Gravity Hole | ভারত মহাসাগরে খোঁজ মিললো 'গ্র্যাভিটি হোলে'র! গহ্বরের সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করলেন দুই ভারতীয় গবেষক!
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স দ্বারা ভারত মহাসাগরে আবিষ্কার হলো দৈত্যাকার গহ্বর 'গ্র্যাভিটি হোলে'র। যার ভৌগোলিক নাম 'ইন্ডিয়ান ওশেন জিওয়েড লো' ।
গোটা বিশ্বে এখনও অনেক বিষয়ই মানব জাতির অজানা। জলস্তর থেকে শুরু করে স্থলভাগ, মহাকাশ সব ক্ষেত্রেই এই অজানাগুলি জানার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। এবার এরকমই এক চেষ্টায় মিললো সুফল। এই আবিষ্কারের ফলে পৃথিবী (Earth) সংক্রান্ত অন্যান্য অনেক অজানা তথ্যও সামনে আসতে বলে ধারণা। ভারত মহাসাগরে (Indian Ocean) পাওয়া গিয়েছে এমন এক 'গহ্বর'।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (Indian Institute of Science) জানিয়েছে, ভারতীয় মহাসাগরে একটি বিশালাকার 'গ্র্যাভিটি হোল' (Gravity Hole) বা মাধ্যাকর্ষীয় গহ্বরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যার ভৌগলিক নাম দেওয়া হয়েছে, 'ইন্ডিয়ান ওশেন জিওয়েড লো' (Indian Ocean Geoid Low)। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) ঠিক দক্ষিণে ৩০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থিত ওই দৈত্যাকার গহ্বরটি। সম্প্রতি, একটি স্যাটেলাইট (Satellite) দ্বারা পাওয়া একটি ছবির মারফত এই গহ্বরটির সম্পর্কে জানা গিয়েছে। ভারত মহাসাগরের যে জায়গায় গহ্বরটি রয়েছে, গোটা বিশ্বের নিরিখে সেখানে পৃথিবীর অভিকর্ষ বল অত্যন্ত দুর্বল থাকায় সমুদ্রের জলস্তর ১০০ মিটারেরও নীচে।
তবে কীভাবে এই গহ্বরের সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে ধোঁয়াশা কাটালেন দুই ভারতীয় গবেষক। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের ভূ-বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক, দেবাঞ্জন পাল (Debanjan Pal) এবং সেখানকার অধ্যাপক আত্রেয়ী ঘোষ (Atreyi Ghosh) জানান, মেসোজোয়িক যুগে (Mesozoic Era) লরেশিয়া (Laurasia) এবং গন্ডোয়ানা (Gondwana) উপমহাদেশের মধ্যবর্তী স্থানে ছিল টেথিস মহাসাগর (Tethys Ocean)। তবে পরবর্তী সময়ে স্থলভাগ জুড়ে গেলে সেটির অবলুপ্তি ঘটে। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অনুমান, প্রায় দু’কোটি বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলে। তৎকালীন সময়ে টেথিস মহাসাগর যখন পৃথিবীর কোলে হারিয়ে যেতে থাকে তখন প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়। যার জেরে টেথিস মহাসাগরের কিনারা বরাবর মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে গলিত শিলা, লাভা, ছাই। এর ফলে সেই জায়গার মধ্যিখানে বেশ কিছুটা জায়গা খালি থেকে যায়।
‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ জার্নালে (Geophysical Research Letters) এই বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করা আছে। জানা গিয়েছে, ওই গহ্বরটি ১৯৪৮ সালে আবিষ্কৃত হয়। যা আবিষ্কার করেন ওলন্দাজ ভূ-বিজ্ঞানী ফিলিক্স ভেনিং মিনেজ (Felix Venning Minaj)। তারপর কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সেটির অবস্থান এবং আয়তন নির্ধারণ করা হয়। তবে ওই গহ্বরের সৃষ্টির কারণ নিয়ে এতদিন ছিল ধোঁয়াশা। কারণ, ওই জায়গায় কেন অভিকর্ষ বল দুর্বল তা গবেষণার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়কে ব্যবহার করা হচ্ছিলো।
গবেষকদের দাবি, ছোটবেলায় আমরা প্রায় সকলেই পড়েছিলাম পৃথিবীর আকার কমলালেবুর মতো। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ে আরও প্রমাণ মিলেছে। জানা গিয়েছে, পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ ঈষৎ চাপা ঠিকই, কিন্তু বাকি অংশ কিন্তু নিখুঁত গোল নয়। বরং এবড়োখেবড়ো। যার সব থেকে বড় প্রমাণ হলো ভারত মহাসাগরের বুকে আবিষ্কৃত এই দৈত্যাকার গহ্বর। গবেষকরা জানিয়েছেন, ঘনত্ব এবং ভর বন্টনের তারতম্যের কারণে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণীয় ক্ষেত্র এক এক স্থানে এক এক রকম। ঘনত্ব এবং ভরের এই বৈচিত্রগুলি মহাকর্ষীয় আকর্ষণে পার্থক্য তৈরি করে। মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে এই অসামঞ্জস্যতার ফলেই পৃথিবীর পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির (Gravitational Force) পার্থক্য ঘটে। যদিও এই 'গ্র্যাভিটি হোল' বিষয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
- Related topics -
- দেশ
- ভারত
- শ্রীলঙ্কা
- ভারতীয় মহাসাগর
- বিজ্ঞান
- বিজ্ঞানী
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- সমু্দ্র বিজ্ঞানী
- প্রযুক্তি