Same Sex Marriage Hearing Supreme Court | সমলিঙ্গ বিবাহে আইনি স্বীকৃতি নয়! সন্তান দত্তক নিতে পারবেন কি সমকামী যুগলরা? সমপ্রেম নিয়ে একাধিক নির্দেশ!
সুপ্রিম কোর্টে সমলিঙ্গের বিবাহের শুনানিতে কার্যত সমলিঙ্গের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিলেন প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতিরা। সমলিঙ্গ যুগলের সহবাসে সম্মতি থাকলেও আইনিভাবে বিবাহ নিয়ে রায় দিলো না আদালত।সমপ্রেম নিয়ে একাধিক নির্দেশ দিলো আদালত|
সম্মতি দিয়েও মিললো না পুরো সম্মতি! সুপ্রিম কোর্টে সমলিঙ্গের বিবাহের শুনানি (Same Sex Marriage Hearing Supreme Court) নিয়ে কার্যত সমলিঙ্গের এই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিলো শীর্ষ আদালত। তবে সমলিঙ্গ বিয়ের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়নি। 'ব্যক্তি হিসেবে কারও বিবাহের অধিকারে নিষিদ্ধি করা যায় না', মঙ্গলবার, ১৭ই অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে সমলিঙ্গের বিবাহের শুনানি (Same Sex Marriage Hearing Supreme Court) এমনটাই জানানো হয় আদালতের তরফ থেকে। অর্থাৎ দুজন সমকামী ব্যক্তি নিজেদের ইচ্ছায় সহবাস করতে পারেন। স্বাধীনভাবে সেই সম্পর্ক উপভোগ করতে পারেন। কিন্তু আইনে কোথাও সমকামী বৈবাহিক স্বীকৃতি এখনও নেই। পাশাপাশি সমলিঙ্গের যুগলদের সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও সুখবর পেলেন না সমলিঙ্গের মানুষরা।
গত পাঁচ মাস ধরে একের পর এক শুনানি শেষে এদিন সুপ্রিম কোর্টে সমলিঙ্গের বিবাহের শুনানি (Same Sex Marriage Hearing Supreme Court) হয়। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের (Chief Justice DY Chandrachud) নেতৃত্বে গঠিত ৫ বিচারপতির বেঞ্চে এর শুনানি হয়। ৫ বিচারপতির মধ্যে ছিলেন বিচারপতি এস.কে কাউল (Justice S.K Kaul), বিচারপতি এস. আর ভাট (Justice S. R Bhat), বিচারপতি হিমা কোহলি (Justice Hima Kohli) ও বিচারপতি পি.এস নরসিমহা (Justice PS Narasimha)। সমলিঙ্গের বিবাহ সম্পর্কে শুনানিতে কেন্দ্র-সহ সব পক্ষের মতামত শোনার পর রায়দান স্থগিত রেখেছিল উচ্চ আদালত। তবে, আজ অবশেষে রায় ঘোষণা করল আদালত। এদিন প্রধান বিচারপতি শুনানিতে বলেন - বিশেষ বিবাহ আইনে বদল আনতে পারে সংসদ। আদালতে কোনও ধারা যুক্ত করলে তা হস্তক্ষেপ করা হবে।
দেশের খবর সম্পর্কে আরও পড়ুন : নভেম্বরের গোড়াতেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন! বিধানসভা নির্বাচন ২০২৩ সময়সূচী ঘোষণা করলো রাজ্য কমিশন !
