বিনোদন

Satyajit Ray | ছবি পরিচালনা থেকে ছবি আঁকা, গান লেখা-সুর দেওয়া! ফিরে দেখা কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের বিশেষ কিছু প্রতিভা!

Satyajit Ray | ছবি পরিচালনা থেকে ছবি আঁকা, গান লেখা-সুর দেওয়া! ফিরে দেখা কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের বিশেষ কিছু প্রতিভা!
Key Highlights

২রা মে, দিনটি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের জন্য বিশেষ দিন, কারণ এইদিনটি প্রবাদপ্রতিম পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন। আজও বাংলা সিনেমার জগতে সত্যজিৎ রায়কে টেক্কা দিতে পারবে এমন চলচ্চিত্র নির্মাতা নেই বললে ভুল হবে না। কিন্তু কেবল চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রেই নয়, সত্যজিৎ রায়ের জন্ম থেকেই ছিল একধিক প্রতিভা! সত্যজিৎ রায়ের বিশ্বব্যাপী পরিচয় চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে হলেও একদিকে যেমন তিনি লিখতে পারতেন, তেমনই তিনি দুর্দান্ত ছবি আঁকতেন,গানের সুর দিতে পারতেন। ছিলেন পত্রিকার সম্পাদকও।

২রা মে, দিনটি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের জন্য বিশেষ দিন, কারণ এইদিনটি  প্রবাদপ্রতিম পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি আজ বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হত ১১৩ বছর। কথিত আছে, শিল্পী না থাকলেও তাঁর শিল্প থেকে যায় অমর হয়ে। সত্যজিৎ রায়ের শিল্প যেন সেই কথা প্রতিটা দিন সত্যি করে চলেছে। আজও বাংলা সিনেমা কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট ছবির (satyajit ray films​​) হাত ধরেই এগিয়ে চলেছে। আজও বাংলা সিনেমার জগতে সত্যজিৎ রায়কে টেক্কা দিতে পারবে এমন চলচ্চিত্র নির্মাতা নেই বললে ভুল হবে না। কিন্তু কেবল চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রেই নয়, সত্যজিৎ রায়ের জন্ম থেকেই ছিল একধিক প্রতিভা!  সত্যজিৎ রায়ের বিশ্বব্যাপী পরিচয় চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে হলেও একদিকে যেমন তিনি লিখতে পারতেন, তেমনই তিনি দুর্দান্ত ছবি আঁকতেন,গানের সুর দিতে পারতেন। ছিলেন পত্রিকার সম্পাদকও। উপেন্দ্র কিশোর রায়, সুকুমার রায়ের যোগ্য উত্তরসুরী ছিলেন সত্যজিৎ রায়। তাঁর জন্মদিনেই দেখা নেওয়া যাক সত্যজিৎ রায়ের বিশেষ কিছু প্রতিভা-

 সত্যজিৎ রায়ের বিশেষ কিছু প্রতিভা । Some of Satyajit Ray's Special Talents : 

কর্মাশিয়াল আর্টিস্ট : 

সত্যজিৎ রায় তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন কর্মাশিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে। ১৯৪৩ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ পরিচালিত বিজ্ঞাপন সংস্থা ডিজে কিমারে যোগদান করেন তিনি। সেখানে ১৩ বছর কাজ করেন সত্যজিৎ। জুনিয়র ভিজ্যুয়ালাইজার হিসেবে যোগদান করে পরে পদোন্নতিও হয়।

ফন্ট ও নকশায় দক্ষতা : 

পরিচালনার কাজের আগে বহু বিজ্ঞাপনের ফন্ট এবং নকশা নিজে হাতে এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়। এমনকি অনেকেই হয়তো জানেন না, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিনেমা হল নন্দনের লোগোও সত্যজিৎ রায়েরই তৈরি। বিজ্ঞাপন জগতের পরিচিত চারটি ফন্ট রে রোমান, রে বিজার, ড্যাফনিস এবং হলিডে স্ক্রিপ্ট তাঁরই তৈরি। এছাড়াও বহু বাংলা ফন্টও আবিষ্কার করেছিলেন সত্যজিৎ রায়।

