দেশ

Surya Tilak | রামনবমীতে প্রথম সূর্যাভিষেক রামলালার! সূর্যকিরণে জ্বলজ্বল করে উঠল রামলালার কপালের তিলক! নেপথ্যে বিজ্ঞানের কোন কৌশল? দেখুন ভিডিও!

Surya Tilak | রামনবমীতে প্রথম সূর্যাভিষেক রামলালার! সূর্যকিরণে জ্বলজ্বল করে উঠল রামলালার কপালের তিলক! নেপথ্যে বিজ্ঞানের কোন কৌশল? দেখুন ভিডিও!
Key Highlights

অযোধ্যা রাম মন্দিরে ৫০০ বছর পর ধুমধাম করে পালিত হল রামনবমী। বৈজ্ঞানিক উপায়ে রাম মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করা সূর্যকিরণে জ্বলজ্বল করে উঠল রামলালার কপালের তিলক। রামনবমীতে এই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটলো বিজ্ঞানের হাত ধরে।

রামনবমীতে অযোধ্যার রামমন্দিরে ভক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেন মিলে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটালো। ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১২টা বাজতেই অযোধ্যা রাম মন্দিরের রাম লালা (Ayodhya Ram Mandir Ram Lalla) এর কপালে এসে পড়ল ‘সূর্য তিলক’। মুহূর্তে বদলে গেল মন্দিরের পরিবেশ। দেখা গেল এক অনন্য ছায়া। আর এই দৃশ্য দেখে মন্ত্রমুগ্ধ দেশবাসী। প্রায় ৪ মিনিট ধরে নিজের আলোয় রামের ললাটের শোভা বৃদ্ধি করেন সূর্য। নিমেষের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরে অযোধ্যা রাম মন্দিরের ভিডিও (Ayodhya Ram Mandir video)। তবে কীভাবে হলো এই বিস্ময়কর ঘটনা? নেপথ্যে রয়েছে কী বিজ্ঞান?

অযোধ্যা রাম মন্দিরে রামনবমী অনুষ্ঠান । Ram Navami Ceremony at Ayodhya Ram Temple :

১৭ই এপ্রিল পালিত হচ্ছে রাম নবমী। এদিন দীর্ঘ ৫০০ বছরের অপেক্ষার পর অযোধ্যা রাম মন্দিরে রাম নবমী পালিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে রাম নবমীকে আরও বিশেষ করে তোলার জন্য অযোধ্যা রাম মন্দিরের পক্ষ থেকে রামের সূর্য তিলকের আয়োজন করা হয়। অর্থাৎ আজ স্বয়ং সূর্য রামচন্দ্রের তিলক করেন। এদিন প্রায় ৪ মিনিট ধরে নিজের আলোয় অযোধ্যা রাম মন্দিরের রাম লালা (Ayodhya Ram Mandir Ram Lalla) এর ললাটের শোভা বৃদ্ধি করেন সূর্য। এই দৃশ্য দেখতে অযোধ্যা রাম মন্দির দর্শন (Ayodhya Ram Mandir darshan) করতে আসেন অসংখ্য ভক্ত। 

উল্লেখ্য, রামনবমীতে এদিন প্রথম সূর্যাভিষেক হল রামলালার। হলুদ পর্দায় ঢাকা ছিল রামলালার মূর্তি। পর্দা সরে যেতেই ভক্তরা দেখলেন বিস্ময়কর ঘটনা। সূর্যকিরণ গর্ভগৃহে ঢুকে রামলালার কপাল থেকে ঠিকরে জ্যোতির বিচ্ছুরণ ঘটাল। রামের জন্মোৎসবে রামের কপাল থেকে ঠিকরে বেরোল উজ্জ্বল জ্যোতি। বৈজ্ঞানিক উপায়ে রামলালার কপালে এই তিলক এঁকে দিলেন বিজ্ঞানীরা। পালিত হল সূর্য তিলক (Surya Tilak)। এদিকে সূর্যতিলকের মুহূর্তের ভিডিয়ো শেয়ার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি () বলেন, রাম মন্দিরে এই প্রথম রামনবমী পালন করা হল। সেখানে অলৌকিক সূর্যকতিলক হয়েছে রামলালার। তিনি রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন তাঁর বক্তব্যের কিছু ভিডিয়ো ক্লিপিংও শেয়ার করেছেন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে। এদিকে সুসজ্জিত নবনির্মিত অযোধ্যা রাম মন্দির দর্শন (Ayodhya Ram Mandir darshan) করতে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই উপচে পড়েছে ভক্তদের ভিড়।

