খেলাধুলা

R Praggnanandhaa | এই নিয়ে ৫ বারের বেশি বার ম্যাগনাসকে হারালেন প্রজ্ঞানন্দ! দাবার অন্যতম কঠিন ফরম্যাটে প্রথমবার কার্লসেনের বিরুদ্ধে জয় রমেশবাবুর!

R Praggnanandhaa | এই নিয়ে ৫ বারের বেশি বার ম্যাগনাসকে হারালেন প্রজ্ঞানন্দ! দাবার অন্যতম কঠিন ফরম্যাটে প্রথমবার কার্লসেনের বিরুদ্ধে জয় রমেশবাবুর!
Key Highlights

দাবার অন্যতম কঠিন ফরম্যাট ক্লাসিক্যাল দাবায় কিংবদন্তি ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারিয়ে দিলেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। এই প্রথমবার ক্লাসিক্যাল চেজে কার্লসেনের বিরুদ্ধে জয় প্রজ্ঞানন্দর।

কিংবদন্তি, ব্যতিক্রমী, প্রতিভাশালী যাই বলা হোক সবটাই একেবারে মানানসই এই তরুণ দাবাড়ুর জন্য। মাত্র ২ বছর বয়স থেকেই খেলা শুরু করেন দাবা। এরপর মাত্র সাত বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-৮ ওয়ার্ল্ড ইউথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপে (Youth Chess Championship) জয়। এরপর বিশ্ব দরবারে একের পর দাবাতে বাজিমাত। এবার ফের গোটা বিশ্বের কাছে দেশের নাম আরও উজ্জ্বল করলেন ভারতের দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার (chess grandmaster india) রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। এবার দাবার অন্যতম কঠিন ফরম্যাট ক্লাসিক্যাল দাবায় কিংবদন্তি ম্যাগনাস কার্লসেনকে (Magnus Carlsen) হারিয়ে দিলেন তিনি। এই প্রথমবার ক্লাসিক্যাল চেস-এ কার্লসেনের বিরুদ্ধে জয় প্রজ্ঞানন্দর। তবে এর আগেও বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু কার্লসেনকে হারিয়েছেন বহুবার। 

নরওয়ে দাবা প্রতিযোগিতা ২০২৪ : 

নরওয়ে দাবা প্রতিযোগিতায় (Norway Chess Tournament) ভারতের এই বিস্ময় প্রতিভা কার্লসেনকে হারিয়ে ওই প্রতিযোগিতার তৃতীয় রাউন্ড শেষে শীর্ষস্থানে রয়েছেন। তাঁর সংগ্রহ ৫.৫ পয়েন্ট।  এই প্রথমবার কার্লসেনকে ক্লাসিকাল দাবায় হারালেন প্রজ্ঞা। মাত্র ১৮ বছর বয়সী প্রজ্ঞা মধুর প্রতিশোধ নিলেন নরওয়ের তারকা দাবাড়ুর বিরুদ্ধে। এর আগে র‍্যাপিড বা এক্সিবিশন রাউন্ডে কার্লসেনকে একাধিকবার হারিয়েছেন কার্লসেন। কিন্তু ক্লাসিক্যাল চেজে এই প্রথম এত বড় জয়। এই ক্লাসিক্যাল চেজ দাবার অন্যতম কঠিন ফরম্যাট। এই প্রতিযোগিতায় প্রতিটি চালের আগে প্রতিযোগীদের ভাবার জন্য বিস্তর সময় দেওয়া হয়। প্রতিটি চালের জন্য এক ঘণ্টারও বেশি সময় পান প্রতিযোগীরা। স্বাভাবিকভাবেই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা এক্ষেত্রে অ্যাডভান্টেজ পান। প্রজ্ঞানন্দ যে তরুণ বয়সেই বিশ্বদাবায় একেবারে উপরের সারিতে উঠে এসেছেন এই জয় তার প্রমাণ।

