5 Yoga Asanas for Heart | শীতে বাড়ে স্ট্রোক-হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি! জানুন হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ এবং কীভাবে থাকবেন সুস্থ্য!
শীতে হার্টের সমস্যা থেকে সুস্থ্য থাকতে এবং স্ট্রোকের সম্ভবনা কম করতে নিয়মিত করতে হবে বিশেষ ৫টি যোগাসন। দেখুন কোন কোন ধ্যানমূলক আসন করলে থাকবেন সুস্থ্য।
শীতকালে যেমন জ্বর-সর্দি-কাশির মতো নানান ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তেমনই এই মরশুমে ঝুঁকি বাড়ে স্ট্রোক-হার্ট অ্যাটাকেরও! সমীক্ষা অনুযায়ী, শীতে শরীরে অক্সিজেনের প্রয়োজন বেড়ে যায়। এই সময়ে রক্তনালি সরু হয়ে যায়। তাই হৃদ্যন্ত্রে কম পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছয়। এতেই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তা ছাড়া, অন্যান্য ঋতুতে কোনোরকমে কিছুক্ষনের জন্যে হলেও শরীরচর্চা করলেও, শীতে একেবারেই যেন শরীর সং দেয়না। ফলে শীতকালে শরীরচর্চার অভ্যাস একেবারেই চলে যায়। পাশাপাশি এই সময়ে খাওয়া দাওয়াতেও আসে বদল। সব মিলিয়ে প্রভাবের পরে হার্টের ওপর।
বর্তমানে বেশি বয়স্ক হোক কিংবা অল্প বয়স্ক-সকলের মধ্যেই স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরচর্চার অভাব ও অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে বাড়ছে স্ট্রোক-হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। এর সঙ্গে মরশুম তো রয়েছেই। হার্ট অ্যাটাক অনেক সময়ে নিঃশব্দে আসে। তবে শীতে সকালের কিছু লক্ষণ কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত দিতে পারে। দেখে নিন শীতে হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত-
- রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে অত্যধিক ক্লান্তি থাকে তাহলে তা এড়িয়ে যাবেন না। সারা রাত পর্যাপ্ত ঘুমিয়েও ক্লান্ত হয়ে পড়া স্বাভাবিক বিষয় নয়। ঘুম থেকে ওঠার পরেই যদি প্রায়শই ক্লান্তি ঘিরে ধরে, তা হলে বিষয়টি এক বার গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি।
- অনেকের সকালে ঘুম থেকে উঠেই বমি পায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লক্ষণও ভালো নয়। হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত হতে পারে এই লক্ষণ। ঘুম থেকে উঠেই বমি পাওয়া, মাথা ঘোরার সমস্যা গ্যাস-অম্বলের কারণে হচ্ছে ভেবে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক না।
- হার্ট অ্যাটাকের আরও একটি লক্ষণ হল সকালের দিকে বুকে হালকা অস্বস্তি। বুকে ব্যথা কিংবা হালকা চাপ অনুভূত হলে এড়িয়ে যাবেন না। দরকার হলে এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- সকালের দিকে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াও হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব ইঙ্গিত হতে পারে। অল্প কাজ করেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, শ্বাসের কষ্ট শুরু হলে বিষয়টি মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।
- মাথা ঘোরা অত্যন্ত সাধারণ একটি সমস্যা। তবে শীতকালে সকালের দিকে প্রায়শই মাথা ঘোরার সমস্যাকে একটু বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
শীতকালে কেবল হার্টের সমস্যাই নয়, বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকিও। এছাড়া গবেষকরা দেখেছেন, স্ট্রোকের দুই বছর আগ থেকেই রোগীরা দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, অস্থিরতা, বিষণ্নতা ও মানসিক চাপে ভুগতে শুরু করেন। এই লক্ষণ পরবর্তীকালে স্ট্রোকের পরে আরও বেড়ে যায়। স্ট্রোকের ১০ বছর পর বিষণ্নতার গুরুতর আকার ধারণ করে।
সুস্থ্য থাকবেন কী করে?
