খাদ্যগুণ

অর্গ্যানিক খাবারের  প্রয়োজনীয়তা এবং এ  বিষয়ে বিস্তারিত, All details and benefits of organic foods in Bengali

অর্গ্যানিক খাবারের  প্রয়োজনীয়তা এবং এ  বিষয়ে বিস্তারিত, All details and benefits of organic foods in Bengali
Key Highlights

আমাদের শরীরের সুস্থতার প্রধান শর্তই হল সঠিক খাদ্যাভ্যাস। আজকাল গ্রামের হাট হোক বা শহরের বাজার সব খানেতেই সাজিয়ে রাখা রয়েছে ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত ফল ও সবজি। খাবারের এইসব ক্ষতিকর দিক থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম একটি সমাধান হচ্ছে অর্গানিক সবজি। যেহেতু অর্গানিক শাকসবজি এবং শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না, তাই নিশ্চিত ভাবে আমাদের দেহের জন্যও তা উপকারী।

অর্গানিক ফুড বলতে কি বোঝায়? What is meant by organic food ?

অর্গানিক ফুড হল সেইসব খাদ্য যা কোনো প্রকার রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদন করা হয়।

এর রক্ষণাবেক্ষণে কোন কৃত্রিম উপাদানের ব্যবহার থাকে না। পাশাপাশি পরিবেশ-বান্ধব বা Eco friendly এই চাষ পদ্ধতিতে ফসল পরিবর্তন, জৈব পেস্ট ইত্যাদি ব্যাপারে নজর দেওয়া হয়। কৃষি-বাস্তুসংস্থান নীতি অনুসারে এরূপ ফসল উৎপাদন আমাদের জীববৈচিত্র ও সুন্দর ভবিষ্যৎ ও সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করে।
 

অর্গানিক খাবারের গুণ

বর্তমানে অর্গানিক ফুড বিশ্বব্যাপী এক চর্চার বিষয়। ‘অর্গানিক ফুড এন্ড ফার্মিং, মিথ এন্ড রিয়ালিটি’ শীর্ষক নিয়ে বিশ্বের ৩৬টি প্রতিষ্ঠানে গবেষণা ও আলোচনার মাধ্যমে দেখা গেছে যে এই প্রকার জৈব খাদ্যে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই উপযোগী।

মার্কিন যুক্তরাজ্যের 'হাউজ অব লর্ডস' এর বিজ্ঞান বিষয়ক এক কমিটির রিপোর্টে বলা হয় যে পশু ও মাছের খাবারে যেসব এন্টি বায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে তার প্রভাবে মানব দেহে নানা মাইক্রোবায়োলজিক্যাল রোগ বাসা বাঁধছে। সেজন্য অর্গানিক ফুড ব্যবহার করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে, যা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং পরিবেশের স্থিতিশীল উন্নয়নের সহায়ক।

● বাজারের বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভেজাল থাকে, যা গ্রহণ করে মানুষ ধীরে ধীরে নিজের দেহের ক্ষতি করে চলেছে। সেই অবস্থায় অর্গানিক ফুডের উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক হওয়ার কারণে এরথেকে ক্ষতির কোনও আশঙ্কা থাকে না।

● বিভিন্ন প্রাণীজ খাদ্যসমূহ, যেমন মাছ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ উচ্চ মাত্রায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে মানব দেহে তা দীর্ঘস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে চলেছে। ফলস্বরূপ আমাদের হৃদযন্ত্র, কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম ও স্নায়ু চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

● বর্তমানের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শিশু থেকে বয়স্ক তথা গর্ভবতী মায়েদেরও স্বাস্থের ক্ষেত্রে প্রবল ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। রাসায়নিক ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পেটে থাকা সন্তান দেহের বিভিন্ন অংশে প্রতিবন্ধকতা বা মারাত্মক সব রোগ নিয়ে জন্ম নিতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে অর্গানিক খাবার বিশ্বাসযোগ্য।

Also read :

● অর্গানিক ফুড শুধুমাত্র মানব স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, বরং এটি আমাদের পরিবেশের জন্যও যথেষ্ট ইতিবাচক। খাবারের জৈব চাষ পদ্ধতিতে ফলন বৃদ্ধির প্রবণতা পরিবেশ দূষণ হ্রাস করে দিতে পারে, জল সংরক্ষণে সহায়তা করতে পারে, মাটির ক্ষয় হ্রাস করার জন্যও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তাছাড়া মাটির উর্বরতা ক্রমশঃ বৃদ্ধি করতে পারে।

