সাহিত্য

Raja Ram Mohan Roy | বাঙালির শিক্ষা, সমাজ সংস্কার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, জাতিগত ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই-সর্বত্রই তিনি 'রাজা'!

Raja Ram Mohan Roy | বাঙালির শিক্ষা, সমাজ সংস্কার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, জাতিগত ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই-সর্বত্রই তিনি 'রাজা'!
Key Highlights

নিজের রাজত্ব না থাকতেও গোটা বিশ্বের কাছে রাম মোহন রায় পরিচিত 'রাজা' হিসেবে। আধুনিক ভারতের জনক-রূপে অভিহিত রাজা রাম মোহন রায় ভারতে নবযুগের প্রবর্তক। স্বদেশ ভারতবর্ষ এবং স্বজাতির কল্যাণে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়।

 ভারতের সমাজ এক এক সময়ে এক এক গোষ্ঠীর দ্বারা শাসিত হয়েছে। কখনও ব্রিটিশ শাসন তো কখনও রাজ-রাজা। এই 'রাজা'র নিজের রাজত্ব ছিল না। তবুও তিনি 'রাজা'র উপাধি পেয়েছিলেন। তাঁর প্রয়াণের দীর্ঘ সময় পরেও আজও তিনি ভারত এমনকি গোটা বিশ্বের কাছেই 'রাজা'। তিনি রাজা রাম মোহন রায় (Raja Ram Mohan Roy)। রাম মোহন রায়কে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন, তৎকালীন মুঘল শাসক সম্রাট দ্বিতীয় আকবর। যদিও সেই সময় সাম্রাজ্যের কিছুমাত্র আর অবশিষ্ট ছিল না। রাজা রামমোহন রায়ের প্রদর্শিত পথে দেশ দেখেছিল পরিবর্তনের হাওয়া। আজও সমাজ নতমস্তকে কৃতজ্ঞ তার কাছে। সাহিত্য, ধর্ম, শিক্ষা বিজ্ঞান, সমাজ নীতি, রাষ্ট্রনীতি— সর্বত্রই আপামর ভারতবাসীকে আধুনিকতার পাঠ দিয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়। আজ, ২২সে মে তাঁর ২৫২তম জন্মবার্ষিকী।

রাজা রাম মোহন রায়ের জীবনী । Raja Ram Mohan Roy Biography :

আধুনিক ভারতের জনক-রূপে অভিহিত রাজা রাম মোহন রায় (Raja Ram Mohan Roy) ভারতে নবযুগের প্রবর্তক। স্বদেশ ভারতবর্ষ এবং স্বজাতির কল্যাণে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। রাজা রাম মোহন রায়ের অবদান (Raja Ram Mohan Roy contribution) রয়েছে ভারতের সংস্কৃতি-সমাজ সবকিছুতেই। তাঁর জীবনাদর্শ একদা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতিকে অপরিসীম অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো। সেই রাম মোহন রায়ের জন্ম ১৭৭২ খ্রীষ্টাব্দের ২২ই মে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে। এক কুলীন ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রামমোহনের প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বাদশাহ ফররুখশিয়রের আমলে বাংলার সুবেদারের অধীনে আমিনের কাজ করতেন। সেই সূত্রেই তাঁদের পরিবারে রায় উপাধির ব্যবহার প্রচলিত হয়। রামমোহনের পিতার নাম রামকান্ত রায় এবং মাতার নাম তারিণী দেবী। ছোটবেলা থেকেই রাম মোহনের লেখাপড়ার প্রতি ছিলো প্রবল আগ্রহ। প্রথা মত তিনি পাটনায় মৌলভীর নিকট আরবী ও ফারসী ভাষা শিক্ষা গ্রহন করেন। এরপরে নিজের গ্রামের কাছে সুপন্ডিত নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার বা হরিহরানন্দ তীর্থস্বামীর কাছে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য এবং বেদান্তশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি সংস্কৃত ভাষা শেখার জন্য কাশীধামে যান এবং চার বছর সেখানে পড়াশুনা করেন । শাস্ত্র নিয়েও ছিল তাঁর প্রবল আগ্রহ। তিনি বেদান্ত শাস্ত্রের উপরেও গবেষণা করেন ।

