ওজন কমাতে কী কী করণীয়, Procedure and ways to reduce your weight in Bengali

Sunday, July 17 2022, 7:39 am
highlightKey Highlights

একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা কেবল আমাদেরকে আকর্ষণীয় দেখানোর জন্যই যে প্রয়োজনীয় তা নয়, এটি বেশ কয়েকটি দীর্ঘস্থায়ী রোগকেও উপশম করতে সহায়তা করে। অন্যদিকে ওজন কমানো আসলে খুব একটা কঠিন কাজ নয়। মনের ইচ্ছে আর সামান্য ধৈর্য থাকলেই তা অতি সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এরমধ্যে পদ্ধতিগুলো যদি ঘরোয়া উপায়ে হয়, তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই, তাই না?


ওজন বেড়ে যাওয়ায় কারণ কি কি হতে পারে? Causes of weight gain

আজকাল অনেকেই আছেন যাদের ওজন বেড়ে যাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন সমস্যার দেখা দিচ্ছে, অথচ ওজন বৃদ্ধির কারণ ঠাহর করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি যে আমাদের ওজন বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ থাকে। যেমন :

১. সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া।

২. ঘরে বানানো খাবারের চেয়ে বাইরের খাবার বেশি খাওয়া।

৩. নিয়মিত শরীরচর্চা না করা।

৪. বেশির ভাগ সময় বসে বসে কাজ করা।

৫. ঘুম থেকে দেরিতে ওঠা।

৬. যতটুকু না ক্যালোরি খরচ হয় তার চেয়ে অধিক খাওয়া।

উপরিউক্ত কারণগুলো ছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে, শারীরিক ও মানসিক স্ট্রেস থেকে সৃষ্ট "কর্টিসল" হরমোন আমাদের ওজন বাড়াতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই চর্বি জমাকারী এই হরমোন কে কমাতে হলে শারীরিক ও মানসিক চাপ কম হওয়া খুবই জরুরি।

Read also :

ওজন নিয়ন্ত্রন করবেন কিভাবে, How to control weight!

ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে অনেকেই সমস্যায় ভোগেন। বিভিন্ন ধরনের ডায়েট চার্ট মেনে চলা সত্ত্বেও করেও কোনো ভাবেই ওজন কমানো সম্ভব হয়ে উঠছে না।

অন্যদিকে ওজন বেশি হয়ে যাওয়ায় শরীরের মধ্যে আলস্য বাসা বাঁধছে। এসব সমস্যার সমাধান আছে আপনার হাতেই। কিভাবে ? নিয়মিত কিছু অভ্যাসই ওজন নিয়ন্ত্রণে আপনাকে সাহায্যও করতে পারবে। বাড়তি ওজন কমানো তথা বয়সের অনুপাতে সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন সকালে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আজ থেকেই শুরু করতে হবে।

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠুন, Wake up early in the morning 

ওজন কমাতে হলে পর্যাপ্ত ঘুমের খুবই প্রয়োজন। সেজন্য যখন তখন ঘুমিয়ে পড়বেন না। একজন প্রাপ্ত বয়স্কের ক্ষেত্রে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট হয়। সেইভাবে ঘুমের পরিমাণ ঠিক রাখতে নিয়ম করে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে খুব সকালে উঠে পড়ার অভ্যাস করুন। দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাছাড়া শরীরচর্চা ও ব্রেকফাস্টের নিয়মেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা, নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট খাওয়া ইত্যাদি সব কাজই নিয়ম অনুযায়ী করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সুবিধে হয় । তাছাড়াও অনেকের দিনের বেলা অল্প সময়ের জন্য হলেও ঘুমোনোর অভ্যাস থাকে, সেই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। 

দিনের শুরু হোক দুই গ্লাস জলের সাথে, Start the day with two glasses of water

মাত্র দুই গ্লাস জলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আপনার ওজন। তবে নিয়ম মেনে প্রতিদিন জল পান করা জরুরি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে দুই গ্লাস স্বাভাবিক জল পান করুন। এতে কোনো ক্যালরি থাকে না, কিন্তু জলই শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে। তাই ওজন কমাতে হলে দিনে ২ থেকে ৩ লিটার জল অবশ্যই পান করা উচিত।

