World Sleep Day | ঘুম কম হলে বাড়বে হৃদরোগের মতো অসুস্থ্যতা! দেশের প্রায় ১০.৪ কোটি মানুষই ভোগেন ঘুমের সমস্যায়! জানুন যোগা কীভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে?
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার ফলে বাড়ে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, বিষণ্নতা, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক সহ অনেক গুরুতর সমস্যার ঝুঁকি। তাই ঘুম সম্পর্কে সমাজে সচেতনতার বার্তা দিতে প্রতি বছর ১৫ই মার্চ পালন করা হয় বিশ্ব ঘুম দিবস।
জল, অক্সিজেনের মতোই ঘুম আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, একজন মানুষকে অন্তত ৮টা রোজ ঘুমানো উচিত। এতে যেমন সুস্থ্য থাকে শরীর , তেমন ভালো থাকে মস্তিষ্কও। তবে বর্তমানে ঘুম সংক্রান্ত সমস্যা যেন হয়ে উঠেছে 'সাধারণ বিষয়'। কম বয়সী থেকে শুরু করে বয়স্ক-অনেকেই ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রায় ভুগে থাকেন। আর পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার ফলেই ক্রমশ বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, বিষণ্নতা, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক সহ অনেক গুরুতর সমস্যার ঝুঁকি। তাই ঘুম সম্পর্কে সমাজে সচেতনতার বার্তা দিতে প্রতি বছর ১৫ই মার্চ পালন করা হয় বিশ্ব ঘুম দিবস (world sleep day)।
বিশ্ব ঘুম দিবস । World Sleep Day :
ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটির (World Sleep Society) লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী ঘুমের স্বাস্থ্যের প্রচার করা। যার জন্য প্রতি বছর বিশ্ব ঘুম দিবস ১৫ ই মার্চ পালন করা হয়। বর্তমান সময়ে দুর্বল জীবনযাপন, ব্যস্ততা ও চাপের রুটিনের কারণে অনেকেই অনিদ্রা এবং কম-বেশি গুরুতর ঘুমের সমস্যাজনিত সমস্যার শিকার হন। তবে একজন সুস্থ মানুষের জন্য ভালো ও পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া খুবই জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানুষকে নানা রোগে ভুগতে হয়। তাই, ঘুম সংক্রান্ত এই সমস্যাগুলি এড়াতে এবং ঘুম সম্পৰ্কে সাধারণকে সচেতন করতে ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটি ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ঘুম দিবস শুরু করে। সেই থেকে প্রতি বছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ঘুম দিবস পালিত হয়। এখন বিশ্ব ঘুম দিবস ৮৮টিরও বেশি দেশে পালিত হয়। ঘুমের জন্য বার্ষিক সচেতনতা ইভেন্টটি একদল চিকিৎসা এবং গবেষকদের দ্বারা শুরু হয়েছিল। বিশ্ব ঘুম দিবসের প্রথম সহ-সভাপতি ছিলেন আপস্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটির নিউরোলজির অধ্যাপক আন্তোনিও কুলেব্রাস এবং ইতালির পারমা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজির সহযোগী অধ্যাপক লিবোরিও প্যারিনো। প্রতি বছর বিশ্ব ঘুম দিবসের একটি ভিন্ন থিম থাকে। এ বছর বিশ্ব ঘুম দিবসের থিম 'বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ঘুমের সমতা'।
স্বাস্থ্য ও ঘুম । Health and Sleep :
সারা বিশ্বের চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন ও অনেক গবেষণাও নিশ্চিত করেছেন যে নিম্নমানের স্বল্প সময়ের ঘুমই কমবেশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক রোগ সমস্যার কারণ হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের অভাব এবং ঘুমের ব্যাঘাতের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, বিষণ্নতা, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক-সহ অনেক গুরুতর সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পর্যপ্ত ঘুম না হলে কী কী সমস্যা হয়?
মানসিক অসুস্থতা :
ঘুম কম অর্থাৎ ইনসমনিয়া শুধু শারীরিক অসুস্থতাই নয়, বয়ে আনে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, মাদক সেবনের মতো মানসিক সমস্যাও। অনিদ্রা এবং মানসিক অসুস্থতা বিপরীতভাবে সম্পর্কযুক্ত, এবং নিজের পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করার জন্য একইসঙ্গে উভয় পরিস্থিতির চিকিত্সা করা অপরিহার্য।
হাইপারটেনশন-হৃদরোগ :
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হৃদরোগ এবং হাইপারটেনশনের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। করোনারি হার্ট ডিজিজ, বুক ধড়ফড়, বা হৃদযন্ত্রের হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেওয়া, এই সমস্তই হতে পারে অপর্যাপ্ত ঘুম হলে। এছাড়া সুগার, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়ে। দুই ক্ষেত্রেই এগুলোর সঙ্গে শরীরে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও চাপ পড়তে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে :
ঘুম কম হওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে, যার জেরে বারবার ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা বাড়ে, বা কোনও রোগ থেকে সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একাধিক জটিলতা :
ঘুম কম হলে আরও একটি সাংঘাতিক সমস্যা হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একাধিক জটিলতা তৈরি করতে পারে অপর্যাপ্ত ঘুম। এর ফলে, নির্ধারিত সময়ের পূর্বে সন্তান জন্ম দেওয়া, সি-সেকশন হওয়া, লেবরের সময় বেশি যন্ত্রণার আশঙ্কা বাড়ে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় ডিপ্রেশন হতে পারে বা সন্তানের ওজন কম হতে পারে।
লেথার্জি :
কম ঘুম বা ঘুমাতে না পারার জন্য কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা ক্ষেত্রে অথবা যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে ঠিক করে পারফর্ম করা যায়না।
পর্যাপ্ত ঘুমের উপকার বহু!
- ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা কমতে থাকে।
- সারাদিন শরীর ও মন প্রচুর স্ট্রেস সামলায়। সেই স্ট্রেস কমিয়ে দেয় ঘুম।
- মেজাজ ভাল রাখার জন্য নিয়ম করে ঘুমোনো জরুরি। মস্তিষ্কের বিশ্রাম না হলে মেজাজ খারাপ হয়ে যেতে পারে।
- স্নায়ুতন্ত্রকে ভাল রাখে ঘুম। স্ট্রেসের কারণে মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্নায়ুকোশের ক্ষতি হয়। তাদের মেরামত করে ঘুম।
- ভাবনাচিন্তায় আরও স্বচ্ছতা। ঘুমের অভাবে চিন্তাভাবনা গুলিয়ে যাওয়া, ভুল পদক্ষেপ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
ঘুমের জন্য সেরা যোগব্যায়াম । Best Yoga For Sleep :
একটি রিপোর্ট অনুসারে আমেরিকায় প্রায় ৫০ থেকে ৭০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘ সময়ের জন্য কম বা বেশি গুরুতর ঘুমের ব্যাধিতে ভুগছেন। AIIMS-এর রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে এই সংখ্যা প্রায় ১০.৪ কোটি। বিশ্বজুড়ে পরিচালিত অনেক গবেষণায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে ঘুমের অভাব ও ঘুম সম্পর্কিত ব্যাধি মানুষের স্বাস্থ্যের উপর গভীর এবং বিস্তৃত প্রভাব ফেলে। যা অনেক সময় মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা ওষুধ খেয়ে, ঘুমের বিছানা (sleeping bed) বদল করে, নানা রকমের টোটকার সাহায্যেও দূর করা যায় না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের সমস্যা থাকলে সাহায্য করতে পারে ঘুমের জন্য সেরা যোগব্যায়াম (best yoga for sleep)।
সূর্য নমস্কার । Surya Namaskar :
প্রতি দিন সূর্য নমস্কার করলে ঘুমের সমস্যা কমতে পারে। তার কারণ এতে মন শান্ত হয়। রোজ সকালে এবং সূর্যাস্তের সময়ে এই যোগাসনটি করলে উপকার পাওয়া যায়।
কপালভাতি । Kapalbhati :
অনেকেই মেদ কমানোর জন্য এই ব্যায়ামটি করেন। কিন্তু ঘুমেরও জন্যও এটি দারুণ। মানসিক চাপ কমাতে এটি দারুণ কাজ করে। ফলে ঘুম ভালো হয়।
ভদ্রাসন । Bhadrasana :
শরীরের আড়ষ্টতা ভাঙতে ভদ্রাসন (bhadrasana) যোগাসনের কোনও জুড়ি নেই। এটি করলে শরীর শান্ত হয়। মন ভালো হয়। সবচেয়ে বড় কথা, এটি টেনশন কমায়। তার ফলে মন ভালো হয়। ঘুমও ভালো হয়।
ভ্রমরী । Bhramari :
ঘুমের আগে এই যোগাসন দারুণ কার্যকর। এটি করলে ঘুম গভীর হয়। আদি যুগে মুনিঋষিরাও নাকি এই যোগাসনটি করতেন মন শান্ত করতে। এটিও ঘুমের জন্য দারুণ।
যষ্টিকাসন । Yastikasana :
মন এবং শরীরকে শান্ত করার জন্য অ্যতম সেরা যোগাসন। এটি করলে মন ভালো থাকে। হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে ঘুমও ভালো হয়।
শুধু আমাদের শারীরিক সুস্থতাই নয় মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্যও ভালো ঘুম প্রয়োজন। ভালো এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ ঘুম শুধুমাত্র গুরুতর মানসিক রোগের প্রভাব কমাতেই সহায়ক নয়, এটি মনকে খুশি ও শান্ত রাখতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলেই ঘুমের সমস্যা থাকলে তা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন এবং রোজ অন্তত ৮ঘন্টা ঘুমান।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- যোগাসন
- যোগাভ্যাস
- ঘুম