আঁকার প্রতি অবাধ ভালোবাসা :

সত্যজিতের লেখা বইতে সব স্কেচই তাঁরই আঁকা। সমস্ত প্রধান চরিত্রের একটি মুখ তিনি নিজেই এঁকেছিলেন। শুধু বইয়ের ছবি আঁকা নয়, শুটিংয়ের আগে সত্যজিৎ রায় বিভিন্ন দৃশ্য, ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল, চরিত্রের পোশাকআশাকও স্কেচ করতেন। এমনকি ডি কে গুপ্তের সিগনেট প্রেস নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার জন্য আম আঁটির ভেঁপুর প্রচ্ছদ আঁকতে হয়েছিল তাঁকে। সেই সময়ই বিভূতিভূষণের লেখা মুগ্ধ করে 'মহারাজা'কে। আর সেই থেকেই পথের পাঁচালী তৈরি করার ভাবনা মাথায় আসে সত্যজিৎ রায়ের। তবে পথের পাঁচালী তৈরির জন্য টানা আড়াই বছর সময় লেগেছিল সত্যজিৎ রায়ের। লেখার কপিরাইট জোগাড় ও টাকা জোগাড়ের সময়কাল ধরলে তা প্রায় পাঁচ বছরের কাছাকাছি।

সুরকার সত্যজিৎ রায় : 

সুরকার হিসেবেও সত্যজিৎ রায় ছিলেন ভীষণ দক্ষ। প্রথম দিকের কিছু সিনেমা বাদে, সত্যজিৎ রায় তাঁর বেশিরভাগ সিনেমায় (satyajit ray films​) নিজেই গান লিখেছিলেন। এমনকী সুরও দিয়েছিলেন বেশিরভাগ গানে। পথের পাঁচালী, পরশ পাথর এবং অপুর সংসারের সঙ্গীত রচনা করেছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। একবার দ্য টেলিগ্রাফে এক সাক্ষাৎকারে রবিশঙ্কর বলেছিলেন, চ্যাপলিন এবং রায়ই একমাত্র চলচ্চিত্র নির্মাতা যাদের সঙ্গীতের উপর পূর্ণ দক্ষতা ছিল। এমনকি সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'দেবী' ছবিটিতে ছবি বিশ্বাসের কণ্ঠে একটি শ্যামা সঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছিল, যা লিখেছিলেন পরিচালক নিজেই।

প্রাচ্য শিল্প ও ভারতীয় ভাস্কর্যে অনুপ্রাণিত : 

সত্যজিৎ রবি ঠাকুরের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীর ছাত্র ছিলেন। নন্দলাল বসু এবং বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত শিল্পীদের অধীনে প্রাচ্য শিল্প ও ভারতীয় ভাস্কর্যের তালিম নেন। অজন্তা, ইলোরা এবং এলিফ্যান্টা গুহাগুলির ভাস্কর্য সত্যজিৎ রায়কে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

পত্রিকা সম্পাদনা :

১৯১৩ সালে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পারিবারিক প্রকাশনা ইউ. রে অ্যান্ড সন্স শিশু পত্রিকা সন্দেশ প্রকাশ শুরু করেন। মাঝে সেটি বন্ধ ছিল বেশ কিছু বছর। পরে ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় ও সুভাষ মুখোপাধ্যায় যৌথভাবে ফের ওই পত্রিকা সম্পাদনার কাজ শুরু করেন।

প্রবাদ প্রতিম চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় বাঙালির কাছে একটি আবেগের নাম। সত্যজিৎ কেবল বাঙালির গর্বই নয়, গোটা ভারত এমনকি বিশ্বের গর্ব। আন্তর্জাতিক সিনেমার আলোচনা তাঁকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। তাঁর কেবল শুধু চিত্র ভাবনাই নয়, তাঁর মতো গভীর সমাজ সচেতক, তাঁর জীবনকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুকরণীয় ভঙ্গি আর কারুর মধ্যেই নেই তা বলা চলে।