শিক্ষার পাঠ শেষ করে রাম মোহন তাঁর অন্যান্য ভাইদের সঙ্গে পৈতৃক জমিদারী দেখাশোনা করতে থাকেন। জানা যায়, বৈষয়িক কাজে রাম মোহন বিভিন্ন সময়ে কলকাতা, বর্ধমান ও লাঙ্গুলপাড়ায় আসতেন। শিক্ষার প্রতি ক্ষুদার্থ রাম মোহনকে  সেই সময় ইংরাজ সিভিলিয়ানদের সাহচর্যে আসতে হত। আর এই সুযোগেই ইংরাজী ভাষা আয়ত্ত করেন তিনি। ১৮০৩ সালে রামমোহন মুর্শিদাবাদের কালেক্টর উডফোর্ডের কাছে কাজ করা শুরু করেন এবং যশোরে যান। অবশ্য এই চাকরি মাস দুই-এর বেশি করা সম্ভব হয়নি। তৎকালীন সময়ে ইতিমধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এক সিভিলিয়ান কর্মচারী জন ডিগবির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। রামমোহন ডিগবির অধীনে দেওয়ান বা খাসকর্মচারীরূপে রংপুরে ১৮০৫ সাল থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। এই সময়ে রামমোহন বিষয়কর্মে যথেষ্ট উন্নতি করেন। ইংরাজের অধীনে চাকরি হলেও রাম মোহন সর্বদা আত্মমর্যাদা বজায় রেখে চলতেন। একসময় চাকুরি ক্ষেত্রে এই প্রশ্নেই স্যার ফ্রেডরিক হ্যামিলটনের সঙ্গে তাঁর বিবাদ উপস্থিত হয়। ১৮০৯ সালের ১২ই এপ্রিল রামমোহন তাঁর বিরুদ্ধে লর্ড মিন্টোর কাছে অভিযোগ করেন। এই অভিযোগ পত্রটিকেই রামমোহনের প্রথম ইংরাজি রচনা বলে জানা যায় । তিনি সাহিত্য সাধনা ও সমাজ সংস্কার কাজের জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুর্শিদাবাদে চলে আসেন।

সমাজ সংস্করণ ও নানান ক্ষেত্রে রাম মোহনের অবদানের জন্য তাঁকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন, তৎকালীন মুঘল শাসক সম্রাট দ্বিতীয় আকবর। যদিও সেই সময় সাম্রাজ্যের কিছুমাত্র আর অবশিষ্ট ছিল না। তাঁকে রাজা উপাধি দিয়ে লন্ডন পাঠিয়েছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় আকবর। মূলত তিনটি কারণে রাজা রাম মোহন রায়ের ইংল্যান্ড যাত্রা। এক-সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের বার্তা ইংল্যান্ডের রাজার কাছে পৌঁছনো। দুই- ইংল্যান্ডের হাউস অফ কমনসে সতীদাহ প্রথা রদ করার জন্য বলা। তিন- হাউস অফ কমনসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চার্টার পুনর্নবীকরণের সময় সেখানে উপস্থিত থাকা। জীবনের শেষ দুই বছর ইউরোপে, মূলত ইংল্যান্ডে ছিলেন তিনি। তার মধ্যেই লন্ডনের অভিজাত মহলে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। ১৮৩১ সালের ৮ এপ্রিল ইংল্যান্ডের লিভারপুলে পৌঁছন তিনি। সেখান থেকে দ্রুত পৌঁছল লন্ডনে। শুরু থেকেই তাঁকে ঘিরে কী পরিমাণ উৎসাহ ছিল সেইসময়ে লন্ডনের অভিজাত মহলে তা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে মেরি কার্পেন্টারের (Mary Carpentar)-এর লেখা 'The Last Days in England of the Rajah Rammohun Roy'-এর পাতায় পাতায়। লন্ডন সফরের প্রথম থেকেই ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। ইংরেজ অভিজাতদের সঙ্গে দেখা করা অন্যতম কাজ ছিল তাঁর। তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজার ভাই, ডিউক অফ কাম্বারল্যান্ড রামমোহনকে হাউস অফ লর্ডসে উপস্থিত করান। লন্ডনে থাকাকালীন দাসপ্রথা রদের অন্যতম নায়ক Lord Brougham-এর সঙ্গেও বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল রাজা রামমোহন রায়ের। ১৮৩১-এর ৬ জুলাই, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডিরেক্টরেরা রামমোহনের সম্মানে ডিনার পার্টিও দিয়েছিলেন। রাজা রামমোহন রায়কে নিয়ে সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বই থেকে জানা যায়, ইংল্যান্ডের রাজার তরফেও আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন রামমোহন। 

