India-Pak Attack Timeline | ১৯৪৭ থেকে ভারত-পাক 'সাপে-নেউলে' সম্পর্ক চলছে, দুদশকের জঙ্গি হামলায় কতবার রক্ত ঝরেছে? রইলো হিসেব

গত ২২শে এপ্রিল ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের রক্তে লাল হয়েছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসারানে ভারতীয় নাগরিকদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে গুলি করে মেরেছে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা। তারপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে জম্মু কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোল। দুদেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও ধর্মের ভিত্তিতে, জাতির ভিত্তিতে দুদেশের মধ্যে বিবাদ বেঁধেছে। বারবার পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা এদেশে ঢুকে হামলা করেছে নিরীহ ভারতবাসীর ওপর।
২২শে এপ্রিল, ২০২৫ : পহেলগাঁও হামলা - গত ২২শে এপ্রিল ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের রক্তে লাল হয়েছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসারানে (baisaran pahalgam) ভারতীয় নাগরিকদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে গুলি করে মেরেছে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা। তারপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে জম্মু কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোল। দুদেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক দফা কূটনৈতিক স্ট্রাইক ঘোষণা করেছে ভারত। চুক্তিতে আন্তর্জাতিক স্থল সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এই নির্দেশ মেনেই বন্ধ করা হয়েছে আটারি ওয়াঘা সীমান্ত। বন্ধ হয়েছে দুদেশের মধ্যে অন্য আমদানি রপ্তানিও। ভারত ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব পাকিস্তানি নাগরিকদের। জম্মু কাশ্মীরে ভেঙে দেওয়া হয়েছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের বাড়ি। জঙ্গিদের খোঁজে সারা দেশে তল্লাশি চালাচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনী। এই আবহে বারবার সংঘর্ষ বিরোধী চুক্তি ভেঙে জম্মু কাশ্মীর সীমান্তে হামলা চালাচ্ছে পাক সেনা। পাল্টা প্রত্যাঘাত করছে ভারতীয় সেনাও।

তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও ধর্মের ভিত্তিতে, জাতির ভিত্তিতে দুদেশের মধ্যে বিবাদ বেঁধেছে। বারবার পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা এদেশে ঢুকে হামলা করেছে নিরীহ ভারতবাসীর ওপর। ১৯৪৭ সালের ১৪ এবং ১৫ই আগস্ট ভারতীয় উপমহাদেশের শেষ ভাইসরয় লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে দুটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান সেই জন্মলগ্ন থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে।
১৯৪৭: ভারতীয় উপমহাদেশ বিভাজন-
১৯৪৭ সালের ১৪ এবং ১৫ই আগস্ট রাতারাতি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় ভারতীয় উপমহাদেশ। বাস্তুচ্যুত হন প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তি পেলেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ যায় প্রায় ২০ লাখ সাধারণ মানুষের।

১৯৪৯: কাশ্মীর বিভাজন-
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে রয়েছে কাশ্মীর উপমহাদেশ। দেশভাগের সময় কাশ্মীরের প্রায় ৩৭ শতাংশ পাকিস্তান ও ৬৩ শতাংশ ভারতের ভাগে পড়েছিল। জাতিসংঘের সমর্থনে ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে কাশ্মীরের মধ্যভাগ থেকে ৭৭০ কিলোমিটার (৪৭৮ মাইল) দীর্ঘ একটি যুদ্ধবিরতি রেখা টানা হয়েছিল যাকে বলা হয় জম্মু কাশ্মীরের 'লাইন অব কন্ট্রোল'। তবে তারপর থেকে দুদেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীরের মালিকানা দাবি করে আসছে। আর এই নিয়েই বারবার বিবাদ হয়েছে দুদেশের মধ্যে।

১৯৬৫: কাশ্মীর ইস্যুতে যুদ্ধ-
১৯৬৫ সালের আগস্টে কাশ্মীরের দখল নেওয়ার জন্যে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পাকিস্তান। উভয় দেশের সীমান্ত বাহিনী এবং সশস্ত্রবাহিনীএকে ওপরের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। প্রায় ৭ সপ্তাহ যুদ্ধ চলার পর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় অবশেষে যুদ্ধ থামে। তবে কোনো চূড়ান্ত ফলাফল বেরোয়নি তখন।

১৯৭১: স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান-
১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্যে মুক্তিযুদ্ধ লড়ে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের নাগরিকরা। এই যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের (একালের বাংলাদেশ) হয়ে অংশ নিয়েছিল ভারত। প্রায় ৯ মাস ধরে চলা এই স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রাণ গিয়েছিলো প্রায় ৩০ লাখ মানুষের। ৩০ লাখের প্রাণের বিনিময়ে গড়ে উঠেছিল নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র 'বাংলাদেশ'।