৬ প্রতিযোগির এই চেজ টুর্নামেন্টে এখন এককভাবে পুরুষদের বিভাগে শীর্ষ রয়েছেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। চেন্নাই থেকে উঠে আসা এই দাবাড়ু সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলতে নেমে তৃতীয় রাউন্ডে হারিয়ে দেয় বিশ্বের এক নম্বর ম্যাগনাস কার্লসেনকে। তৃতীয় রাউন্ডের শেষে ৯ পয়েন্টের মধ্যে প্রজ্ঞার অর্জন ৫.৫ পয়েন্ট। একই দিনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল আমেরিকার দাবাড়ু ফ্যাবিও কারুয়ানা। শুরুতে অবশ্য প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে অ্যাটাকিং খেলে বেশ আধিপত্য বিস্তার করে নিয়েছিলেন ৩৩ বছর বয়সী নরওয়ের তারকা। কিন্তু চাপে পড়েও ধৈর্য ধরে রাখেন চেন্নাইয়ের ছেলে। এরপরই আসতে আসতে খেলায় জাঁকিয়ে বসেন, পাল্টা চাপে পড়ে যান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কার্লসেন।

 বলে রাখা ভালো, প্রজ্ঞানন্দের সাফল্যের দিন নরওয়েতে জিতল তাঁর দিদিও।  দ্বিতীয় রাউন্ডে আগেই স্বদেশী প্রতিদ্বন্দী কোনেরু হাম্পিকে হারিয়েছিলেন প্রজ্ঞানন্দের দিদি বৈশালী (Vaishali Praggnanandhaa)। বুধবার তৃতীয় রাউন্ডে অ্যানা মুজিচুকের সঙ্গে কালো ঘুঁটি নিয়ে ড্র করেন বৈশালী, তাতেই তিনি মহিলাদের বিভাগে এককভাবে শীর্ষস্থান দখলে রাখেন। তাঁর পয়েন্ট ৫.৫। দাবায় ভারতীয় এই ভাই-বোনের রূপকথার মতো পারফরমেন্স যে আগামীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভারতবাসীকে যথেষ্ট স্বস্তি দিচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।

রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ বনাম ম্যাগনাস কার্লসেন :

আর প্রজ্ঞানন্দ(R Praggnanandhaa) এর আগে বহুবার বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কার্লসেন ও প্রজ্ঞানন্দ মুখোমুখি হয়েছেন অন্তত ২০ বার। র‌্যাপিড দাবা ও প্রদর্শনী ম্যাচ মিলিয়ে মোট ১৮ বার মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা। কার্লসেন জিতেছেন ৭টি ম্যাচ। প্রজ্ঞানন্দ ৫টি। তবে নরওয়ের ক্লাসিকাল দাবার আর প্রজ্ঞানন্দ বনাম ম্যাগনাস কার্লসেন (R Praggnanandhaa vs Magnus Carlsen) ম্যাচ নিয়ে সেই সংখ্যা আরও বাড়লো। আর প্রজ্ঞানন্দ বনাম ম্যাগনাস কার্লসেন (R Praggnanandhaa vs Magnus Carlsen) চেস ম্যাচের মধ্যে ৬টি ম্যাচ ড্র হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বিশ্ব যুব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-8 (Under-8) শিরোপা জিতিছেন এবং এফআইডিই মাস্টার (FIDE Master) খেতাব অর্জন করেছেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। এরপর ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১০, ২০১৬ সালে ভারতের দ্বিতীয় ও বিশ্বের পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ড মাস্টার হন প্রজ্ঞানন্দ। ২০১৭ সালে নভেম্বরে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে বিশ্ব জুনিয়র দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে (World Junior Chess Championship) তিনি প্রথম স্থানের খেতাব জয় করেন।

ছেলেবেলা থেকেই দাবার মতো তীক্ষ্ণ বুদ্ধির খেলাতে বাজিমাত করে এসেছে অতি সাধারণ এই ছেলেটি। কেবল দেশেই নয় ইতিহাস গড়েছে সে ভারতের সীমান্তের বাইরে গিয়ে বিশ্ব দরবারেও। প্রতিবারই সে অবাক করেছে সকলকে। বয়স এবং অভিজ্ঞতার দিক থেকে প্রজ্ঞানন্দের থেকে কার্লসেন অনেকটাই এগিয়ে। তবুও প্রজ্ঞা বহুবার সাদা-কালো চেক বোর্ডে হারিয়েছে কার্লসেনকে। আর প্রতিবারই জিতে নিয়েছে সকলের ভালোবাসা, আশীর্বাদ। ফলে আর প্রজ্ঞানন্দ(R Praggnanandhaa) যে এক অবিশ্বাস্যকর কাহিনী তা বলা ভুল হবে না বৈকি।