Success Story Vicco | রান্নাঘর ছিল উৎপাদন ইউনিট, ঘরে ঘরে গিয়ে পণ্য বিক্রি! বর্তমানে কোটি টাকা আয়! জানুন Vicco-র সাফল্যের কাহিনী!

Tuesday, December 19 2023, 10:59 am
highlightKey Highlights

মুদির দোকানের ব্যবসা শুরু করেছিলেন ভিকোর প্রতিষ্ঠাতা কেভি পেনধারকর। পরে প্রসাধনীর ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। জানুন ভিকোর সাফল্যের কাহিনী।


নব্বইয়ের দশকে ভারতের যে সব প্রসাধনী বা সামগ্ৰী সংস্থা সাফল্যের শিখরে পৌঁছায় এবং সাধারণ জনগণের জীবনে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িয়ে পরে তার মধ্যে অন্যতম ভিকো (Vicco)। ভিকো নামটি নিলে ৯০ সালের মানুষরা গুনগুন করে উঠবেনই তাদের জিঙ্গেল। ভিকো হলুদের ক্রিম (Vicco Turmeric Cream), ভিকো ক্রিম (Vicco Cream), ভিকো টুথপেস্ট (Vicco Toothpaste),ভিকো ফেস ওয়াশ (Vicco face wash) সহ একাধিক পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করে ভিকো কোম্পানি।  ২০২২-এ শেষ হওয়া অর্থ বর্ষের হিসেব অনুযায়ী, এই কোম্পানির আয় ৫০০ কোটি টাকা। তবে সকলের পরিচিত এই ভিকো কোম্পানির সাফল্যের কাহিনী জানেন না অনেকেই। এক সময়ে মুদির দোকান চালাতেন ভিকোর প্রতিষ্ঠাতা কেভি পেনধারকর (K.V. Pendharkar)।

এক সময়ে ঘরে ঘরে বিক্রি করতে হয়েছে পণ্য সেখানে ২০২২-এ শেষ হওয়া অর্থ বর্ষের হিসেব অনুযায়ী ভিকোর আয় ৫০০ কোটি
এক সময়ে ঘরে ঘরে বিক্রি করতে হয়েছে পণ্য সেখানে ২০২২-এ শেষ হওয়া অর্থ বর্ষের হিসেব অনুযায়ী ভিকোর আয় ৫০০ কোটি

মুদির দোকান থেকে ভিকো :

Trending Updates

ভিকোর প্রতিষ্ঠাতা কেভি পেনধারকর (K.V. Pendharkar) তাঁর নিজ শহর মহারাষ্ট্রের নাগপুরে একটি মুদি দোকান চালাতেন। তবে শীঘ্রই তিনি সেখানে ব্যবসা বন্ধ করে মুম্বই ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিস্থাপন করার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে তিনি বান্দ্রা এবং শহরতলিতে বিভিন্ন ধরনের ছোট ব্যবসা পরিচালনা করেন। পরে পারেলে চলে যান পেনধারকর। যেখানে তিনি লক্ষ্য করেন সেখানের মানুষেরা অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ এবং বিদেশী প্রসাধনী পণ্যগুলি প্রচুর ব্যবহার করে। এরপরই সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নিজস্ব ব্র্যান্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তাঁর লক্ষ্য ছিল, রাসায়নিক মুক্ত কসমেটিক্স ব্র্যান্ড তৈরী করার। ১৯৫২ সালে পেনধারকর এই প্রসাধনী সংস্থার নাম দেন ভিকো। চার বছরের মধ্যেই তার কোম্পানি ভালো ব্যবসা করতে থাকে।

উৎপাদন ইউনিট-রান্নাঘর :

ভিকো (Vicco) কোম্পানি চালু করার আগে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন পেনধারকর। পাশাপাশি তিনি তাঁর শ্যালকের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছিলেন, যিনি আয়ুর্বেদিক ওষুধগুলি জানতেন। বাড়িতেই প্রথম আয়ুর্বেদিক পণ্য টুথ পাউডার তৈরি করেন পেনধারকর। ১৮টি আয়ুর্বেদিক উপাদান দিয়ে তৈরি এই  টুথপাউডার। ছেলেকে নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করেন পেনধারকর। পেনধারকরের নাতি সঞ্জীব জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের একটি তিন ঘরের বাড়ি ছিল। সেখানে রান্নাঘরটি ভিকোর প্রসাধনী উৎপাদন ইউনিটে পরিণত হয়েছিল। অন্যান্য ঘরগুলি পরিণত হয়েছিল গোডাউন এবং অফিসে।

১৯৫২ সালে ভিকো প্রতিষ্ঠা করে কেভি পেনধারকর বানান ১৮টি আয়ুর্বেদিক উপাদান দিয়ে তৈরি এই  টুথপাউডার
১৯৫২ সালে ভিকো প্রতিষ্ঠা করে কেভি পেনধারকর বানান ১৮টি আয়ুর্বেদিক উপাদান দিয়ে তৈরি এই টুথপাউডার

সৌন্দর্য সামগ্রী :