 ১৮৩৩ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যস্ততা এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম বড়সড় প্রভাব ফেলেছিল রামমোহনের স্বাস্থ্যে। একদিকে স্বাস্থ্য অন্যদিকে আর্থিক টানাটানি -দুইয়ের সম্মিলিত কারণে বন্ধুদের পরামর্শে লন্ডন ছেড়ে ব্রিস্টল চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে তিনি উঠেছিলেন তাঁর এক বন্ধুর পরিচিত Miss Castle-এর বাড়িতে। সেই বছরেই ১৯ সেপ্টেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রবল জ্বর এবং মাথাব্যথায় কাহিল হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই অসুস্থতার সময় তাঁর পাশে থেকে তাঁকে শুশ্রূষা করেছিলেন ডেভিড হেয়ারের এক বোন। একাধিক চিকিৎসকও তাঁকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সব চেষ্টা যায় বিফলে। ১৮৩৩ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর ৬১ বছর বয়সে রাজা রামমোহন রায় ইংল্যাণ্ডের ব্রিষ্টল শহরে মৃত্যুবরণ করেন। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা তাঁর জীবনী থেকে জানা যায়, ২৭ সেপ্টেম্বরের তারিখ পূর্ণিমার রাত ছিল। ছিল শান্ত পরিবেশ। আর ঘরের মধ্যে মৃত্যুশয্যায় ছিলেন এক অসাধারণ ব্যক্তি। শেষ নিঃশ্বাসের সময় রাজা রামমোহনের ঠোঁট ফাঁক করে নাকি একটিই শব্দ উচ্চারিত করেছিলেন- 'ওম'! রাজা রাম মোহনকে ব্রিষ্টল নাগরীর স্টেপলটন গ্রোভে সমাহিত করা হয়। পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ব্রিষ্টলে গিয়ে তাঁর পবিত্র দেহ উক্ত স্থান থেকে সরিয়ে ‘আরনোভেল’ নামক স্থানে সমাহিত করেন।

রাজা রাম মোহন রায়ের অবদান । Raja Ram Mohan Roy Contribution :

১৮২৯ সালের ৪ই ডিসেম্বর যেদিন গভর্নর জেনারেল বেন্টিং আইনের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, সেদিন শুরু হয় ভারতীয় সমাজে এক নতুন অধ্যায়। আজ দেশের প্রতিটি স্তরেই সমাজ সসম্মানে নারীরা ভূষিত। সতীদাহ আজ স্রেফ অন্ধকার অতীত। এই উন্নতি, সংস্করণের নেপথ্যে রয়েছেন দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেওয়া মনীষীরা। যারা সমস্ত সমালোচনা অবজ্ঞা করে দেশকে ভালোবেসে আত্মত্যাগ আর আদর্শের পথে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। রাজা রাম মোহন রায় এই ব্যক্তিত্বের মধ্যে অন্যতম।

রাজা রাম মোহন রায় সম্পর্কে (About Raja Ram Mohan Roy) কথা উঠলেই প্রথমেই উঠে আসে সতীদাহ বা সহমরণ প্রথার কথা, বহু বিবাহ প্রথার কথা।সেকালে হিন্দুধর্মের কোনো স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও স্বামীর সাথে জ্বলন্ত চিতায় আত্মাহুতি দিতে হতো। একে বলা হতো সহমরণ প্রথা। স্বামীর চিতায় আত্মহুতি দিয়ে সতী হওয়া, হিন্দুধর্মের এই অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রামমোহন প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন। পরে ১৮২৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক-এর সহায়তায় সতীদাহ প্রথা রহিতকরণ আইন পাস করাতে সক্ষম হন রাম মোহন রায়। এভাবেই হিন্দুসমাজে ধর্মের নামে যুগ-যুগ ধরে প্রচলিত কুখ্যাত বর্বর সতীদাহ প্রথার বিলুপ্তি ঘটে। শুধু সতীদাহ প্রথা নয়, তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে বাল্যবিবাহ, কন্যাপণ এবং গঙ্গায় সন্তান নিক্ষেপের বা বিসর্জনের মতো আরো কিছু সামাজিক কু-প্রথাও বন্ধ হয়। 

