দেশ

Ram Mandir Inauguration | কৃষ্ণ শিলা দিয়ে তৈরী ৫১ ইঞ্চি লম্বা, প্রায় ২০০ কেজি ওজনের শ্রী রামের শিশু রূপ প্রতিমার বিশেষত্ব জানলে হবেন অবাক!

Ram Mandir Inauguration | কৃষ্ণ শিলা দিয়ে তৈরী  ৫১ ইঞ্চি লম্বা, প্রায় ২০০ কেজি ওজনের শ্রী রামের শিশু রূপ প্রতিমার বিশেষত্ব জানলে হবেন অবাক!
Key Highlights

২২সে জানুয়ারি সম্পন্ন হলো অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠান। একাধিক পর্যায় পেরিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলো রামলালার। ৫১ ইঞ্চি লম্বা শ্রী রামের ৫ বছরের শিশু রূপ প্রতিমার বিশেষত্ব করবে আপনাকে অবাক। সঙ্গে জানুন 'প্রাণ প্রতিষ্ঠা' আসলে কী?

প্রায় ৫০০ বছর নিজ 'ঘরে' ফিরলেন রামলালা। দীর্ঘ বছরের আইনি লড়াই, সংঘর্ষের পর অবশেষে ২০২৪ এর ২২সে জানুয়ারি, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর হাতে হলো অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন (Ayodhya Ram Mandir opening)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Prime Minister Narendra Modi) হাত ধরে শ্রী রাম (Shree Ram) এর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে এদিন। কালো পাথরে তৈরি এই মূর্তির মধ্যে রামলালার প্রতিকৃতির রয়েছে বিস্ময়কর আকর্ষণ। দেখে মনে হয়, যেন সত্যিই ভগবান রামের শিশু অবতার। বৃহস্পতিবার মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে মন্দিরের গর্ভগৃহে এই প্রতিমা স্থাপন করা হয়। তখন এই প্রতিমার চোখ হলুদ কাপড়ে ঢেকে প্রতিমার গায়ে গোলাপের মালা পরানো হয়। বুধবার রাতেই ৫১ ইঞ্চি লম্বা এই মূর্তিটি মন্দিরে আনা হয়। রামলালার এই প্রতিমার রয়েছে একাধিক বিশেষত্ব। আসুন দেখে নেওয়া যাক অযোধ্যা রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir) এর রামলালার মূর্তির বিশেষত্ব এবং 'প্রাণ প্রতিষ্ঠা'র অর্থ  আসলে কী।

অযোধ্যা রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir) এর রামলালার এই মূর্তিটি তৈরি করেছেন কর্ণাটকের ভাস্কর অরুণ যোগীরাজ। উল্লেখ্য, যোগীরাজ ও দেশের অন্য দুই দক্ষ কারিগরদের, বেঙ্গালুরুর গণেশ ভাট এবং রাজস্থানের সত্য নারায়ণ পাণ্ডেকে একযোগে, ভগবান রামের শিশুরূপ চিত্রিত এই বিশেষ মূর্তি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে রাম মন্দির ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই জানান, মহীশূরবাসী যোগীরাজের হাতে তৈরি রামলালার মূর্তিটিই মন্দির ট্রাস্ট তিনটি মূর্তির মধ্যে থেকে বেছে নিয়েছেন। এই প্রতিমার ওজন প্রায় ২০০ কেজি এবং প্রতিমার উচ্চতা ৪.২৪ ফুট এবং প্রস্থ তিন ফুট। এই মূর্তিটি ভগবান শ্রী রাম (Shree Ram)এর ৫ বছরের শিশু রূপকে চিত্রিত করেছে। রামলালার সুন্দর মূর্তিটিতে বিরাজমান বিষ্ণুর ১০ টি অবতার। এই ১০টি অবতার হল – মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, কল্কি। মূর্তির চারপাশের ফলকে একপাশে শ্রী হনুমান এবং অন্যপাশে গরুড় রয়েছে। রামলালার এই মূর্তিতে মুকুটের পাশে সূর্যদেব, শঙ্খ, স্বস্তিক, চক্র ও গদা দৃশ্যমান। মূর্তির মুকুটের পিছনে আছেন সূর্য দেবতা যিনি ভগবান রামের পারিবারিক দেবতা। 

রামলালার মূর্তিটি একটি মাত্র পাথর দিয়ে তৈরি, অর্থাৎ প্রতিমার পাথরে অন্য কোনও পাথর যোগ করা হয়নি। যোগীরাজ ৫১ ইঞ্চির মূর্তিটি তৈরি করতে কর্ণাটকের মহীশুর জেলার এইচডি কোট তালুকের বুজ্জেগৌদানাপুরা গ্রামের অনন্য কৃষ্ণ শিলা পাথরটি ব্যবহার করেছেন। তবে এই কৃষ্ণ শিলা কী?

