Mohiner Ghoraguli Bapi Das | এক অধ্যায়ের সমাপ্তি! সুরলোকে চলে গেলেন 'মহীনের ঘোড়াগুলির' আদি ঘোড়া 'বাপি দা!
ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তাপস দাস ওরফে বাপি দা। প্রথম রক ব্যান্ড 'মহীনের ঘোড়াগুলি'র শেষ 'ঘোড়া' ছিলেন বাপি দা।
'ফিরবো বললে ফেরা যায় নাকি'..?কথাটা সত্যি করেই সুরলোকে চলে গেলেন 'মহীনের ঘোড়াগুলি'র (Mohiner Ghoraguli) আদি ঘোড়া 'বাপি দা' ওরফে তাপস দাস (Tapas Das-Bapi Da)। দীর্ঘদিন ধরে মারণ রোগ ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন 'বাপি দা'। তবে লড়াইয়ে জয় হলনা সংগীতশিল্পীর। ২৫সে জুন, রবিবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন 'মহীনের ঘোড়াগুলি'-ব্যান্ডের অন্যতম সঙ্গীতশিল্পী।
সালটা ১৯৭৫, বাংলায় তৈরি হল প্রথম রক ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলি (First Bengali Rock Band Mohiner Ghoraguli)। এরপর গান নয়, তৈরী হয়েছে ইতিহাস! দীর্ঘ ৪৭ বছর পরও একইরকম জনপ্রিয় তাঁদের গান। 'মহীনের ঘোড়াগুলি'-র প্রথম গান 'ভেসে আসে কলকাতা' লিখেছিলেন তাপস দাস ওরফে সবার প্রিয় বাপি দা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিভেছে মহীনের ঘোড়াগুলির প্রতিষ্ঠাতাদের দীপ। চিরকালের জন্য চলে গেলেন মহীনের শেষ সদস্য বাপি দাও। এদিন বাপিদার চলে যাওয়ায় শেষ হল এক অধ্যায়।
দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন বয়স ৬৫ এর শিল্পী। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই কোনও ক্ষেত্রেই সহজ হয়না। তবে 'বাপি দা'র জন্য যেন বেশিই কঠিন ছিল এই পথ। চিকিৎসার খরচ যোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছিল তাঁর পরিবারকে। প্রবীণ শিল্পীর চিকিৎসা খরচ যোগাতে এক জোট হয় এপার বাংলা-ওপার বাংলার সকল সংগীতশিল্পীরা। একজোট হয়েছিলেন রূপম ইসলাম (Rupam Islam) থেকে শুরু করে অর্ক মুখোপাধ্যায় (Arko Mukherjee), সাহানা বাজপেয়ী (Sahana Bajpaie), সিধু-সহ (Sidhu) সকলেই। শহরের বুকে আয়োজিত হয়েছিল কনসার্টেরও (Concert)। অসুস্থ অবস্থাতেই হুইলচেয়ারে বসে, নাকে রাইস টিউব লাগিয়ে মঞ্চে দেখা যায় 'বাপি দা'কে। এইভাবেই শো-ও করেন 'মহীনের আদি ঘোড়া'। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় প্রিয় 'বাপি দা'র এই যুদ্ধের ভিডিও। অনুরাগীরা সেই ভিডিও দেখে ভেসেছেন আবেগে, চোখে এসেছে জল। পরবর্তীকালে রূপম ইসলামের পোস্ট থেকে তৎপর হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার (West Bengal Government)। এসএসকেএম হাসপাতালে (SSKM Hospital) ভর্তি করা হয় বাপি দা'কে। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ আজ!
এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় বাপি দা'র চলে যাওয়ার এই মন খারাপের সংবাদ জানান রূপম ইসলাম। শেয়ার করেছেন প্রবীণ সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে কথোপকথনের কিছু মুহূর্ত। লিখেছেন, কত বাঙ্ময় মুহূর্তই রয়ে গেল, সচল হয়েই থেকে গেল গানজীবনের অনন্ত পথ চলা, থেমে গেল বললে ভুল হবে, মারাত্মক ভুল, বাপি দা সশরীরে না থাকলেও সর্বত্রই তিনি থাকবেন।
মহীনের ঘোড়াগুলির আদি ঘোড়া বাপি দা'র প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, বাপিদার মৃত্যুতে মর্মাহত তিনি। ভারতে বাংলার প্রথম রক ব্যান্ডের অংশ ছিলেন তিনি। তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। রাজ্য সরকার তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়েছিল। শিল্পীর স্ত্রী সুতপা ও তাঁর অনুরাগীদের জন্য সমবেদনাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
রবিবার সকাল থেকে মুখ ভার আকাশের। দিনের আলোতেও অন্ধকার ডেকে এনেছে কালো মেঘ। সকাল ৯টা নাগাদ অন্ধকার ছেয়ে গেলো বাংলা সংগীত জগতে তথা গোটা সংগীত জগতেও। শোকস্তব্ধ অনুরাগীরা, সংগীত প্রেমীরা। অনেকেই নিজের শোকবার্তা প্রকাশ করছেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। অনেকেই তুলে ধরছেন বাপি দা'র সই করা কাগজের ছবি। অনেকেই তুলে ধরছেন বাপি দা'র কনসার্টের ভিডিও। কোথাও যেন আশা ছিল আবারও ফিরে আসবেন রক শিল্পী, আবারও তাঁর গলায় গান শুনবে তিলোত্তমা। তবে তা আর হলো না।
বাপিদার গলায় 'ভালোবাসি জোৎস্না'-য় গান চিরকালীন হয়ে থাকবে। ফোনে, রেডিওতে বা 'শহরের উষ্ণতম দিনে' কারুর গলায় যখন ভেসে উঠবে 'মহীনের ঘোড়াগুলির' গান..তখনই সেই গানের সঙ্গে 'তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে' তারও দূর থেকে সুর মেলাবেন প্রিয় বাপি দা-ও। গানে, সুরে অমর হয়ে থাকবেন মহীনের আদি ঘোড়া।