লাইফস্টাইল

World Laughter Day 2023 | জানুন বিশ্ব হাসি দিবসের গুরুত্ব!

World Laughter Day 2023 |  জানুন বিশ্ব হাসি দিবসের গুরুত্ব!
Key Highlights

হাসি কীভাবে ভালো রাখে শরীর। কেনই বা পালন করা হয় বিশ্ব হাসি দিবস। জানুন হাসি দিবসের বিস্তারিত।

গোটা বিশ্বে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে প্রতি বছর মে মাসের প্রথম রবিবার পালন করা হয় বিশ্ব হাসি দিবস (World Laughter Day)। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে এই দিবস পালন করা হবে ৭ই মে।  এই দিবসের খুব গুরুত্বপূর্ণ না মনে হলেও এর পিছনে রয়েছে ইতিহাস, মাহাত্ম। কেবল তাই নয়, হাসি কীভাবে আপনার শরীর ও মনকে  ভালো রাখবে জানুন সেই বিষয়েও।

খুব প্রশংসিত না হলেও হাসি বিশ্বের অন্যতম ওষুধ বলে মনে করেন চিকিৎসক মহল। হাসি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে (Immune System)  শক্তিশালী করে, মন মেজাজ ভালো রাখে, রক্ষা করে মন ব্যথা ও স্ট্রেসের (Stress) ক্ষতিকর প্রভাব থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা প্রায়ই দেখে থাকি, যে ব্যক্তি বেশি হাসেন তিনি নাকি দীর্ঘজীবী হন। তবে এই বিষয় সমীক্ষা অনুযায়ীও প্রমাণিত। জানা গিয়েছে, যে ব্যক্তি অনেক বেশি হাসেন তিনি দীর্ঘজীবনের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর এবং সুখী জীবন  লাভ করে থাকেন। যার ফলে হাসির গুরুত্ব বোঝাতে বিশ্বের ৭০টি দেশে প্রতি বছর পালন করা হয় বিশ্ব হাসি দিবস।

বিশ্ব হাসি দিবসের ইতিহাস History of World Smile Day : 

বিশ্ব হাসি দিবস প্রথম পালন করা হয় ভারতে (India)। ১৯৯৮ সালে ১০ই মে ভারতের মুম্বই (Mumbai) শহরে এর সূচনা বিশ্বব্যাপী হাসি যোগ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ মদন কাটারিয়া (Dr. Madan Kataria)-র হাত ধরে। কোনও ব্যক্তির মুখের ভাবভঙ্গি বা প্রতিক্রিয়া অনুমান দ্বারা সেই ব্যক্তির আবেগের উপর কী প্রভাব পড়ছে তা জানার আগ্রহ থেকেই হাসি যোগ আন্দোলন শুরু করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন পারিবারিক ডাক্তার ডঃ কাটারিয়া।

বিশ্ব হাসি দিবস পালন করার জন্য ও মন ভালো রাখতে বিশ্ব জুড়ে তৈরী হয় অসংখ্য লাফটার ক্লাব (laughter club)। এই প্রকার ক্লাবে সাধারণত গান, নাচ এবং হাসির প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও  "হো হো, হা-হা-হা" এবং "খুব ভাল, খুব ভাল, ইয়া!" প্রভৃতি চিৎকার করে বারবার বলা হয়ে থাকে, যা ধীরে ধীরে পরিণত হয় হাসিতে।

হাসির স্বাস্থ্য উপকারিতা | Health Benefits of Laughter : 

প্রতি বছর বিশ্ব হাসি দিবস পালন করেন হাজার হাজার মানুষ। পূর্বত এই বিষয়কে গুরুত্ব না দেওয়া হলেও বর্তমানে প্রায় সকল চিকিৎসকরাই বলছেন, হাসি মন-মেজাজের সঙ্গে ভালো রাখে শরীরও। মজার সিনেমা দেখেই হোক বা কোনও মজার জোক (joke) বা মজার ঘটনা, কীভাবে হাসি শরীরকে ভালো রাখে আসুন জেনে নেওয়া যাক।

১. এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণ | Release of Endorphins : 

