Kasai Kali । কেন মাংসের দোকানে হয় কালীপুজো?কীভাবে কলেজ স্ট্রিটের মাংসের দোকান থেকে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো কসাই কালীর পুজো?
অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলায়, সাধারণ মাংসের দোকান থেকে কেনা মাংস হিন্দুদের গ্রহণ করার নিয়ম ছিল না। কেবলমাত্র দেবতার কাছে বলির পরই হিন্দুরা মাংস খেতে পারতো। ভোজনরসিক বাঙালি উৎসবের মরশুম ছাড়া মাংস খেতে পারছিল না। এদিকে ঘন ঘন বলি দেওয়ার মতো আর্থিক স্বচ্ছলতাও তখন সকলের ছিল না। এই 'সমস্যা'র সুরাহা করেন গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। গোপাল ‘পাঁঠা’র আদেশে রাতারাতি গজিয়ে উঠলো কালীমন্দির লাগোয়া কিছু মাংসের দোকান। কালী মূর্তিকে সাক্ষী করেই বিক্রি হতে লাগলো ‘প্রসাদী মাংস’।
কলকাতার বিভিন্ন মাংসের দোকানে নিয়মিত পুজো হয় কালীঠাকুরের। মাকে ধুপধুনো দেখিয়ে বেচাকেনা শুরু করেন বিক্রেতারা। কিন্তু কেন মাংসের দোকানে করা হয় পুজো? কে ই বা প্রচলন করলেন এই অদ্ভুত নিয়মের? চলুন জানা যাক।
বউবাজারের মলঙ্গা লেনের বাসিন্দা গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায় । তার বাবার কলেজ স্ট্রিটে একটি মাংসের দোকান ছিল। বংশ পরম্পরায় এই দোকান চালানোর ভার পরে তার ওপর। তখনই সকলের কাছে তার ডাকনাম হয়ে যায় 'পাঁঠা’। জনশ্রুতি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় নাকি ভালবেসে 'গোপাল পাঁঠা' নামে ডাকতেন তাকে। পুলিশ এর ‘হিস্ট্রি শিটে’ তার সম্পর্কে লেখা আছে তিনি ' লিডার অফ দি লিডার্স', কলকাতার বেতাজ বাদ্শা। এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনই প্রথম মাংসের দোকানে কালীমূর্তির পুজো শুরু করেন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলায়, সাধারণ মাংসের দোকান থেকে কেনা মাংস হিন্দুদের গ্রহণ করার নিয়ম ছিল না। এই মাংসকে বলা হতো 'বৃথা মাংস'। কেবলমাত্র দেবতার কাছে বলির পরই হিন্দুরা মাংস খেতে পারতো। আর এখানেই শুরু হলো সমস্যা। ভোজনরসিক বাঙালি পুজো কিংবা উৎসবের মরশুম ছাড়া মাংস খেতে পারছিল না। এদিকে ঘন ঘন বলি দেওয়ার মতো আর্থিক স্বচ্ছলতাও তখন সকলের ছিল না। এই 'সমস্যা'র সুরাহা করেন গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। গোপাল ‘পাঁঠা’র আদেশে রাতারাতি গজিয়ে উঠলো কালীমন্দির লাগোয়া কিছু মাংসের দোকান। নিজের দোকানেই প্রথম কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করলেন গোপালচন্দ্র। অন্যরাও তার দেখানো পথ অনুসরণ করলো। তার দাপটে এ নিয়ে আপত্তি করতে পারলো না কেউই। কালী মূর্তিকে সাক্ষী করেই বিক্রি হতে লাগলো ‘প্রসাদী মাংস’। এই কালীই পরিচিত হলেন কসাইদের কালী বা 'কসাই কালী' নামে।
বছরের প্রতিটা দিন পুজো হলেও ফি বছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় গোপাল পাঁঠার কলেজ স্ট্রিটের দোকানের পুজোতে গড়া হয় নতুন মূর্তি। বছরের পর বছর একই কুমোর পরিবারের স্টুডিয়ো থেকে আসে কালীমূর্তি। প্রতি বছরই নতুন গয়নায় সেজে ওঠেন মা। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছে বিশাল অন্নকূটের। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে পুজোর তোড়জোড়। বিসর্জনের দিন তরবারি সহযোগে মিছিল করে দেবীমূর্তিকে ভাসান দেওয়া হবে রীতি মেনে।