১৯৭৪: পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা-
১৯৭৪এ প্রথমবার ভারত পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা নিরীক্ষায় সফল হয়। ১৯৯৮ সালের মে মাসে পাকিস্তান প্রকাশ্যে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। ওই একই বছরে ভারত পাঁচটি এবং পাকিস্তান ছয়টি পরীক্ষা চালায়। খবর পৌঁছয় আন্তর্জাতিক মহলে। তৈরী হয় উদ্বেগ। ওই বছর বিশ্বের ষষ্ঠ ও সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে তাঁরা পরিচিতি পায় বিশ্বে। তবে দুদেশের মনোমালিন্য এতে বেড়েছে বই কমেনি।

১৯৮৯: কাশ্মীরে বিদ্রোহ-
১৯৮৯এ ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। নিরাপত্তা বাহিনী ও কাশ্মীরি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাতে পরবর্তী কয়েক বছরে হাজার হাজার বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং বেসামরিক লোক নিহত হয়। এর পরের বছর থেকেই প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে হাজার হাজার কাশ্মীরি হিন্দু ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে পালিয়ে যেতে থাকেন।

১৯৯৯: কারগিল যুদ্ধ-
১৯৯৯এ ভারত সমর্থিত কাশ্মীর দখল করার চেষ্টা চালায় পাক সেনাবাহিনী। কাশ্মীর সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের সেনারা কারগিল পর্বতে ভারতের একটি সামরিক চৌকি দখল করে নেয়। তাঁদের পাল্টা আক্রমণ করে ভারতীয় বাহিনী। ১০ সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ করে সে অঞ্চল পুনরায় দখল করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের প্রায় ১,০০০ সেনা ও যোদ্ধা প্রাণ হারায়। প্রাণ হারান সীমান্তের বহু সাধারণ মানুষও। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে যুদ্ধ থামে।

তারপরও ২০০১ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে পাক মদতপুষ্ট বহু সশস্ত্র গোষ্ঠী ভারতে হামলা চালাতে থাকে। এর জেরে সীমান্তে মোতায়েন করা হয় সেনা। অবশেষে ২০০৩ সালে সীমান্তে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয় তবে কোনো শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেনি দুদেশ।
২০০৮: ২৬/১১ মুম্বাই হামলা-
বেশ কিছু বছর দুদেশের সম্পর্ক সমান্তরালে থাকলেও বেশি দিন নিজেরদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে বন্ধ রাখতে পারেনি পাকিস্তান। ২০০৮সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন, বিলাসবহুল তাজ হোটেল এবং একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলা করে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তৈবার জঙ্গিরা (Mumbai Attack)। এই ঘটনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করে ভারত। ব্যাহত হয় শান্তিচুক্তি। পরিস্থিতি একটু থিতোতেই ২০১৫তে পাকিস্তান সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

২০১৬: সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর ঘসনা করে ভারতীয় সেনা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, দুসপ্তাহ আগে সীমান্তে ভারতীয় সেনা ফাঁড়িতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হামলা করেছিল। এর জেরে নিহত হন ১৯ ভারতীয় জওয়ান। এর প্রত্যাঘাতেই পাক ভূমিতে ঢুকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে ভারত। যদিও এই হামলার কথা অস্বীকার করে ইসলামাবাদ।

২০১৯: পুলওয়ামা সংকট-
২০১৯সালের ১৯সে ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকরে পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গি সংস্থা জইশ ই মোহাম্মদ। এই হামলায় ভারতীয় একটি আধাসামরিক বাহিনীর ৪১ জওয়ান নিহত হন। পাল্টা প্রত্যাঘাতে লাইন অব কন্ট্রোল পেরিয়ে পাক ভূমিতে বিমান হামলা চালায় ভারত। এই হামলার কথাও অস্বীকার করে ইসলামাবাদ (pulwama attack)।

১৯৪৭এ ভারত ভাগের সময় স্যার শেরিল র্যাডক্লিফ ভারতীয় উপমহাদেশের ওপর দিয়ে যে সীমারেখা টেনেছিলেন তা অপরিকল্পিত এবং কষ্টকল্প ছিল। মাত্র ৫ সপ্তাহ সময়ে তিনি দুদেশের মধ্যে কাশ্মীর ভাগ করে দিতে গিয়ে বড়োরকমের ভুল করে ফেলেন। এর জেরেই দুদেশের সংঘাত শতবর্ষ ছুঁয়েও এখনও বিদ্যমান। আর এই সংষর্ষের ফলস্বরূপ বারবার রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, প্রাণ হারান উলুখাগড়ারূপী সাধারণ মানুষরা।
- Related topics -
- আন্তর্জাতিক
- দেশ
- পাকিস্তান
- ভারত
- আত্মঘাতী হামলা
- হামলা
- পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা
- দুষ্কৃতী হামলা
- সন্ত্রাসবাদী হামলা
- জঙ্গি হামলা