Aditya L1 Mission | সূর্যের রং লাল-বেগুনি-গোলাপি! আদিত্য এল-১ এর তোলা সূর্যের এক্সক্লুজিভ ছবির রহস্য কী?
মহাকাশ থেকে সূর্যের ছবি পাঠালো আদিত্য এল১। ইসরোর আদিত্য এল১ মিশন দ্বারা পাওয়া এই ছবিতে দেখা গেলো সূর্যের ভিন্ন ভিন্ন রং। ছবি প্রকাশের সঙ্গে রহস্যও জানালো ইসরো।
চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3) এর পর মহাকাশ বিজ্ঞানে ইতিহাস গড়তে ইতিমধ্যেই গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে ভারতের প্রথম সূর্যযান আদিত্য এল ১ (Aditya L1)। এবার এই সূর্যোযানই মহাকাশ থেকে এই প্রথম সূর্যের এক্সক্লুসিভ ছবি তুলে পাঠাল। আদিত্য এল১ মিশন (Aditya L1 Mission) দেখালো সূর্যের নানান রং। কখনও কমলা, কখনও গোলাপি আবার কখনও উজ্জ্বল সোনার মতো! শুক্রবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization) বা ইসরোর (ISRO) এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছে আদিত্য এল ১-এর তোলা সূর্যের হরেক রকমের ছবি।
আদিত্য এল১ এর আপডেট (Aditya L1 Update) দ্বারা কেবল সূর্যের নানান রংই নয়, আদিত্য এল ১ যে সূর্যের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে তারও প্রমাণ দিলো। শুক্রবার ইসরো সোশ্যাল মাধ্যমে জানিয়েছে, আদিত্য-এল১ যানে থাকা ‘সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ’ (এসইউআইটি)-এর মাধ্যমে সূর্যের ছবিগুলি তোলা হয়েছে। আদিত্য-এল১-এর সূর্যের ছবি তোলার বিষয়টি ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানের অন্যতম নজির হিসাবে দেখছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে সূর্যের সেই ‘ফুল ডিস্ক’ ছবিগুলি ২০০ থেকে ৪০০ ন্যানোমিটারের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিসরের মধ্যে তোলা। ফলে ছবিগুলিতে সূর্যের পৃষ্ঠদেশ এবং সূর্যের উপরভাগের স্বচ্ছ স্তরের ছবি ভাল ভাবে ফুটে উঠেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আদিত্য এল১ মিশন (Aditya L1 Mission) সম্পর্কে ইসরোর তরফে ‘এক্স (সাবেক টুইটার)’ হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, এসইউআইটি পেলোড অতিবেগুনী তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কাছাকাছি সূর্যের পূর্ণাঙ্গ ছবি তুলেছে। ছবিগুলি ২০০ থেকে ৪০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে তোলা। সূর্যের এই ছবিগুলি তোলা হয়েছে সোলার আলট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ ইনস্ট্রুমেন্ট দিয়ে। আদিত্য এল ১-এ সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এই ক্যামেরা। ১১টি আলাদা আলাদা ফিল্টার দিয়ে এই ছবিগুলি তোলা হয়েছে। তাই নানা রঙের ছটা ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। ছবিগুলির সাহায্যে সূর্যের ফটোস্ফিয়ার এবং ক্রোমোস্ফিয়ারের জটিল বিবরণ বোঝা যাবে।
মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স-এ এসব ছবি প্রকাশ করে ইসরো আরও জানায়, আল্ট্রাভায়োলেন্ট (Ultraviolet) ওয়েভলেন্থের (Wave Length) মাধ্যমে সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ছবিগুলি তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে সূর্যের আলোকময় বহিরাবরণ (Photosphere) এবং বর্ণমণ্ডলের (Chromosphere) জটিল বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। আদিত্য-এল ১ মহাকাশযানে ‘দ্য সোলার আল্ট্রাভায়োলান্ট ইমাজিং টেলিস্কোপ’ সুইট নামের একটি টেলিস্কোপ ক্যামেরা বসানো আছে। এটিই সূর্যের ২০০ থেকে ৪০০ এনএম ওয়েভলেন্থের (মধ্যবর্তী ব্যবধান) মাধ্যমে ছবিগুলো তৈরি করেছে। বিভিন্ন সায়েন্টিফিক ফিল্টার ব্যবহার করে সুইট ছবিগুলো তুলেছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে ইসরো। উল্লেখ্য, ছবিগুলোতে সূর্যের দাগ ও সূর্যের বেশ কিছু অদেখা অঞ্চলের ছবি ধরা পড়েছে। এই ছবিতে কালো দাগগুলি আসলে একাধিক সানস্পট। মানে সৌরকলঙ্ক। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মূল সূর্যের তুলনায় ওই সানস্পটগুলি কিছুটা কালচে। মানে এগুলি অপেক্ষাকৃত কম গরম। তবে সেটাও নেহাত কম কিছু নয়। সুইটের সূর্য পর্যবেক্ষণ করার বিষয়টি বিজ্ঞানীদের ‘সূর্যের গতিশীল চুম্বকীয় বায়ুমণ্ডল’ এবং ‘বিশ্বমণ্ডলের ওপর সৌর বিকিরণ আটকাতে আঁটোসাঁটো বাধা স্থাপনের’ বিষয়ের গবেষণায় সহায়ক হবে বলেও জানিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
