Lok Sabha Election 2024 | 'হিংসার ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না'! বঙ্গে এসে রাজ্য পুলিশকে কড়া বার্তা নির্বাচন কমিশনের! দেওয়া হলো ভোট সংক্রান্ত গাইডলাইনও!
লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ যাতে হিংসাহীনভাবে সম্পন্ন হয় তার জন্য রাজ্য পুলিশকে কড়া বার্তা দিলো নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও লোকসভা ভোটে নজরদারির জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির দ্বারস্থ হতে পারে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আধার কার্ড না থাকলে বিকল্প পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট দিতে পারবেন বলেও জানানো হয় নির্বাচন কমিশনের তরফে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তারিখ (lok sabha election 2024 date) ঘোষণা হয়নি এখনও। তবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন। লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ (Lok Sabha Election 2024) এর আগে বঙ্গে এসেছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সাংবাদিক বৈঠকের আগে একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। সূত্রের খবর, এবার লোকসভা ভোটে নজরদারির জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির দ্বারস্থ হতে পারে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নিয়ে একটি পোর্টাল তৈরি করার কথা জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। পাশাপাশি, ভোটে কোনও কালো টাকা বা অবৈধ লেনদেন হচ্ছে কিনা সেই বিষয়টির উপর নজরদারি চালাতে পারে ইডি এবং আয়কর দফতর। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের স্পষ্ট বার্তা, রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সুনিশ্চিত করতে হবে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনকেই। এছাড়াও সম্প্রতি যাদের আধার কার্ড (Aadhar Card) নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, তারা বিকল্প পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট দিতে পারবেন বলেও জানানো হয় নির্বাচন কমিশনের তরফে।
বঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন সুনিশ্চিত করতে রাজ্য পুলিশকে কড়া বার্তা নির্বাচন কমিশনের!
পশ্চিমবঙ্গে অবাধ এবং সুষ্ঠু লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Election) করানোর জন্য মঙ্গলবার একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের ফুলবেঞ্চ। একই সঙ্গে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশকে। কমিশনের সাফ বার্তা, নির্বাচনের সময় যদি কোথাও গোলমাল হয় সেটার দায় আসবে রাজ্য পুলিশের ডিজির উপরই। সঙ্গে নির্বাচনের আগে হিংসা নিয়ে ডিএম, এসপিদের কড়া নির্দেশ দিল কমিশন।নির্বিঘ্নে লোকসভা নির্বাচনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা ও ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে বৈঠকের পর কড়া নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারপর সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, হিংসামুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, নির্বাচনে হিংসা নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়া হবে। কোনও হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। রাজ্যে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য পুলিশকেই ।যদি কোনও গোলমাল হয়, তাহলে তার দায়ী থাকবেন ডিজিপি।
কড়া নির্দেশ দিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের গাইডলাইন!
রাজ্য পুলিশকে কড়া বার্তা দেওয়া ছাড়াও লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ (Lok Sabha 2024) এর জন্য গাইডলাইনও দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনে হিংসার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলা, ভোটারদের এবং প্রার্থীকে হুমকি যাতে দেওয়া না হয় তা নিশ্চিত করা,কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central Force)কে স্পর্শকাতর এলাকায় পাঠানো, রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার পরিকল্পনা জানাতে হবে। এছাড়াও পর্যবেক্ষকদের বুথ পরিদর্শন করতে হবে, পোলিং এজেন্টদের জিজ্ঞাসা করতে হবে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা, আর সবটাই প্রকাশ্যে করতে হবে, ভোটার স্লিপ সময়ে দিতে হবে, কোনও সমস্যা যেন না হয়, তার জন্য প্রতিনিয়ত চেকিং বাড়াতে হবে, ছাপ্পা ভোটারদের উপর নজর রাখতে হবে, ধরা পড়লে আইনত পদক্ষেপ করতে হবে, অভিযোগ পেলেই সাড়া দিতে হবে। কমিশন জানিয়েছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha 2024) এর জন্য ত্রিস্তরীয় বলয় থাকবে ইভিএম নিরাপত্তায় স্ট্রং রুমে। ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি চলবে। কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে কাজে লাগানো যাবে না। স্বচ্ছতার সঙ্গে জনসভা করার অনুমতি দিতে হবে মাঠ,নানা জায়গায়। ভু্য়ো খবরে নজর রাখতে হবে। জেলাস্তরে সোশ্যাল মিডিয়া সেল রাখতে হবে ভুয়ো খবরের জবাব দিতে।
ভোট নজরদারিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির শরণাপন্ন নির্বাচন কমিশন!