সূর্য তিলকের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা । Scientific Explanation of Surya Tilak : 

 রামনবমীর দুপুরে ঠিক ১২টা বেজে ১৬ মিনিটে সূর্যের আলোর একটি রশ্মি সরাসরি রামলালার মূর্তির কপালে এসে পড়ে। এই সূর্য তিলকের মাপ ৭৫ মিমি।  সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে গোটা মন্দির আলোয় আলোয় ভরিয়ে দেয়। মন্দিরের দক্ষিণ দিক থেকে সূর্যের আলো গর্ভগৃহে ঢোকানো হয় আইআর ফিল্টার দিয়ে। এই সৌরকিরণ যাতে প্রতিফলিত হয়ে রামলালার ঠিক কপালের মাঝখানে পড়ে সেজন্য চারটি লেন্স ও চারটি আয়নাকে বিশেষ কৌণিক অবস্থানে বসানো হয়েছিল। লেন্স ও আয়নার সঙ্গে ১৯টি গিয়ারবক্স বসানো হয়েছে মন্দিরে। এই গিয়ারবক্স হয়েই সূর্যের রশ্মি গর্ভগৃহে ঢুকে লেন্সে প্রতিফলিত হল। জানা গিয়েছে, রুরকির সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (Roorkee's Central Building Research Institute) বিজ্ঞানীরা বিশেষ এক ধরনের লেন্স ও আয়না তৈরি করেছিলেন, যা মন্দিরের কাঠামোর সঙ্গে জোড়া হয়েছে। সূর্যরশ্মির মন্দিরর গায়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই আয়না ও লেন্সে বারবার প্রতিফলিত হয়ে গর্ভগৃহে ঢুকে রামলালার মূর্তির কপালে পড়েছে। বেঙ্গালুরু ইন্ডিয়ান ইন্সস্টিউট অফ অ্য়াস্ট্রো ফিজিক্স ও উত্তরাখণ্ডের রুরকির CBRI (Central Building Research Institute), বেঙ্গালুরুর অপটিক কোম্পানির চেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে। এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রধান অবদান রয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিউট অফ অ্যাস্ট্রো ফিজিক্সেরও। উল্লেখ্য, কেবল চলতি বছর রামনবমীতেই নয়, প্রতি বছর বিজ্ঞানের সাহায্যে রামনবমীর দুপুরে সূর্যের আলোর একটি রশ্মি সরাসরি রামলালার মূর্তির কপালে এসে পড়বে। সেখান থেকে প্রতিফলিত হয়ে গোটা মন্দির আলোয় আলোয় ভরিয়ে দেবে।

হিন্দু ধর্ম ও বৈদিক জ্যোতিষে সূর্যের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। বৈদিক কাল থকেই সূর্যকে প্রত্যক্ষ দেবতা মনে করে পুজো করা হয়ে আসছে। সূর্যই শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস। যার ফলে পিতার মর্যাদা দেওয়া হয় তাকে। ত্রেতা যুগে বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রূপে সূর্য বংশেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামচন্দ্র। প্রতিদিন ভোরবেলা সূর্যকে জলের অর্ঘ্য দিয়ে নিজের দিনের সূচনা করতেন রাম। মহর্ষি অগস্তই রামচন্দ্রকে সূর্যের প্রভাবশালী স্তোত্র আদিত্য হৃদয় স্তোত্রের দীক্ষা দিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবে হিন্দু ধর্মে সূর্য উপাসনার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। 

প্রসঙ্গত, দেশ এমনকি বিদেশেও রামনবমী পালিত হলেও অনেকেই জানেন না রাম নবমী কী? (What is Ram Navami?) এবং কেন পালিত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, রাম নবমী হলো অযোধ্যার রাজা দশরথ এবং রাণী কৌশল্যার সন্তান রামের জন্মগ্রহণ উদযাপন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত একটি হিন্দু উৎসব। মনে করা হয়, রাম বিষ্ণুর সপ্তম অবতার ও ভগবান বিষ্ণুর মানবীয় রূপের প্রাচীনতম অবতার। এই বিশেষ দিনে প্রথম সূর্যাভিষেক হলো রামলালার।  সূর্যাভিষেকের সময়ে শঙ্খের আওয়াজ, মন্ত্র উচ্চারণ এবং পুরোহিতদের উপস্থিতি সূর্য তিলকের অনুষ্ঠানটিকে আরও দর্শনীয় করে তোলে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও ভক্তি মিলে যে বিস্ময়কর ঘটনা সৃষ্টি করতে পারে এই ঘটনা তার নিদর্শন।