সুপ্রিম কোর্টে সমলিঙ্গের বিবাহের শুনানি (Same Sex Marriage Hearing Supreme Court)তে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, সমলিঙ্গ সম্পর্কের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য কেন্দ্র যে কমিটি গড়েছে, এ বিষয়ে সেই কমিটির অগ্রসর হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, 'বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি কোনও অনড়, অটল বিষয় নয়। বিবাহে বিবর্তন আসে। ব্যক্তিগত স্তরে যে কোনও কাজকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত নয়। বিবাহ বর্তমানে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, আইন না থাকলে তা সম্ভব হত না। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টে রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি কউল বলেন, ‘বিশেষ বিবাহ আইনে সমলিঙ্গ মিলনকে অন্তর্ভুক্ত করার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ওই আইন পরিবর্তন করতে হলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’ অবিষমকামী মিলন এবং বিষমকামী মিলনকে এক দেখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি কউল। পাশাপাশি বিচারপতি ভট্ট তাঁর রায় পড়ে বলেন, ‘কোনও বিয়ের স্বীকৃতি আইন ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু বিয়ের বিষয়ে আইন বিচারব্যবস্থা আনতে পারে না।’বিচারপতি নরসিংহের পর্যবেক্ষণও অনেকটা একইরকম।
উল্লেখ্য, সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের পাশাপাশি, সাতটি রাজ্য সরকার তাদের মতামত জানিয়েছে। কেন্দ্রের পাশাপাশি, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং রাজস্থান সরকার সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি বৈধতার দাবির বিরোধিতা করেছে। কেন্দ্রের তরফে সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি স্বীকৃতির বিরোধিতা করে জানানো হয়, 'সমলিঙ্গের বিবাহ নেহাতই শহুরে অভিজাত সমাজের ভাবনা’। পাশাপাশি, মোদি সরকারের বক্তব্য ‘সমলিঙ্গে বিয়ের আইনি বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের কোনও রায় সঠিক পদক্ষেপ হবে না'। এই বিষয় মাথায় রেখেই সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি বৈধতা দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় কেন্দ্রের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, ‘সমকামিতা যে কেবল শহুরে বিষয়, এমন কোনও পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। সমকামী সম্পর্কগুলি কেবল শারীরিক নয়, মানসিক, স্থিতিশীল সম্পর্কও। নারী-পুরুষের সংজ্ঞা শুধু মাত্র জননাঙ্গের উপর নির্ভর করে না।স্বাধীনতার অধিকারের মধ্যে পড়ে জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার’ এছাড়াও সমলিঙ্গে বিয়ে আইনি স্বীকৃতি না পেলে সমকামী দম্পতির সামাজিক পরিচয় কী হবে, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৬ ই সেপ্টেম্বর সমকামী সম্পর্ককে বৈধ বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সমলিঙ্গ সম্পর্ক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে শীর্ষ আদালতের দেওয়া নির্দেশিকা-
- কোনও পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না এলজিবিটি (LGBT) সম্প্রদায়ের মানুষকে।
- এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষকে বৈষম্যের চোখে দেখা যাবে না।
- সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে, যাতে তাঁরা সমকামী সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি সংবেদনশীল থাকেন।
- এলবিজিটি সম্প্রদায়ের মানুষকে সাহায্যের জন্য হটলাইন নম্বর চালু করতে হবে।
- সমকামী যুগল আশ্রয় নিতে পারেন, এমন নিরাপদ ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে।
- কোনও সন্তান যদি পুরুষ বা নারী না হয়, তাহলে সেই শিশুর শরীরে জোর করে কোনও অস্ত্রোপচার করা যাবে না।
- সমকামী সম্প্রদায়ের কোনও মানুষকে হরমোনাল থেরাপির মধ্যে যেতে বাধ্য করা যাবে না।
- সমকামী সম্প্রদায়ের মানুষকে থানায় ডেকে তাঁদের যৌন পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে অযথা হেনস্থা করা যাবে না।
- সমকামীদের জোর করে বাড়িতে বা পরিবারের কাছে ফিরতে বাধ্য করতে পারবে না পুলিশ।
- সমকামী যুগলের ক্ষেত্রে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে কোনও এফআইআর করার আগে প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে পুলিশকে।
অন্যদিকে, সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রেও মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের রায়ে তেমন আশার আলো দেখলেন না সমলিঙ্গের মানুষরা। পাঁচ বিচারপতির মধ্যে তিন জনই সন্তান দত্তক নেওয়ার বিরোধিতা করলেন। বাকি দুই বিচারপতি দত্তক নেওয়ার পক্ষে সায় দিলেন। ফলে রায় ৩:২ অনুপাতে বিভক্ত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সঞ্জয় কউল জানান, সমলিঙ্গের যুগলদের সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দেওয়া উচিত। তবে, বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি পিএস নরসিমহা এক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণ করেন।
উল্লেখ্য, ভারতে দত্তক নেওয়ার আইনি কাঠামো প্রাথমিকভাবে জুভেনাইল জাস্টিস আইন, ২০১৫ এবং শিশুদের দত্তক নেওয়ার নির্দেশিকা, ২০১৫ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। সেই আইন এবং নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভারতে সমকামী দম্পতিদের এত দিন ধরে সন্তান দত্তক নেওয়ার অনুমতি ছিল না। দত্তক নেওয়ার আইন শুধুমাত্র বিষমকামী দম্পতিদের জন্য যোগ্য ছিল। তবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শুধুমাত্র বিষমকামী যুগলরাই ভাল অভিভাবক হতে পারবেন, এমনটা অনুমান করতে পারে না আইন।’ তবে এদিন শুনানিতে তিন বিচারপতি ভিন্ন মত জানান, যার ফলে সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও আশার আলো দেখলেন না এলজিবিটিকিউ-র মানুষরা।