মঙ্গলবার একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নিয়ে একটি পোর্টাল তৈরি করার কথাও জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন,সব কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নিয়ে একটি পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনে আর্থিক দুর্নীতি আটকাতে এই পোর্টালের সাহায্য নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকের আগে ২২টি কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন।নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ভোটে কালো টাকা এবং অবৈধ টাকার লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারি চালাবে ইডি কিংবা আয়কর দফতরের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও ।রাজ্যে এ বার ৮০ হাজারেরও বেশি বুথে ভোটগ্রহণ হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। এ বার নতুন ভোটারের সংখ্যা ১৫ লক্ষ ২৫ হাজার। রাজ্যের অন্তত ৫০ শতাংশ বুথে নজরদারি চালাতে সরাসরি ‘ওয়েব কাস্টিং’ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পেলে সাধারণ নাগরিকও ‘সিভিজিল’ অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছে কমিশন।
মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য এবং অভাব-অভিযোগ শুনেছে কমিশন। সর্বদল বৈঠকে ছিল তৃণমূল-সহ মোট আটটি দল। সাংবাদিক বৈঠকে দলগুলির তরফে যে সমস্ত অভাব অভিযোগ জমা পড়েছে, সেগুলির উল্লেখ করেন রাজীব। অর্থশক্তির পাশাপাশি পেশিশক্তির ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। এই সূত্রেই কমিশনের তরফে জানানো হয়, ভোট পূর্ববর্তী এবং ভোট পরবর্তী হিংসা রোখার চেষ্টা করবে তারা। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, একটি দল বাদে সব দলই অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central Force) মোতায়েনের জন্য দাবি জানিয়েছে।
আধার না থাকলে বিকল্প পরিচয়পত্র দেখিয়ে দেওয়া যাবে ভোট!
সম্প্রতি রাজ্যের বহু জেলায় অনেক বাসিন্দার আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আম জনতা। তবে আধার না থাকলেও ভোট দেওয়া যাবে বলে জানালো নির্বাচন কমিশন। কমিশনের ঘোষণা, আধার না থাকলেও ভোট দিতে কোনও সমস্যা হবে না। বিকল্প পরিচয়পত্র দেখিয়ে দেওয়া যাবে ভোট। সোমবার সর্বদল বৈঠকের পর মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, আধার কার্ড না থাকলেও একাধিক বিকল্প পরিচয়পত্র ব্যবহার করা যাবে ভোট দেওয়ার জন্য। এই প্রসঙ্গে কমিশনার জানান, ভোট দেওয়ার জন্য আধার কার্ডই লাগবে এমন কোনও বিষয় নেই। ভোটার স্লিপ ৫ থেকে ৬ দিন আগে পেয়ে যাবেন ভোটাররা। যদি কারও আধার কার্ড না থাকে তাহলেও তিনি ভোট দিতে পারবেন। যাঁদের ভোটার কার্ড নেই, তাঁদের কাছে আরও ১২ থেকে ১৩ রকমের ডকুমেন্ট আছে। সেই সব দেখিয়েই ভোট দেওয়া যাবে। আধার বাধ্যতামূলক নয়। যদি ভোটার স্লিপ না থাকে তাহলেও ওই একই ডকুমেন্ট দেখিয়ে ভোট দেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, প্রথম ভোট দিচ্ছেন ১৫ লাখ ২৫ হাজার। বাংলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৭.৫৮ কোটি। তার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৩.৮৫ এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩.৭৩ কোটি। প্রসঙ্গত,বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য এবার বাড়িতেই ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে কমিশনের তরফে। এদিন রাজীব কুমার জানান, প্রতিবন্ধীদের জন্য এবার প্রতিটি বুথেই হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যদি কেউ ৪০ শতাংশের বেশি প্রতিবন্ধী হন সেক্ষেত্রে তিনি বাড়িতে বসেই ভোট দিতে পারবেন। পাশাপাশি ৮৫ বছরের বেশি বয়স্ক যারা তাঁরাও ভোট দিতে পারবেন বাড়ি থেকেই।
প্রতিটি এলাকায় অবজারভার রাখার পাশাপাশি হেল্পলাইন ব্যবস্থা, বুথে বুথে সিসিটিভি, অবৈধ আর্থিক কার্যকলাপ রুখতে অ্যাপ, চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা, জেলায় জেলায় কন্ট্রোল রুম, প্রতিটি জায়গায় পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তারিখ (lok sabha election 2024 date) প্রকাশের আগেই নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা দেখে বলাই চলে, কোনওভাবেই যে হিংসার ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না, সেই বিষয়ে স্পষ্ট নির্বাচন কমিশন।