Air Pollution in India | ভারতীয়দের জীবন থেকে ৫ বছর ছিনিয়ে নিচ্ছে বায়ু দূষণ! শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টে চাঞ্চল্য!
দেশের বায়ু দূষণের ফলে ভারতীয়দের জীবন থেকে কমে যাচ্ছে প্রায় ৫ বছর। পরিবেশ দূষণ কমানো নিয়ে উদ্বেগ।
পরিবেশ দূষণ বেশ দীর্ঘ সময় ধরেই গোটা বিশ্বের বড় সমস্যা হয়ে এসেছে। বিগত কয়েক দশকে ভারতেও (India) ভয়াবহ ভাবে বেড়েছে বায়ুদূষণের মাত্রা। তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বাতাসে ভেসে বেড়ানো সূক্ষ্ম কঠিন কণার পরিমাণ (particulate matter, pm) বেড়েছে ৬৭.৭ শতাংশ। এই ঘটনা রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে পরিবেশবিদদের। গোটা দেশে দুষগণের পরিমাণ কমানোর জন্য সরকারর তরফে নানন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত। তবে তাতেও দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এই আবহেই সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর একটি রিপোর্ট। এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দূষণের জেরে ভারতীয়দের জীবনের হ্রাস পাচ্ছে গড়ে ৫.৩ বছর। অর্থাৎ আপনার অজান্তেই দূষণের জন্য আপনারফ জীবন থেকে কমে যাচ্ছে প্রায় ৫ বছর সময়।
কী বলছে রিপোর্ট? । What does the report say?
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Chicago) তরফ থেকে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের পিএম২.৫-এর (PM2.5) তথ্য অনুযায়ী ভারতে বায়ুদূষণ আগের তুলনায় মাত্রারিক্তভাবে বেড়ে গিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) নির্ধারিত মানদণ্ডের ১১ গুণেরও বেশি দূষণ ভারতে।
জানা গিয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে যতটা পার্টিকুলেট পলিউশন হয়েছে, তার ৫৯.১ শতাংশই ভারতের। গবেষণায় জানা গিয়েছে, পার্টিকুলেট পলিউশন (particulate pollution), বা বায়ুতে সূক্ষ্ম কঠিন কণার দূষণের কারণে ভারতীয়দের গড় আয়ু প্রায় ৫.৩ বছর কমে যাচ্ছে। যেখানে হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে ভারতীয়ের গড় আয়ু কমে ৪.৫ বছর এবং অপুষ্টিজনিত কারণে কমে ১.৮ বছর। ভারতের দূষণের নিরিখে দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে দিল্লি। এরপরই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh), হরিয়ানা (Haryana), বিহার (Bihar) এবং পঞ্জাব (Punjab)।
উল্লেখ্য, চিন (China) তাদের দূষণের গ্রাফকে নামাতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। চিনের ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে একজনের জীবনকাল ৪.৭ বছর হ্রাস পাচ্ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে সেটা অনেকটাই কমেছে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, চিনে বর্তমানে যা দূষণ, তার জেরে একজনের জীবন থেকে মাত্র ২.৫ বছর হ্রাস পাচ্ছে গড়ে। এর থেকেই স্পষ্ট, দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল, এই আট বছরের মধ্যে অনেকটাই উন্নতি ঘটিয়েছে চিন।
এদিকে ভারতের এই ক্রমবর্ধমান দূষণের জেরে ভারতীয়দের জীবনকালের থেকে গড়ে ৫.৩ বছর করে কমে যাচ্ছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যদি দিল্লির দূষণ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে গড়ে একজন মানুষ আরও ১১.৯ বছর বেশি বাঁচতে পারেন। জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে যদি দূষণ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে গড়ে একজন মানুষ আরও ৮.৮ বছর বেশি বাঁচতে পারেন। এরপর হরিয়ানায় যদি দূষণ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে গড়ে একজন মানুষ আরও ৮.৩ বছর বেশি বাঁচতে পারেন। এদিকে বিহারে যদি দূষণ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে গড়ে একজন মানুষ আরও ৮ বছর বেশি বাঁচতে পারেন। আর যদি পঞ্জাবে দূষণ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে গড়ে একজন মানুষ আরও ৬.৪ বছর বেশি বাঁচতে পারেন।
এদিকে শুধুমাত্র এনসিআর-এর (NCR) ওপর যদি নজর দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে, দূষণ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনা গেলে নয়ডায় গড়ে একজন মানুষ আরও ১১.৩ বছর বেশি বাঁচতে পারেন। এদিকে গুরুগ্রামে যদি দূষণ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে গড়ে একজন মানুষ আরও ১১.২ বছর বেশি বাঁচতে পারেন। অপরদিকে ফরিদাবাদে যদি দূষণ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে গড়ে একজন মানুষ আরও ১০.৮ বছর বেশি বাঁচতে পারেন। এছাড়া গাজিয়াবাদে যদি দূষণ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে গড়ে একজন মানুষ আরও ১০.৭ বছর বেশি বাঁচতে পারেন।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বায়ুদূষণের ফলে বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উত্তর ভারত। উত্তর ভারতের মোট জনসংখ্যা ৫২১.২ মিলিয়ন, যা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩৮.৯ শতাংশ। এই অবস্থায় আশঙ্কার করা হচ্ছে এই বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের গড় আয়ু বায়ুদূষণজনিত কারণে কমে যাচ্ছে প্রায় ৮ বছর। অন্যদিকে, দেশের দ্বিতীয় জনঘনত্বযুক্ত জেলা হলো এ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা। রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান দূষণের হার বজায় থাকলে উত্তর ২৪ পরগণার মানুষের গড় আয়ু ৫.৬ বছর কমে যাবে আগামিদিনে। এই রিপোর্ট প্রকাশের পরই বেশ চিন্তায় পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে সরকার। কীভাবে দূষণ কমানো যাবে তা নিয়েই চিন্তিত মহল।