নতুন ধর্ম-মতবাদও প্রচার করেন রাজা রাম মোহন রায়। ব্রহ্মসভার মাধ্যমেই রামমোহন তাঁর নতুন ধর্ম-মতবাদ প্রচার করেন। তিনি বেদে বর্ণিত অদ্বিতীয় ব্রহ্মের উল্লেখ করে প্রচার করেন যে, ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। তিনিই বেদের ব্রহ্ম। তিনি অদ্বিতীয় এবং নিরাকার। এই ব্রহ্মের যারা উপাসক তারা হলেন ব্রাহ্ম। রামমোহন প্রবর্তিত এই মতবাদ সেকালে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। আজো ব্রাহ্মধর্ম মতবাদের প্রচুর অনুসারী আছে বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গে। রামমোহন হিন্দুধর্মের সাকার উপাসনা পদ্ধতির বিরোধী ছিলেন। তিনি মূর্তিপূজা মানতেন না। তিনি হিন্দুদের ‘পৌত্তলিক ধর্মপ্রণালী’ নামে একটি বইও রচনা করেন। 

রাজা রাম মোহন রায় সম্পর্কে (About Raja Ram Mohan Roy) কথা উঠলে উঠে আসে শিক্ষার কথাও। মাতৃভাষা শিক্ষা প্রসারের জন্য ইতিপূর্বে তিনি বাংলা ভাষায় সংস্কৃত ব্যাকরণ গৌড়ীয় ব্যাকরণ প্রণয়ন করেছিলেন। সেই বই স্কুলবুক সোসাইটি প্রকাশ করেছিল ১৮০৩ সালে। বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের নিগড় মুক্ত করে এই গ্রন্থেই তিনি তার একটি নিজস্ব রূপ দান করেছিলেন। তিনিই প্রথম বাংলা গদ্যে তদ্ভব শব্দের ব্যবহার এবং অসমাপিকা ক্রিয়া ও জটিল বাক্যাংশের ব্যবহার বন্ধ করেন। সনাতন শিক্ষাপদ্ধতির মধ্যে কেবল কাব্য আর ব্যাকরণ নিয়ে পড়ে থাকলে দেশ অন্ধকারেই পড়ে থাকবে, আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ভারতবাসীকে যে ইংরাজি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে তা মনেপ্রাণে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন রামমোহন। তিনি ইংরাজিতে লেখাপড়া চালু করবার জন্য ১৮২২ খিঃ অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

রামমোহন রায় সংবাদপত্রের মধ্য দিয়ে বিপ্লবের চেষ্টা করেছেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য তিনি আজীবন ছিলেন সোচ্চার। সংবাদপত্রের মধ্য দিয়ে তিনি পৌঁছেছেন গণমানুষের মাঝে। সমাজ সংস্কারের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সমাজের উচ্চতর স্তরেও। তুলে এনেছেন প্রান্তিক মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র। প্রশ্নের বানে বিদ্ধ করেছেন সমাজের সকল অনিয়ম, অনাচারকে। ১৮১৫ সালে রামমোহন কলকাতার মানিকতলায় বাড়ি কিনে স্থায়িভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। এই মানিকতলার বাড়িতেই তিনি ‘আত্মীয় সভা’ নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। কিছুকালের মধ্যে তিনি বাংলায় ‘ব্রাহ্মণ পত্রিকা’ এবং ইংরেজীতে ‘ইষ্ট ইণ্ডিয়া গেজেট’ নামে দুটো পত্রিকা বের করেন । ১৮২৭ সালে তিনি ধর্ম সমালোচনামূলক প্রতিষ্ঠান ‘ব্রহ্মসভা’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি ভারতের বাইরের নানা ঘটনার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে মানুষের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করেছেন। জানা যায়, দক্ষিণ আমেরিকা স্পেনের অধিকারমুক্ত হলে সেই আনন্দে তিনি বাড়িতে ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন। ১৮২২ সালে তাঁর সম্পাদিত সাপ্তাহিক পত্রিকা মিরাত-উল-আখবার-এ আয়ারল্যান্ডের ওপর ইংরাজ সরকারের অত্যাচারের প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন তিনি।

বাঙালির শিক্ষা, সমাজ সংস্কার, বিজ্ঞানমুখী সমাজ ব্যবস্থা, বর্ণ-শ্রেণি-জাতিগত ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে শুরু করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা-সর্বত্রই রয়েছেন রাজা রামমোহন রায়। তাঁর মাধ্যমেই মধ্যযুগের ভারতে আসে বিপ্লব। অচলায়তন ভেঙে তিনি এনে দিলেন আলোর দুয়ার। সংস্কার, সামাজিক পুনর্গঠন ও আন্দোলনে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা অনেক।