাল।

স্তব্ধ 'গুপী-বাঘা-হীরক রাজার দেশ'...না ফেরার দেশে চলে গেলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী তথা সুরকার ড. অনুপ ঘোষাল (Anup Ghoshal)! শুক্রবার কলকাতায় নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন গায়ক। মৃত্যুকালে বয়স হয়েচিলো ৭৮ বছর। সংগীতশিল্পী হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত অনুপ ঘোষাল সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) পরিচালিত ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’র মতো ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি তিনি  তৃণমূল বিধায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সংগীতশিল্পী তথা প্রাক্তন বিধায়কের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বিনোদন জগৎ-রাজনৈতিক মহল-'গুপী-বাঘা' প্রেমীরাও!

 অনুপ ঘোষাল জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার এক সঙ্গীত পরিবারে। বাবা ছিলেন লেফটেন্যান্ট অমুল্য চন্দ্র ঘোষাল ও মা লেফটেন্যান্ট লাবণ্য ঘোষাল। মাত্র ৪ বছর বয়স থেকেই  বাদ্যযন্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন তিনি। এরপর ৪ বছর বয়সেই কলকাতার অল ইন্ডিয়া রেডিওতে শিশু প্রোগ্রামের জন্য গেয়েছিলেন অনুপ ঘোষাল। ঘোষালের সঙ্গীত পাঠ শুরু হয় চার বছর বয়স থেকে ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত। তাঁর সম্পূর্ণ শিক্ষা জীবনে তিনি তুমরী, খেয়াল, ভজন, রাগ, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুলগীতি, দ্বিজেন্দ্রেজিটি, রাজনিকেতন গান, আধুনিক বাংলা গান এবং অন্যান্য অনেক লোকের গানে পারদর্শিতার পরিচয় দেন। দেবব্রত বিশ্বাসের কাছ থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং মনিন্দ্রা চক্রবর্তীর কাছ থেকে বিভিন্ন বাংলা গান শিখেছিলেন। তাঁর নজরুলগীতিও শ্রোতাদের বিশেষ পছন্দের। সংগীতে প্রশিক্ষণ ছাড়া তিনি আশুতোষ কলেজ থেকে মানবিক পদে স্নাতকতা লাভ করেন। সঙ্গে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন অনুপ ঘোষাল (Anup Ghoshal)।

অনুপ ঘোষালের প্রথম প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে কাজ বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) সঙ্গে। বলা যেতে পারে অনুপ ঘোষালের পারদর্শিতাই নজর কেড়েছিল সত্যজিৎ রায়ের। অনুপবাবুর বয়স ছিল তখন ১৯। ১৯৮০ সালে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের সেরা চলচ্চিত্র (Satyajit Ray Best Movies) গুপী গাইন বাঘা বাইন (Gupi Gayen Bagha Bayen) এর পর্ব ‘হীরক রাজার দেশে’। এই চলচ্চিত্রে গোটা বাঙালি তথা সিনেমা ও সংগীত প্রেমীদের মন কেড়ে নেয় ‘মোরা দুজনায় রাজার জামাই’, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’, ‘এসে হীরক দেশে’র মতো গান। গুপী গাইন বাঘা বাইন (Gupi Gayen Bagha Bayen) চলচ্চিত্র পর্বে এই 'লেজেন্ডারি', সেরা গানগুলিতেই কন্ঠ দেন অনুপ ঘোষাল। উল্লেখ্য, সত্যজিৎ রায়ের সেরা চলচ্চিত্র (Satyajit Ray Best Movies) এর জন্যই সেরা জাতীয় পুরস্কার পান বাংলার শিল্পী।

কেরিয়ারে একের পর এক আইকনিক গান উপহার দিয়েছেন তিনি। ‘সাগিনা মাহাতো’র মতো ছবিতে করেছেন সঙ্গীত পরিচালনা। তবে সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ এবং ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্রে বিখ্যাত গানে কণ্ঠ দেওয়া ছাড়াও গেয়েছেন আরও 'অমর' সংগীত। হিন্দি, ভোজপুরি ও অসমিয়া ভাষাতেও গান গেয়েছেন তিনি। অনুপ ঘোষালের কন্ঠে ‘মাসুম’ ছবির ‘তুঝসে নারাজ নহি জিন্দেগি’ আজও কেউ ভুলতে পারেননি। ১৯৮৩ সালের একাধিক বিভাগে পুরস্কার প্রাপ্ত হিন্দি মাসুম চলচ্চিত্রে গান গেয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। নজরুলগীতি এবং শ্যামাসঙ্গীতের জন্য সঙ্গীত জগতে বিপুল প্রশংসাও পেয়েছিলেন তিনি।

সংগীত জগতের পাশাপাশি অনুপ ঘোষাল যুক্ত ছিলেন রাজনৈতিক জগতের সঙ্গেও। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে উত্তরপাড়া বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। হুগলির উত্তরপাড়া বিধানসভা আসন থেকে প্রথম বার প্রার্থী হয়েই জয় পান। তবে এর পরে আর তাঁকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। ১৫ই ডিসেম্বর তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, অনুপ ঘোষালের প্রয়াণে সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। অনুপ ঘোষালের আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

অনুপ ঘোষাল ইন্ডিয়ান মিউজিক, "গণেশ ভুবেন" এর একটি প্রামাণিক বই লিখেছেন। অনুপ ঘোষাল বিশ্বাস করতেন যে সঙ্গীত সার্বজনীন এবং শ্রেষ্ঠ একক শক্তি। তাঁর কণ্ঠের জাদু বাংলা ছাপিয়ে ছড়িয়ে পরে দেশ-বিদেশে। ইউকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি ইত্যাদি নানান জায়গায় সংগীত অনুষ্ঠানের জন্য ভ্রমণ করেছেন অনুপ ঘোষাল। তবে আর শোনা যাবে না ভূতের রাজার বর..তুজসে নারাজ বা নজরুলগীতি। থেমে গেল 'গুপী-বাঘা'র সুর।