এন্ডোরফিন হল আপনার শরীরের মধ্যে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক (Pain Killer)। যা আপনার শরীরে মুক্ত হয় হাসলে। এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমানোর সঙ্গে সঙ্গে মনকে করে তোলে খোশমেজাজী।

২. শ্বেত রক্ত কণিকার বৃদ্ধি | Boosts T-Cells :

টি কোষ হল ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ, যা অস্থি মজ্জার স্টেম কোষ থেকে বিকাশ করে। এই কোষগুলি শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। আমরা যখন হাসি তখন এই কোষ আমাদের শরীরে আরও বেশিভাবে সক্রিয় হয়। হাসি সঙ্গে সঙ্গে এই কোষগুলিকে জীবিত করে, যা সাহায্য করে শরীর ও মন ভালো রাখতে।

৩. কার্ডিয়াক স্বাস্থ্যের উন্নতি | Improve Cardiac Health :

বহু চিকিৎসক হাসিকে একটি ব্যতিক্রমী কার্ডিও ওয়ার্কআউট (cardio workout) হিসেবে বিবেচিত করে থাকেন। বিশেষত যে সকল ব্যক্তি অসুস্থ এবং কোনও রকম আঘাত বা অসুস্থতার কারণে অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ করতে সক্ষম নন, তাদের ক্ষেত্রে হাসি কাজ করে ম্যাজিকের মতো। ধীর থেকে মাঝারি গতিতে হাঁটার সময় যে পরিমান ক্যালোরি ক্ষয় (calories burn) হয় সেই পরিমান ক্যালোরি ক্ষয় করতে সক্ষম হাসি।

৪. স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা হ্রাস | Reduced Stress Hormone Levels:

বর্তমানে কম বয়সী থেকে শুরু করে বেশি বয়সী, প্রায় সকলেই নানান কারণে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস (Stress)-এ ভুগে থাকি। কারোর পড়াশোনার চাপ, তো কারোর আবার কাজের চাপ, যা ধীরে ধীরে কুড়ে খায় আমাদের মন এমনকি শরীরও। অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে দেখা দিতে পারে নানান শারীরিক ও মানসিক রোগ। তবে এই ভয়ঙ্কর জিনিসের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন খুব সহজ উপায়ে। স্ট্রেস হরমোনের (Stress hormone) মাত্রা হ্রাস করতে বড় অস্ত্রের মতো কাজ করে হাসি। 

 ৫. রক্তচাপ কমায় | Lower Blood Pressure :

যাদের রক্তচাপ বেশি তাদের ক্ষেত্রে সব সময়ই একটা শারীরিক অসুস্থতার আশঙ্কা থাকে। বিশেষত ভয় থাকে স্ট্রোকের (stroke)। যার ফলে নিয়মিত খেতে হয় একগাদা ওষুধ। তবে কোনোরকম টাকা খরচ না করেই একটু হাসি-খুশি থেকে ও বন্ধু বান্ধবদের সাথে খোশ মেজাজে থেকেই কমাতে পারেন আপনার অতিরিক্ত রক্তচাপ। হাসি শরীরের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে যা রক্ষা করে হার্ট অ্যাটাক (heart attack) বা স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে।

এছাড়াও হাসি আপনাকে ইতিবাচক ব্যক্তিতে পরিণত করতে পারে । সুস্থ, স্বাভাবিক, সঠিক ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করে হাসি।

শরীরের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনকেও সুস্থ রাখা দরকার। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোনও ব্যক্তির মন ভালো না থাকলে, মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকলে বা মানসিকভাবে আঘাত পেলে একটা সময় পর তার শরীরেও প্রভাব পড়তে শুরু করে। হাসি মনকে ভালো রাখার সঙ্গে শরীরকেও রাখে সুস্থ। আর এই সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই প্রতি বছর হাসি দিবস পালন করা হয়ে থাকে বিশ্ব জুড়ে। এদিন বহু জায়গাতেই দেখা যায় লাফটার ক্লাব গুলি মিছিলের মাধ্যমে এবং নানান হাসির ব্যামের মাধ্যমে সচেতন করছেন। এবছর হাসি দিবসে সেই ক্লাবগুলিতে যোগ দিন আপনিও। মন ভালো রাখুন হাসতে হাসতে।