অন্যান্য

Offbeat places near Darjeeling | পাহাড়ের ফাঁক বেয়ে নীচে বয়ে চলেছে তিস্তা নদীর জলস্রোত! চারিপাশে পাইন গাছের সারি! ঘুরে আসুন সিলারি গাঁও-এ!

Offbeat places near Darjeeling | পাহাড়ের ফাঁক বেয়ে নীচে বয়ে চলেছে তিস্তা নদীর জলস্রোত! চারিপাশে পাইন গাছের সারি! ঘুরে আসুন সিলারি গাঁও-এ!
Key Highlights

দার্জিলিং এর কাছাকাছি অফবিট জায়গার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সিলারি গাঁও। এই গ্রামে চোখ মেললেই দেখা মেলে সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় রয়েছে পাহাড় কোলের এক চিলতে এই গ্রাম।

শীত কাটলেও শীতকে যেন ছাড়তে চায়না ভ্রমণ পিপাসুরা। ফলে বসন্তের সুন্দর আবহাওয়াতেই পাহাড়ের কোলে দিন কাটানোর পরিকল্পনাবা রয়েছে অনেকেরই। এদিকে কম দিনে পাহাড় মানেই উত্তরবঙ্গ। তবে যুবপ্রজন্মের কাছে শুধু দার্জিলিং, কার্শিয়াং কিংবা জলপাইগুড়ি নয়। আজকাল তাদের ঝোঁক বেশি অফবিট ডেস্টিনেশনের দিকে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দার্জিলিং এর কাছাকাছি অফবিট জায়গা (Offbeat places near Darjeeling)। পাহাড়ের কোলে বন্ধুবান্ধব বা প্রিয়জনদের সঙ্গে নিরিবিলি একান্তে সময় কাটাতে, থ্রিলের খোঁজে ছোটখাটো পাহাড়ি গ্রামগুলিকেই বেছে নেয় তরুণ প্রজন্ম তথা ভ্রমণ পিপাসুরা। আর এই তালিকায় পর্যটকদের অত্যতম সেরা পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দার্জিলিং এর অফবিট জায়গা (Darjeeling Offbeat Places) সিলারি গাঁও (Sillery Gaon)। হোটেল থেকেই দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। রয়েছে ৩০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধ মনেস্ট্রি। শহরের ভিড়ভাট্টা থেকে দূরে নিরিবিলিতে পাহাড়ের প্রকৃতির মাঝে দিন কাটাতে ঘুরে আসতেই পারেন এই অফবিট গ্রামে।

 সিলারি গাঁও । Sillery Gaon :

সিঙ্কনা প্ল্যান্টিং থেকে শুরু করে দামসাং দুর্গর মতো নানান আকর্ষণ রয়েছে এই দার্জিলিং এর কাছাকাছি অফবিট জায়গায় (Offbeat places near Darjeeling)। সবুজে ঘেরা কালিম্পং পাহাড়ের সেরা ঠিকানা বলতে পারেন এই সিলারি গাঁও-কে। পাহাড়ের ফাঁক বেয়ে নীচে বয়ে চলেছে তিস্তা নদীর জলস্রোত। এই গ্রামে চোখ মেললেই দেখা মেলে সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় রয়েছে পাহাড় কোলের এক চিলতে এই গ্রাম। চারিদিকে পাইন গাছের সারি দিয়ে যেন ঘেরা গোটা সিলারি গাঁও। অপূর্ব মনোমুগ্ধকর মায়াবী পরিবেশ নিমেষেই যেন ভুলিয়ে দেয় সব ক্লান্তি।

সিলারিগাঁওয়-এ দাঁড়িয়ে চোখ যতদূর দেখতে পাববেন শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রতিদিন ভোরে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ মেজাজ মন রাঙিয়ে দেবে। পাহাড়ের দিকে চোখ মেললে দেখা মিলতে পারে রামধনু। নাম না জানা পাখির দলের কিচিরমিচির এলাকায় অদ্ভুত এক মাদকতা এনে দেয়। পাহাড়ি এই গ্রাম জুড়ে রয়েছে চোখ জুড়িয়ে দেওয়া নাম না জানা হরেক রঙের ফুল। এককথায় কোলাহলমুক্ত পরিবেশে দিন কয়েকের অবসর নিতে হলে উত্তরবঙ্গের এই পাহাড়ি গ্রামের জুড়ি মেলা ভার।

সিলারি গাঁও-এ কী কী দেখতে পাবেন? । What to see in Sillery Gaon?

