দেশ

Odisha and Coromandel Train Accident | করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের লাইনচ্যূত রেল! দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা!

Odisha and Coromandel Train Accident | করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের লাইনচ্যূত রেল! দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা!
Key Highlights

বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনার পর ফের রেল আতঙ্ক। ওড়িশাতেই আবার লাইনচ্যূত পণ্যবাহী ট্রেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতদের দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে ব্যবস্থা।

শুক্রবার ওড়িশার (Odisha) বালেশ্বরের কাছে বাহানাগা বাজারের কাছে মর্মান্তিক করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় (Coromandel Train Accident) শোকাহত গোটা দেশ। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩০০ জনের, আহত অসংখ্য। এবার সেই শোকের ছায়া কাটতে না কাটতেই ফের রেল দুর্ঘটনা! স্থানও এক, ওড়িশা!

সূত্রের খবর, আজ অর্থাৎ ৫ই জুন সোমবার ওড়িশার বারগড় (Bargarh) জেলায় লাইনচ্যুত হয়েছে ট্রেনের একাধিক কামরা। রেললাইনের পাশে ছিটকে পড়েছে পাঁচটি বগি। মেন্ধাপলি (Mendhapali) স্টেশনে লাইনচ্যুত হয়েছে চুনাপাথর বোঝাই এই মালগাড়িটি। ফলে যাত্রীবাহী ট্রেন না হওয়ায় কোনও হতাহতের খবর মেলেনি। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত সেখানে পৌঁছায় স্থানীয় পুলিশ।

ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের (East Coast Railway) মুখপাত্রের তরফে জানানো হয়, এদিন চুনাপাথর বোঝাই এই মালগাড়িটি একটি সংকীর্ণ রুট দিয়ে খনি এলাকা থেকে সিমেন্ট ফ্যাক্টরির পথে যাচ্ছিল। ট্রেনটি বারগড় জেলায় মেন্ধাপলি স্টেশনের কাছে পৌঁছাতেই লাইনচ্যুত হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, এই রেললাইন ভারতীয় রেলের আওতায় পড়ে না। ফলে বেসরকারি সিমেন্ট সংস্থার পক্ষ থেকে এই নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। যেহেতু এই সংকীর্ণ রেললাইন, রোলিং স্টক (Rolling Stock), ইঞ্জিন (Engine), ওয়াগন (Wagons) এবং ট্রেন ট্র্যাক (Train Tracks) পুরোটাই সিমেন্ট সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন, তাই এখানে ভারতীয় রেলের কোনও ভূমিকা নেই।

অন্যদিকে, উদ্ধারকার্য শেষ করে ৫১ ঘন্টা পর ওড়িশা বাহানাগা স্টেশনে অর্থাৎ করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনাস্থলে স্বাভাবিক হলো রেল চলাচল। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে গতকাল অর্থাৎ রবিবার রাট ১২টা বেজে ৫ মিনিটে ওই স্টেশন থেকে আপ এবং ডাউন লাইনে তিনটি মালগাড়ি চালানো হয়। আজ অর্থাৎ সোমবারও মোট সাতটি ট্রেনের ট্রায়াল চলবে এই লাইনে। এছাড়াও এই রেললাইন থেকে যাতায়াত করে যাত্রীবাহী ট্রেনও। এদিন সকালেই পুরী-শালিমার জগন্নাথ এক্সপ্রেস (Puri-Shalima Jagannath Express) ও পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস (Purushottam Express) ধীর গতিতে নতুন লাইনের ওপর দিয়ে পাস করে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই এলাকা ধীর গতিতে পেরোয় হাওড়া-পুরী বন্দে-ভারত এক্সপ্রেসও (Howrah-Puri Bande-Bharat Express)। এদিন হাওড়া থেকে সকাল ৬টা ১০-এ প্রথম ছাড়ে হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এরপর হাওড়া-সেকেন্দ্রাবাদ ফলকনুমা এক্সপ্রেস (Howrah-Secunderabad Phalknuma Express) রওনা দেয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়, আজ থেকে হাওড়া-ভদ্রক (Howrah-Bhadrak) রুটে সবকটি ট্রেনই চলছে। শুধুমাত্র হাওড়া-ব্যাঙ্গালোর যশবন্তপুর দুরন্ত এক্সপ্রেসের (Howrah-Bangalore Jaswantpur Durant Express) সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। বেলা ১০টা ৫০-এর পরিবর্তে হাওড়া থেকে দুপুর ৩টেয় ছাড়বে এই ট্রেন।

উল্লেখ্য, রবিবার রাতে ট্রায়াল রানের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnab)। ওই লাইনে রেলের চাকা গড়ানোর পর রেলমন্ত্রী জানান, এখনও কাজ শেষ হয়নি। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা তাদের খুঁজে পেলে কাজ শেষ হবে। এই কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন অশ্বিনী বৈষ্ণব। তাঁর ধরা গলাই প্রমাণ দেয়, দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে কড়া নজর রাখলেও, এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যুতে কতটা ভেঙে পড়েছেন তিনি।

আমাদের দায়িত্ব এখনও শেষ হয়ে যায়নি। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা যাতে দ্রুত তাদের খুঁজে পান, এটাই আমাদের লক্ষ্য।

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব

শুক্রবার সন্ধ্যায় বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার জেরে ২৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। এদিন ওড়িশার মুখ্যসচিব জানান, বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত ২৭৫ জনের মধ্যে ১৫১ জনের দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যাবতীয় নিয়ম মেনে পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে। এমনকি দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানান তিনি। তবে বহু দেহই এখনও শনাক্ত করা যায়নি। আর ইতিমধ্যেই মৃতদেহগুলিতে পচন ধরতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে যদি আগামী দুইদিনের মধ্যে দেহ শনাক্তকরণ না করা হয়, তবে দেহে সম্পূর্ণ পচন ধরে যাবে। ফলে পরবর্তীকালে দেহ শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা (DNA Test) ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না প্রশাসনের কাছে।

ইতিমধ্যেই বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় সিবিআই (CBI) তদন্তের সুপারিশ জানিয়েছে রেল বোর্ড। রেল মন্ত্রকের তরফে সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করা হয়, তিনটি ট্রেন নয়, কেবলমাত্র করমণ্ডল এক্সপ্রেসই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। ফলে ওই ট্রেনটিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনায় লাইনচ্যুত হয়ে যায় এক্সপ্রেসের ২১টি কামরা। রেল মন্ত্রকের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, আনুমানিক প্রায় ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই দুর্ঘটনার জেরে। যার মধ্যে দুটি এলএইচবি কোচের (LHB coaches) ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সঙ্গে যে মালগাড়িটির সংঘর্ষ হয়েছে, তাতে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও দুর্ঘটনার জেরে কার্যত উপড়ে গিয়েছে রেল লাইন। নতুন করে এই রেললাইন পাতার জন্য খরচ হয় আনুমানিক ২ কোটি টাকা। পাশাপাশি, করমণ্ডল দুর্ঘটনার জেরে বিগত দেড়দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ওই রুটের রেল চলাচল। এমনকি আগামী বুধবারের আগে ট্রেন পরিষেবা চালু হবে না বলেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বীনী বৈষ্ণব। ফলে এই ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে আনুমানিক ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জানানো হয় রেলের তরফ থেকে।