লাইফস্টাইল

International Labour Day | বিশ্ব জুড়ে কেন পালিত হয় শ্রমিক দিবস? জানুন ১লা মে-র মাহাত্ম্য!

International Labour Day | বিশ্ব জুড়ে কেন পালিত হয় শ্রমিক দিবস? জানুন ১লা মে-র মাহাত্ম্য!
Key Highlights

১৮৮৬ সালে সূচনা হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের। এদিনের এক মর্মান্তিক ঘটনা ছাপ ফেলে যায় গোটা বিশ্বে।

প্রতি বছর ১লা মে-তে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা শ্রম দিবস (International Labour Day)। এই দিনের উপলক্ষে প্রতিবছর  ৮০ টি দেশে জাতীয় ভাবে প্রায় প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রেই ছুটি ঘোষণা করা হয়। আবার বহু দেশে এই দিবস পালন করা হয়ে থাকে বেসরকারিভাবে। মে মাসের শুরুতেই বিশ্ব জুড়ে এই দিন কেন পালন করা হয় তার ইতিহাস হয়তো জানেন না অনেকেই। ভারত স্বাধীনতারও আগের থেকে পালন করা হয় এই দিন। 

আমরা প্রায় সকলেই জানি শ্রমিক দিবস পালন করা হয় শ্রমিকদের গুরুত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য। তবে এই কারনের পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।

 ১৮৮৬ সালে বিশ্বে প্রথম মে দিবস বা শ্রমিক দিবসের সূচনা হয় আমেরিকায় (America)। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো (Chicago) শহরের হে মার্কেটে (Hay Market) জমায়েত হয়েছিলেন অসংখ্য শ্রমিক। কারণ সেই সময় শ্রমিকদের ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করতেন কারখানার মালিকরা। যার ফলে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামেন কারখানার শ্রমিকরা। আর সেই আন্দোলন চলাকালীনই শ্রমিকদের মধ্যে একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাদের ঘিরে থাকা পুলিশদের ওপর বোমা ছোড়েন। যার পরেই ঘটে বড় দুর্ঘটনা! অসংখ্য শ্রমিকদের ওপর গুলি বর্ষণ শুরু করে পুলিশ বাহিনী। যার ফলে নিহত হন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ আধিকারিক। 

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শতাধিক শ্রমিক নেতা ও সমর্থনকারীদের গ্রেফতার করে তোলা হয় আদালতে। যার বিচারে ফাঁসি দেওয়া হয় চার শ্রমিক নেতা ও সমর্থনকারীদের। পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয় এই বিচার সুবিচার হিসেবে বিবেচিত নয়।

এরপর ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে (Paris) 'দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক'-এর (Second International) প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে এই দিন পালনের প্রস্তাব দেন রেমন্ড লেভিনে। তার পরের বছর অর্থাৎ ১৮৯১ সালে প্যারিসে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেস এই প্রস্তাবকে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত করে এবং স্বীকৃতি পায় শ্রমিক দিবস বা মে দিবস।

কিন্তু, ১৮৯৪ সালে মে দিবসের দিনই আমেরিকায় ঘটে দাঙ্গার ঘটনা। এই দিন নানান সংঘাতের ঘটনা হওয়ার ফলে ওই সাল থেকেই আমেরিকায় ১লা মে-তে শ্রমিক দিবস পালন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড (Grover Cliveland)। পাশাপাশি ১৮৮২ সালে ম্যাথিউ ম্যাগুয়েরের (Mathew Maguire) প্রস্তাবিত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবারে শ্রমিক দিবস পালনের জন্য সিলমোহর দেওয়া হয়। 

অন্যদিকে, ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম (Amsterdam) শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে ১লা মে - তে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করার আহ্বান জানানো হয়। 

এই ঘটনার পর বিশ্বের বহু দেশে মে মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ১লা মে - কে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জাতীয় ছুটি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দিনটি পূর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্র, চীন, কিউবা সহ ভারত ও বহু দেশে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালিত হয়। এমনকি বেশ কয়েক দেশে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সামরিক কুচকাওয়াজ। 

প্রসঙ্গত, ভারতে প্রথম শ্রমিক দিবস পালন করা হয় ১৯২৩ সালে চেন্নাইয়ের (Chennai) মেরিনা বিচে (Marine Beach) হিন্দুস্তান লেবার কিষান পার্টি দ্বারা (Hindustan Labour Kisan Party)। এছাড়াও একই দিন ভারতে পালন করা হয় মহারাষ্ট্র দিবস (Maharashtra Divas) ও গুজরাট দিবসও (Gujrat Divas)।

প্রত্যেক বছরই এই দিনটি বিশ্বজুড়ে একটি নির্দিষ্ট থিম (International Worker's Day Theme) বা প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে পালন করা হয়।

  • ২০১৯ সালের শ্রমিক দিবসের প্রতিপাদ্য | 2019 International Worker's Day Theme : সকলের জন্য উপযুক্ত পেনশন, সামাজিক অংশীদারদের ভূমিকা (Sustainable Pension for all and the Role of Social Partners ) ।
  •  ২০২০ ও ২০২১ সালের শ্রমিক দিবসের প্রতিপাদ্য | 2020 and 2021 International Worker's Day Theme : কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রাখা (Maintaining safety and security at the workplace)। 

  • ২০২২ সালের শ্রমিক দিবসের প্রতিপাদ্য | 2022 International Worker's Day Theme : শিশু শ্রম বন্ধ করার জন্য সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা (Universal Social Protection to End Child Labor)।
  •  ২০২৩ সালের শ্রমিক দিবসের প্রতিপাদ্য | 2023 International Worker's Day Theme : সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করা (Uniting Workers for Social and Economic Advancement)