 সিলেরি গাঁওয়ের অন্যতম আকর্ষণ ভোরবেলা কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন। সিলারি গাঁওয়ে হোমস্টের (Sillery Gaon Homestay) ব্যালকনিতে দাঁড়াতেই শ্বেতশুভ্র দার্জিলিংয়ের দেখা মেলে। আরও ভালভাবে কাঞ্চনডঙ্ঘা এবং তিস্তার গতিপথ দেখতে চাইলে আধঘণ্টা হেঁটে চলে যেতে হবে রামিতে ভিউ পয়েন্টে। কিন্তু মনে রাখবেন, সেই রাস্তাও বেশ খাড়াই ও এবড়ো-খেবড়ো। সেই ভিউ পয়েন্ট পর্যন্ত গাড়িও পৌঁছায় না। এটি সিলারি গ্রাম থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ। ট্রেকারসদের জন্য এটি একটি আদর্শ ছোট্ট ট্রেকিং রুট । এখান থেকে একই সথে তিস্তা এবং বিস্তর সিকিম উপভোগ করতে পারবেন।

এছাড়া চাইলে এখান থেকেই একটি গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। তারপর সেই গাড়ি চেপে ঘুরে আসতে পারেন পেডং, রেসিং, আরিতার দিক থেকে। উল্লেখ্য, এখানে শতাব্দী প্রাচীন বৌদ্ধদের মনেস্ট্রি দেখতে পাবেন। তাতে  দেখতে পাবেন বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের আঁকা ছবি। এছাড়াও ১৮৮২ সালে ফদার অগাস্টিনের তৈরি ক্রস হিলও দেখে আসতে পারেন। ট্রেকিংয়ের শখ থাকলে চলে যেতে পারেন ইচ্ছেগাঁওয়ে। এছাড়াও ট্রেকিংয়ের জন্য যেতে পারেন তিনচুলায়। অথবা সিঙ্কোনা প্ল্যান্টেশনও ঘুরে দেখতে পারেন। এছাড়াও সিলারিগাঁও থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে দামসাং দুর্গ। শোনা যায়, ১৬৯০ সালে এই দুর্গটি তৈরি করেছিলেন লেপচা রাজা। তবে ১৮৬৪ সালের যুদ্ধে সময় ব্রিটিশরা এই দুর্গ ধ্বংস করে দেয়। এখন শুধু সেই ধ্বংসাবশেষ কিছু পড়ে আছে। উল্লেখ্য,মাটি আর পাথর ভাঙা রাস্তায় গাড়ি কিংবা মোটরবাইকে যেতে অনেকটা সময় লাগবে। তাই সিলেরি গাঁওয়ে থেকে যদি আপনি কালিম্পং, ডেলো, পেডং কিংবা ইচ্ছে গাঁওয়ের মতো জায়গাগুলিতে ঘোরার পরিকল্পনা করেন, তাহলে বারবার সেই খারাপ পথ দিয়েই যাতায়াত করতে হবে।

সিলারি গাঁও-এ কীভাবে যাবেন ? । How to go to Sillery Gaon?

দার্জিলিং এর এই অফবিট জায়গায় (Darjeeling Offbeat Places) কলকাতার দিক থেকে গেলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে পৌঁছে যেতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি বা এনজেপি। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে কালিম্পঙের এই সিলারিগাঁয়ের দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটারের মতো। এনজেপি স্টেশন থেকেই গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন।বিমানে গেলে নামতে হবে শিলিগুড়ির বাগডোগরায়। তবে কালিম্পং (Kalimpong) শহর কিংবা লাভা হয়ে সিলেরি গাঁও যাওয়ার রাস্তা কিন্তু বেশ খারাপ। । কালিম্পং সাব-ডিভিশনের প্রায় ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। পেডং যাওয়ার ঠিক ৩ কিমি আগে একটি সংকীর্ণ রাস্তা বা দিকের  উপরের দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাশি রাশি পাইন গাছের ধার দিয়ে ওই রাস্তায় ৪.৭ কিমি পথ অতিক্রম করে অবশেষে পৌছে যাবেন ৪৫টি পরিবার নিয়ে গরা এই স্বপ্নময় গ্রামে।

ছোট্ট গ্রামটিতে কয়েকটি বাড়ি আর হোমস্টে রয়েছে। এখানে থাকার জন্য একাধিক সুদৃশ্য সিলারি গাঁও হোমস্টে (Sillery Gaon Homestay) রয়েছে। সেগুলিতে থাকা-খাওয়া হিসেবে খরচ নেওয়া হয়। হোম স্টে-গুলির আতিথেয়তা ভোলার নয়। স্থানীয় লোকজনই সেগুলি পরিচালনা করেন। থাকা-খাওয়া হিসেবে জনপ্রতি ১২০০-১৪০০ টাকা নেওয়া হয়। সিলেরি গাঁওয়ে খাওয়া-দাওয়া মানে হোমস্টের রান্না। দু-একটা চা, ঠান্ডা পানীয়র দোকান রয়েছে, ব্যাস। বলে রাখা ভালো,  পাহাড়ি এলাকা মানেই সন্ধে পড়তেই ঝুপ করে নামে অন্ধকার। আর গাছপালায় ঘেরা অফবিট গ্রামে যেন বিকেল গড়ালেই সন্ধে হয়ে যায়। তাই অন্য কোথাও ঘুরতে গেলে দ্রুত হোমস্টে-তে ফিরে আসাই শ্রেয়।