অল্প সময়ের মধ্যে, ব্র্যান্ড ভিকো গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালের দিকে, কেশবের ছেলে গজানন কোম্পানির দায়িত্বভার নিজের হাতে নেন। ভিকোর দায়িত্ব লাভ করে তিনি সৌন্দর্য এবং প্রসাধনী সামগ্রীও উৎপাদন শুরু করেন। কোম্পানিটি শীঘ্রই চালু উৎপাদন শুরু করে ভিকো হলুদের ক্রিম (Vicco Turmeric Cream),ভিকো ক্রিম (Vicco Cream), ভিকো ফেস ওয়াশ (Vicco face wash) এর মতো নানান সামগ্রী। এদিকে আরও সুখ্যাতি অর্জন করতে থাকে ভিকো টুথপেস্ট (Vicco Toothpaste), টুথ পাউডার। কোম্পানিটি আরও বেশ কিছু পণ্য যেমন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভিকো সুগার-ফ্রি পেস্ট, ভিকো হলুদ ফোম বেস মাল্টিপারপাস ক্রিম, ভিকো হলুদ তেল বেস অল পারপাস ক্রিম এবং ভিকো হলুদের ডাব্লুএসও ক্রিম-এর মতো আরও বেশ কিছু পণ্য চালু করে।

পরবর্তী বছরগুলিতে, সংস্থাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ৩৫টি দেশে পণ্যগুলি রপ্তানি করে বিদেশি বাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল। পাশাপাশি সৃজনশীল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে বাজারে একটি শক্ত পক্ত জায়গা তৈরি করে ভিকো। কোম্পানিটি তাদের কঠোর ' অ-প্রসাধনী ' পরিচয় বজায় রাখে। ১৯৭৮ সালে কেন্দ্রীয় আবগারি বিভাগ জোর দিয়েছিল যে ভিকো-এর পণ্যগুলি আয়ুর্বেদিক ওষুধ নয় এবং প্রসাধনী বিভাগের অধীনে রাখতে হবে। তবে ভিকো  দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেয়, যে তাদের পণ্যগুলি কঠোরভাবে আয়ুর্বেদিক। এই নিয়ে  দেওয়ানি আদালত , বোম্বে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে কয়েক দশক ধরে আইনি যুদ্ধ করে ভিকো। ২০০৩ সালে মামলাটি খারিজ করে হয়ে যায়। তবে নতুন সেন্ট্রাল এক্সাইজ ট্যারিফ অ্যাক্ট ১৯৮৫ এর বাস্তবায়নের সঙ্গে এই সমস্যাটি আবার উত্থাপিত হয় , যেখানে কোম্পানির পণ্যগুলি প্রসাধনী বিভাগের আওতায় আসে।

১৯৭১ সালে কেশবের ছেলে গজানন কোম্পানির দায়িত্বভার নিজের হাতে নেন এবং সৌন্দর্য সামগ্রী উৎপাদন শুরু করেন 
১৯৭১ সালে কেশবের ছেলে গজানন কোম্পানির দায়িত্বভার নিজের হাতে নেন এবং সৌন্দর্য সামগ্রী উৎপাদন শুরু করেন 

তবে বাজারে আসার পর জন সাধারণের মন কাড়তে থাকে ভিকো। পরবর্তীতে ভিকো আরও সাধারণ মানুষের মনে বসে যায় তাদের বিখ্যাত বিজ্ঞাপন জিঙ্গেলের জন্য।  " ভিকো টারমারিক , নাহি কসমেটিক , ভিকো টারমারিক আয়ুর্বেদিক ক্রিম " (ভিকো হল একটি হলুদ আয়ুর্বেদিক ক্রিম, এবং প্রসাধনী নয় )..এই শব্দধনী কানে এলেই বা এক টিভিতে এক বৃদ্ধ এক কামড়ে গোটা আখরোট ভেঙে ফেলছেন এই দৃশ্য দেখালেই বোঝা যায়, এটি ভিকোর প্রসাধনীর বিজ্ঞাপন।  ট্রাস্ট রিসার্চ অ্যাডভাইজরি দ্বারা পরিচালিত ব্র্যান্ড ট্রাস্ট রিপোর্ট ২০১২ অনুযায়ী, ভিকো ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে ২৪তম স্থানের অধিকারী। ব্র্যান্ড ট্রাস্ট রিপোর্ট ২০১৩-এ, ভিকো ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে ১৮তম স্থানে ছিল এবং পরবর্তীকালে, ব্র্যান্ড ট্রাস্ট রিপোর্ট ২০১৪ অনুসারে, ভিকো ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে ১৭তম স্থানের অধিকারী।

 ব্র্যান্ড ট্রাস্ট রিপোর্ট ২০১৪ অনুসারে, ভিকো ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে ১৭তম স্থানের অধিকারী
 ব্র্যান্ড ট্রাস্ট রিপোর্ট ২০১৪ অনুসারে, ভিকো ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে ১৭তম স্থানের অধিকারী

মুদির দোকানের ব্যবসা বন্ধ করে, রান্না ঘরে উৎপাদন তৈরী করে শুরু করা প্রসাধনী কোম্পানি কয়েক বছরের মধ্যে,  ৭০০ কোটি টাকার মূল্যে পৌঁছায়। আজ, কোম্পানিটি টুথপেস্ট, টুথ পাউডার, বিউটি ক্রিম, ফেসওয়াশ এবং নাইট ক্রিম সহ  ৪০ টিরও বেশি পণ্য উৎপাদন করে, যা সারা দেশে বিক্রি হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। ৩১ মার্চ ২০২২-এ শেষ হওয়া অর্থ বর্ষে কোম্পানির ৫০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ভিকো ল্যাবরেটরিজ বা বিষ্ণু ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল কোম্পানি ভারত-সহ ৪৫টি দেশে তাদের পণ্য রপ্তানি করে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File