আদিত্য এল ১ প্রসঙ্গে ইসরো জানিয়েছে, আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকেল এক্সপেরিমেন্ট (ASPEX) পেলোড তার কাজ শুরু করেছে। এই যন্ত্রের দুটি সাব-পেলোড আছে- প্রথম SWIS অর্থাৎ সোলার উইন্ড আয়ন স্পেকট্রোমিটার এবং দ্বিতীয় সাব-পেলোড হল সুপারথার্ম এবং এনার্জিটিক পার্টিকেল স্পেকট্রোমিটার (STEPS)। এটি সৌরবায়ুতে উচ্চশক্তির আয়নের মাত্রা নির্ধারণ করবে। এই মিশনে সুর্যযানে মোট সাতটি পেলোড রয়েছে। ৬টি ইসরোর। এর মধ্যে রয়েছে আদিত্যের জন্য প্লাজমা বিশ্লেষক প্যাকেজ (পিএপিএ), দৃশ্যমান লাইন নির্গমন করোনাগ্রাফ (ভিইএলসি), সৌর আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (এসইউআইটি), সোলার লো এনার্জি এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (সোএলএক্সএস), হাই এনার্জি এল১ অরবিটিং এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (এইচইএল 10এস), আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকেল এক্সপেরিমেন্ট (ASPEX) এবং অ্যাডভান্সড ট্রাই-অ্যাক্সিয়াল হাই রেজোলিউশন ডিজিটাল ম্যাগনেটোমিটার (MAG)।
প্রসঙ্গত, গত ২রা সেপ্টেম্বর সকালে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টারের (Satish Dhawan Space Research Center in Sriharikota) লঞ্চিং প্যাড থেকে সূর্যের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল আদিত্য-এল১। প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ কিলোমিটার ভ্রমণ করে গন্তব্যে পৌঁছবে সেটি। সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝের এল১ পয়েন্টে পৌঁছতে তার মোট চার মাস সময় লাগার কথা। সব ঠিক থাকলে পরের মাস অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে এই সৌরযান। এখনও পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ঠিক চলছে। মহাকাশে কোথাও বাধা পায়নি আদিত্য-এল১। এর মধ্যেই পর পর আকর্ষণীয় আদিত্য এল১ এর আপডেট (Aditya L1 Update) প্রকাশ করছে ইসরো। যার মধ্যেই এই সূর্যের ছবি অন্যতম। ইসরোর বক্তব্য, এই ছবি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সৌর বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে। পৃথিবীর উপর সৌর বিকিরণের প্রভাব বুঝতেও বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে ছবিগুলি।
অন্যদিকে, চন্দ্রযান ৩ এবং আদিত্য এল ১ এর পর একাধিক ইসরো-এর আসন্ন মিশন (Upcoming Missions of ISRO) রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম গগণযান (Gaganayaan), মঙ্গলযান ২ (Mangalyaan 2), ভারতীয় স্পেস স্টেশন (Indian Space Station) এমনকি চন্দ্রযান ৪ (Chandrayaan 4) ও। ইতিমধ্যেই ইসরো-এর আসন্ন মিশন (Upcoming Missions of ISRO) গগণযান নিয়ে নানান পরীক্ষা বা বলা চলে ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে সফলভাবে। অন্যদিকে চন্দ্রযান ৪ (Chandrayaan 4) নিয়েও ইসরো কাজ করা শুরু করে দিয়েছে বলে জানান ইসরো প্রধান এস সোমনাথ (ISRO chief S Somnath)। সম্প্রতি চন্দ্রযান ৩ এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ পৃথিবীর কক্ষপথে ফিরিয়ে এনে আবারও নজির গড়েছে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা। এই পদ্ধতি চন্দ্রযান ৪ (Chandrayaan 4) মিশনে কাজে লাগবে বলে জানান ইসরো প্রধান।