Read also :

সকালের খাবারের আগে একটু ব্যায়াম, A little exercise before breakfast

আমরা সকলেই জানি ব্যায়াম করা অথবা সকালে হাঁটার অভ্যাস শরীরের পক্ষে খুব উপকারী। ওজন কমাতে সকালে উঠেই প্রথমে হালকা ব্যায়াম করতে হবে অথবা একটু হাঁটাহাটি করা উচিত। কারণ, খালি পেটে ব্যায়াম করলে দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। খাবার আগে ব্যায়াম করলে অথবা হাঁটলে শরীরের ফ্যাট বার্ন হয় যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়ে যায়। 

চিনি ছাড়া চা-কফি খাওয়া, Take tea-coffee without sugar

Read also :

আমাদের প্রায় সকলেরই সকালে চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে। আবার ওজন নিয়ে সচেতন ব্যক্তিগণ অনেকেই গ্রীন টি পান করে থাকেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে মানুষ সাধারণ চা - কফিই পান করতে পছন্দ করেন।

এক্ষেত্রে আপনি সেগুলো চিনি ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন; কারণ চিনি থেকে খুব সহজেই শরীরে ক্যালরি বেড়ে যায়, যা ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী। সুস্থ থাকার জন্য আলাদা করে চিনি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। আমাদের শরীর চিনি থেকে কোন বিশেষ পুষ্টিও পায় না, তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে চিনি যতটুকু এড়িয়ে চলা যায়, ততই ভালো।
অন্যদিকে চায়ের সাথে অনেকেরই বিস্কুট খাওয়ার অভ্যাস থাকে।

বিস্কুট খেতে তেমন মিষ্টি না হলেও তা বানাতে প্রচুর চিনি, ময়দা ও ফ্যাট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সুতরাং বলাই বাহুল্য যে অধিকাংশ বিস্কুটে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে। সুতরাং ওজন কমাতে চাইলে চায়ের সাথে বিস্কুট খাওয়ার অভ্যাস এড়িয়ে চলাই ভালো।

সকালে ভারী প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ, Eating protein~rich food in the morning

অনেকেই মনে করে থাকেন যে, ওজন কমাতে হলে সকালে কিছু না খাওয়া বা হালকা কিছু খাওয়াই সঠিক উপায়, কিন্তু এই ধারণাটি একেবারেই ভুল; কারণ, সকালের খাবার পুরো দিনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ খাবার।

এছাড়াও ভারী প্রোটিন শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে। কীভাবে? ভারী প্রোটিন খেলে আমাদের পেট অনেক লম্বা সময় অবধি ভরা থাকবে এবং বারবার খাওয়ার ইচ্ছা কম হয়ে যাবে, যার ফলে আমাদের একটু পর পর কিছু না কিছু খাবার গ্রহণ করতে হবে না। এই প্রক্রিয়ায় ওজন কমানো সহজ হয়।

খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া, Chew food well

"ভালো ভাবে চিবিয়ে খাও।" -ছোটবেলা থেকেই খেতে বসলে বড়দের থেকে শুনে আসা এই কথাটি সত্যিই শরীরের জন্য খুব উপকারী। খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাবার অভ্যাস আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কেবল সকালের খাবার নয়, বরং যেকোনো সময়ের খাবার অথবা আপনি যখনই কিছু খাবেন সেই খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে সারা দিনে ৫ ভাগ বেশি ক্যালরি বার্ন করা সম্ভব।

ক্যালরির হিসাব রাখা, Calorie management

সকালের খাবারে কতটুকু ক্যালরি খাচ্ছেন, ওজন কমাতে হলে তার হিসাব রাখতে হবে, এতে নিত্যদিনের খাবারের মাপ ও পরিমাণ একই থাকবে। আপনার শরীরে প্রতিদিন কতটা ক্যালরি দরকার সেই অনুপাতে প্রতি প্রহরের খাবার পরিমাপ করে রাখতে পারেন, যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে খাবার একটি সঠিক অভ্যাস তৈরি করা সম্ভব হবে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File