দক্ষিণ ভারত জুড়ে মন্দিরে দেব-দেবীর অধিকাংশ মূর্তি ‘নেল্লিকারু শিলা’ থেকে খোদাই করা হয়েছে। ভগবান কৃষ্ণের গাত্রবর্ণের মতো একই রঙের বলে মনে করা হয় বলেই এই পাথরগুলিকে ‘কৃষ্ণশিলা’ বলা হয়। অত্যন্ত উত্তম মানের কৃষ্ণ শিলা এইচডি কোট এবং মহীশূরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। পাথরটি তার নরম প্রকৃতির কারণে সহজেই ভাস্করদের হাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যা বেশিরভাগই লক্ষাধিক। এই পাথরের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল, এটি নতুন অবস্থায় কেনা হলে নরম হয়, কিন্তু ২-৩ বছর পরে শক্ত হয়ে যায়। পাথরের ব্লকটি প্রথমে খোদাই করা নকশা অনুসারে চিহ্নিত করা হয় এবং জটিল ডিজাইনগুলি পেতে বিভিন্ন আকারের চিসেল ব্যবহার করে এটিকে আকার দেওয়া হয়। এর প্রকৃতি ছাড়াও মহীশূরে কৃষ্ণ শিলাপাথর খোদাইয়ের ইতিহাস বহু শতাব্দীর। পাঁচ প্রজন্ম ধরে পাথর খোদাই করে মূর্তি বানিয়ে আসছেন অরুণ যোগীরাজ। অরুণের ঠাকুরদার বাবা, এবং তাঁর ঠাকুরদাকে একসময় শিল্পী হিসেবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন মহীশূরের রাজারা। সূত্রের খবর, অরুণ যোগীরাজ অযোধ্যায় গত ছয় থেকে সাত মাস থেকে প্রতিদিন প্রায় ১২ ঘণ্টা করে নিরলস প্রচেষ্টায় রামলালার এই ঐতিহাসিক মূর্তি গড়ার কাজ সমাপ্ত করছেন। রামলালার ৫১ ইঞ্চির লম্বা মূর্তিটি স্থির অবস্থায় রাখা হয়েছে যাতে মানুষ দূর থেকে দেখতে পারে।

এতো গেল রামলালার মূর্তির বৈশিষ্ট্য, এবার আসা যাক রাম মন্দির উদ্বোধন (Ram Mandir inauguration) এর দিন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে। বলা হচ্ছে, রাম মন্দিরে 'প্রাণ প্রতিষ্টা' অনুষ্ঠান, রাম লালার মূর্তির পবিত্রতাকে চিহ্নিত করবে। ভগবান রামের যুবা অবতার বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রের শুভ ফল আনবে। এই প্রাণ প্রতিষ্টার আপাতদৃষ্টিতে অর্থ হল একটি মূর্তিতে প্রাণ সঞ্চার করা। এই কাজে সফলতা পেতে বেদ এবং পুরাণ থেকে প্রাপ্ত জটিল আচার-অনুষ্ঠান ধাপে ধাপে অনুসরণ করতে হয়। 

রাম মন্দির উদ্বোধন (Ram Mandir inauguration) এর দিন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা নানান পর্যায়ের মাধ্যমে হয়েছে। যেমন -প্রাণ প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পর্যায় হল শোভা যাত্রা। এই যাত্রায় মন্দিরের আশেপাশে প্রদক্ষিণ করানো হয় মূর্তিকে। বিশ্বাস করা হয়, মন্দির অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে, সে স্থানের ঐশ্বরিক শক্তি জেগে ওঠে। প্রদক্ষিণকারীর মনের ভক্তি মূর্তির প্রাণ সঞ্চারের সূচনা করে। এরপর মণ্ডপে প্রতিমা প্রত্যাবর্তনের পর শুরু হয় প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান। মন্দিরে প্রবেশের পর মূর্তিটি একাধিক আধিবাসের মধ্য দিয়ে যায়। অধিবাসের পরে, ওই দেব মূর্তিকে স্নান করানো হয়। এর পর আসে অভিষেকের পালা। এই রীতিতে '১০৮টি বিভিন্ন ধরনের উপকরণ, যেমন পঞ্চামৃত, বিভিন্ন সুগন্ধি ফুল ও পাতার নির্যাসযুক্ত জল, গরুর শিংয়ে ঢেলে দেওয়া জল এবং আখের রস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যেকোনও প্রতিমার প্রাণ প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত ধাপ হল দেবতার চক্ষু দান। দেবতার চোখের চারপাশে অঞ্জন দিয়ে একটি সোনার সুই ব্যবহার করা হয়। এই সুই দেবতার প্রথম দৃষ্টির প্রখরতাকে নিয়ন্ত্রণে আনে, বলে মনে করা হয়।

অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন (Ayodhya Ram Mandir opening) এর দিন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানও উপরোক্ত পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। ১৬ই জানুয়ারী হয়েছে প্রায়শ্চিত্ত ও কর্মকুটি পূজা; ১৭ ই জানুয়ারী হয়েছে প্রাঙ্গণে মূর্তি প্রবেশ; ১৮ ই জানুয়ারির সন্ধ্যায় হয়েছে তীর্থযাত্রা পূজা, জল যাত্রা, জলধিবাস এবং গান্ধাধিবাস; ১৯সে জানুয়ারি সকালে হয়েছে ধান্যধিবাস, ২০ই জানুয়ারি সকালে হয়েছে শর্করাধিবাস এবং ফলাধিবাস; ২১সে জানুয়ারি সকালে মধ্যাধিবাস এবং অবশেষে ২২সে জানুয়ারী  প্রাণ প্রতিষ্ঠা।