চাহিদা ও দর দাম, Demand and price rate of organic food

স্বাস্থ্যকর, প্রাকৃতিক এবং পার্শপ্রতিক্রিয়া মুক্ত হওয়ার কারণে বর্তমানে জৈব খাবারের সারা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে জৈব খাবারের চাহিদা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। তবে বাজারে জৈব খাবারগুলোর দাম কিছুটা বেশি, যার একটি বড় কারণ হচ্ছে জৈব বা নিরাপদ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদনে এখনও আগ্রহের অভাব।

বিশ্বে নব্বইয়ের দশকের সময় থেকে খুব ছোট পরিসরে এই অর্গানিক শাকসবজি ও অন্যান্য খাবারের ফলন শুরু করা হয়, তবে ২০২০ পরবর্তী আজকের সময়কালে এই চাষ পদ্ধতিতে দেশ বিদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উৎপাদক, প্রক্রিয়াজাতকারী এবং বিক্রেতা সংযুক্ত হয়েছেন।

বর্তমান প্রজন্ম খুব স্বাস্থ্য সচেতন, কারণ বিভিন্ন গবেষণায় হৃদরোগ, ডায়বেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি অসুখের প্রকোপ বেড়ে ওঠার অন্যতম কারণ হিসেবে ডাক্তাররা ভেজাল খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করেছেন। এরূপ পরিস্থিতিতে জৈব খাদ্য সামগ্রীর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।

Also read :

অর্গানিক খাবার কিভাবে চিনবেন? How will you identify organic food ?

1. খাবারের চেহারা: অর্গানিক ফুড এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করা খাবার দেখতে কখনোই এক রকমের হবে না। অর্গানিক খাবারের রঙ খুব বেশি গাঢ় হবে না। এসব খাবার দেখতে একদমই প্রাকৃতিক এবং সতেজ হয়।

2. আকৃতি: হাইব্রিড বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত ফসলগুলো সাধারণত বৃহৎ আকৃতির হয়। তবে অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করা ফলমূল, শাকসবজি তথা অন্যান্য শস্যগুলো আকারে প্রমাণ মাপের থাকবে, বিশালাকৃতি হবে না। সবচেয়ে বড় কথা জৈব ফসলের ভেতরে পোকার উপদ্রপ প্রায় থাকে না বললেই চলে।

3. খাবারের স্বাদ: অর্গানিক পদ্ধতিতে ফলন হলে তার স্বাদও যে অতুলনীয় হবে তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। যখনই আপনি বাড়ি ঘরে অর্গানিক শাকসবজি রান্না করবেন, তখন অতিরিক্ত তেল ও মশলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হবে না, কারণ প্রাকৃতিকভাবেই এ ধরনের খাবার স্বাদে পরিপূর্ণ থাকে।

4. দ্রুত রান্না হয়: কীটনাশকযুক্ত খাবারগুলো দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করতে হয়। অপরদিকে অর্গানিক ফুড রান্না করার ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সময় লাগে।

5. স্বাস্থ্যকর: অর্গানিক খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর হয় বলে আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে আরোও সহজ এবং দ্রুত করে তোলে, যার ফলে অ্যাসিডিটি এবং গ্যাস সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

উপসংহার, Conclusion

"অর্গানিক ফুড" শব্দটির সাথে গত কয়েক বছর আগেই আমাদের দেশের পরিচয় ঘটেছে; তবে বর্তমান অবধি অনেকেই অর্গানিক ফুড সম্পর্কিত তথ্য বিশেষ ভাবে জানেন না।

দু-এক বছর আগে অবধিও গ্রামাঞ্চলে তো দূরে থাক, শহুরে জীবনেরও খুব অল্প সংখ্যক মানুষই অর্গানিক ফুডের সাথে পরিচিত ছিলেন। তবে, ইদানীং পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে, কারণ সুপারমার্কেটগুলোতে গেলে দেখা যায় যে আজকাল লোকজন অর্গানিক ফুডের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। অর্থাৎ, বাজারে অর্গানিক ফুডের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

also read :