Weather | হিমাচলে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩৭! একাধিক স্থানে লাল সতর্কতা! দিল্লিতে উদ্ধার করা হলো ৪১ হাজার নাগরিককে!
টানা বৃষ্টিতে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে যমুনার জল। হাজার হাজার বাসিন্দাদের উদ্ধার করলেও নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু ত্রাণসামগ্রী।হিমাচলে এখনও আটকে ৩০০ এরও বেশি পর্যটক।
প্রবল বর্ষার জেরে বিধ্বংস উত্তর ভারত (North India)। ক্রমাগত বর্ষার ফলে হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) নদীগুলির জলস্তর বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। লাগাতার চলেছে প্রকৃতির ধ্বংসলীলা। কয়েকদিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৭ জনের। হিমাচলে আটকে প্রায় ৩০০ জন পর্যটক।
বেশ কয়েকদিন ধরেই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা, ভূমিধসের কারণে খবরের শিরোনামে রয়েছে হিমাচলপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে হিমাচল প্রদেশের বন্যা এবং ভূমিধসের চিত্র। ভারতের আবহাওয়া দফতর (IMD) সূত্রে খবর, আগামী ২৪ ঘন্টা সোলান (Solan), সিমলা (Shimla), সিরমাউর (Sirmaur), কুল্লু (Kullu), মান্ডি (Mandi), কিন্নর (Kinnar) এবং লাহুলে (Lahul) খুব ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে লাল সতর্কতা (Red Alert) জারি করা হয়েছে। এছাড়াও, উনা (Una), হামিরপুর (Hamirpur), কাংড়া (Kangra) এবং চাম্বাতে (Chamba) জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা (Orange Alert)। জানা গিয়েছে, আগামী ২৪ ঘন্টায় মান্ডি, কিন্নর এবং লাহুল-স্পিতিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
হিমাচলপ্রদেশ প্রশাসন সূত্রে খবর, লাগাতার বৃষ্টির জেরে হিমাচলের একাধিক জায়গায় তৈরি হয়েছে ধস। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৮০০টির বেশি রাস্তা। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে পরিবহনে। জানা গিয়েছে, হিমাচল রোডওয়েজ ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (Himachal Roadways Transport Corporation) ১ হাজার ২৫৫টি রুটের বাস পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও ধসের জেরে একাধিক জায়গায় আটকে রয়েছে ৫৭৬টি বাস। বন্ধ হয়েছে চণ্ডীগড়-মানালি জাতীয় সড়ক (Chandigarh-Manali National Highway), বন্ধ সিমলা-কিন্নর সড়ক (Shimla-Kinnaur Road)। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মঙ্গলবার পর্যন্ত সিমলা-কালকা রুটের টয়ট্রেন (Shimla-Kalka Toy Train) চলাচলও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই দুর্যোগের ফলে বেশ কয়েক এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছে বলে খবর।
টানা বৃষ্টি ও ধসের কারণে এবং পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় হিমাচলের বেশ কয়েকটি এলাকায় আটকে রয়েছেন অসংখ্য পর্যটকরও। লাহৌল (Lahaul), স্পিতি (Spiti), চান্দেরতাল (Chandertal), পাগল নালা (Pagal Nala) সহ বেশ কয়েকটি স্থানে প্রায় ৩০০ জনের বেশি পর্যটক আটকে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই আটকে পড়া পর্যটক এবং স্থানীয়দের উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (National Disaster Response Force)। হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু (Himachal Chief Minister Sukhwinder Singh Sukhu) জানিয়েছেন, উনা জেলার লালসিঙ্গি (Lalsingi) এলাকায় একটি বস্তি থেকে ৫১৫ জনের বেশি শ্রমিককে উদ্ধার করেছে হিমাচল পুলিশ। পাশাপাশি এই পরিস্থিতে হিমাচল প্রদেশে জুরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বিভাগগুলির সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করে অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ভয়াবহ অবস্থা রাজধানী দিল্লিরও। প্রবল বৃষ্টিপাতের জন্য যমুনা (Yamuna) নদীর জল বিপজ্জনক সীমার উপর দিয়ে বইছে। কেন্দ্রীয় জল কমিশন (CWC) এর রিপোর্ট অনুসারে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত যমুনা নদীর জল বিপদসীমা ২০৫.৩৩ মিটার অতিক্রম করে ২০৬.৩২ মিটার দিয়ে বইছে। ইতিমধ্যেই, গত তিনদিনে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আর যাতে প্রাণহানি না ঘটে তাই নীচু এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে নর্দান রেলওয়ের বেশ কিছু ট্রেন, বন্ধ করা হয়েছে সড়কপথে যান চলাচলও।
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় সেই নিয়ে আলোচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Delhi Chief Minister Arvind Kejriwal) বৈঠকে বসেন। কেজরিওয়াল জানান, ৪০ বছর পর এরকম বৃষ্টিপাত হল। তাই এত পরিমাণ বৃষ্টির জল ধরার মতো ড্রেনেজ সিস্টেম নেই। তবে ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় যমুনা নদী সংলগ্ন নীচু এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৪১ হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাসিন্দাদের সরানো হতে পারে। তবে গতকাল অর্থাৎ সোমবারই প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে প্রায় গোটা দিল্লি। ফলে জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু ত্রাণসামগ্রী।
কয়েকদিন ধরে রাজধানী দিল্লিতে যে পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে তার সম পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ৪১ বছর আগে। এমনকি দিল্লিতে ৫৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা গোটা দেশের বৃষ্টির ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। কিন্তু হঠাৎ এই বছর এতো বৃষ্টি কেন? আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, দু’টি কারণে এই প্রবল বৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত,গুজরাটের ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয়ত,মৌসুমি বায়ুর মিথস্ক্রিয়া। আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রায় ৫৯ শতাংশ এবং মধ্যভারতে ৮ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। তবে, উপদ্বীপ অঞ্চলে ২৩, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে এখনও ১৭ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।