স্ট্রোক বা হার্টের সমস্যা থেকে সুস্থ্য থাকতে সঠিক খাদ্যাভাস এবং শরীরচর্চা খুব জরুরি। শরীরকে সুস্থ রাখতে রোজকার ব্যস্ততার মধ্যেও নিয়ম মেনে কিছুক্ষণ শরীরচর্চা করার প্রয়োজন। হাটাহাটি-জিম এসব ছাড়া শরীর সুস্থ্য রাখতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী যোগাসন। শারীরিক কসরত সুস্থ থাকার অন্যতম পথ। বিশেষ করে হার্টের খেয়াল রাখতে শরীরচর্চার কোনও বিকল্প নেই। হৃদ্রোগ থাকলে অনেকেই নিয়মিত হাঁটতে যান। তবে শুধু হাঁটাহাঁটি করলে চলবে না। নিয়ম করে করতে হবে কিছু যোগাসনও। দেখে নিন কোন ৫টি যোগাসন (5 Yoga Asanas ) করলে হার্টের সমস্যা এবং স্ট্রোক থেকে সুস্থ্য থাকবেন।
১. পদহস্তাসন । Padahastasana :
পদহস্তাসন করার জন্য প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। তার পর আস্তে আস্তে পা দুটো সামান্য ফাঁক করুন। এবার ভাল করে শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো উপরের দিকে তুলুন। এ বার আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন। হাতের সাহায্যে গোড়ালি স্পর্শ করুন। খেয়াল রাখবেন, হাঁটু যেন না ভাঙে। ২০-৩০ সেকেন্ড এই অবস্থায় থাকার পর আগের অবস্থায় ফিরে যান। এই ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
২. সুখাসন । Sukhasana :
হার্টের জন্য যোগাসন (Yoga Asanas for the Heart) এর মধ্যে এই যোগাসন খুব উল্লেখযোগ্য। এই যোগাসন করতে দণ্ডাসনে বসা অবস্থায় বাম পা ধীরে ধীরে মুড়ে ভিতরের দিকে নিয়ে আসুন। এরপর ডান পা তার ভিতর দিয়ে ঢুকিয়ে দিন। বাম ও ডান পা পরস্পরের সঙ্গ ‘লক’ হয়ে থাকবে। নিশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সবে গোটা আসনটি করার সময়। এই ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) নিয়মিত অভ্যাসে উদ্বেগ কমে, মানসিক শান্তি লাভ হয় এবং বিশেষ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো হয়। ফুসফুসের এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য এই যোগাসন খুবই উপকারি। এই যোগাসনের সাহায্যে সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
৩. নৌকাসন । Naukasana :
নৌকাসন করার সময় পুরো ভরটাই থাকবে আপনার কোমর ও নিতম্বের উপর। এই আসনটি করতে প্রথমে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এর পর শ্বাস নিতে নিতে নিতম্ব ও কোমরে ভর দিয়ে দেহের উপরের অংশ ও পা একই সঙ্গে উপরের দিকে তুলুন। বাহু ও পায়ের পাতা একই দিকে রাখবেন। নৌকা বা ইংরেজি এল আকৃতির মতো অবস্থায় থাকুন ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড। ধীরে ধীরে নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রথম অবস্থায় ফিরে আসুন। প্রতি দিন ৩-৪ বার নৌকাসন (Naukasana) করলে ভালো উপকারিতা পাবেন। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিনই ব্যায়ামটি করা উচিত। স্ট্রোকের জন্য যোগাসন (Yoga for Stroke) হিসাবে এই ব্যায়াম বেশ সুপরিচিত। এই ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও পাচনশক্তি বাড়ানোর কাজেও ব্যায়ামটি দারুণ কার্যকরী।
৪. ধনুরাসন । Dhanurasana :
হার্টের জন্য যোগাসন (Yoga Asanas for the Heart) হিসেবে যেসব যোগার কথা প্রথমে মাথায় আসে তার মধ্যে অন্যতম হলো ধনুরাসন। এই যোগাসনটি করতে প্রথমে উপুড় করে শুয়ে পড়ুন। তারপর হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা যতখানি সম্ভব পিঠের উপর নিয়ে আসুন। এবার হাত দু’টো পেছনে নিয়ে গোড়ালির উপর শক্ত করে চেপে ধরুন। এবার চেষ্টা করুন পা দুটো মাথার কাছাকাছি নিয়ে আসতে। এই ভঙ্গিতে মেঝে থেকে বুক হাঁটু ও উরু উঠে আসবে। তলপেট ও পেট মেঝেতে রেখে উপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিতে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর পূর্বের ভঙ্গিতে ফিরে যান। এই আসন অন্তত ৩ বার করুন।স্ট্রোকের জন্য যোগাসন (Yoga for Stroke) হিসেবেও ধনুরাসন বেশ কার্যকর।
৫. ভুজঙ্গাসন । Bhujangasana :
ভুজঙ্গাসন করতে প্রথমে মেঝেতে প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাতের উপর ভর দিয়ে মাথা উঠেয়ে ঘাড় পেছনে যতটা পারবেন হেলিয়ে দিন। মাথা বেঁকিয়ে উপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিতে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকার পর আগের অবস্থায় ফিরে যান। প্রথম দিকে এই আসন ৩ বার করুন। পরবর্তীতে ৫-৬ বারও করতে পারেন। হার্টের জন্য যোগাসন (Yoga Asanas for the Heart)- ভূজঙ্গাসনের একাধিক উপকারিতা রয়েছে। এই যোগাসন নিয়মিত করলে কোমরের ব্যথা কমে। পাশাপাশি, কোষ্ঠের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে, সেই সঙ্গে ত্বকের জেল্লাও বৃদ্ধি পাবে, হার্টও ভালো থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আসন করার সময়ে ত্বকের অন্দরের টক্সিন (Toxin) বেরিয়ে যায় এবং রক্ত সঞ্চালনও বৃদ্ধি পায়। ভূজঙ্গাসন বসার ভঙ্গি (Sitting Poses) আসন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
মুকুন্দপুরের আরএন টেগোর হাসপাতালের নিউরো-মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অনিমেষ কর স্ট্রোক এবং হৃদরোগ সম্পর্কে বলেন, 'শীতে হাত-পা কম চলে। ফলে কমে যায় কায়িক পরিশ্রম। আবার খাওয়া-দাওয়াতেও বাড়ে অনিয়ম। সেগুলোও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রক্তচাপের পাশাপাশি সুগার ও কোলেস্টেরল বাড়িয়ে তোলে যার প্রভাব পরে শরীরে। ফলে উপরোক্ত ৫টি যোগাসন (5 Yoga Asanas ) অভ্যাস করার সঙ্গে ঠিক রাখতে হবে খাদ্যাভাস। প্রয়োজনে নিয়মিত করতে হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও।